বিরোধী দলের দাবির (তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির পক্ষের) প্রতি রায়

লিখেছেন লিখেছেন আমার পথ চলা ১৬ জুন, ২০১৩, ০৮:১৫:৪৩ সকাল



বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া শনিবার দেশের চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে আরো একবার প্রমাণিত হলো বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রমনা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর বেপরোয়া কার্যক্রম না থাকলে জনগণ শান্তি বজায় রাখতে পারে। বিজয়ী প্রার্থীদের অভিনন্দন।

চার সিটি করপোরেশনের সব কটিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দল-সমর্থিত প্রার্থীরা বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। এটা সরকারের জন্য একটা বড় বার্তা। কেননা, বিরোধী দল এই নির্বাচনকে নিয়েছিল তাদের দাবি আদায়ের আন্দোলনের অংশ হিসেবে। একইভাবে সরকারের কাছে এই নির্বাচন ছিল জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাধ্যম। এ হিসাবে এক অর্থে সরকারি দল পরাজিত হয়েছে। সরকার এখন বিরোধী দলের দাবির প্রতি গুরুত্ব দেবে বলেই আমরা মনে করি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে বাহাস চলছে দুই বছর ধরে। সরকারের দাবি, এই ব্যবস্থা জনগণের স্বার্থে বাতিল করা হয়েছে। বিরোধী দল বলছে, এই ব্যবস্থা পুনর্বহাল জনগণের দাবি। দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের জরিপে এসেছে, ৯০ শতাংশ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীদের একচেটিয়া বিজয় ওই দাবিকে যেন মূর্ত করে তুলল।

দেশের মানুষ যে সরকারের কর্মকাণ্ডকে সব সময় নজরে রাখে, তা আমাদের শাসকেরা মনে রাখেন বলে মনে হয় না। নব্বই-পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে জনগণের এই সচেতনতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। ’৯১-৯৬ সময়ের বিএনপির শাসনামলে হতাশ মানুষ পরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়ী করেছিল। একইভাবে জনগণকে হতাশ করার ফল আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২০০১ সালের নির্বাচনে। কিন্তু ইতিহাস থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর শিক্ষা নিতে আমরা দেখি না। তাই পরবর্তী সময়ে বিএনপি এর প্রতিফল পেয়েছে।

এবার আমরা দেখছি, আওয়ামী লীগ সরকার যেন সবকিছু ছাপিয়ে গেল। একের পর এক দুর্নীতির খবর, দলীয় অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের নৈরাজ্য, পুলিশকে বেপরোয়া করে তোলা ইত্যাদি কারণে সরকারের ভাবমূর্তি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্বিচার দমন-পীড়নও জনগণ ভালো চোখে দেখেনি।এর সঙ্গে গণজাগরণ ও হেফাজত ইস্যুতে এক জগাখিচুড়ি অবস্থা তৈরি হয়েছে। এসব কারণই মূলত সিটি নির্বাচনের পরাজয়ের কারণ বলে আমাদের মনে হয়।

দেশের সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রধান কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে এবার ক্ষমতাসীন দল গুরুত্ব না দিয়ে পারবে না। সরকার যে এত দিন বলে আসছে বিরোধ দল গণবিচ্ছিন্ন, তাদের দাবির প্রতি জনগণের সমর্থন নেই, চার সিটির নির্বাচনের পর তা আর বলার সুযোগ নেই তাদের। বিষয়টি সরকার অনুধাবন করবে বলে আমরা মনে করি।

চার সিটির নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বিরোধী দলের দাবির প্রতি সহানুভুতিশীল। সরকার এই জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আগামী নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার জন্য এখনই উদ্যোগ নেবে বলে আশা করি।

বিষয়: বিবিধ

১৫০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File