তিন ইস্যুতে জনসমর্থন হারাচ্ছে আওয়ামী লীগ : ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর
লিখেছেন লিখেছেন আমার পথ চলা ১৮ জুলাই, ২০১৩, ১০:১৩:৫৮ সকাল
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনটি ইস্যুতে জনসমর্থন হারাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।
সংবাদপত্রটির অনলাইন সংস্করণে বুধবার ‘কুড বাংলাদেশ প্রটেস্টস আপেন্ড দ্য গভর্নমেন্ট’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, বিতর্কিত যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে সমালোচনা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বিরোধিতা করায় আওয়ামী লীগের জনসমর্থন কমছে। অনেক বিশ্লেষক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এসব কারণে সৃষ্ট উত্তেজনায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অর্জন বিফলে যেতে পারে।
বিক্ষোভের কারণে বাংলাদেশ বার বার অচল হয়ে পড়ছে। এতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টারত বাংলাদেশের গার্মেন্টশিল্পের ক্ষতি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অবরোধ ও ধর্মঘটের কারণে শুধু ভারতেই ৫০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানির আদেশ চলে গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সমালোচনা করছে এই বলে যে, এখানে বিচারে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করা হয়নি। ন্যায়বিচারের পরিবর্তে এখানে সরকারের প্রতিপক্ষকে টার্গেট করা হয়েছে। যদিও সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করছে, তবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যে ১০ জনের বিচার হচ্ছে, তাদের আট জনই জামায়াত এবং তাদের মিত্র প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শীর্ষ ইসলামপন্থী নেতা গোলাম আযমকে ৯০ বছর কারাদণ্ড দেয়ার পর বিক্ষোভ চলছেই। এতে আশঙ্কা বাড়ছে যে, দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আরো বাড়তে পারে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করলেও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর এখনো প্রভাব রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সম্প্রতি যে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে, তার প্রধান কারণ ২০১০ সালে স্থাপিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সরকার বলছে, ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ নিহত হয়েছে।
বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার
ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত:বিবিসি
যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে বিবিসি বলছে, বাঙালি জাতীয়তাবাদ এখন চ্যালেঞ্জের মুখে।বুধবার বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এই মন্তব্য করা হয়।
বিবিসি এমন সময় এই নিবন্ধ প্রকাশ করলো, যখন বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জনসমর্থন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
সম্প্রতি দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি ঘটেছে। এমনকি এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট পাঁচ প্রার্থীই নিজ নিজ কেন্দ্রে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয়ের সম্ভাবনা প্রবল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন।
বিবিসির অনলাইন সংস্করণে ‘গোলাম আযম : ওয়ার ক্রাইম ট্রায়াল দ্যাট এক্সপোসড বাংলাদেশ স্কারস’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, ‘শাহবাগ আন্দোলনের তরুণ ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ইসলাম ও মহানবীকে অবমাননার। এ ধরনের একজন ব্লগার রাজীব হায়দার (ওরফে থাবা বাবা) তরুণ ইসলামপন্থীদের হাতে নিহত হন। নবগঠিত হেফাজতে ইসলাম শাহবাগিদের ইসলামবিরোধী বলে আখ্যায়িত করে।’
নিবন্ধে বলা হয়, এর ফলে দেশজুড়ে ইসলামি জাগরণ তৈরি হয়। এতে জল্লাদের মুখে থাকা জামায়াতের প্রবীণ নেতাদের সম্পর্কে সহানুভূতি তৈরি হয়। বিএনপি আবেগের বশে এবং রাজনৈতিক লাভের আশায় ইসলামপন্থীদের পেছনে দাঁড়িয়েছে এবং যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। কার্যত ধর্মনিরপেক্ষ দল হলেও বিএনপি ইসলাম ইস্যুতে সরকারকে তুলাধোনা করেছে। দৃশ্যত ১৯৭১ সালে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এটা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগ আবার ধর্মনিরপেক্ষতা পুনর্জীবিত করতে চাইলে তাও আবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধের বিচার এগিয়ে নিতে চায়।
নিবন্ধে বলা হয়, আবেগ ও রাজনৈতিক লাভের আশায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধের বিচার করার অঙ্গীকার করেন। প্রথমত, এতে আওয়ামী লীগ যে স্বাধীনতার পক্ষের দল বলে দাবি করে তা যথার্থ হবে এবং দ্বিতীয়ত এতে বিএনপির শরিক জামায়াতকে কোণঠাসা করা যাবে।
যুদ্ধাপরাধের বিচার বাংলাদেশের সমাজকে তিক্তভাবে বিভক্ত করেছে বলে মন্তব্য করে নিবন্ধে বলা হয়, গোলাম আযমের বিচারের মাধ্যমে হয়তো বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি রক্তাক্ত অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে। তবে এতে ১৬ কোটি জনসংখ্যার প্রধানত মুসলিম অধ্যুষিত দেশটিতে গভীর বিভাজনই স্পষ্ট হয়েছে।
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১৫০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন