সহিংসতায় বিপর্যস্ত দেশ : সত্য কি আড়ালেই থাকবে
লিখেছেন লিখেছেন আমার পথ চলা ০৭ মার্চ, ২০১৩, ১০:২৫:১১ রাত
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে সৃষ্ট টালমাটাল অবস্থা দেশকে গভীর উদ্বেগজনক অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। দেশব্যাপী হরতাল, সহিংসতা, পুলিশ-বিজিবির গুলিতে হতাহতের ভয়াবহতার সঙ্গে শেষ পর্যন্ত যুক্ত হয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ঘর-বাড়ি ও উপাসনালয় ভাংচুর, আগুন দেয়ার নিন্দনীয় ঘটনা। এর আগে জাতীয় পতাকা ও শহীদ মিনার ধ্বংসের ঘটনাসহ এ সবের দায়ভার চাপানো হচ্ছে আন্দোলনকারী জামায়াত-শিবির, ক্ষেত্রবিশেষে বিএনপির ওপর। আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা ও দোষীদের শাস্তির দাবি করে অভিযোগ অস্বীকার করলেও এমন প্রচারণা থামার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সরকারও সুষ্ঠু তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন ছাড়াই বিরোধীদের ওপরই সবকিছুর দায় চাপাতে চাইছে। জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে ৬৭ জনের মৃত্যুর জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করেছেন। কোনো তদন্ত ছাড়াই একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর পক্ষে এমন বক্তব্য দেয়া নজিরবিহীনই বলা যায়। বগুড়ায় সেনা মোতায়েন নিয়ে তার সবজান্তা ভূমিকাও ছিল একই রকম। ‘বিশিষ্ট নাগরিক’ পরিচয়ে সরকারপন্থী বুদ্ধিজীবীরাও বসে নেই। তারাও একই সুরে গলা মিলিয়েছেন। আর প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে নৈরাজ্যকারীদের নামের তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী-যুবলীগ চেয়ারম্যান। অবশ্য তালিকা পাঠানোর আগেই যেভাবে সত্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে তাতে এখন অনেককেই মুখ লুকাতে হচ্ছে।
বগুড়ার শেরপুরে শহীদ মিনার ভাঙার সময় হাতেনাতে এক যুবলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। ছবিসহ তার নাম-পরিচয় ও ঘটনার বিবরণ প্রকাশ করেছে গতকালের আমার দেশসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকা। একইভাবে জানা গেছে, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের সরকারি কার্যালয়ে বোমা বিস্ফোরণে নিহত ও আহতদের পরিচয়। তারা যে বোমা বানাচ্ছিল সেটা এখন সবার জানা। ভাইস চেয়ারম্যানসহ এরা সবাই আওয়ামী লীগ ও দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য এখন বোমা হামলার নাটক সাজানো হচ্ছে। বরিশালের বাবুগঞ্জে সাহা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে হামলার জন্য ছাত্রলীগের ছেলেদেরই দায়ী করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। পার্শ্ববর্তী মন্দিরে আশ্রয় নিয়েও তারা মারধরের হাত থেকে রেহাই পাননি, এমন অভিযোগও উঠেছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রামগঞ্জ ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার হিন্দু সম্প্রদায়ের দু’টি বাড়ির ১৫টি ঘর আগুনে পুড়ে যাওয়া, মন্দিরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক দলের লোক জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এর সত্যতা স্বীকার করে এটি একটি চক্রের ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অংশ বলে উল্লেখ করেছেন। এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল শহরে ছাত্রলীগের পতাকা মিছিল থেকে ভিক্টোরিয়া রোডে অবস্থিত কসমস কম্পিউটার সেন্টারে ভাংচুর ও আগুন দেয়ার সময় ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিত্সাধীন থাকা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। নিরপেক্ষ তদন্তে এরকম আরও ঘটনার কথা প্রকাশ হয়ে পড়া অস্বাভাবিক নয়।
সম্ভবত এ কারণেই সরকার নিরপেক্ষ তদন্তের পথ এড়িয়ে চাপাবাজি করেই বাজিমাত করতে চাইছে। এর আগে রামুতে বৌদ্ধমন্দিরে হামলা-লুটপাট-অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়েও একই ভূমিকা পালন করেছে সরকার। সত্যকে আড়ালে রেখে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারই যে ক্ষমতাসীনদের লক্ষ্য, সেটাও এখন মানুষ বুঝতে শুরু করেছে।
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১২৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন