ভার্চুয়াল মূদ্রা বিট-কয়েন এবং অন্যান্য! পাগলদের জন্য পড়া আবশ্যক!
লিখেছেন লিখেছেন পটাশিয়াম নাইট্রেট ২০ জুলাই, ২০১৭, ০৮:৪৪:১৯ সকাল
প্রথমেই বলে রাখি, বিষয়টা মাথার উপর দিয়ে গেলে আমি দায়ী নয়।
গত ক'দিন ধরে ব্লক-চেইন মাথাটা ব্লক করে রেখেছে। এই ব্লক চেইন টেকনোলজীতে ২০০৯ সালের দিকে এক জাপানী সৃষ্টি করে বিট-কয়েন নামের ভার্চুয়াল মুদ্রা। বিষয়টা ২০১০ এর দিকে আমারা নজরে আসে। তখন এক ডলার দিয়ে হাজার খানেক বা তারো বেশী বিট-কয়েন কেনা যেত। অনলাইনে কাজ করার সুবাদে পে-পালে কিছু ডলার সবসময় থাকতো। দু-চার ডলার দিয়ে মাঝে-মধ্যে বিট-কয়েন কিনতাম আবার বেচে দিতাম । কয়েক ডলার মূল্যের হাজার-হাজার বিট-কয়েন কেনা-বেচা করে এক ধরনের সুখ পেতাম। ২ - ৪ ডলার বিনিয়োগে লাভ-লসের হিসাব কখনো করা হয়নি। আমার মনে হয়েছিল এই বিট-কয়েন একদিন হয়তো ৫০ সেন্ট বা ১ ডলার ও হয়ে যেতে পারে। ছোট মানুষ, তাই সাহস করে কাউকে বলা হয়নি, যদি পাগল ভাবে? এরপর কিভাবে যেন বিষয়টা
অন্যান্য পাগলামীর ভীড়ে হারিয়ে যায়।
২০১৩ সালের দিকে বিট-কয়েনের দিকে আবার নজর যায়। ১ টা বিট - কয়েনের মূল্য তখন ২০ ডলারের কাছাকাছি। নিজেকে খুব বোকা মনে হল। ইস! আগের হাজার-হাজার বিট-কয়েন যদি রেখে দিতাম! ২০ ডলার মূল্য অতিরিক্ত মনে হল। তাই কেনার সাহস করলামনা। একেতো ডিজিটাল কারেন্সী! কোন দেশ এই মূদ্রার মালিক ও নয়। যদি ধ্বস নামে তবেতো ১ পয়সা ও ফেরত পাওয়া যাবেনা। আবারো কেন যেন আগ্রহ হারালাম। হয়তো নিশ্চিত মিলিয়নার হবার সুযোগ হাতছাড়া হবার দূ:খ ভোলার জন্যই!
এর পর ২০১৫ সালের দিকে বিট-কয়েনের মুল্য প্রায় ৩০০ ডলার। যথারীতি নিজেকে রাম-ছাগল মনে হল। কিন্তু কি করা ! আমার পক্ষে এত রিস্ক নেয়ে অসম্ভব। তারপর ও কি মনে করে যেন ১ বিট-কয়েন = ২৮০ ডলারে ২ টা বিট- কয়েন কিনলাম। এর পর দাম হু-হু করে বাড়তে লাগলো। লোভ সামলাতে না পেরে ২ টা ৮০০ ডলারের কাছা-কাছি মূল্যে বেচে দিয়েছলাম। বাকীটা ইতিহাস!
২০১৭ এর জানুয়ারীর দিকে ১ টা বিট-কয়েনের মূল্য উঠেছিল ৩৫০০ ডলারের উপরে। এই মুহুর্তে ২৩৪৫ ডলার! এখনো যথারীতি রিস্ক নেয়া সম্ভব না। লোকে বলছে একদিন ১ টা বীট-কয়েনের মূল্য হবে অর্ধ-মিলিয়ন ডলার!
ক্রিপ্টোকারেন্সীর দুনিয়ার এখন কয়েকশত ডিজিটাল কারেন্সী রয়েছে, যেমন, ইথিরিয়াম, লাইট কয়েন, রিপল, ডগি-কয়েন, রেড কয়েন ইত্যাদি। বেশির ভাগের মূল্যই শুরুর দিকের বিট-কয়েনের মত বা আরো কম! এদের কোন-কোনটা হয়তো একদিন বীট-কয়েনের মত হবে। ইথিরিয়াম বেশ প্রমিজিং। বর্তমান মূল্য প্রায় ৩০০ ডলার। শুরুটা বীট কয়েনের মতই হয়েছিল। ১ ডলারে হাজার খানেক পাওয়া যেত। লাইট কয়েনের মূল্য প্রায় ৫০ ডলার। এগুলু সবগুলুই অনেকদূর যাবে আগামী ৫ বছরে। কিন্তু আমার পক্ষে যে এত রিস্ক নেওয়া সম্ভবনা!
তাই কম মুল্যের একটাকে বেছে নিলাম, রীপল। ১৬/১৭ সেন্টে হাজার খানেক কিনলাম গত দুইদিনে। আগামী ৫ বছরে মাটি কামড়ে পড়ে থাকবো। এবার শেষ দেখার ইচ্ছা আছে।
হয়তো বীট-কয়েন, ইথিরিয়াম, লাইট কয়েন, রিপল ধ্বসে যাবে। কিন্তু ব্লক চেইন প্রযুক্তি খুব দ্রুতই পাল্টে দিচ্ছে উন্নত দুনিয়ার অর্থনৈতিক লেনদেন, কম্পিউটিং সহ অনেক কিছুই। ইন্টারনেট-অব-থিং এর পর যোগ হচ্ছে ইন্টারনেট-অব-ভ্যালু। ফেসবুকে লাইক বা শেয়ারের অর্থনৈতিক মূল্য থাকবে। যা আপনি পাবেন বা দিবেন কোন ক্রিপ্টও কারেন্সীতে যেমন, রেডকয়েন (Reddcoin)। টুইটার অলরেডি চালু করেছে।
ব্যাংক অব আমেরিকা, ইউ বি এস, ষ্ট্যান্ডার্ড-চার্টাড সহ বিশ্বের ৭৫ টি ব্যাংক রীপল এর মাধ্যমে বৈদিশিক মূদ্রা লেনদেন শুরু করেছে যা প্রচলিত সুইফট প্রটোকলের চাইতে লক্ষগুন দ্রুত, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী।
ইউরোপ - আমেরিকার প্রায় সকল বড় বড় প্রতিষ্ঠান বীট-কয়েনে লেনদেন করছে। আপনি চাইলে নিউইয়র্ক বা সানফ্রান্সিসকোতে বিট-কয়েনে পীজা কিনতে পারেন। পারেন আ্যামজন বা আলী-বাবাতে কিছু কিনতে।
ক্রিপ্টো কারেন্সী যেভাবে মেইন ষ্ট্রীমে আসছে তাতে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি একদিন কাগজের মূদ্রা থেকে ডিজিটাল কারেন্সীতে কনভার্ট হয়ে যাবে অথবা প্যারালাল কারেন্সী হয়ে যাবে খুব সহসাই।
সময় পেলে একদিন আরো বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে। বিশেষ করে টেকনিক্যাল দিকগুলা নিয়ে।
বিষয়: বিবিধ
২২২৯ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন