ধর্মের রাজনীতি ও ধর্মনিরপেক্ষতা

লিখেছেন লিখেছেন থার্ড পারসন ২৮ মে, ২০১৩, ১০:৪৫:১০ সকাল

ধর্মের রাজনীতিটা কী? ধর্মভিত্তিক কোন দল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চাওয়াতেই কি ধর্মের রাজনীতি সীমাবদ্ধ? ধর্ম থাকলে, ধর্মীয় গোষ্ঠী থাকলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি কি থাকে না! ধর্মকে নির্মূল করলেই সমাজরাষ্ট্র সঙ্কটমুক্ত হয়ে যাবার কোন গ্যারান্টি আছে কী? ধর্মকে নির্মূল করা যায় কি? মানুষ কি কোন-না-কোন প্রতিযোগিতায় নিত্যদিন লিপ্ত থাকে না? প্রতিযোগিতা যেখানে সঙ্কট সেখানে, দুই নম্বরি, চৌদ্দ নম্বরি সেখানে, শয়তানি ভালোমানুষি সেখানে। ধর্মকে ব্যবহার করে কেউ দুই নম্বরি করলেই সংশ্লিষ্ট ধর্ম কলুষিত হবে কোন যুক্তিতে? ধর্ম নিয়ে উত্তম যুক্তি সহকারে বিতর্ক হতে পারে, হয়ে আসছেও। ধর্ম বিরোধিতার ভেতরে সংশ্লিষ্ট ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা দেখা যায় কেন! ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরোধিতার মধ্যে ধর্ম সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন অজ্ঞতার মাত্রা কোন ধরনের তা-ও দেখা দরকার। রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করুক-বা-না-করুক ধর্মকে ঘিরে ধর্মীয় রাজনীতি চেতনা আছে সমাজে। সেই চেতনা প্রতিষ্ঠার প্রবণতাও আছে। প্রবণতাতে আছে সংশ্লিষ্ট ধর্ম প্রচার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি। সকল প্রতিষ্ঠিত ধর্মের নিজস্ব চেতনা প্রতিষ্ঠার চেতনাও ক্রিয়াশীল। দেখা যায়, ধর্মটি সমাজে ডমিন্যান্ট ফোর্স আকারে থাকতে চায়,ডমিনেইটেড বাই আদার থাকতে চায় না। ধর্মের অনুসারী তার ধর্মের সম্মান সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট থাকেন আমৃত্যু। এই সচেষ্ট থাকবার ব্যাপারটিতে পাওয়া যায় শ্রেষ্ঠত্ব দেখানোর প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা সুন্দর হলে, প্রতিপক্ষের প্রতি মানবিক মূল্যবোধের নজর রেখে প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হলে মসিবত আসে না। মসিবত আসে উত্তম যুক্তির বদলে হিংসা প্রতিহিংসা ঢুকে গেলে কোন পক্ষ থেকে। যে-পক্ষ থেকে অন্যায্যভাবে শয়তানি ঢুকে, সে-পক্ষ পরাজিত হয় একেবারে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেও। ধর্ম সংশ্লিষ্ট লড়াইয়ের ইতিকথায় এই ব্যাপারটি পাওয়া যায়। দাপর যুগে যাই। রাজা বিচিত্রবীর্যের রাজ্য হস্তিনাপুর। রাজার দুই পুত্র, ধৃতরাষ্ট্র এবং পাণ্ডু। ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ এবং তার একশত পুত্র। পাণ্ডুর পাঁচ পুত্র। ধৃতরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ পুত্র দুর্যোধন। পাণ্ডুর পুত্রগণ যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব। পান্ডুর পুত্রগণ ধার্মিক, তারা পাণ্ডব নামে পরিচিত, আর ধৃতরাষ্ট্রের পুত্ররা পাপাচারী অধার্মিক, এরা কৌরব নামে পরিচিত। দুর্যোধন পাণ্ডবগণকে অত্যন্ত হিংসা করতেন। তিনি পাণ্ডব-জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠিরকে কপট পাশা খেলায় পরাজিত করে বার বছর বনবাস এবং এক বছর অজ্ঞাত বাস এই তের বছরের জন্য বনে পাঠিয়ে নিজে রাজা হলেন। তের বছর অতীত হলে পাণ্ডবগণ হস্তিনাপুর ফিরে এসে নিজের রাজ্য দাবি করলেন। কিন্তু পাপমতি দুর্যোধন বিনাযুদ্ধে একবিন্দু মাটি দিতেও রাজি হলেন না। ফলে কুরুক্ষেত্র নামক স্থানে ভীষণ যুদ্ধ বাধল। এই যুদ্ধের নাম কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পাণ্ডব পক্ষের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা ছিলেন অর্জুন। আর শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন অর্জুনের রথের সারথী। অর্জুন যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে দেখলেন আত্মীয়-স্বজনগণ তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। তিনি তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাইলেন না। এই সময় শ্রীকৃষ্ণ বিহিত উপদেশ দিয়ে তাকে কর্তব্যে প্রণোদিত করলেন। সেই উপদেশাবলীই শ্রীমদ্ভগবদগীতা বা গীতা। [শ্রীগীতা বাংলা অনুবাদ]যদিও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রতীকী ব্যঞ্জনার কথাও বলেছেন পণ্ডিতগণ, আধ্যাত্মিক শক্তির জাগরণের উদাহরণ। তবু রাজা রাজ্য রাজনীতি উপস্থিত। মানে, এই রকম প্রকাশের অর্থ আছে বলেই এইভাবে প্রকাশ। শ্রীমদ্ভগবদগীতার চতুর্থ অধ্যায়-জ্ঞানযোগ যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত। অভ্যুত্থানধর্মস্য তদাত্মানং সৃজম্যহম্। (৪:৭)পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্। ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে। (৪:৮)অর্থাৎ হে ভারত, যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় তখনই অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, আর তখনই আমি স্বীয় মায়া বলে মানুষের দেহ ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হই যুগে যুগে সাধুদিগকে রক্ষার জন্য, আর দুষ্টদিগের বিনাশের জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য। [গীতা নির্ভর জীবন গড়ন থেকে সংকলিত] ধর্ম সংস্থাপনের কাজ রাজনীতিমুক্ত নয়। উল্লেখ্য, রামায়ণ ও মহাভারত এই দুই মহাকাব্য প্রাচীন ভারতের ধর্মচেতনার সাথে যুক্ত। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী রামায়ণ-এ আদর্শ রাজার চরিত্র চিত্রায়িত। বৌদ্ধ ধর্মেরও নির্ধারিত মিশন রয়েছে। দুঃখ ও দুঃখের কারণ সম্বন্ধে জানতে রাজা শুদ্ধোদনের পুত্র সিদ্ধার্থ যাত্রা [মহানিষ্ক্রমণ] এবং বুদ্ধত্ব লাভ করেন- এ বিশ্বাস বৌদ্ধ ধর্মানুসারীদের। গৌতম বুদ্ধের চতুরার্য সত্য এবং নির্বাণ লাভের উপদেশাবলী অনুসারিগণ প্রচার করেন, প্রতিষ্ঠার প্রয়াস নেন। প্রচার ও প্রয়াস এবং প্রতিষ্ঠার চেতনা রাজনীতির আওতাভুক্ত নয় কী?একেশ্বরবাদী ধর্ম ইসলাম খৃষ্ট ইয়াহুদ, এই তিন ধর্মেরও প্রচার ও প্রতিষ্ঠার চেতনা আছে। এই তিন ধর্মের নবীগণও সাংঘাতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তখনকার পূর্বপ্রতিষ্ঠিত সমাজশক্তির দ্বারা। মেল গিবসনের ছবি দি প্যাশন অব দি ক্রাইস্ট নিউ টেস্টামেন্ট গসপেলস মোতাবেক নির্মিত। ছবিটিতে তখনকার রাজশক্তি ভয়ঙ্কর নির্যাতন করে মসিহের উপর। ইয়াহুদ ধর্মের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে নিবেদিত বিশ্বের দুর্দান্ত শক্তিশালী এসপিওনেজ নেটওয়ার্ক- মোসাদসার্বক্ষণিক সক্রিয়। মোসাদ এর কার্যক্রম তো রাজনীতির বাইরে নয়। এই রাজনীতিটা ধর্মভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র ইসরাইলের স্বার্থে। আদম (আ.) আর সুলায়মান আ. ছাড়া সব নবী-রাসূলই তাঁদের সমকালের সমাজশক্তি/রাজশক্তি দ্বারা নিপীড়িত হয়েছেন। ইব্রাহীম আ.-কে প্রথমে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ, পরে দেশ থেকে বের করে দেয় তখনকার ক্ষমতাশালীরা। মুসা আঃ ঈসা আঃ, ইউনুস আঃ নির্যাতিত হয়েছিলেন। জাকারিয়া আঃ কে করাত দিয়ে দ্বিখণ্ডিত করেছে তার বিরোধিতাকারীরা। নবী মুহাম্মদ (সঃ) বাধ্য হয়ে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ইসলামের মূল প্রচার চেতনাতে উত্তম যুক্তিসহকারে বিল হেকমা খোদার পথে ডাকবার কথা বলা হয়েছে কোরআনে। জবরদস্তি একদম নিষেধ। আবার অন্যায়ভাবে আক্রান্ত হলে সম্পূর্ণ ঈমানী জযবা নিয়ে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত ঈমানদারেরা। মুসলমানদের কাছে ইসলাম একটি পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। জীবন পরিচালনার সকল পর্যায়ের দিক নির্দেশনা হুকুম আহকাম রয়েছে ইসলামে। প্রেরীত পুরুষ হয়েও নবী শুধু বাধ্য হয়ে যুদ্ধ করেননি, সন্ধিও করেছেন প্রতিপক্ষের সাথে। ইসলামের রয়েছে প্রাত্যাহিক জীবনের পরিপূর্ণ[মোকাম্মেল] সংস্কৃতির দিক নির্দেশনা। ইসলামে নবী মোহাম্মদ সঃ এর জীবনই উত্তম আদর্শ। একটি অসাধারণ পুস্তিকার কথা উল্লেখ করা যায় এখানে। Mohammed The Prophet: By Prof. K. S. Ramakrishna Rao, Head of the Department of Philosophy, Government College for Women University of Mysore, Mandya-571401 (Karnatika).Re-printed from Islam and Modern age, Hydrabad, March 1978.

Islam and Modern age গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগে একটি ছোট পুস্তিকা আকারে [সপ্তম বা অষ্টম সংস্কৃরণ দেখেছিলাম দুই লক্ষ কপি] প্রকাশ পেয়েছিল। অল্প কথায় এতো সমৃদ্ধ আলোচনা খুব সংক্ষেপে নবী মোহাম্মদ (সঃ) এর জীবনের উপর দ্বিতীয়টি নেই বিশ্ব পুস্তক সম্ভারে বোধ হয়। পুস্তিকাটির এক জায়গায় অধ্যাপক রামকৃষ্ণ রাও লিখেছেন- The personality of Mohammad! It is most difficult to get into the truth of it. Only a glimpse of it I can catch. What a dramatic succession of picturesque scenes. There is Mohammad the Prophet, there is Mohammad the General; Mohammad the King; Mohammad the Warrior; Mohammad the Businessman; Mohammad the Preacher; Mohammad the Philosopher; Mohammad the Statesman; Mohammad the Orator; Mohammad the reformer; Mohammad the Refuge of orphans; Mohammad the Protector of slaves; Mohammad the Emancipator of women; Mohammad the Law-giver; Mohammad the Judge; Mohammad the Saint. এই লিংকে অনলাইনে আছে- http://www.themodernreligion.com/prophet/prophet-rao.html অধ্যাপক রামাকৃষ্ণ রাও খুব অল্প কথার দ্বারা রসুলের জীবনাদর্শকে তুলে এনেছেন। ধর্মনিরপেক্ষ ধার্মিক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ মানে ধর্মনিরপেক্ষতা না, তা তো বিশ্বের মানুষ দেখলো তার রূপ কেমন হয়েছে নানা জনপদে। নির্দিষ্ট কোন ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে নানা কৌশলে অন্য ধর্মের ব্যাপারে টাইট থাকার তরিকা ধর্মনিরপেক্ষতা হয় না। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ যদি হয় সব ধর্মকে গুরুত্ব দেয়া, সুযোগ দেয়া; তাইলে ধার্মিক যিনি, তিনিই ষোলআনা ধর্মনিরপেক্ষ শাসক হতে পারেন। কারণ তিনি ব্যক্তি জীবনে ধর্মনিরপেক্ষ[ধর্মবিমুখ] নন। তিনি নিজ ধর্মের গুরুত্ব বুঝেন বলেই অন্যের ধর্মের গুরুত্বও বুঝেন। আর ধর্ম বিরোধী শাসক ধর্মনিরপেক্ষ শাসক হতে না-পারার কারণ তিনি কোন ধর্মকেই গুরুত্ব দিতে রাজি না। আর সেকুলারিজম তার আসল চেহারা দেখায় এভাবে- be free from religious rule and teachings. সেকুলারিজম টার্মটা যিনি ব্যবহার করেছিলেন তিনি George Jacob Holyoake, হয়তো ভাবেননি অমন করে। এমন হয়। যেমন মার্কসিস্টদের কাছে কার্ল মার্কসের দেয়া বরাবর আদর্শ নাই- এমন অভিযোগ আছে। অজস্র নবীর উম্মতের দাবিদারদের কাছে ইসলামও বিকৃত অবস্থায় দেখা যায়। দেখা যায় ইসলামের মূল চেতনার ধারে-কাছেও নাই অথচ দাবি করে মুসলিম। ধর্মজাত সংস্কৃতি প্রসঙ্গ যদি দি অরিজিন অব কালচার এর লেখক Thomas Dietrich-এর চিন্তাটাকে ঠিক ধরা যায়-Culture is a spiritual realit, তাইলে ধর্মনিরপেক্ষ কোন সংস্কৃতি বাস্তবে আছে কী? বাঙালি সংস্কৃতি কি ধর্মের শিক্ষা হতে মুক্ত কোন সংস্কৃতি? নিশ্চয়ই না। মানে, বাঙালি সংস্কৃতি হল এ অঞ্চলের নানা ধর্মের মানুষের সংস্কৃতির সমাহার। মানে, নানা সংস্কৃতির যূথবদ্ধ সংস্কৃতির বান্ডিলের নাম বাঙালি সংস্কৃতি। মানে, বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা করে যে-জনগোষ্ঠী, তাদের ভেতরে আলাদা আলাদা সাংস্কৃতিক পরিচয়ও আছে। দেখা যায়, কেউ নির্দিষ্ট ধর্মানুশীলন না-করলেও কোন-না-কোন ধর্মজাত সংস্কৃতি চর্চা করছেন সমাজ জীবনে। বিবিধ সাংস্কৃৃতিক চেতনা ভিন্ন ভিন্ন সমাজ কাঠামো নির্মাণ করে এবং তা বিবর্তন/পরিবর্তন ধারাতে প্রবহমান। সাংস্কৃতিক কনফিগারেশন সভ্যতার নানা পর্যায়ে এসেছে সমাজে। যেখানে ধর্মের প্রভাব একটা অরিজিন/শুরু বিন্দুর চিহ্নায়ন করে। এবং পর্যায়ক্রমে classical literature is a storehouse of cultural configuration ইত্যাদি বিবেচনায় রাখতে হয়। এই সভ্য জগতে আমাজন মহাবনের অসভ্য মানুষগুলোর জীবনাচার-সংস্কৃতিতেও তারা তাদের বিশ্বাস মোতাবেক ধর্মমান্যতাকে প্রধান ধরে আছে। বাংলাদেশের জীবনাচার-সংস্কৃতির বৈচিত্র্য প্রত্যেক ধর্মপরিচয়ধারী মানুষগুলোর প্রাত্যাহিক জীবনাচার থেকেই প্রকাশ পায়। এর ফলেই সাংস্কৃতিক কনফিগারেশন ভিন্ন ভিন্ন। আর এই ভিন্নতাকে একাট্টা করে যে-দুটি শব্দ তা বাঙালি সংস্কৃতি। এই একাট্টা হওয়ার ধরন অনেকটা পোস্টমর্ডানিজম ধারণার বান্ডিলের মতো- বহু তত্ত্বের সম্মিলন। বাঙালি সংস্কৃতির প্রায় শতভাগ দখল করে আছে হিন্দু মুসলিম খ্রিষ্টান বৌদ্ধ ধর্মজাত সংস্কৃতি। মতবাদগুলোর ফোর্সড টু ড কিন্তু ধর্মের বিরুদ্ধে...ধর্মের উপর একটা ঢালাও অভিযোগ, বিশেষত ইসলাম ধর্মের উপর বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্ম সমালোচক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মত প্রকাশ করেন যে, ধর্মীয় অনুশাসন জোরপূর্বক মানুষের মধ্যে ধর্মজাত সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়। দেখা যায়, ফোর্সড টু ডু বাই ফোর্স বা ধর্ম কর্তৃক মানুষের উপর আদেশ নির্দেশ চাপিয়ে দেয়ার মিথ্যা অভিযোগ বেশ পুরনো। এমন অভিযোগ অজ্ঞতা নিয়ে পর্যবেক্ষণের ফলে আসে তাদের তরফ থেকে যারা ধর্মের বিরুদ্ধে ঢালাও কথা বলেন। চাপিয়ে দেয়া বা ফোর্সড টু ডু বলতে যেভাবে একটা খারাপ অর্থ প্রকাশ করা হয়, ধর্ম সেরকম কিছু চাপিয়ে দেয় না। এটা প্রপাগান্ডা, এটা মিথ্যারোপ। ধর্ম আহবান জানায় বিনম্রভাবে। আর বিশেষত ইসলাম ধর্মের আদেশনিষেধগুলো এমন যে, একটা শিশু আগুনে হাত দিতে উদ্যত হলে, আগুনের ক্ষতি সম্পর্কে যারা অবগত, তারা বাই ফোর্স শিশুটিকে আগুনে হাত দিতে দিবে না। এই ফোর্সড টু ডু নিশ্চয়ই কল্যাণের জন্যে। চাপিয়ে দেয়ার ব্যাপারটা বরং জঘন্যভাবে আসে অজস্র অন্য প্রসঙ্গ থেকে। নির্দিষ্ট মতবাদের প্রতি অন্ধ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মানবজাতির ইতিহাস ব্যাপী জোরপূর্বক কিছু সংস্কৃতি চালু করেছে। মতলববাজ অজ্ঞ লোকেরা সে-সবের বন্দনা ও গোলামী করে আসছে আর ধর্মের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে থাকছে। সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, নাস্তিক্যবাদ, গণতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ইত্যাকার বহু বাদ দেশে দেশে বরবাদি সংস্কৃতি চাপিয়ে দিয়েছে। বিচার বিবেচনায় বস্তুনিষ্ঠতা আনতে হলে সবদিকে নজর রেখে বিবেচনা করতে হয়। বাঙালি সংস্কৃতির ভেতরে থাকা ধর্মজাত সংস্কৃতি সর্বাধিক প্রভাবশালী। মতবাদজাত সংস্কৃতি কানা লেংরা লুলা। জীবন সংস্কৃতিশূন্য হয় না। ধর্মজাত সংস্কৃতির ভেতরে না-থাকলে নানা প্রকার মতবাদজাত সংস্কৃতির ভেতরে থাকতে হয়। তথাকথিত মুক্তমনা পরিসরের কোনো সুনির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক অবস্থান নাই; কেবল ভেলকিবাজির দ্বারা কিছুর অপেক্ষায় রাখা, যা অনেকটা স্যামুয়েল বেকেটর ওয়েটিং ফর গডো এর মতো। উপসংহারে গালে হাত দিতে শুধু তারা বাধ্য করে মানুষকে। উল্লেখ্য, এখানে ইসলামের শুদ্ধতম ধারা এবং প্রতিষ্ঠিত চারটি ধর্মের মূল চেতনার আলোকেই কথা বলা হয়েছে। কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মচিন্তা, যে-ধর্মচিন্তা ধর্মের মূল ধারার বিপরীতে মূলত, যে-সব ধর্মচিন্তা দিয়ে ধর্মবিরোধীগণ ধর্মকে কলুষিত করবার অপপ্রয়াস নিয়ে থাকেন, সে-সব চিন্তা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কই? কোরআনের আলোকে জীবন গড়ি এই মিশনের রাজনীতিতে যারা আছেন, তাদের দ্বারা সমাজ/দেশ মধ্যযুগে ফিরে যাবে না। কোন অতীত যুগে ফিরে যাওয়া কোন অর্থেই সম্ভব না। এবং অন্যদিকে গীতার আলোকে জীবন গড়ি এই মিশনের রাজনীতি নিয়ে যারা আছেন, তাদের দ্বারা সমাজ/দেশ দাপর যুগে ফিরে যাবে না। বর্তমান সময়ের কোন দেশ সেই প্রাচীন হস্তিনাপুর রাজ্যের মতো হয়ে যাবে না। না-হওয়ার যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। ধৃতরাষ্ট্রের সন্তানদের অনুসারীদের সাথে পাণ্ডুর পুত্রগণের অনুসারীদের সাথে রক্তক্ষয়ী লড়াই হলেও দাপর যুগের আগমন ঘটবে না। অধার্মিকের পাপাচার প্রয়াসের বিরুদ্ধে যুগে যুগে সব্যসাচী অর্জুন থাকেই। এবং যুগে যুগে ওমর রাঃ আলী রাঃ, খালিদ বিন অলিদ, সালাহউদদীন প্রমুখ আসতে থাকেন অসত্যের অপপ্রয়াস মোকাবিলা করতে। এই মোকাবিলার অর্থ নয় পেছনের কোন যুগে ফিরে যাওয়ার প্রয়াস। মেধাহীন ক্ষমতালিপ্সু ঠগবাজ কিছু পলিটিশিয়ান আর অজ্ঞ মিডিয়াম্যানরা একটি টার্ম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ব্যবহার করে আসছে। উপমহাদেশে আসলে যথাযথ অর্থে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে কী? পুনর্বিবেচনা করতে হবে ব্যাপারটা। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেবেলে যা হয়েছে তা কিছু পলিটিশিয়ানের বজ্জাতি আর তাদের অনুগত কিছু মূর্খ লোকের স্বার্থের লড়াই। কোন প্রকৃত মুসলিম অন্য ধর্মাবলম্বীকে আক্রমণ করে না। কোন প্রকৃত হিন্দু অন্য ধর্মের লোককে মারতে আসে না। শ্রীমদ্ভগবদগীতার শ্ভ্রু শিক্ষা স্মরণ করা যায়। বলা হয়েছে- অহংকার, বল, কাম, ক্রোধ, লোভ ত্যাগ করতে পারলে মন নির্মল হয়(৫৩)[অষ্টাদশ অধ্যায়ঃ মোক্ষযোগ শ্রীগীতা বাংলা অনুবাদ] আত্মশুদ্ধির এই রকম শিক্ষা ইসলামেও আছে। অমন শিক্ষা পাওয়া মানুষেরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা করে না। যারা করে তারা কোনো ধর্মের লোক না। ইসলামে জানানো হয়েছে, কিছু সুনির্দিষ্ট কাজ করলে ঈমান থেকে খারিজ হয়ে যেতে হয়। ঈমানের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয় আমলের ব্যাপারে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয় ও উস্কানি যারা ছড়ায় তারা সমাজের ক্ষতি করে আসছে। তারা নিজেদের ক্ষতি করছে কিন্তু অজ্ঞতার কারণে তা দেখতে পায় না। উপমহাদেশের দুই ধর্মীয় শক্তি- হিন্দু ও মুসলিম ধর্ম নিয়ে রাজনীতিকেরা যেভাবে রঙ লাগান এবং দুই পক্ষকে যেভাবে ভয়ংকর আকারে দেখাবার প্রপাগাণ্ডা চালানো হয়। আসলে এই দুই ধর্মাবলম্বীদের উচ্চতর চিন্তার মানুষগুলো যে শান্তির পক্ষে তা-ও তো এক বাস্তবতা। শ্রীমদ্ভগবদগীতার শুদ্ধ অনুসারীরা শান্তিকামী সজ্জন, কোরআনের শুদ্ধ অনুসারীরাও শান্তিকামী সজ্জন। আত্মশুদ্ধির জন্য ইসলামের শিক্ষা এই যে, আমিত্ব/অহং ইবাদতের দ্বারা মারতে হয়। নিজকে তুচ্ছ করে আল্লাহর কাছে সমর্পিত হতে হয়। শ্রী চৈতন্য দেবর শিক্ষাষ্টক নামের আটটি সংস্কৃত কবিতার একটিতে আছে-তৃণাদপি সুনীচেন তরোরিব সহিষ্ণুনা অমানিনা মানদেন কীর্তিয়িঃ সদা হরি। শ্লোকের মর্মার্থ-তৃণ অপেক্ষা সুনীচ, তরু অপেক্ষা সহিষ্ণু, অভিমানশূন্য ও অন্যকে কর জোরে সম্মান দেন যিনি বা যাঁরা হরিনামের যোগ্য তিনি বা তাঁরাই। [অনুবাদ সুমন সেনগুপ্ত]উত্তরাধুনিক চিন্তাতে ধর্ম ও নারী পুরুষের বঞ্চনা পূর্ব কিংবা পশ্চিম, পৃথিবীর সবখানেই জেন্ডার বৈষম্য আছে। ভিন্ন ভিন্ন সাংস্কৃতিক বলয়ে পুরুষের উপর আধিপত্যের অভিযোগ। অর্থাৎ নারীর উপর খবরদারি করে। একটা বাস্তবতা এরকম যে, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অল্পশিক্ষিত, ধর্মব্যবসায়ীরা নারীর যথাযথ অধিকার দিয়ে আসছে না। তাই বলে ঢালাওভাবে গ্রান্ড নেরেটিভসকে দায়ী করা সুবিচার হয় কি? কিছু লোকের আচরণ দিয়ে কি সমগ্রকে অভিযুক্ত করা যৌক্তিক? বাংলাদেশের অজপাড়াগাঁর একটি ছোট মসজিদের ইমামের ধর্মচিন্তা আর মিসরের আল আজহার ইউনি কিংবা মদীনা ইউনি থেকে বেরিয়ে আসা ইসলামিক স্কলারের ধর্মচিন্তা কি এক? নিশ্চয়ই এক নয়। অথবা যারা তুলনামুলক ধর্মতত্ব নিয়ে উচ্চ ডিগ্রী নেন, তাদের ধর্মচিন্তা উপমহাদেশের অনেক মাদ্রাসা পাশ বিখ্যাত আলেমের ধর্মচিন্তার চাইতে উজ্জ্বল এমনও দেখা যায়। যে-সব ধার্মিক এর ভেতর থেকে কাম ক্রোধ লোভ ঘৃণা বের হয় বিষাক্ত ফণা তোলা সাপের মতো, তারা কি আসলেই ধার্মিক? অপরদিকে যারা আল্লাহ খোদা মানেন না, মানবতাবাদী দাবি করেন, অথচ তাদের ভেতর থেকে ক্ষ্যাপা শিম্পাঞ্জির মতো হিংস্রতা বের হয় ধার্মিকদের উদ্দেশে, তারা কি আসলেই মানবতাবাদী? উত্তরাধুনিক পণ্ডিতদের কারো কারো দৃষ্টিতে ইসলামও একটি গ্রান্ড নেরেটিভ। তারা এই নেরেটিভ এর ইতি নেতি বের করার জন্য চিরুণি অভিযান চালানোর পক্ষপাতি। কারো দৃষ্টিতে সালমান রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেস উত্তরাধুনিক প্রয়াস। আবার কারো মতে, না, ওটা উত্তরাধুনিক চিন্তা সমৃদ্ধ বই নয়। কেউ কেউ ইসলামী পুনরুজ্জীবন আন্দোলনকেও উত্তরাধুনিক ফেনোমেনন মনে করেন। পুঁজিবাদের বিপক্ষে যুদ্ধের ময়দানে উত্তরাধুনিক চিন্তা পুঁজিবাদের সব ধরনের শত্রুর সাথে হাত মিলাতে চায়। কারণ আধুনিকতার বিশাল ক্যানভাসে, ইউরোপীয় এ্যানলাইটমেন্টের ভেতরে, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নামক মারাত্মক রোগ এর বিরুদ্ধে ইসলাম তিন শ বছর লড়াই করেছে, যা অন্য কোন গ্রান্ড নেরেটিভ করে নি। উত্তরাধুনিক চিন্তা জেন্ডার বৈষম্যকে গলা ধাক্কা দিয়ে পৃথিবীর উপরিভাগ থেকে মহাশূন্যে ফেলে দিতে চায়। তাই ফেমিনিজম বলে- আসো বন্ধু গলাগলি করি প্রাণভরে। কারণ আগেই উল্লেখিত রোমান্টিক ভালবাসা নাকি পুরুষের খবরদারিকে সুযোগ দ্যায়। কিন্তু মানুষের মেধাজাত বিস্তর ধারণা ভালোভাবে প্যাঁচ বন্ধনে যুক্ত অর্থাৎ তত্বের সাথে তত্বের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যোগ একেবারে গার্ডিয়ান নট বা মরা গিট্টু এর মতো লেগে আছে। পশ্চিমের বাইনারি অপোজিশানের ব্যাখ্যা নারী পুরুষের বেলায় দুই প্রকার। কেউ দেখছেন নারীলিঙ্গ ইতিবাচক আর কেউ দেখছেন নারী লিঙ্গ নেতিবাচক। কেউ বলছে পুরুষলিঙ্গ বাইরে আছে অবস্থায় প্রকাশিত, তাই ইতি; আর নারীলিঙ্গটি বাইরে নাই বিধায় নেতি। নারীলিঙ্গকে যারা ইতিবাচক বলছেন, তাদের যুক্তি- নারীলিঙ্গ আধার- ধারন করে, গ্রহণ করে। পুরুষলিঙ্গ আধার নয়, গ্রহণ করে না। এই দ্বন্দ ফেমিনিজমকে ভালো একটা সমস্যায় ফেলেছে। বঞ্চনা র উপর চোখ রাখলে, দেখা যাবে, দেশে দেশে বহুসংখ্যক নারী যেমন বঞ্চিত, তেমনি বহুসংখ্যক পুরুষও বঞ্চিত। সারভাইভাল অব দি ফিটেস্ট এর খেলায় জেন্ডার কি আসলেই মুখ্য? নারীও নারীকে ধাক্কা মেরে ফেলে আগে যেতে চায়, পুরুষও পুরুষকে মারে, নারী পুরুষকে মারে, পুরুষও নারীকে মারে ধাক্কা! এই ধাক্কা মারামারি দৃশ্যে তত্ত্ব নীরব দর্শক। সভ্যতার বিশাল ক্যানভাসে প্রখর মেধাবী নারী আছে, পুরুষও আছে। ব্যক্তির সাফল্যের আলো দিয়ে সমষ্টির ষোল আনা সাফল্য আসে না, সেই দৃশ্যও আছে কালান্তরের দৃশ্যপটে। (এই অংশটি উত্তরাধুনিকতা বিষয়ক লেখকের একটি রচনা থেকে কিঞ্চিত সম্পাদিত হয়ে সংযোজিত)সমাজ ধর্মনিরপেক্ষ নয়, ধর্মবিমুখ নয় ধর্মের প্রাধান্য বিস্তার বা প্রতিষ্ঠা শুধু মানুষে মানুষে লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিত আনেনি, আনছে না, আনবেও না। যুগ যুগ ধরে মানব সভ্যতার নানা পর্যায়ে, দেশে দেশে, সমাজে সমাজে, ধর্মীয় প্রসঙ্গ ছাড়াও, ক্ষমতার জন্যে, দেশের জন্যে, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতিপত্তির জন্যে, ব্যবসায়িক দাপট প্রতিষ্ঠার জন্যে, উগ্র জাতীয়তাবাদ, আঞ্চলিকতা, গোষ্ঠী প্রাধান্যের প্রবণতা ইত্যাদি অজস্র কারণে মানুষ প্রতিযোগিতা/লড়াই করে আসছে। গণতন্ত্র চায় দাবি করে এমন দশটি দল দেখা যায়, একটি দেশের ভেতরে ফ্যাসিবাদ চর্চা করে ক্ষমতা নিতে চায়। নেতাদের জিজ্ঞেস করলে বলে- আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই এবং এজন্যে লড়াই করছি। সমাজের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে মানুষ প্রাধান্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। সুতরাং সমাজ থেকে প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলো মুছে ফেললেও ননা প্রকার অজুহাতে লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিত থাকবেই। এই কারণে ধর্ম সকল অশান্তির মূলে এমন চিন্তা অজ্ঞতা প্রকাশ করে। একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়, সুকৌশলে ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখিয়ে, খেলার নিয়ম মেনে জিততে পারা, আর খেলার নিয়ম লঙ্ঘন করে সুকৌশলে ফাউল ইত্যাদি করে গোল দিতে পারা এক নয়। খেলার নিয়ম লঙ্ঘন চতুর দর্শকের নজরে পড়ে রেফারির চোখ ফাঁকি দিলেও। দেখা যায়, সব ক্ষেত্রের রাজনীতি ক্রীড়াতে নিয়ম লঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে অন্যকে পরাজিত করবার প্রয়াসের কারণে রক্তক্ষয়ী লড়াই লেগে যায়। মেধাবী খেলোয়াড় নতুন নতুন শিল্প রচনা (আর্ট অব ইনফ্লুয়েন্স) করে নিয়ম মেনে খেলতে খেলতে জয়ী হন।অন্যসব রাজনীতি সমাজে থাকলে ধর্মের মিশনের রাজনীতি যারা করছেন, তাদেরও অধিকার রয়েছে সে-রাজনীতি করবার। politics in everyday life। এই প্রাত্যাহিক জীবন ধর্ম, সংস্কৃতি, রাজনীতিএই তিনের সঙ্গে মিশে আছে, আলাদা করা যাবে না। বাংলাদেশ ভারতের সাধারণ মানুষের জীবন কখনও ধর্মীয় বিবেচনামুক্ত হয়নি নানা সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে। ধর্মচিন্তাকে সাথে রেখেই মানুষ নানা সমস্যার সমাধান খুঁজে আসছে। মানে, সমাজ বাস্তবতায় এই অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ ঠিক ঠিক ধর্মনিরপেক্ষ নয়, ধর্মবিমুখ নয়। বিশেষ যারা, তারাও ধর্মহীন পরিচয় দিলেও সমাজের ধর্মীয় পরিমণ্ডলেই জীবন যাপন করে আসছেন। কোন ধর্মের পরিচয়ধারী লোকের ধর্ম বিরোধী কথাকে ঢালাওভাবে গ্রহণ করলে সমস্যা দেখা দেবেই। একইভাবে ধর্মের পক্ষে কথা বলছেন নানা প্রকার ফেব্রিকেশন যোগ করে, তাদের কথাও ঢালাওভাবে গ্রহণ করা ক্ষতিকর। তাই সতর্ক জ্ঞানানুসন্ধান খুব দরকার সকলের মঙ্গলের জন্যই।

সংকলন : সরওয়ার চৌধুরী, দৈনিক মানবজমিন, ০৭ মে ২০১৩ইং।

বিষয়: বিবিধ

১৬৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File