রাজাকার খয়ের উদ্দিনের নাতি শাহবাগি ইমরান
লিখেছেন লিখেছেন থার্ড পারসন ০৩ মার্চ, ২০১৩, ১১:৩৩:৩৯ রাত
শাহবাগিদের নেতা ব্লগার ইমরান এইচ সরকার রাজাকারের নাতি ছিলেন। তার দাদা খয়ের উদ্দিন কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর উপজেলার বালিয়ামারী বাজারপাড়া গ্রামের একজন চিহ্নিত রাজাকার। মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তর সালেই রাজাকার খয়ের উদ্দিনকে হত্যা করে বিএসএফের সহযোগিতায়। স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে খয়ের উদ্দিন পাকিস্তান মুসলিম লীগের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাক হানাদার বাহিনীর পক্ষে অবস্থান নেন এবং তাদের সহযোগিতা করেন।
ডা. ইমরান সম্পর্কে তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজীবপুর এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে পাওয়া গেছে আরও অনেক চমকপ্রদ তথ্য। এলাকাবাসী জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মাঝামাঝি সময়ে একদিন এলাকার জিঞ্জিয়া নদী দিয়ে নৌকায় করে মুক্তিযোদ্ধারা যাচ্ছিলেন। আরেকটি নৌকায় করে নিকটবর্তী ভারতের কালাইয়ের চরের বাজারে যাচ্ছিলেন রাজাকার খয়ের উদ্দিন। তার নৌকায় আরও অনেক যাত্রী ছিল। পাশের নৌকায় যে মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন, তিনি জানতেন না। রাজাকার খয়ের উদ্দিন শেখ মুজিবকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে নানা কথা বলেছিলেন। একই সঙ্গে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কেও বিরূপ মন্তব্য করছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা তার সম্পর্কে খবর নিয়ে বিএসএফের সহযোগিতায় তাকে পাকড়াও করে। একদিন তাকে কৌশলে মাখনের চর ও বল্লমগিড়ি বিল এলাকায় নিয়ে যায় এবং হাঁটুপানিতে নামিয়ে গুলি করে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর তার ঢাকায় থাকা আত্মীয়স্বজন ডা. ইমরানের পরিবারকে শহীদ পরিবার হিসেবে বানিয়ে একটি বাড়ি সরকার থেকে বরাদ্দ নেয়। পরে জানাজানি হয়ে গেলে বাড়ির বরাদ্দ বাতিল হয় বলে জানা যায়।
খয়ের উদ্দিন সম্পর্কে রাজীবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবদুল হাই সরকার বলেন, ইমরানের দাদা খয়ের উদ্দিন কোনোদিনই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে মুসলিম লীগ করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাকে বিএসএফের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করে। ইমরানের বাবা মতিন সরকার সম্পর্কে তিনি বলেন, মতিন সরকার স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে সিপিবি করতেন। এখন আওয়ামী লীগ করেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্র জানায়, ইমরানের দাদার সুযোগ্য পুত্র বা ইমরানের বাবাও ছিলেন তার বাবার অনুসারী। বাবার নাম আবদুল মতিন সরকার। দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পর জীবন বাঁচাতে ওই বাবা প্রথমে সিপিবি এবং পরে সুযোগমত ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগে আশ্রয় নেন। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
খয়ের উদ্দিন সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সঙ্গে যুক্ত এক মুক্তিযোদ্ধা জানান, বিএসএফের সহযোগিতায় তত্কালীন স্থানীয় চেয়ারম্যান সালিউদ্দিনসহ মুক্তি বাহিনীর নির্দেশে ১৯৭১ সালের ১৪ জুন শান্তি কমিটির নেতা খয়ের উদ্দিনকে হত্যা করা হয়। স্থানীয় স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৪ সালে খয়ের উদ্দিনের স্ত্রী তার চাচা তদানীন্তন গাইবান্ধা পুলিশের দারোগাকে দিয়ে ঢাকায় যোগাযোগ করে ভাতিজি জামাইকে মুক্তি বার্তা সাপ্তাহিক পত্রিকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম তোলেন। শহীদ পরিবার হিসেবে খয়ের উদ্দিনের মেয়ে ডাক্তার মাধবীর নামে সরকারি বাসা বরাদ্দ নেয়া হয়। তবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরোধিতার মুখে পরে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের যে তালিকা প্রণয়ন করা হয়, তাতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তার নাম রাখেনি। ওই সময় সংসদে এ নিয়ে যে মিটিং করা হয়েছে, সে রেজ্যুলেশনেও ওই বিষয়টির উল্লেখ আছে। এলাকাবাসী জানান, খয়ের উদ্দিনের আরেক ভাই আহমদ হাজীও রাজাকার ছিলেন। তিনিও মুসলিম লীগ করতেন।
সত্যিই সেলুকাস যে, ওই রাজাকার দাদা আর বাবার সন্তান হলেন তথাকথিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার এ ব্লগার ইমরান।
বিষয়: বিবিধ
১৫১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন