মদীনা সনদ ছিল ইসলামী রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি (বাংলাদেশের গন্তব্য কোন পথে?)
লিখেছেন লিখেছেন থার্ড পারসন ১৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৪১:০৬ দুপুর
নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহীদের শাস্তির দাবীতে দেশব্যাপী ধর্মপ্রাণ তৌহিদী জনতার ক্ষোভ ও হেফাজতে ইসলামের ৬ এপ্রিলের লংমার্চ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একদিকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির দূর্বলতা ও পিছুটানভাব অন্যদিকে গুটি কয়েক ব্লগারের ইসলাম বিদ্বেষী ভূমিকা ও শাহবাগের তথাকথিত গণজাগরণের নামে ইসলাম ও ইসলামী তাহজীব তমুদ্দুন এর তুচ্ছ তাচ্ছিল্যতার কারণেই ফুঁসে উঠছে সাধারণ জনতা। আদর্শিক দিক থেকে দেশের মানুষ এখন বিভাজিত বলে মনে হচ্ছে। হেফাজতের ১৩ দফা দাবী যেমন ইসলামী রাষ্ট্র বির্মিমাণে সহায়ক ঠিক তেমনি মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন এগুলো মধ্যযুগীয় চিন্তা ভাবনা। তার মানে ১৩ দফার বাস্তবায়নের রূপরেখা কেমন হবে তা না জানা স্বত্তেও এটাকে মধ্যযুগীয় বলা ইসলামী আদর্শকেই মধ্যযুগীয় বলার নামান্তর। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার সর্বত্র এ সব আলোচনা যখন সরব ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন দেশ চলবে মদীনার সনদ অনুযায়ী। একথা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কি বোঝাতে চেয়েছেন তা খোলাসা করে না বললেও নবীজির আদর্শে দেশ চালানোর কথাই হয়ত তিনি বলতে চেয়েছেন। মদীনায় সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে সকল ধর্মের সম্মিলিত শক্তির মাধ্যমে মদীনার নিরাপত্তা বিধান করাই ছিল রাসূল (সা) এর মদীনা সনদের উদ্দেশ্য। ঐতিহাসিকরা বলেছেন এই সনদের মাধ্যমে মূলত মুহাম্মদ (সা) একটি ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি তাহলে বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করবেন?
ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন এমন যে কেউ জেনে থাকবেন যে,মদীনার সনদের সময়ে ইসলামের সকল বিধি বিধান গুলো তখনো সম্পূর্ণ নাযিল হয়নি। বরং মক্কা জীবনে তাওহীদ রেসালত ও আখেরাতের আয়াত গুলো নাযিল হয়েছিল আর মাদানী জীবনে নাযিল হয়েছিল ইসলামের সামাজিক বিধান, রাজনৈতিক বিধান, অর্থনৈতিক বিধান, যাকাত, জিহাদ, সাংস্কৃতিক বিধান ইত্যাদি।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইসলামের বিধান অনুসরণ করা প্রতিটি মুসলিম নরনারীর জন্য ফরয বা অবশ্য কর্তৃব্য। তাহলে মদীনা সনদের কথা বলেই ক্ষান্ত হবেন কেন? ইসলামের অবশিষ্ট বিধি বিধান গুলো বাস্তবায়ন কবে হবে?
মদীনার সনদের কয়েকটি বৈশিষ্ট ছিল:
মদীনার সনদে কোন নারীকে মদীনার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী বানায়নি। কোন একটি ক্ষুদ্র জাতিকে বা সংখ্যালুঘুর উপর যুলুম করেননি। পার্শবতী মক্কার শত্রুদের থেকে মদীনাকে বাচাঁতে এ সনদ হয়েছিল পার্শবতী দেশের তাবেদারী করার জন্য এ সনদ হয়নি। আওস ও খাযরাজ গোত্র ও অন্যন্য গোত্রীয় কলহের অবসান হয়েছিল মদীনার সনদের মাধ্যমে, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ফাঁসী/হত্যা কিংবা গুম করার জন্য এ সনদ হয়নি। সকল মানুষ নিরাপত্তা পেয়েছিল এ সনদের মাধ্যমে। এই সনদেই রচনা করেছিল মক্কা বিজয় তথা ইসলামের পূর্ণ বাস্তবায়ন। আরো অসংখ্য বৈশিষ্ট্য ছিল পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম লিখিত সনদে।
মদীনার সনদের কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী যখন ঠিক তখন বাংলাদেশের বাস্তবতা কি? বাংলাদেশে নির্বিচারে গুলিতে মানুষ মরছে, বৃদ্ধ মানুষের দাঁড়ি ধরে মারা হচ্ছে, পাঞ্জাবী ছিড়ে ফেলা হচ্ছে, আলেম ওলামাদের দিয়ে কারাগার বন্দী, নির্যাতন গুম ও হত্যার ভয়ে মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে, নারী শিশুরাও রেহাই পাচ্ছেনা নির্যাতন থেকে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাফ করবেন, আপনি কোন মতলবে মদীনা সনদের কথা বলেছেন তা আপনিই ভালো জানেন। তবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে ইসলামী আইনের বিকল্প নাই।
বিষয়: বিবিধ
১৪০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন