তৃতীয় যুদ্ধ সিরিয়ায় আরম্ভ না হলে ও ফেসবুকে চলছে!
লিখেছেন লিখেছেন পটাশিয়াম নাইট্রেট ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৮:৩১:১৮ সকাল
ফেসবুকে প্রতি মিনিটে মিনিটে আপডেট ! "এই মাত্র সিরিয়ার ১৪ জন খতম!: , "লক্ষ-লক্ষ মুসলিম সৈন্য নির্দেশের অপেক্ষায় !", "রাশিয়ান বাহিনী পিছু হটেছে!" ইত্যাদি। বেশির ভাগই মাত্রাতিরিক্ত আবেগ মিশ্রিত, কাল্পনিক এবং মিথ্যা। আমি বুঝিনা কি সুখ পান ঊনারা? বেশির ভাগ বাংলাভাষী ফেসবুক যোদ্ধারা লড়ছেন সিরিয়া এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে! এ ব্যপারে কাফের আমিরিকা, ইহুদী ঈসরাঈলের পক্ষ নিতে কোন সমস্যা নয়!
সৌদি আরব যেই মুহুর্তে আসাদের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য তার জঙ্গী বিমানে জ্বালানী ভরছে সেই একই মুহুর্তে ইয়েমেনে সৌদি যুদ্ধ বিমানের নির্বিচার আক্রমণে কাবাব হচ্ছে মুসলমানারাই। কি দারুণ!
এই সৌদি-আরবের প্রভু ঈসরাঈল-আমেরিকার ইঙ্গীতেই বর্তমানে সিরিয়া আক্রমণের প্রস্ততি চলছে।
ঈসরাঈল মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-সিরিয়া আর হিযবুল্লাহ্কেই তো হুমকী মনে করে, না কি? তাই অন্য মুসলিম শক্তি দিয়ে ঈসরাঈলের তিন শত্রূকে খতমের এমন অসাধারণ সুযোগ কি আর আমেরিকা-ঈসরাঈলের জন্য আর আসবে? আফাগানিস্তানে আমেরিকা আমাদের দুশমন আবার সিরিয়ায় দোস্ত। ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আর কাকে বলে?
হেযবু্ল্লাহ্ যখন ২০০৬ এ ঈসরাঈলকে ঘোলা পানি খাওয়ালো , আমাদের উম্মাদন দেখে মনে হচ্ছিল হেযবুল্লাহ্র একেকজন সৈনিক যেন আসমান থেকে ইহূদীদের জন্য মূর্তিমান আতংক হয়ে নেমে এসেছে। আর এখন হেযবুল্লাহ্ কাফের!
কিছু দিন আগের গাজা যুদ্ধে হামাস যখন ঈসরাঈলের অভ্যন্তরে ইরানী ফজর মিসাঈল ছুঁড়ে ঈসারঈলের মনে আতংক তৈরি করেছিল তখন মনে হচ্ছিল , এ সাহায্য ইরান থেকে নয়, আল্লাহ্র পক্ষ থেকে এসেছিল। আর আজকে সিরিয়ার প্রেক্ষাপটে ইরানীরা শিয়া , মুসলিম নয়।
বাশার আল আসাদ জঘণ্য হত্যা কান্ড নিজ জনগণের উপর চালিয়েছে এবং সে সিরিয় জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেনা। আমি ও তার ধ্বংস চাই। তবে তূর্কী-সৌদি জোট বাশারকে হটাতে চায় তার কারণ কি বাশারের অত্যাচার? না কি প্রভাব বিস্তারের নকশা ? ইরান - রাশিয়া ও একই কারণে বাশারের জন্য মরিয়া। মোদ্দা কথা এই যুদ্ধে কোন পক্ষই অত্যাচারিত মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় লড়ছেনা এটা আমাদের বোঝা দরকার। এরা কেউই মুসলমানদের বন্ধু নয়। রাশিয়ানরা চেচনিয়ায় কি করেছে? দাগেস্তানে কি করছে তা খেয়াল রাখা দরকার।
সিরিয়াতে কে কার বিরুদ্ধে কেন লড়ছে তা বেশ জটিল। কে যে সত্যি আল্লাহ্র পক্ষে লড়ছে তা বোঝা আরো মুশকিল। এমন ভয়াবহ রকমের কনফিউশনে আবেগে গা না ভাসিয়ে আমাদের চুপ থাকা দরকার। এরকম ফেতনার সময় চুপ থাকার বিষয়ে রাসুলুল্লাহ্র একটি হাদিস ও রয়েছে।
বর্তমান উত্তেজনা আসলেই বড় রকমের যুদ্ধের দিকে যায় কিনা আল্লাহ্ই ভাল জানেন। তবে যদি সেদিকেই যায় আমার ব্যাক্তিগত মতামত হচ্ছে সিরিয়াতে যেসব ইসলামিক মিলিশিয়া দল লড়ছে তার কোন একটাই হয়ত এই বিশৃংখলার মধ্য দিয়ে প্রকৃত কালো-পতাকাধারী হিসেবে দৃশ্যমান হবে। তাই আমাদের দোয়া করা উচিৎ বর্তমান ভয়াবহ অবস্হা থেকে যেন আল্লাহ্ আমাদের হেফাযত করেন। কোন দেশই এখানে ইসলামের টানে ছুটে আসেনি। সবার হাতেই মুসলমানের রক্তের দাগ।
রাসুলুল্লাহ্ [সা:] একটা ভয়াবহ যুদ্ধের কথা বলেছিলেন। যে যুদ্ধে মুসলমানদের সাথে রোমানদের এক পক্ষের সাথে চুক্তি হবে যারা একত্রে অন্য খৃষ্টান পক্ষের বিরুদ্ধে লড়বে। সে যুদ্ধে মুসলিম-খৃষ্টান জোট জয় লাভ করবে। এর পর মুসলমানদের সাথে চুক্তি ভেঙ্গে সবাই এক হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়বে।হাদিসে যাকে বলা হয়েছে মালহামা। খৃষ্টান-ইহুদীরা এ যুদ্ধকে আর্মাগেডন হিসেবে জানে। মুসলামানদের বিশাল একটা অংশ এ যুদ্ধকে সেই মহাযুদ্ধের প্রথম ধাপ মনে করছেন।
হতে পারে এটা একেবারেই সত্যি নয়। আবার মিথ্যা বলার মত যুক্তি ও খুব বেশি হাতে নেই। যদি সত্যি হয় তবে অংকটা মেলানো খুব কঠিন না ও হতে পারে। এর পর ও চূড়ান্ত মন্তব্য করার জন্য পর্যাপ্ত জল এখনো গড়ায়নি।
বিষয়: বিবিধ
১৪২৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি এরদোগানের ভুমিকা নিয়ে কনফিউসড ছিলাম, কিন্তু সেদিন আমেরিকাকে নিয়ে মন্তব্যের পর ক্লিয়ার হলাম।
আমেরিকা/ইসরাইল একদিক দিয়ে তুরস্কের পক্ষে আবার অন্য দিক দিয়ে তুরস্কের জন্য হুমকীস্বরূপ কুর্দীদেরও সহায়তা করছে!! তার মানে কি? কুর্দীদেরকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে তুরস্ক এবং সৌদির বিরূদ্ধে। অর্থ্যাৎ এ যুদ্ধে যে কোন উপায়ে লিপ্ত করাই মূল উদ্দেশ্য। দেখি সামনে কি হয়?
মন্তব্য করতে লগইন করুন