সোশ্যাল মিডিয়া,বদলে যাচ্ছি আমরা, বদলে যাচ্ছে বিশ্ব!

লিখেছেন লিখেছেন পটাশিয়াম নাইট্রেট ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৭:৪০:০৬ সকাল

সেদিন অফিস থেকে আসতে-আসতে ডেভিড কিরপ্যাট্রিকের " দ্যা ফেসবুক ইফেক্ট" নামের অডিও বুকটা মন্ত্র-মুগ্ধের মত শুনছিলাম। সত্যিইতো সামাজিক নেটওয়ার্ক গুলার শক্তি দিনে দিনে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে!আগে কখনো এভাবে ভাবিনি তো! কত দ্রুত এবং ব্যাপক ভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবন-যাত্রা , ব্যবসা বাণিজ্য রাজনীতি, সমাজনীতি আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে ইন্টারনেটের জালে।

বছর কয়েক আগে ও কলম্বিয়া ছিল The Revolutionary Armed Forces of Colombia (স্প্যানিস অনুবাদের সংক্ষিপ্ত রুপ "FARC") নামক এক ভয়ংকর মাদক গ্যাং এর হাতে কার্যত জিম্মি। ওরা এতটাই বেপোরোয়া আর শক্তিশালী ছিল যে খোদ সামরিক বাহিনী ও ওদের ঘাঁটাতে সাহস পেতনা। মাদক ব্যাবসা ছাড়াও অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ছিল নৈমত্তিক ব্যাপার।ওদের অপহরণ বাণিজ্য এতটাই বেপোরোয়া ছিল যে ২০০৪ সালে অপহৃত হয়েছিলেন খোদ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী !

২০০৮ এর শেষে নতুন বছরের শুরুর দিকটায় আ্যাসকো মোরালেস নিজ শহর বারেনকিয়া'র সী-বীচে পরিবারের সবার সাথে ছুটির সময়টা কাটাচ্ছিলেন। বছরের এ সময়টা ছুটির সময় , তারপর ও গোটা কলম্বিয়ার আকাশে বিষণ্ণতার কালো মেঘ।

ইমান্যুয়েলের বয়স চার। ফার্ক গেরিলাদের হাতে তাঁর মা ছয় বছর ধরে জিম্মি। ঐ জিম্মি থাকা অবস্হায় জঙ্গলেই ইমান্যুয়েলের জম্ম। ঐ ছোট্র নিষ্পাপ ছেলেটির স্বাধীন-আলোর মুখ দেখার দাবীতে কলম্বিয়ার সাধারণ জনগণের মাঝে FARC এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ ব্যাপকভাবে দানা বাঁধতে থাকে। কেন যেন ইমান্যুয়েল হয়ে উঠে FARC এর নিস্ঠুরতার এক মূর্ত-প্রতিক। ছেলেটির মুক্তির জন্য ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো-শেভেজ পর্যন্ত FARC এর সাথে আলোচনায় বসেন। এক পর্যায়ে FARC বড় অংকের অর্থ মুক্তিপণের বিনিময়ে ইমান্যুয়েলকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়। সময়টা ২০০৮ এর ডিসেম্বরের শেষ দিকে, ক্রিষ্টমাসের ঠিক আগে-আগে। সমস্যা জর্জড়িত গোটা কলম্বিয়াবাসীর কাছে এ এক বিশাল আনণ্দের সংবাদ। সারা দেশ জুড়ে এটাকে বিবেচনা করা হচ্ছিলো যিশুর কাছ থেকে ক্রিষ্টমাসের উপহার হিসেবে। তাই আনন্দের বন্যা বইছিল গোটা কলম্বিয়া জুড়ে।

হঠাৎ সরকার ঘোষণা করে ইমান্যুয়েল এখন সরকারের হেফাযতে। আসলে ইমান্যুয়েল গত ২ বছর ধরেই ফার্কের হাতে নেই। ২ বছর বয়সেও খুব অসুস্হ হয়ে পড়লে FARC ওকে জন্গলের এক স্হানে ফেলে দেয়। ভাগ্যক্রমে এক চাষী ইমান্যুয়েলকে খুঁজে পায়। ইমান্যুয়েলকে ফিরে পেয়ে গোটা দেশ উচ্ছসিত হলেও আ্যাসকো মোরালেস ভাবছিলেন অন্য কথা। FARC যখন ইমান্যুয়েল এর মুক্তির ব্যাপারে সরকারের সাথে আলোচনা করছিল তখন ইমান্যুয়েল ওদের হাতেই নেই। FARC এর জানামতে ইমান্যুয়েলএর বেঁচে থাকার ও কথা নয়। কতটা জঘণ্য হলে এমনটা সম্ভব!

সন্ধ্যায় বীচ থেকে বাসায় ফিরে ফেস বুকে সার্চ দিল "FARC" . নাহ্‌! কোন গ্রুপ নেই ওদের বিরুদ্ধে ! থাকলে হয়তো কিছু বলে নিজের ঘৃণাটা হালকা করা যেত! পরক্ষণেই সে ভাবলো, সে নিজেই তো একটা গ্রুপ ওপেন করতে পারে। কোন রকমে একটা গ্রুপ ক্রিয়েট করে ঘুমাতে গেল। নাম দিলেন "Million Voices Agaianst FARC". ভাবছিলএন একটা লোগো বানাবেন, লুকটা একটু ফেন্সী করবেন। সকালে উঠেই বসলেন ফেসবুকে। একি ৬৭৫ মেম্বার! মাথা ঘুরে গেল। আঁচ করতে পারলেন গ্রুপটার ভবিষ্যৎ। ১ মাসের মাথায় সদস্য সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেল। আ্যাক্টিভ মেম্বারদের নিয়ে একটা কমিটির মত করলেন। প্রতিদিন চ্যাটিং এর মাধ্যমে আলোচনা করতেন কি করা যায়। একদিন আলোচনায় উঠে এল একটা বিক্ষোভের আয়োজন করা যায় বেগোটায়। সেই বিক্ষোভের পরিকল্পনা এগুতে থাকে এবং তা কলম্বিয়ার সীমানা ছাড়িয়ে সারা পৃথিবীর অন্তত ৪৮ টা দেশে একযোগে আয়োজনের ব্যবস্হা হয়। অবশেষে হয়ে গেল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ সমাবেশ। কয়েক মিলিয়ন লোকের বিক্ষোভ সমাবেশ "FARC" এর বিরুদ্ধে। সারা দুনিয়া সোচ্চার হয়।

তিউনেশিয়ায় শুরু হওয়া আরব-বসন্তের ঝড়ে ক্ষমতার পালাবদল হল অনেক দেশেই। এ বিপ্লবে বিশাল অবদান রাখে ইন্টানেট ভিত্তিক সামাজিক নেটওয়ার্ক গুলু। বিশেষ করে টুইটার এবং ফেসবুক। মিসরের বিপ্লবে টুইটারের অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। আন্দোলন ব্যাপক রুপ নিলে হোসনি মোবারক প্রমাদ গুনেন। ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপগুলু ঐক্যবদ্ধভাবে সারা পৃথিবীতে জনমত তৈরি করতে থাকে। কোন আপডেট মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ছিল বিলিয়ন মানূষের কাছে। সরকার দেশের ভেতরে ব্যাপক ধর-পাকড় করছিল, প্রিন্ট মিডিয়া এবং টিভি চ্যানেল গুলুতে ব্যাপক সেন্সরশীপ আরোপ করেছিল ।তাই ফেসবুক গ্রুপ থেকেই পরবর্তী কর্মসূচীর ঘোষণা আসতে থাকে। ঐ ঘোষনায় সারা দিয়ে মানূষ ব্যাপক ভাবে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করতে থাক।

টুইটারে প্রতি মুহুর্তে প্রতিটা গলি থেকেই যেন আপডেট আসছিল। কোন একটা ঢিল ছোঁড়ার ঘটনা ও বাদ যাচ্ছিলনা! উপায় না দেখে মোবারক ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে। কিন্তু অনলাইন আ্যাক্টিভিষ্টরা ও পিছিয়ে থাকার নয়। ওরা আমেরিকায় কয়েকটি সার্ভার স্হাপন করে। যে কেউ মিশর থেকে কিছু নিদ্দিষ্ট নাম্বারে ডায়াল করে আপডেট জানালে তা ভয়েস টুইট হিসেবে টুইটারে আপলোড হতে থাকে। এতে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। মানূষের আবেগঘণ কন্ঠের আওয়াজ মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের প্রতিটি কোনায়। শেষে মুবারক টেলিফোন নেটওয়ার্ক শাটডাউন করে দেয়। এবার এগিয়ে আসে কয়েকটি স্যাটেলাইট কোম্পানি। তাঁরা কিছু স্যাটেলাইট ফ্রিকোয়েন্সি উম্মুক্ত করে দেয়। যে কেউ একটা নাম্বারে ডায়াল করলে স্যাটেলাইটের সাথে কানেক্ট করে কথা বললে তা ঐ সার্ভার হয়ে টুইটারে আপলোড হতে থাকে। এ সম্পূর্ণ নতুন এবং অপ্রতিরোধ্য এক যুদ্ধের ফ্রন্ট মোবারকের জন্য। এর পরের কাহিনী আমাদের সবারই জানা।

লিবিয়া, বাহরাইন হয়ে সিরিয়া সবখানেই অনলাইন এক্টিভিষ্টরা তাদের শক্তিমত্তা দেখিয়েছেন এবং দিনে দিনে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে অনলাইন মিডিয়া গুলু। আমেরিকার সাম্প্রতিক নির্বাচনে এ টুইটার ছিল সবচেয়ে বড় নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্র। ফেসবুক সহ অন্যান্য ব্লগ এবং কমিউনিটি ফোরামগুলার কথা বাদই দিলাম। সাম্প্রতিক ফিলিস্তিন-ইসরাঈল যুদ্ধে টুইটার ছিল আরেক ব্যাটল গ্রাউন্ড। গাজা থেকে ছোঁড়া প্রত্যেকটি রকেটের কিংবা আই ডি এফ এর প্রত্যেকটি এয়ার রেইডের খবর মেইন স্ট্রীম মিডিয়ায় আসার আগে সেকেন্ডেই আপডেট করতে থাকে খোদ আই ডি এফ এর অনলাইন মিডিয়া উইং এবং হামাসের মিডিয়া উইং। এরপর পারস্পরিক হুমকি-ধামকি তো ছিলই!

শুধু প্রচারণার যুদ্ধই নয়। একপক্ষের হ্যাকার গ্রুপ আক্রমণ করে ডাউন করতে থাকে অন্য-পক্ষের সাইট। ডাটাবেইস থেকে মুছে দিতে থাকে মূল্যবান ডাটা। এ সাইবার ওয়ার এখন শুধু ওয়েবসাইট হ্যাকিং এ থেমে নেই। সাইবার ওয়্যারফেয়ার এখন টেনজাইবল আক্রমণে রুপ নিচ্ছে। কিছুদিন পূর্বে ইরানের বুশহার পারমানবিক কেন্দ্রে ষ্ট্রুক্সনাট ভাইরাসের আক্রমণের কথা আমরা জেনেছি। যা তৈরি করা হয়েছে শধু ডাটা চুরি বা হ্যাকিং এর জন্য নয়। এটা জাটিল অবকাঠামো ও ধংস করে দিতে পারে। ২০০৯ এর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের একটি বিদ্যুত-কেন্দ্রে আগুন লাগে। তদন্তে জানা যায়। কোন হ্যাকার গ্রুপ(চাইনিজ) ধ্বংসাত্মক কোডিং ইনজেক্ট করে নিয়ন্ত্রক সার্ভারকে মিসগাইড করে গ্রীডে আগুন লাগাতে সক্ষম হয়। উন্নত বিশ্বের সামরিক বাহিনীগুলুতে সাইবার ওয়ার ইউনীট গড়ে তোলা হচ্ছে ভবিষ্যত যুদ্ধের কথা মাথায় রেখে। সেটা সরাসরি আক্রমণই হোক আর প্রচারণার যুদ্ধই হোক।

ভাবছেন জটিল এ তথ্য সংঘাতে আমার-আপনার অবস্হান কোথায়? আপনি জেনে অবাকই হবেন যে আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ! আমার প্রত্যেকে কিভাবে প্রভাবিত করছি এ তথ্য মহাসমুদ্রকে এবং কিভাবে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারি, কিভাবে রুখে দিতে পারি অসত্য প্রচারণা, তা নিয়ে নতুন একটা পোষ্টে লিখবো ইনশাআল্লাহ্‌।

ভাল থাকবেন। আল্লাহ্‌ হাফেয।সেদিন অফিস থেকে আসতে-আসতে ডেভিড কিরপ্যাট্রিকের " দ্যা ফেসবুক ইফেক্ট" নামের অডিও বুকটা মন্ত্র-মুগ্ধের মত শুনছিলাম। সত্যিইতো সামাজিক নেটওয়ার্ক গুলার শক্তি দিনে দিনে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে!আগে কখনো এভাবে ভাবিনি তো! কত দ্রুত এবং ব্যাপক ভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবন-যাত্রা , ব্যবসা বাণিজ্য রাজনীতি, সমাজনীতি আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে ইন্টারনেটের জালে।

বছর কয়েক আগে ও কলম্বিয়া ছিল The Revolutionary Armed Forces of Colombia (স্প্যানিস অনুবাদের সংক্ষিপ্ত রুপ "FARC") নামক এক ভয়ংকর মাদক গ্যাং এর হাতে কার্যত জিম্মি। ওরা এতটাই বেপোরোয়া আর শক্তিশালী ছিল যে খোদ সামরিক বাহিনী ও ওদের ঘাঁটাতে সাহস পেতনা। মাদক ব্যাবসা ছাড়াও অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ছিল নৈমত্তিক ব্যাপার।ওদের অপহরণ বাণিজ্য এতটাই বেপোরোয়া ছিল যে ২০০৪ সালে অপহৃত হয়েছিলেন খোদ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী !

২০০৮ এর শেষে নতুন বছরের শুরুর দিকটায় আ্যাসকো মোরালেস নিজ শহর বারেনকিয়া'র সী-বীচে পরিবারের সবার সাথে ছুটির সময়টা কাটাচ্ছিলেন। বছরের এ সময়টা ছুটির সময় , তারপর ও গোটা কলম্বিয়ার আকাশে বিষণ্ণতার কালো মেঘ।

ইমান্যুয়েলের বয়স চার। ফার্ক গেরিলাদের হাতে তাঁর মা ছয় বছর ধরে জিম্মি। ঐ জিম্মি থাকা অবস্হায় জঙ্গলেই ইমান্যুয়েলের জম্ম। ঐ ছোট্র নিষ্পাপ ছেলেটির স্বাধীন-আলোর মুখ দেখার দাবীতে কলম্বিয়ার সাধারণ জনগণের মাঝে FARC এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ ব্যাপকভাবে দানা বাঁধতে থাকে। কেন যেন ইমান্যুয়েল হয়ে উঠে FARC এর নিস্ঠুরতার এক মূর্ত-প্রতিক। ছেলেটির মুক্তির জন্য ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো-শেভেজ পর্যন্ত FARC এর সাথে আলোচনায় বসেন। এক পর্যায়ে FARC বড় অংকের অর্থ মুক্তিপণের বিনিময়ে ইমান্যুয়েলকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়। সময়টা ২০০৮ এর ডিসেম্বরের শেষ দিকে, ক্রিষ্টমাসের ঠিক আগে-আগে। সমস্যা জর্জড়িত গোটা কলম্বিয়াবাসীর কাছে এ এক বিশাল আনণ্দের সংবাদ। সারা দেশ জুড়ে এটাকে বিবেচনা করা হচ্ছিলো যিশুর কাছ থেকে ক্রিষ্টমাসের উপহার হিসেবে। তাই আনন্দের বন্যা বইছিল গোটা কলম্বিয়া জুড়ে।

হঠাৎ সরকার ঘোষণা করে ইমান্যুয়েল এখন সরকারের হেফাযতে। আসলে ইমান্যুয়েল গত ২ বছর ধরেই ফার্কের হাতে নেই। ২ বছর বয়সেও খুব অসুস্হ হয়ে পড়লে FARC ওকে জন্গলের এক স্হানে ফেলে দেয়। ভাগ্যক্রমে এক চাষী ইমান্যুয়েলকে খুঁজে পায়। ইমান্যুয়েলকে ফিরে পেয়ে গোটা দেশ উচ্ছসিত হলেও আ্যাসকো মোরালেস ভাবছিলেন অন্য কথা। FARC যখন ইমান্যুয়েল এর মুক্তির ব্যাপারে সরকারের সাথে আলোচনা করছিল তখন ইমান্যুয়েল ওদের হাতেই নেই। FARC এর জানামতে ইমান্যুয়েলএর বেঁচে থাকার ও কথা নয়। কতটা জঘণ্য হলে এমনটা সম্ভব!

সন্ধ্যায় বীচ থেকে বাসায় ফিরে ফেস বুকে সার্চ দিল "FARC" . নাহ্‌! কোন গ্রুপ নেই ওদের বিরুদ্ধে ! থাকলে হয়তো কিছু বলে নিজের ঘৃণাটা হালকা করা যেত! পরক্ষণেই সে ভাবলো, সে নিজেই তো একটা গ্রুপ ওপেন করতে পারে। কোন রকমে একটা গ্রুপ ক্রিয়েট করে ঘুমাতে গেল। নাম দিলেন "Million Voices Agaianst FARC". ভাবছিলএন একটা লোগো বানাবেন, লুকটা একটু ফেন্সী করবেন। সকালে উঠেই বসলেন ফেসবুকে। একি ৬৭৫ মেম্বার! মাথা ঘুরে গেল। আঁচ করতে পারলেন গ্রুপটার ভবিষ্যৎ। ১ মাসের মাথায় সদস্য সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেল। আ্যাক্টিভ মেম্বারদের নিয়ে একটা কমিটির মত করলেন। প্রতিদিন চ্যাটিং এর মাধ্যমে আলোচনা করতেন কি করা যায়। একদিন আলোচনায় উঠে এল একটা বিক্ষোভের আয়োজন করা যায় বেগোটায়। সেই বিক্ষোভের পরিকল্পনা এগুতে থাকে এবং তা কলম্বিয়ার সীমানা ছাড়িয়ে সারা পৃথিবীর অন্তত ৪৮ টা দেশে একযোগে আয়োজনের ব্যবস্হা হয়। অবশেষে হয়ে গেল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ সমাবেশ। কয়েক মিলিয়ন লোকের বিক্ষোভ সমাবেশ "FARC" এর বিরুদ্ধে। সারা দুনিয়া সোচ্চার হয়।

তিউনেশিয়ায় শুরু হওয়া আরব-বসন্তের ঝড়ে ক্ষমতার পালাবদল হল অনেক দেশেই। এ বিপ্লবে বিশাল অবদান রাখে ইন্টানেট ভিত্তিক সামাজিক নেটওয়ার্ক গুলু। বিশেষ করে টুইটার এবং ফেসবুক। মিসরের বিপ্লবে টুইটারের অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। আন্দোলন ব্যাপক রুপ নিলে হোসনি মোবারক প্রমাদ গুনেন। ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপগুলু ঐক্যবদ্ধভাবে সারা পৃথিবীতে জনমত তৈরি করতে থাকে। কোন আপডেট মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ছিল বিলিয়ন মানূষের কাছে। সরকার দেশের ভেতরে ব্যাপক ধর-পাকড় করছিল, প্রিন্ট মিডিয়া এবং টিভি চ্যানেল গুলুতে ব্যাপক সেন্সরশীপ আরোপ করেছিল ।তাই ফেসবুক গ্রুপ থেকেই পরবর্তী কর্মসূচীর ঘোষণা আসতে থাকে। ঐ ঘোষনায় সারা দিয়ে মানূষ ব্যাপক ভাবে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করতে থাক।

টুইটারে প্রতি মুহুর্তে প্রতিটা গলি থেকেই যেন আপডেট আসছিল। কোন একটা ঢিল ছোঁড়ার ঘটনা ও বাদ যাচ্ছিলনা! উপায় না দেখে মোবারক ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে। কিন্তু অনলাইন আ্যাক্টিভিষ্টরা ও পিছিয়ে থাকার নয়। ওরা আমেরিকায় কয়েকটি সার্ভার স্হাপন করে। যে কেউ মিশর থেকে কিছু নিদ্দিষ্ট নাম্বারে ডায়াল করে আপডেট জানালে তা ভয়েস টুইট হিসেবে টুইটারে আপলোড হতে থাকে। এতে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। মানূষের আবেগঘণ কন্ঠের আওয়াজ মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের প্রতিটি কোনায়। শেষে মুবারক টেলিফোন নেটওয়ার্ক শাটডাউন করে দেয়। এবার এগিয়ে আসে কয়েকটি স্যাটেলাইট কোম্পানি। তাঁরা কিছু স্যাটেলাইট ফ্রিকোয়েন্সি উম্মুক্ত করে দেয়। যে কেউ একটা নাম্বারে ডায়াল করলে স্যাটেলাইটের সাথে কানেক্ট করে কথা বললে তা ঐ সার্ভার হয়ে টুইটারে আপলোড হতে থাকে। এ সম্পূর্ণ নতুন এবং অপ্রতিরোধ্য এক যুদ্ধের ফ্রন্ট মোবারকের জন্য। এর পরের কাহিনী আমাদের সবারই জানা।

লিবিয়া, বাহরাইন হয়ে সিরিয়া সবখানেই অনলাইন এক্টিভিষ্টরা তাদের শক্তিমত্তা দেখিয়েছেন এবং দিনে দিনে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে অনলাইন মিডিয়া গুলু। আমেরিকার সাম্প্রতিক নির্বাচনে এ টুইটার ছিল সবচেয়ে বড় নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্র। ফেসবুক সহ অন্যান্য ব্লগ এবং কমিউনিটি ফোরামগুলার কথা বাদই দিলাম। সাম্প্রতিক ফিলিস্তিন-ইসরাঈল যুদ্ধে টুইটার ছিল আরেক ব্যাটল গ্রাউন্ড। গাজা থেকে ছোঁড়া প্রত্যেকটি রকেটের কিংবা আই ডি এফ এর প্রত্যেকটি এয়ার রেইডের খবর মেইন স্ট্রীম মিডিয়ায় আসার আগে সেকেন্ডেই আপডেট করতে থাকে খোদ আই ডি এফ এর অনলাইন মিডিয়া উইং এবং হামাসের মিডিয়া উইং। এরপর পারস্পরিক হুমকি-ধামকি তো ছিলই!

শুধু প্রচারণার যুদ্ধই নয়। একপক্ষের হ্যাকার গ্রুপ আক্রমণ করে ডাউন করতে থাকে অন্য-পক্ষের সাইট। ডাটাবেইস থেকে মুছে দিতে থাকে মূল্যবান ডাটা। এ সাইবার ওয়ার এখন শুধু ওয়েবসাইট হ্যাকিং এ থেমে নেই। সাইবার ওয়্যারফেয়ার এখন টেনজাইবল আক্রমণে রুপ নিচ্ছে। কিছুদিন পূর্বে ইরানের বুশহার পারমানবিক কেন্দ্রে ষ্ট্রুক্সনাট ভাইরাসের আক্রমণের কথা আমরা জেনেছি। যা তৈরি করা হয়েছে শধু ডাটা চুরি বা হ্যাকিং এর জন্য নয়। এটা জাটিল অবকাঠামো ও ধংস করে দিতে পারে। ২০০৯ এর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের একটি বিদ্যুত-কেন্দ্রে আগুন লাগে। তদন্তে জানা যায়। কোন হ্যাকার গ্রুপ(চাইনিজ) ধ্বংসাত্মক কোডিং ইনজেক্ট করে নিয়ন্ত্রক সার্ভারকে মিসগাইড করে গ্রীডে আগুন লাগাতে সক্ষম হয়। উন্নত বিশ্বের সামরিক বাহিনীগুলুতে সাইবার ওয়ার ইউনীট গড়ে তোলা হচ্ছে ভবিষ্যত যুদ্ধের কথা মাথায় রেখে। সেটা সরাসরি আক্রমণই হোক আর প্রচারণার যুদ্ধই হোক।

ভাবছেন জটিল এ তথ্য সংঘাতে আমার-আপনার অবস্হান কোথায়? আপনি জেনে অবাকই হবেন যে আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ! আমার প্রত্যেকে কিভাবে প্রভাবিত করছি এ তথ্য মহাসমুদ্রকে। আমরা কিভাবে কার্যকরভাবে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারি, কিভাবে রুখে দিতে পারি অসত্য প্রচারণা, তা নিয়ে কোন একদিন লিখবো ইনশাআল্লাহ্‌।

ভাল থাকবেন। আল্লাহ্‌ হাফেয।

বিষয়: বিবিধ

১৪০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File