রায়পরবর্তী আইন সংশোধন যুদ্ধাপরাধের বিচার কলুষিত করবে: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (কিসের আলামত?)
লিখেছেন লিখেছেন আমার পথ চলা ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৩:৫১:২০ দুপুর
ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের প্রস্তাবে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকার আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় পরিবর্তন করে ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার দাবিতে সম্প্রতি ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়।
যুদ্ধাপরাধীদের দোষী সাব্যস্ত করা এবং বিচারের রায় দেবার পাশাপাশি প্রয়োজন ছাড়া অযথা শক্তি প্রয়োগ ও অস্ত্র ব্যবহার না করার জন্যও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে এইচআরডব্লিউ এর বিবৃতিতে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা নির্যাতন ও গুরুতর অপরাধের শিকার হয়েছেন তাদের অবশ্যই ন্যায়বিচার পাওয়া জরুরি। কিন্তু তাই বলে আদালতের দেয়া রায় অপছন্দ হবার কারণে সরকার তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নিতে পারে না। এ বিষয়ে সরকারের অবশ্যই সচেতন হওয়া উচিত। আইন সংশোধন করা হলে পুরো বিচার প্রক্রিয়া একটি হাসির বস্তুতে পরিণত হবে।”
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করা সংগঠন ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ও বিচার করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। অভিযুক্তরা বেশিরভাগই জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা যারা ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানের সমর্থনকারী হিসেবে স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করেছিল।
জানুয়ারির ২১ তারিখ এবং ফেব্রুয়ারি ৫ তারিখে যথাক্রমে আবুল কালাম আজাদ এবং আবদুল কাদের মোল্লার রায় ঘোষিত হয়। আবুল কালাম আজাদকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলেও কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
কাদেরের রায় ঘোষণা হবার পরেই সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ দলের সদস্য এবং অসংখ্য মানুষ রায়ের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে। বিশেষত তরুণসমাজ ঢাকার শাহবাগে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে।
সেই আন্দোলনের মুখে সরকার ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত কেবল আসামির বেকসুর খালাসের পরিপ্রেক্ষিতে বাদিপক্ষকে আপিলের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। সংশোধনে বাদিপক্ষকে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ দেয়া হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি সংসেদে সংশোধনের খসড়া উত্থাপন করা হয় যা আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে পাস হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
এইচআরডব্লিউ’র বিবৃতিতে বলা হয় “সংশোধনে International Covenant on Civil and Political Rights এর ধারা ভঙ্গ করা হয়েছে। এ আইনের ১৪ ধারা অনুসারে একবার রায় ঘোষণা হয়ে গেলে কোনো সদস্য রাষ্ট্রই অভিযুক্ত বা বেকসুর খালাস পেয়ে যাওয়া আসামির বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ গঠন বা মামলা পরিচালনা করতে পারবে না। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এ আইনের একটি সদস্য রাষ্ট্র।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দেবার আহ্বান জানিয়েছেন। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, আইনটি এমনভাবে সংশোধন হয়েছে যাতে অভিযুক্ত আসামি এবং সরকার কোনো পক্ষেরই অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয়। সংশোধনের খসড়া উত্থাপন করার পর ডেপুটি স্পিকার বলেন, “সংশোধনে সংসদের প্রতিফলন স্পষ্ট।”
শাহবাগের আন্দোলনকারীরা জামায়াত ও শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি তারা জামায়াত পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, শেখ হাসিনার মন্তব্য এবং সরকার সমর্থিত আন্দোলনকারীদের কারণে ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হতে পারে। তারা আরো আশঙ্কা প্রকাশ করে যে, রায়ের অপেক্ষায় থাকা মামলাগুলোতে বিচারকেরা মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কোনো রায় দিতে ভয় পেতে পারে।
অ্যাডামস বলেন, “সরকার এখন সরাসরি বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছে। ১৯৭১ এ সংগঠিত অন্যায়ের বিচার হওয়া জরুরি কিন্তু যদি তাতে গণতান্ত্রিক মূলনীতি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তবে সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”
বিচার চলাকালে শিবিরের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শিবির সমর্থকরা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে হাতে তৈরি বোমা ছুঁড়েছে। পুলিশও সংঘর্ষের মাধ্যমে পাল্টা জবাব দিয়েছে।
জামায়াত নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা নয়া দিগন্তের অফিসে তাণ্ডবের ঘটনা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে বিশ্বস্ত সূত্রে পৌঁছেছে। ১২ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান যিনি রাবার বুলেটের কারণে তার বুকে ভয়ানক আঘাত পান। এছাড়া দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় সরকারবিরোধী খবর ছাপা হবার কারণে পত্রিকাটিকে হুমকি দেয়া হয়েছে বলেও তাদের তথ্যে উল্লেখ করা হয়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শক্তি ও অস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়ে জাতিসংঘ নির্ধারিত নীতিতে বলা আছে, একমাত্র নিজেদের আত্মরক্ষা এবং অন্য কারো আহত হওয়া বা জীবননাশের আশঙ্কা ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে অস্ত্র ও শক্তি ব্যবহার করা যাবে না।
অ্যাডাম বলেন, “যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া বাংলাদেশের জন্য একটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হওয়া বিষয়। রায়ের পক্ষে এবং বিপক্ষে থাকা উভয় দলের লোকেরাই মনে করছেন যে তাদেরকে অসন্তুষ্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের এ বিষয়ে নিরাপত্তা কর্মীদের প্রতি সুনির্দিষ্ট নির্দেশ প্রদান করা উচিত, যাতে তারা তাদের দায়িত্ব পালনে সংযমের পরিচয় দেয়"।
Click this link
বিষয়: বিবিধ
৯৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন