সিরিয়ার যুদ্ধ এবং আদার ব্যপারীর জাহাজের খবর ....
লিখেছেন লিখেছেন পটাশিয়াম নাইট্রেট ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৯:১৬:৫১ সকাল
আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর রেখে কি লাভ এমন টিপ্পনী এড়াতেই এ বিষয়টাতে খুব একটা লেখা হয়না। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যায় করি সংবাদ দেখে, এ বিষয়ে ইউটিউবে বিভিন্ন লেকচার দেখে আর বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ে। উদ্দেশ্য ! বিষয়টা যদি মাথায় একটু ঢুকে!
সিরিয়ার বর্তমান অবস্থার মত এমন জটিল সমিকরণ পৃথিবীর ইতিহাসে কখনো হয়েছিল কিনা কে জানে? আপনি-আমি সিরিয়াতে কাকে সমর্থন দেব তাতে কারো কিছু যায় আসেনা। তার পরও আপনি যদি আমাকে বলেন একটা পক্ষ নিতে তা আমার পক্ষে সম্ভন নয়। কঠীন! খুবই কঠিন !
তবে সিরিয়ার বিষয়ে আমার কিছু উপলব্ধি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। ইসলামিক এসকাটলজিষ্ট, ইহুদী-খৃষ্টান সবাই একমত যে, আর্মাগেডন , মালহামা বা শেষ মহাযুদ্ধের কেন্দ্র দামেস্ক, তথা সিরিয়ায়! কোন পক্ষ মাহদী-ঈসার পক্ষ, কোন পক্ষ দাজ্জাল বা এন্টি- খৃষ্ট সেটা নিয়ে সবাই নিজেদেরকে খৃষ্টের (ঈসার) পক্ষের মনে করে। সেটা ভিন্ন আলোচনা। তবে ঘটনার ক্ষেত্র যে সিরিয়া এবং সংলগ্ন এলাকা সে ব্যাপারে সবাই একমত।
গত চার বছর ধরে দেখছিলাম, যেন এক মহা পরিকল্পনা অনুসারে সবাই একে একে সিরিয়াতে জড় হচ্ছে। অনেক নাটকিয়তা শেষে সিরিয়ার রাশিয়ার সামরিক অভিযানে বিদ্রোহীদের পতনে গল্পের আপাত: সমাপ্তি হতে পারতো। এই মুহূর্তে সিরিয়ায় আই এস আই দমনের নামে সৌদি জঙ্গী বিমান সিরিয়ার আলেপ্পো সংলগ্ন বিমান ঘাঁটিতে জড় হচ্ছে। পদতিক বাহিনী যে কোন সময় সিমান্তে অপেক্ষমান ফ্রন্টলাইনে যোগ দেবে। ইতোমধ্যেই সৌদি আরবের নেতৃত্বে সকল সুন্নি মুসলিম দেশের সমন্বয়ে মুসলিম আর্মি গঠন করা হয়েছে। যারা ঐ তুরষ্ক-সৌদি কোয়ালিশনে যোগ দেবে। তুরস্ক-সৌদি আরব অনেকটা নিশ্চিত করেছে সিরিয়ায় সেনা অভিযান সম্পর্কে। এইমাত্র CNN এ সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার দেখলাম। যাতে পরিস্কার ভাষায় সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন সিরিয়াতে আসাদকে সরে যেতে হবে তা শক্তি প্রয়োগ করে হলে ও। তাই উদ্দেশ্য পরিস্কার।বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে হটানো। আই এস আই একটা অজুহাত মাত্র। একই আই এস আই অজুহাতে রাশিয়াও সিরিয়ায় এসেছে, আসল উদ্দেশ্য বাশার পতন ঠেকানো ।
যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দিকে আসাদের বিরুদ্ধে মিলিশিয়াদের প্রকাশ্য মদদ দিয়েছে। এখন বড় গেমপ্ল্যানের জন্য সরে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি প্রথম দিকে হয়তো তুরস্ক-সৌদি অভিযানে যোগ দেবেনা, তবে সিরিয়ায় সৌদি অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে। মজার বিষয় হল। সৌদি ফাইটার বিমান তুরস্কের যে ঘাঁটিতে এসে জড় হচ্ছে এবং সে ঘাঁটি থেকে তুরষ্ক-সৌদি বিমান অভিযান পরিচালিত হবে সে ঘাঁটিতেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জঙ্গিবিমান এবং অন্যান্য সামরিক সারন্জাম। তাই ঐ ঘাঁটিতে কেউ আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলার রিস্ক নিতে হবে। তা ছাড়া সিরিয়ার ভেতরেই রেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ঘাঁটি।
রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল বলেছেন সিরিয়ায় তুরস্ক-সৌদির অভিযান নি:সন্দেহে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুচনা করবে। রাশিয়া সিরিয়ায় এমন জটিলভাবে জড়িয়ে গেছে পেছানোর কোন সুযোগ নাই। যুক্তরাষ্ট্র ও চাইছে রাশিয়া যাতে এই ফাঁদ থেকে বের না হতে পারে। সেই জন্যই মুসলিম বিশ্বের আবেগের দেশ সৌদি আরব এবং আরেক প্রভাবশালী ন্যাটো সদস্য দেশ তুরস্ককে সামনে ঠেলে রাশিয়াকে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের জন্য আটকে ফেলতে চাইছে।
আজ থেকে তুরস্ক সীমান্তে ওপার থেকে সিরিয়ার কূর্দী এলাকায় গোলা বর্ষণ করছে। আগামি কয়েক সপ্তাহে হয়তো পদাতিক বাহিনী মবিলাইজ করা হবে। আপাতত: সংখ্যা বলে হচ্ছে দেড় লাখ। ভাবা যায়! আসাদের বাহিনী যখন রাশিয়ার এবং ইরানী বাহিনী নিয়ে প্রতিরোধ গড়বে তখন কি হবে? তুরস্ক আক্রান্ত হলে চুক্তি অনুযায়ী গোটা ইউরোপ আক্রান্ত এবং তুরস্কের পক্ষে দাঁড়াতে বাধ্য।
সৌদি আরব আক্রান্ত হলে গোটা সুন্নী বিশ্ব যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। আমার ধারণা যদি ব্যাপারটা আসলেই যদি এতটুকু খারাপের দিকে গড়ায় তবে মক্কা-মদিনায় ফলস্-ফ্ল্যাগ আক্রমণ করে হলে ও গোটা মুসলিম বিশ্বকে জড়িয়ে ফেলা হবে। ফলাফল দাঁড়াবে এক পক্ষে সূন্নী মুসলিম বিশ্ব, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র ; অন্যপক্ষে সিরিয়া, ইরান, হিযবুল্লাহ্ এবং রাশিয়া। একটা ভয়ানক যুদ্ধের জন্য তা পর্যাপ্তই।
এমন একটা যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব পড়বে আমাদের সবার উপর অত্যন্ত প্রকটভাবে। ভাবুন তো যুদ্ধাক্রান্ত সৌদি আরবে লক্ষ-লক্ষ শ্রমিকা যদি ফিরে আসে? বাহরইন, আরব-আমিরাত, কাতার, জর্ডানের কথা নাই বা বল্লাম। রাশিয়ার বিপক্ষে ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়লে তার পরিণতি নিউক্লিয়ার ওয়ার!!
ঘটনা যেদিকেই গড়াক না কেন। পৃথিবী শেষের সূচনাটা যে সিরিয়া থেকেই আরম্ভ হয়েছে গেছে এবং তা পরিণতির দিকে গড়াচ্ছে এ ব্যাপারে আমার বিশ্বাস মজবুত। প্রশ্নটা উপসংহার নিয়ে।আমার এমন বিশ্বাসের ভিত্তি কি সেটা না হয় আরেকদিন লিখবো ইনশাআল্লাহ্।
বিষয়: বিবিধ
৩৯১২ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার কেন যেন মনে হচ্ছে প্রকৃত মুসলিমরা সিরিয়ার দিকে ইতোমধ্যেই ছুটে যাওয়া শুরু করেছে। আমি কোন নিদ্দিষ্ট মিলিশিয়া দলের প্রতি ইঙ্গিত করছিনা। সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে প্রকৃত মুসলমান কোন রাষ্ট্রীয় পতাকার অধীন হবে বলে আমার মনে হয়না। ছোট-ছোট যে মিলিশিয়া গোষ্ঠী ঐ বর্তমান লড়ছে তার কোনটা হয়তো সময়ের চক্রে প্রকৃত কালো পতাকাধারী হিসেবে আবির্ভূত হবে। তাই আসন্ন যুদ্ধের কোন দেশকে হাদিসের কালো পতাকাধারী বলে মনে হয়না। একটা ব্যাপক যুদ্ধের মধ্য দিয়েই হয়তো মাহদির দলটি পরিস্কার হয়ে পড়বে।
তবে আমার মনে হয় সৌদি-তুরস্ক সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আরোও আগে নেওয়া উচিত ছিল।
সুন্দর লিখাটির জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার মনে হচ্ছে সবকিছুই পূর্বের ধারাবাহিকতা। সাদ্দাম,গাদ্দাফীকে যেভাবে বিদায় করা হয়েছিল আসাদকেও তেমনি!
এখানে একটু ব্যতীক্রম এটাই, রাশিয়ার জড়িত থাকা। শিয়া-সুন্নী দ্বন্ধটা আসলে ভূরাজনৈতিক গেইমিং ছাড়া আর কিছু মনে হয়না আমার। অথচ এটাকেই এখন প্রধান হাতীয়ার বানানো হয়েছে মুসলমানদেরকে দুপক্ষকে বিভক্ত করার জন্য। মনে হয় এ মাষ্টারপ্ল্যান অনেক আগেই করা হয়েছে, এখন শুধু বাস্তবায়ন চলছে। তবে আসাদ যে খুব ভাল মানুষ তা আমি বলছিনা। পরাজিত হলে তাকেও সাদ্দামের ভাগ্যই বরণ করতে হবে তা জেনে হয়ত কামড়ে থাকার চেষ্টা! কিংবা সিরিয়াকে খন্ড খন্ড হওয়া থেকে রক্ষার চেষ্টা কিনা? তুরস্কেরও একই অবস্থা, কুর্দীদের আক্রমন থেকে দেশ রক্ষার চেষ্টা!সৌদি আরবেরও একই অবস্থা!
আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, রাশিয়া যখন দেখবে সিরিয়াতে তাদের স্বার্থ হাত ছাড়া হয়, তখন সরে যাবে!
ফলে কি দাড়াবে?
শিয়া-সুন্নীতে দুটি ভাগ হবে আর যুদ্ধ হবে মুসলিমদের সাথে মুসলিমদেরই।
অথচ ফিলিস্তীন প্রশ্নে উভয় পক্ষই এক এবং অভীন্ন! সেদিন এরদোগান স্বীকারও করলেন, সিরিয়ার রক্তপাতের জন্য আমেরিকা দায়ী! কিন্তু তবুও যেন পেছনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
আমাদের মুসলিম নেতাদের মাথা গরম!
নিজেরা নিজেরা যুদ্ধ করে আর কতো?
আইএস নিয়ে গেইমিং করছে কারা? তা আগে বের করতে হবে। এক আসাদই সব সমস্যা? নাকি নেপথ্যে অন্য কেউ কলকাঠি নাড়ছে?
সম্ভাব্য যুদ্ধ শুরুর পূর্বেই কিন্তু যুদ্ধ বিমান ক্রয়-বিক্রয় শুরু হয়ে গিয়েছে। যেমন ইরানকে আমরা সিরিয়ার মিত্র মনে করি।
কিন্তু ইরান যুদ্ধ বিমান ক্রয় করছে ফ্রান্স থেকে!আর ফ্রান্সের সেসব যুদ্ধবিমান তৈরীর সরঞ্জামাদীর সিংহভাগই আসে আমেরিকা থেকে! পাকিস্তানও আমেরিকা থেকে বিমান ক্রয় করবে বলেছে।
হয়ত যুদ্ধ শুরু হলে আসাদের জন্য বিমান সাপ্লাই দিবে রাশিয়া। দুইদিন পর শোনা যাবে সৌদিও আমেরিকা থেকে বিমান কিনবে!! দেখেন যুদ্ধ হলে কাদের লাভ!!
এই ইসলামিক আর্মির মধ্যে ইসলামিক সামরিক জোটের ৩৪ টি দেশের মধ্যে যে ২০ টি দেশের সেনা অংশগ্রহন করবে তাদের তালিখা -
1. Saudi Arabia,
2. Turkey
3. Pakistan
4. Qatar
5. United Arab Emirates,
6. Egypt
7. Jordan,
8. Senegal,
9. Sudan,
10. Kuwait,
11. Maldives,
12. Morocco,
13. Chad,
14. Tunisia,
15. Comoros,
16. Djibouti,
17. Oman
18. Bahrain,
19. Malaysia,
20. Mauritania,
বাংলাদেশের নাম নাই
উপরে অনেক বিশ্লেষণ পড়লাম, আমি আর সেগুলো নিয়ে বলছিনা!!
একটা হাদীসের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক-
সেটা হচ্ছে "গজওয়া-ই হিন্দ" বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ! সিরিয়ার "শেষ মহাযুদ্ধ"র আগেই সেটা হবার কথা!!
তাই আমি মনে করি "শেষ মহাযুদ্ধ" আসার আগে আরো অসংখ্যবার পৃথিবী বিপর্যস্ত হবে এবং পূণর্গঠিত হবে!
সম্ভবতঃ মহাশূণ্যের আরো অনেক গ্রহে মানুষ বসবাস করবে, ইনশাআল্লাহ!!
তবে একটা বড় দুর্যোগ যে ঘণীভূত হচ্ছেতাতে কোন সন্দেহ নেই!
এমন অবস্থার জন্যই সম্ভবতঃ ঐ হাদীসগুলো-
(১)যে চূপ থাকলো সে রক্ষা পেলো,
(২)মেষপাল নিয়ে পাহাড়ে বা জঙ্গলে পালিয়ে যাওয়া উত্তম
আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন!
আমরা তাঁরই কাছে ক্ষমা চাই, সুরক্ষা চাই দুনিয়া ও আখেরাতে!!
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকুমুল্লাহ
ভারত জয়ের পর বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-আফগানিস্তান থেকেই মনসুরের কালো পতাকাধারীরা মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ইমাম-মাহদীর বাইয়াত গ্রহণের জন্য রওয়ানা হবে।
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন!
আবু সাইফ-এর পক্ষ থেকে আপনাকেও ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন