নাস্তিক নয় বরং ধর্মদ্রোহী
লিখেছেন লিখেছেন রফছান খান ০৫ মার্চ, ২০১৫, ১১:২৫:৫৪ রাত
"অভিজিৎ রায়ের হত্যার ব্যাপারে শুধুমাত্র ইসলামপন্থীদের উপর আঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে কেন" এ ব্যাপারে কদিন আগে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম ফেসবুকে । যেখানে আমি বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপনা করে দেখাতে চেয়েছি নিরাপত্তারক্ষীরাও সন্দেহের বাইরে নয়।
লেখাটি তারুণ্য ব্লগে দেওয়ার পরে মোটামুটি সহমত জানায়ে মন্তব্য আসতে থাকে। ওদিন রাতেই আবিষ্কার করলাম তারুণ্য ব্লগ কর্তৃপক্ষ আমাকে নোটিশ করা ছাড়ায় লেখাটি ডিলেট করে দিয়েছে। অথচ সেখানে সমসাময়িক প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখার ক্যাটাগরি রয়েছে।
সামহোয়্যার ইন ব্লগে আইডি খুলে মোটামুটি ইসলাম শব্দ ব্যবহার করে পজেটিভ লেখা থাকলেই সে আইডি ব্লগ কর্তৃপক্ষ নজরদারীতে রেখে দেয়। প্রথম যখন আইডি খুলি তখন রমজান মাস। রমজান মাসের ফজিলত নিয়ে কটি লেখা দিলাম। এরপর সাধারণ সব লেখা, বেশীরভাগ ছিল টেক বিষয়ক। অথচ সে আইডি কোনভাবেই প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশযোগ্য লেখার অনুমতি পেল না।
গত বছরে আবার একটা আইডি খুললাম এবং কৌশলে সাম্প্রতিক বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে শুধুমাত্র প্রেম-ভালোবাসার নেকামো লেখা দিতে থাকলাম। যেখানে ৭ টা পোস্ট দেখার পর তারা নতুন ব্লগারের ভেরিফাই ছাড়াই পোস্ট করার অনুমতি দেয় সেখানে এবার আমার ২ টা লেখাতেই অনুমতি দিয়ে দিল। যাইহোক সামহোয়ারইনব্লগে গত পরশু সে লেখা পোস্ট করা মাত্রই আইডি স্বর্গে চলে গেছে। আর ঢুকতে পারছি না।
মূলত এসকল ব্লগগুলো হল মুক্তমনাদের মিলনস্থল। এখানে শুধুমাত্র তারাই অনুমতি পায় যারা তাদের আদর্শ মেনে চলে। ইসলামের প্রতি সহানুভূতি নিয়ে কিংবা মনের ভূলেও যদি শুক্রবারে 'জুম্মা মুবারক' লিখে ফেলেন তবে আপনি ইয়োলো লিস্টে পড়ে গেছেন। আর ইসলামের পক্ষপাতিত্ব করে কোন বিষয়ের যুক্তি দিতে গেলেই দেখবেন হয় আপনার লেখা নেয় নতুবা আইডি ব্লকড।
তারুণ্য ব্লগটা আমার ভালো লেগেছিল। অশ্লীলতার ব্যাপারে ব্লগটা পরিষ্কার। গতবছর থেকে মাঝেমাঝেই লিখে আসছি। তাদেরকে মেইল করেছি কেন আমার পোস্ট ডিলেট করা হল ? যুক্তি কি ? উত্তর নেই। উত্তর আসবে না।
কারন...... সেই একই। বর্তমানে মুক্তমনা মানসিকতার হাজারটা পরিচয়ের মধ্যে এটাও একটা পরিচয়।
আমি ব্লগার নই, কারন লেখালেখি বিষয়টা আমি পারি না। ব্লগে আমি ছিলাম মূলত খুব ভালো একজন মনযোগী পাঠক হিসেবে। ফেসবুকে যা লিখি সেখানেও তাই। একজন পাঠক হিসেবে এসকল মুক্তমনা পরিচয়ধারী ব্লগে যেটা দেখেছি তা হল ;
তারা নিজেদের মধ্যে একরকম প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত কে কত বেশী নিজেকে নাস্তিকমনা বলে উপস্থাপন করতে পারে। তাতে চটি লেখা থেকে শুরু করে, ধর্মকে গালি দেওয়া, বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের নবি মুহাম্মদ (স) এর স্ত্রীদের নিয়ে অকথ্য বাজে কথাবার্তা থাকে। এর সাথে মনগড়া ধর্মীয় কাহিনী বানায়ে তার বিপক্ষে যুক্তি দেখায়ে হেয় করে নব্য মুক্তমনাদের কাছে ইসলামকে ঘৃণ্য করে তোলার অপচেষ্টা তো আছেই। সমকামিতা, অযাচার, একাধিক নারীর সাথে সংগম করার মত ইত্যাদি বিষয়গুলো তাদের আধুনিক বিজ্ঞানমনষ্ক লেখার বৈশিষ্ট্য।
বর্তমান আধুনিকতার নামে অপসংস্কৃতির যে জোয়ার বয়েছে এগুলোর বিরুদ্ধাচরণ ইসলাম ধর্মেই বেশী। অশ্লীলতা, সমকামিতা, অযাচারের মত ঘৃণ্য বিষয়গুলো ইসলাম ধর্মে সরাসরি নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসকল বাধানিষেধ উপেক্ষা করতেই অতিউৎসাহী কিছু তরুণদের মধ্যে মুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগে, পাশাপাশি নিজেকে অতিআধুনিক হিসেবে প্রমাণ করার জন্য তারা নিজেদের সাথে অতি গর্বে নাস্তিকতা ট্যাগ লাগায়। এরাকম একটা শ্রেণী আসে ব্লগে।
আর এক শ্রেণী আসে যারা নিজেরা ইশ্বরে বিশ্বাসী হলেও ধর্মীয় গোঁড়ামি বা কুসংস্কারের বিপক্ষে চর্চা করতে ব্লগে জড় হয়।
এই দুই শ্রেণীই ব্লগে ঢোকে নাস্তিকতা কিংবা মুক্তমনার চর্চা করার জন্য কিন্তু ধীরে ধীরে এরা হয়ে ওঠে ধর্মবিদ্বেষী।
ব্লগগুলো যারা পরিচালনা করে আসলে এরা কেউই নাস্তিক নয়। কারন নির্দিষ্ট কোন ধর্মকে অস্বীকার করা নাস্তিকতা নয়,সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করা হচ্ছে নাস্তিকতা। নাস্তিকতা মানে ধর্মের সাথে বিরোধ নয় বরং ইশ্বরের সাথে। কারন ধর্মের মালিক ইশ্বর। নাস্তিকতা মানে এই নয়, অন্যের ধর্মকে অবমাননা করে নিজের মতাদর্শ প্রচার করা।
এরা সবাই হল ধর্মবিদ্বেসী বা ধর্মদ্রোহী। আরো পরিষ্কার করে বললে এন্টি ইসলামিস্ট। আর কোন ধর্মের জন্য একজন নাস্তিক অপেক্ষা ধর্মদ্রোহী বেশি ভয়ংকর। নাস্তিকতা আর আস্তিকতা যদি ব্যক্তিগত ব্যাপারই হয়ে থাকবে তবে যখন নির্দিষ্ট কোন ধর্মকে নিয়ে কটুক্তি করা হয় তখন তা আর ব্যক্তিগত থাকে না। কারন ধর্মের সাথে একটা জাতি জড়িত।
কোন ধর্মকে অপমান করা, সুযোগ পেলেই নিজেদের মুক্তচিন্তার দোহাই দিয়ে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটুক্তি করা, নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা কোন মানুষের অনুভুতিকে আঘাত করা কখনোই মুক্তচিন্তার চর্চা হতে পারে না। হুমায়ুন আহমেদ কিংবা সত্যজিৎ রায়ের মত লেখকগনও মুক্তচিন্তার অধিকারী ছিলেন। তারা তাদের লেখা দিয়ে পাঠকের মন জয় করতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশের অনেক লেখক রয়েছেন #নাস্তিক। তাদের সাথে কারো কোন ঝামেলা ছিল না, নেইও। কারন তারা বলেন ও লেখেন যুক্তি দিয়ে, গালি দিয়ে নয়।
প্রত্যেক মানুষই স্বাধীন ! প্রত্যেক মানুষ স্বাধীনভাবে কিছু বলতে পারার বা লেখার অধিকার রাখে। কিন্তু তার সেই অধিকার ও বক্তব্য যখন নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠী বা কোন মানুষের অনুভুতিতে আঘাত করে তখন আর তা মুক্তমানায় স্বাধীনতা থাকেনা। তখন তা হয়ে উঠে "ক্রাইম"।
বাংলাদেশের মত একটা দেশে যেখানে সকল ধর্মের মানুষ পাশাপাশি শান্তিতে বসবাস করে আসছে সেখানে যারা বিভিন্ন উষ্কানি দিয়ে একে অন্যের থেকে পৃথক করতে চাই, দেশকে টুকরো টুকরো করতে চাই এদের ব্যাপারে সকলের সাবধান হওয়া উচিৎ। নাস্তিক হবেন আপনি, এটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু ধর্মের পিছে লেগে আপনি যে ষড়যন্ত্রই বাস্তবায়ন করতে চান না কেন এ দেশের কোটি কোটি ধর্মপরায়ণ মানুষের কাছে তা পরাভূত হবে নিশ্চিত থাকুন।
অভিজিত রায়ের বিচার বহির্ভূত হত্যা মোটেও কাম্য নয়। দেশে #ব্লাসফেমি আইন চালু করা হোক যেন এরকম কোন ঘটনা আর না ঘটে এবং মুক্তমনার নামে এসব ক্রাইমেরও জন্ম না হয়।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাল লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ নিবেন|
হ্যা ২টা বিষয়েই পূর্ণ সহমত ।ধর্ম নিয়ে লেখালেখির জন্য বাংলাদেশে মোট ৩-৪টা ব্লগেই অনুমোদন দেয় ,
১. http://www.bd-today.net/blog
২. http://www.muslimbanglablog.net অথবা com
৩. http://www.shoadalap.org অথবা com
অন্যসব ব্লগ মুক্তমতের নামে ধর্মবিদ্ধেষীদের চাষাবাদ করে ।
২ কথাটার সাথে ও আমি পূর্ণ সহমত ।
http://www.shodalap.org
আর মুসলিম বাংলাব্লগে কি লেখা দিয়েছেন ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন