নববর্ষে ছাত্রলীগ কর্মীদের চাঁদাবাজি (সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত পাঁচ সাংবাদিক)
লিখেছেন লিখেছেন আমার পথ চলা ১৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:০২:০৫ রাত
পয়লা বৈশাখের নামে রাতভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজি করেছেন ছাত্রলীগের কিছু কর্মী। এই চাঁদাবাজির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের পাঁচ সংবাদকর্মী।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের ২১ নেতা-কর্মীকে চিহ্নিত করেছে। তাঁদের মধ্যে ছয়জনকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। তবে ছাত্রলীগের কর্মীরা দাবি করেছেন, তাঁরা ছিনতাই করছিলেন না, তবে গাড়ি থামিয়ে নববর্ষ উপলক্ষে কিছু ‘বকশিশ’ তুলছিলেন।
আহতরা হলেন: প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ জায়িফ, ডেইলি স্টারের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক প্রতীক চক্রবর্তী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মলয় কুমার দত্ত, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সুজন মন্ডল ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী দুলাল সমদ্দার। এ ছাড়া ছাত্রলীগ কর্মীদের নিবৃত্ত করতে গেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শরিফুল হাসানের ওপরও তাঁরা হামলা চালান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল এবং এস এম হলের শিক্ষার্থীরা এবং আহত সাংবাদিকেরা জানান, গতকাল শনিবার দিবাগত রাত থেকে আজ রোববার ভোর পর্যন্ত ফুলার রোডে এস এম হল শাখা ছাত্রলীগের ১০-১২ জন নেতা-কর্মী ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া রিকশা, রিকশাভ্যান, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে পয়লা বৈশাখের নামে চাঁদা তুলছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ খবর পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকেরা ভোর সাড়ে চারটার দিকে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা একটি মোটরসাইকেল থামানোর চেষ্টা করছিলেন। সাংবাদিকেরা তখন তাঁদের পরিচয় জানতে চান।
এ সময় তাঁরা নিজেদের এস এম হল ছাত্রলীগের কর্মী বলে পরিচয় দেন। সেখানে থাকা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আসিফকে ওই বিভাগের ছাত্র ও প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আহমেদ জায়িফ জিজ্ঞাসা করেন, ‘গণযোগাযোগের শিক্ষার্থী হয়ে তুমি ছিনতাই করছ কেন?’"
পরে আসিফকে নিয়ে জায়িফসহ অন্য সাংবাদিকেরা জগন্নাথ হলের দিকে হাঁটতে শুরু করেন। তখন এস এম হলের ছাত্রলীগের কর্মীরা এসে আসিফকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তাঁরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালান।
খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমজাদ আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ ঘটনাস্থলে আসেন। তবে এর আগেই ছাত্রলীগের কর্মীরা এস এম হলের দিকে চলে যান।
পরে প্রক্টর ও ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা এস এম হলের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নিজামুল ইসলাম দিদারের মাধ্যমে হামলাকারী শামীম (ইংরেজি), ঐতিহ্য (ইতিহাস), আসিফ উদ্দিন আহমেদ (গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা), তানভির (ফিন্যান্স), মুরাদ (ফিন্যান্স) ও তাপসকে চিহ্নিত করেন। তাঁরা সবাই দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
এই ছয়জন দাবি করেন, তাঁরা ছিনতাই করছিলেন না, তবে গাড়ি থামিয়ে নববর্ষ উপলক্ষে কিছু ‘বকশিশ’ তুলছিলেন। কিন্তু পরে অন্যরা এসে সাংবাদিকদের মারধর করেন।
চাঁদাবাজি ও হামলার ঘটনায় জড়িত হিসেবে আরও যাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে তাঁরা হলেন শাহীন (অর্থনীতি), শাহাদত (আইন), সাইদ (সংগীত বিভাগ), পলাশ (মাস্টার্স), নাহিদ (চতুর্থ বর্ষ), হাসান (ইসলামিক স্টাডিজ), রাসেল (মাস্টার্স), ওবায়দুল (মাস্টার্স, সমাজবিজ্ঞান), ওসমান (মাস্টার্স, সমাজবিজ্ঞান), জামান (মাস্টার্স), লিটন (দর্শন)। এ ছাড়া রয়েছে আলমগীর, বান্না, পিকুল ও রাসেল। এঁরা সবাই এস এম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী সাংবাদিকদের জানান, ছিনতাইয়ের প্রতিবাদ করার কারণেই সাংবাদিকেরা হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযুক্তরা স্বীকার করেছেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আমরা চিহ্নিত করেছি। তাঁদের ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।’ এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিধি অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও তিনি আহ্বান জানান।
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১০৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন