গনজাগরন নাকি হুজুগের সুযোগে রাজনৈতিক তল্পিতল্পা গুছানোর অভিনব পদ্ধতি
লিখেছেন লিখেছেন চারুলতা ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১১:৩৮:১৩ সকাল
বাংলাদেশে তরুন প্রজন্মের বোধের উদয়কে অনেকেই নীল বিপ্লবের সাথে তুলনা করছেন!বাস্তবিক অর্থে যার কোন যৌক্তিকতাই নেই।মিসরের বিপ্লব হয়েছিলো শাসকের শোষণ ও নিপীড়নের কালো হাত ভেঙ্গে দিতে।আমাদের বড়ই দুর্ভাগ্য যে আমাদের তরুন সমাজ একতাবদ্ধ হয়েছে কিন্তু এমন একটি বিষয়ে যার বিচার ব্যবস্থা সারা পৃথিবীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ!কিন্তু আমরা জানি,বাঙ্গালি খুব আবেগি একটি জাতি। আমাদের মাটিকে আমরা মায়ের স্থান দিয়েছি। তাই হয়তো দেশ প্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন প্রজন্ম সঠিক তথ্য না জেনেই শাহবাগের দিকে দলে দলে ছুটছে ।যেই কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে আজ শাহবাগের চারিদিকে হাহাকার উঠেছে,মজার বিষয় হলো সেই লোকটির বিরুদ্ধে এক মিনিট এর সাক্ষী জোগাড় করতেই ঘাম ছুটে গেছে বাদি পক্ষের।তরুনরাই একটি দেশের মূল চালিকা শক্তি । বাঙ্গালির যতো মুক্তিসংগ্রাম সব ই শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।আমাদের প্রান প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় যেটা বাংলাদেশের সর্বচ্চ বিদ্যাপীঠ সেইখানে কোন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নেই,ডাকসু নির্বাচন এখন সোনালি অতীত,জাতির নেতৃত্তের জায়গাটা আজ যে কারনে মেধাহীন কাণ্ডজ্ঞানশূন্য,অথচ ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে কাউকে সোচ্চার হতে দেখিনি এভাবে, আমরা জাতির কর্ণধার,কই আমরা কি একটি প্রতিবাদ ও করেছি সীমান্তে বি এস এফ এর নির্মমতার?পাখির মতো আমাদের ভাই বোনদের গুলি করা হচ্ছে প্রতিদিন,আমাদের সরকার নিশ্চুপ,আমাদের কি এই বিদ্যাপীঠের ছাত্র হিসেবে দায়িত্ব ছিলনা তাদের প্রতি পাশে দাঁড়ানোর?
বিশ্বজিৎ এর রক্ত মাখা শার্ট ও আমাদের দিকে বিদ্রুপের দৃষ্টিতে চেয়ে আছে,আমাদের দ্বায় শুধু ফেস বুকের স্ট্যাটাস দেওয়ায় সীমাবদ্ধ ছিল। আমরা ৪০ বছর আগের ধর্ষণ হত্যা নিয়ে মাতামাতি করছি আর বর্তমানে যে মা-বোনের ইজ্জত ছাত্রলীগের পশুরা অলিতে গলিতে নিলাম করে যাচ্ছে তাতে আমাদের কিছুই যায় আসেনা।এই সরকার তার জুলুম নিপীড়ন কে ঢেকে দিতে বেছে নিয়েছে টগবগে তরুন সমাজ কে । emotional fool বানিয়ে ব্যাবহার করছে তাদের । বিশ্বজিতের খুনিদের সাথে একই মঞ্চে দাড়িয়ে ছিলেন জাফর ইকবাল ,আর কি বুঝতে বাকি থাকে আমাদের।তিনি মঞ্চে উঠে তরুনদের বললেন –তোমরা প্রেম করবে! আসলে তারা কেমন সমাজ চাইছেন? এমন একটি সমাজই কি যেখানে জাফর ইকবালের মেয়ের মদ খাওয়া, বয় ফ্রেন্ড বদল হওয়া,অথবা খোদ জাফর ইকবালের হিন্দি গানের তালে তালে নাচার দৃশ্যকে মানুষ খুব সহজেই মেনে নিবে?এই জন্যই কি ধর্মহীন সমাজ গড়ার ডাক দিলেন তিনি?এই জন্যই কি ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার ডাক এসেছে এই সমাবেশ থেকে?আমাদের এই পবিত্র মাটিতে দাড়িয়ে আমরা কিভাবে মেনে নেই রাসুলের অপমান?একজন আন্দোলনকারীর কমেন্ট এ রাসুল কে নিয়ে নিজামির সাথে অশালীন মন্তব্য কিসের ইঙ্গিত বহন করে?আবার তারা এই বলেও প্রচারনা চালাচ্ছে যে এইসব নাকি জামাত শিবিরের কাজ!আর যাইহোক , যেই ইসলামি দল ই হোক রাসুলের প্রতি এমন মন্তব্য করে নিজের ফায়দা লোটার চিন্তা করবেনা কখনই ,এইটা একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে আমার দাবি এবং বিশ্বাস ! এইটা ঢাকতেই ওইসব পেজের এই মিথ্যা অপপ্রচার! আওয়ামীলীগ যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার শুরু করে নিজেদের সব অপকর্ম ঢেকে দিতে সক্ষম হয়েছে নতুন প্রজন্মের মেধাবী মনকে আবেগের পট্টি পড়িয়ে নিজেদের সব অপরাধ কে অদৃশ্য করে দিতে পেরেছে !যে যেই দল ই করুক দেশের প্রশ্নে আমরা আম জনতা খুবই আবেগি ,এটা বামরা খুব ভালো করেই জানে,তাই সুযোগে সৎ ব্যাবহার করাই তারা উত্তম ভেবেছেন।যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার চাইতে যেয়ে বামরা তাদের ব্যবসায়িক সিদ্ধি হাসিলের জন্য ইসলামি ব্যাংক বন্ধ করায় এতো জোর দিচ্ছে কেন? রাষ্ট্রায়ত্ত করে দিয়ে সরকারের নতুন লুটপাটের ক্ষেত্রে পরিণত করতে চায় ইসলামি ব্যাংককে।কিন্তু আমাদের ভাবার বিষয় এটাই যে ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতির বিরাট একটি অংশ । ৯০% মুসলিমের দেশে শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংকটি আমাদের অর্থনীতির আশার আলো। দেশের গোটা অর্থনীতির অর্ধেক ই ইসালামি শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হচ্ছে যার পথিকৃৎ ইসলামি ব্যাংক ।সুদ ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার যাতনা থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়াই যার উদ্দেশ্য ।যখন দেশের নানা বিষয়সহ অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো প্রতিবেশি দেশের আগ্রাসনে মৃতপ্রায়। রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের ভয়াবহ দুর্নীতিতে অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত, তখন এরকম প্রেক্ষাপটে দেশের মাটি-মানুষের বিশ্বাস ও অর্থনীতির মূল স্তম্ভটি বন্ধের আস্ফালন গভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
আমরা বিগত নির্বাচনের পর থেকেই দেখছি সরকার যেন ক্ষমতা না ছাড়ার সংকল্প নিয়েছে, যার জন্য আদর্শবাদী প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে ,যার একমাত্র হাতিয়ার মুক্তি যুদ্ধের আবেগ ই হতে পারে! এই আবেগ কে কাজে লাগিয়ে কতিপয় মিডিয়া যারা উস্কানি দিয়ে কতিপয় বাম পন্থীদের সহায়তায় আবেগি তরুন সমাজকে রাজপথে নামিয়েছে ।মূলত এখানে বোধ হয় অন্য কোন যোগ সাজেশ চলছে!আগাম বিচারগুলোর রায়কে প্রভাবিত করাও এর একটা উদ্দেশ্য হতে পারে। এটা শুধু বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করছেনা,বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতাকে ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে ।আর এই বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্য থেকে শুরু করে বিচারকদের নিরপেক্ষতাও ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ!আর যতদূর জানা যায় ৮০% জনগন ই শাহবাগ প্রহসনের বিরুদ্ধে,জরিপ গুলো তাই বলছে ।সব শেষে একটাই কথা থেকে যায়, আমরা সবাই এ দেশের নাগরিক, এই মাটিতে বসবাসের অধিকার,এই বাতাসে শ্বাস নেওয়ার অধিকার সবারই আছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠী কখনই এটা নির্ধারণ করতে পারেনা এই মাটিতে কে কি করবে,কে কি পরবে!তাই যদি হয়,তাহলে তা হবে মানবাধিকারের উপরে জুতা ছুড়ে দেওয়া। আমরা মানবাধিকারের অনেক অপমান সহ্য করেছি,সুবিচার পাওয়ার অধিকার আমাদের কোথাও নেই।এ যেন বাংলার মাটিতে নব্য জাহিলিয়াতের জয়জয়কার! আমরা চাই এই সমাজে সবাই সুবিচার পাক।
বিষয়: রাজনীতি
১০২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন