মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা আজ কোথায়? কোথায় সেই সকল দালালের দল? সাত শ্রেষ্ঠ বীর শহীদের একজনের শাহাদা‍ৎ বরণের দিন চলে গেলো

লিখেছেন লিখেছেন আমার পথ চলা ২১ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:২৩:৪৪ রাত

২০ এপ্রিল বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ - এর শাহাদা‍ৎ বরণের দিন চলে গেলো । অতিব দুঃখের বিষয় সাত শ্রেষ্ঠ বীর শহীদের একজন তিনি তাকে নিয়ে তেমন কোন লেখা চোখে পড়ল না।

ইতিহাস হলো একটি জাতির দর্পন। ইতিহাস অসচেতন জাতি কোন দিন প্রকৃত দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উজ্জীবিত হতে পারে না। মুখে বা লেখনি দিয়ে আমরা ঢোল পিটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যতই জিকির তুলি না কেন তা যে আমাদের দেশ প্রেমিক ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ বলে প্রচার করে সাধারন মানুষকে ধোঁকা দেয়ার একটি ফন্দি ছাড়া আর কিছুই নয় তার প্রমান ২০ এপ্রিল বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ - এর শাহাদাত বরণের দিন চলে গেলো কোন উল্লেখ করার মত স্বরন না করার মাধ্যমে। যে স্বাধীনতা আজ আমরা ভোগ দখল করে বুক ফুলিয়ে হাঁটছি মাঝ রাস্তা দিয়ে, সেই স্বাধীনতার জন্য জাতি শ্রেষ্ঠ বীর শহীদের একজনের শাহাদাত বরণের দিন মনে করে না তারা কি সত্যিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধানর করে? কতটা বেঈমান আর নির্লজ্জ হলে এমনটা দেখা যায়?

অনেককে দেখা যায় প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবক দিতে, সেই সকল চেতনার ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের নিকট প্রশ্ন সাত শ্রেষ্ঠ বীরদের একজনের শাহাদাৎ বরনের দিনটিতে আপনাদের মুখ বা লেখনিতে শ্রেষ্ঠ বীরের জন্য কি একটু জায়গা বা দু’কথা ছিল না,এটাই কি আপনাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

আজ যারা নিজেদের চেতনার ধারক-বাহক বলে জাতির সামনে নিজেদের প্রকাশ ঘটান, আপনাদের কর্ম-কান্ড দেখলেতো মনে হয় আপনারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে একটি দোকান খুলে বসেছেন। এই ছোট্র প্রশ্নটির কি কোন উত্তর আপনাদের নিকট আছে?

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ(১৯৪৩ - এপ্রিল ৮, ১৯৭১) : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

সংক্ষিপ্ত জীবনী

মুন্সি আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের মে মাসে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার (পূর্বে বোয়ালমারী উপজেলার অন্তর্গত) সালামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্সি মেহেদী হোসেন এবং মাতার নাম মকিদুন্নেসা। কিশোর বয়সে রউফ-এর পিতা মারা যান। ফলে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। তিনি অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৩-র ৮ মে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এ ভর্তি হন। তাঁর রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ১৩১৮৭। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে চট্টগ্রামে ১১ নম্বর উইং এ কর্মরত ছিলেন। সে সময় তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেন।

যেভাবে শহীদ হলেন

৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পনীর সাথে বুড়িঘাটে অবস্থান নেন পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি জলপথ প্রতিরোধ করার জন্য ৮ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের দুই কোম্পানী সৈন্য, সাতটি স্পীড বোট এবং দুটি লঞ্চে করে বুড়িঘাট দখলের জন্য অগ্রসর হয়। তারা প্রতিরক্ষি বূহ্যের সামনে এসে ৩" মর্টার এবং অন্যান্য ভারী অস্ত্র দিয়ে হঠাৎ অবিরাম গোলা বর্ষন শুরু করে। গোলাবৃষ্টির তীব্রতায় প্রতিরক্ষার সৈন্যরা পেছনে সরে বাধ্য হয়। কিন্তু ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ পেছনে হটতে অস্বীকৃতি জানান। নিজ পরিখা থেকে মেশিনগানের গুলিবর্ষণ শুরু করেন। মেশিনগানের এই পাল্টা আক্রমণের ফলে শত্রুদের স্পীড বোট গুলো ডুবে যায়। হতাহত হয় এর আরোহীরা। পেছনের দুটো লঞ্চ দ্রুত পেছনে গিয়ে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে শুরু করে দুরপাল্লার ভারী গোলাবর্ষণ। মর্টারের ভারী গোলা এসে পরে আব্দুর রউফের উপর। লুটিয়ে পড়েন তিনি, নীরব হয়ে যায় তাঁর মেশিনগান। ততক্ষণে নিরাপদ দূরুত্বে সরে যেতে সক্ষম হন তাঁর সহযোদ্ধারা।

শহীদ ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি পার্বত্য জেলা রাঙামাটির নানিয়ার চরে। তাঁর অপরিসীম বীরত্ব,সাহসীকতা ও দেশপ্রেমের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্ব্বোচ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে।

বিষয়: বিবিধ

১০৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File