জামায়াতের পর সরকারের নতুন আতংক হেফাজত

লিখেছেন লিখেছেন থার্ড পারসন ০৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:৩০:২৯ রাত

মাস দু'এক আগেও হেফাজতে ইসলামের নাম তেমন জোরে শোরে শোনা যায়নি কখনো। হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক প্রখ্যাত আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (র)'র নেতৃত্বাধীন এ সংগঠনটির আত্নপ্রকাশ ঘটে সম্ভবত বছর দু'এক আগে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীক এ সংগঠনের পরিচিতি থাকলেও দেশব্যাপী তেমন কোন বিস্তৃতি ছিলনা বলেই চলে। মাঝে মধ্যে বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যমে কিছুটা কর্মসূচী পালন হতো বলে জানা যায়। এখন হেফাজত ইসলাম টক অব দি কান্ট্রি। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর দাবীতে ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টরা একত্রিত হবার পর তাদের আসল মুখোশ উম্মোচন হয়ে যায়। ধরা পড়ে ব্লগে তাদের ইসলাম বিদ্বেষী মারাত্বক প্রচারণা। জামায়াতের বিরুদ্ধে চরম অবস্থান ঘোষণাকারীরা যেন ক্রমান্বয়ে যেন ইসলামী বিরোধী অবস্থান নেয়। দৈনিক ইনকিলাব ও তার পরদিন দৈনিক আমার দেশের মাধ্যমে বিস্তারিত জেনে যায় গোটা বিশ্ব। হতভম্ভ হয়ে যায় ধর্মপ্রাণ জনতা। ক্ষোভে ফেটে পড়ে আলেম ওলামা সহ তৌহিদী জনতা। তৌহিদি জনতার মিছিলে চালানো হল গুলি। নির্মম ও লোমহর্ষক নির্যাতন,ধর-পাকড় ও বায়তুল মোকাররম মসজিদে তালা অব্যাহত ভাবে চলতে লাগল। কেউ কেউ বাংলাদেশ সরকারের এ আচরণকে ইসরাঈল কর্তৃক ফিলিস্তিনের নিরস্ত্র মুসলমানদের হত্যার সাথে তুলনা করেন এবং বায়তুল মোকাররমকে বায়তুল মোকাদ্দাসের ভাগ্যবরণ করার কথা বলেন নির্ধিদায়। এদিকে শাহবাগের আন্দোলনের সাথে তাদের দাবীর প্রতিটি বর্ণ,বাক্যের সাথে প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাড়িয়ে সমর্থন জানালেন। সংহতি জানালো জাতীয় সংসদ, সচিবালয় সহ দেশের প্রায় সকল সরকারী প্রতিষ্ঠান। শাহবাগের নির্দেশে জাতীয় পতাকা উত্তোলন সহ জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হলো। প্রধানমন্ত্রী বিচারপতিদেরকে শাহবাগের গণদাবীর প্রতি বিবেচনা করে রায় দেয়ার কথাও বলে ফেলেন অবলীলায়। সচেতন বিশ্ববাসীও হতবাগ হওয়া ছাড়া আর কি করার আছে। এর ধারাবাহিকতায় আসল ফাঁসীর রায়। মিষ্টি বিতরণ হলো শাহবাগ সহ সারাদেশে। অন্যদিকে ফাঁসীর রায়ের প্রতিবাদে দেশ জুড়ে প্রতিবাদী হয়ে উঠে তাওহীদি জনতা। নারী,পুরুষ আবাল বৃদ্ধ বনিতা সহ প্রতিবাদমূখর জনতাকে ঠেকাতে পুলিশ বিজিবির গুলিতে একদিনেই ঝড়ে যায় শতাধিক প্রাণ। যার মধ্যে নারী ও শিশুর লাশও। সরকার রক্তে রঞ্জিত করে নেয় শাসনের হাত। বিরোধীদলীয় নেত্রী সহ বিশ্ব মিডিয়া এটাকে গণহত্যা হিসাবে উল্লেখ করে। একগুয়েমী ভাবে চলতে থাকে এ গণহত্যা। জামায়াতকে ঠেলে স্বাভাবিক রাজনীতির রাজপথ থেকে অনেক দূরে। রাজপথ অনেক খানি নিস্কন্টক মনে করে সরকার। অপরদিকে নাস্তিক ও ধর্মবিদ্বেষী ব্লগারদের ধর্মবিদ্ধেষীদের আড়াল করতে সরকার প্রথমে এসব সাজানো নাটক বলে সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে। নাস্তিক ব্লগারদের পক্ষে সাফাই গায় সরকারের মন্ত্রী ও নীতি নির্ধারকরা। শাহবাগ চলছে তো চলছেই। থামছেনা কিছুতেই।

শাহবাগ আন্দোলন কারীদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে সরাসরি ধর্ম বিদ্বেষের অভিযোগ রয়েছে তারাও বীরদর্পে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে ভাবখানা এমন যে, কে আছে এমন আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়? ই.সরকার তো বলেই ফেলল কোন সরকার বেশী শক্তিশালী? গণজাগরণ থেকে উত্তর এল শাহবাগের সরকার বলে। তাদের আস্ফালন ঠেকানোর কোন ব্যবস্থায় গ্রহন করেননি।

হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের কর্মসূচী ঘোষণা করে দীর্ঘ এক মাস পূর্বে। এত দিনে সরকারের স্বদিচ্ছা থাকলে নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেফতার করা কোন বিষয় ছিলনা। কিন্তু সরকার মনে করেছে হেফাজত ইসলামীর হায়দরী হাঁক বাত কি বাত। কিন্তু দিন যখন ঘনিয়ে এল হয়ত সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল বুঝতে পারল যে, এটা বাত কি বাত নেহি ইয়ে আচ্ছা বাত হ্যায়। সরকার চেয়েছে গুটি কতক ব্লগারদের ধরে হেফাজতের সাথে একটা সমঝোতা করা কিন্তু তাতে ভাসুররা বড়ই নাখোশ। শাহরিয়ার কবির, ইউসুফ হুমায়ন বাচ্চু সাহেবরা সরকারকে আর কোন সূযোগ দিতে রাজী নয়। ডেকে দিল হরতাল। ঠেকিয়ে দিল লংমার্চ। কিন্তু ততক্ষণে যা হবার তাই হয়ে গেল। বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হচ্ছে সবখানে, কেউ পায়ে হেঁটে, কোন জায়গায় অবস্থান নিয়ে হেফাজতের কর্মীরা সরকার বিরোধী অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছে এবং যেভাই হোক রাজধানীতে সমাবেশ করার কথা জানিয়েছে হেফাজত।

রাজনীতির খেলার মাঠের অপেক্ষমান দর্শকদের মন্তব্য ফেলে দেবার কোন জো নেই তারা বলছেন হেফাজত সরকারের জন্য নতুন আতংকের নাম। লংমার্চ ঠেকাতে মরিয়া হয়ে সরকার তার আতংকের ছাপ জনসাধরনের সামনে আবার প্রকাশ করে দিল।

বিষয়: বিবিধ

১১১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File