ভার্চুয়াল জিহ্বায় লালা
লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ানা জেরিন ২৮ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:৫৫:২৩ দুপুর
ব্রিজের ঢালু দিয়ে নামছিলাম। শাটার বন্ধ হওয়া দোকানের সামনে দুইজন ব্যক্তিকে রাস্তার দিকে পিঠ দিয়ে মাটিতে বসে কিছু একটা করতে দেখলাম। ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম - একটা প্রমাণ সাইজের পলিথিনে বেশ কিছু বিরিয়ানি নিয়ে গোগ্রাসে খাচ্ছেন। হয়তো বিয়ে বাড়ির উচ্ছিষ্ট খাদ্য।
এরচেয়েও করুণ দৃশ্য ও মাঝে মাঝে দেখা যায়। সেটা বোধ হয় বুঝতে পেরেছেন। ডাস্টবিনের মাঝে খাবার খোঁজার কথা বলছি।
হাকিম চত্বরে কখনো খেতে বসলে কিংবা ভার্সিটিতে আমাদের বড় কোন অনুষ্ঠানের ভোজ সভায় দলে দলে টোকাইদের আগমন ঘটে। এদের জন্য মায়া লাগলে বন্ধুরা বলে- এরা আমাদের চেয়ে আরও বেশী বেশী ভালো খাবার খায়।
মানুষের থেকে চেয়ে চেয়ে কতোই বা আর ভালো খাবার খেতে পারে মানুষ। খাওয়ার ও একটা লিমিট আছে তাই না? একটা মানুষের পেট ভরা থাকলে সে যতোই ছ্যাঁচড়া হোক অন্য কারো কাছে ভিক্ষা চায় বলে আমার মনে হয়না। আর চাইলেই বা! দুনিয়াতে ৭০০ কোটি মানুষ। এতো মানুষ ছেড়ে আল্লাহ্ যেহেতু আপনার কাছে এই অভুক্ত বনি আদমকে পাঠিয়েছেন তার জন্য তো কৃতজ্ঞ হওয়া উচিৎ।
ইদানিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শো অফ কালচার অনেক মানুষের শান্তি কেড়ে নিয়েছে। ভালো ভালো খেতে পারাটাও এক ধরণের ক্রেডিট। তাই আমরা সমানে নিজেদের ভালো খাবার খাওয়ার ছবি আপলোডাই। হুম! হয়তো আমার ঐ খাবারটা খেতে মন চাইলে কিনে খেতে পারি, কিন্তু যে পারছেনা তার মধ্যে না খাওয়ার বেদনা জাগিয়ে আপনার কী লাভ?
ভালো খাবার খেতে পারাটা বড় আনন্দের কাজ। সেই আনন্দ ফেইসবুকে ছবি শেয়ার করলেই বাড়বে? নাকি সেই খাবার থেকে প্রতিবেশিকে একটু ভাগ দিলে কিংবা বাসায় আসা ভিখারিকে তার অতিরিক্ত কিছু দিলে বাড়বে? ভার্চুয়াল জিহ্বাগুলোয় লালা আনার চেয়ে বাস্তবে অনাহারি মুখে এই স্বাদ যোগানটাই কী ভালো ছিল না? যদি কারো জিহবায় স্বাদ যোগানো উদ্দেশ্য না হয়, তাহলে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা ছবি দেই?
আমি ভালো আছি, ভালো খাই , আনন্দ পাই এটা জানানোই কী মুখ্য নয়?
এক বান্ধুবি সেদিন বলছিল ও প্রেগন্যান্ট থাকা অবস্থায় কারো শেয়ার করা রান্না করা পাস্তার ছবি দেখে খুব খেতে মন চাইছিল। সারাদিন তার মন চেয়েছে। কিন্তু এতো যোগাড় যন্ত্র করে রান্না করা তার সেই শারীরিক অবস্থায় সম্ভব ছিল না। কিন্তু মনে পাস্তা খাওয়ার বাসনা সারাদিন তাকে ছটফট করিয়েছে।
ইসলাম বলে যে খাবার তুমি অন্যের মাঝে বিলাতে পারবেনা সে খাবার অন্যকে দেখাবে ও না। গোশত রান্না করলে গোশতের ঘ্রান প্রতিবেশির ঘরে যায় বলে গোশতে ঝোল বেশী দিয়ে রান্না করে প্রতিবেশিকে ভাগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর সেখানে আমরা এক পেয়ালা নুডুলস কিংবা এক বাটি কুমড়ো ভাজি করলেও তা ছবি তুলে দিতে ছাড়িনা। আমি নিজেও এক সময় দিতাম । সেটা রেসিপি দিয়ে জাতির উপকারের নিমিত্তে। কিন্তু একটা সময় মনে হল- উপকার করতে যেয়ে মানুষের শান্তি কেড়ে নেওয়াটা অর্থহীন।
খাওয়া মানুষের মৌলিক একটা অধিকার। প্রতিদিন আমরা খেয়েই বেঁচে আছি। অতি প্রয়োজনীয় এই নিত্য কাজের ছবি তোলা বা দেওয়াটা অহেতুক কাজ।
আর যেই উদ্দেশ্যে পোস্ট লেখা। আপনার বাসায় ও প্রতিদিন কিছু না কিছু খাবার অপচয় হয়। আর সেই খাবার গুলো খোঁজার জন্যই কেউ না কেউ ডাস্টবিন হাতায়। আপনার অতিরিক্ত খাবার ভালো পলিথিনে পেঁচিয়ে ভালো করে বেঁধে ফেলুন। কে জানে আপনার ফেলা এই অতিরিক্ত খাবার কারো প্লেটের কোনার শোভা বাড়াবে, কারো ক্ষুধার আগুন মেটাবে। আমার ধারণা, আরবদের চেয়ে আমরা ও খাবার অপচয়ে কম যাই না। সিটি করপরেশন যদি দুই ধরণের ময়লা, আসল ময়লা আর অতিরিক্ত খাবার( যা আমাদের কাছে ময়লা হিসেবে গণ্য) আলাদা ভাবে ফেলার ব্যবস্থা করতো তাহলে আসল ময়লার চেয়ে রান্না করা বাসি ,অতিরিক্ত খাবারের পরিমাণই বেশী হতো।
বিষয়: বিবিধ
২২০১ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রতিনিয়ত ফেসবুকে ঝড় তুললেও আপনি ব্লগে একেবারে অনুপস্থিত। ব্লগেও নিয়মিত হওয়ার প্রত্যাশা করছি........
সত্যিই বলেছেন, যে হারে আমরা খাবার অপচয় করি, এর জবাব একদিন অবশ্যই দিতে হবে। গরীব প্রতিবেশীর খোজ খরব রাখা ও সহায়তা করা তো ঈমানের অংশ বিষেশ।
ফেসবুক বা ব্লগে খাবারের ছবি আপলোডের ব্যাপারে আপনার লিখা পড়ে দারুন উপকৃত হলাম। সুন্দর পোষ্টটির জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া।
স্লেভভাইয়া নিজ হাতে পুটির মায়ের জন্য রেধেছেন অবশেষে জীবনে প্রথমবারের মত বিরিয়ানী রান্না করলাম
আপনি এরকোম পোস্ট দিতে নিষেধ কোরছেন
আত্ন-সংশোধনীমূলক লিখাটির জন্য আন্তরিক শুকরিয়া। আল্লাহ সঠিক বুঝ দান করুণ। আমীন।
আমরা সাধারনত খাবার নষ্ট করি সামাজিক আচরন দেখাতে গিয়ে। যেমন বিয়েতে কেউ যদি চেটেপুটে খায় সবাই তার দিকে বাঁকা চোখে দেখে। কিন্তু এটা সুন্নত এবং খাবার নষ্ট হয়না এই ক্ষেত্রে।
সুন্দর সচেতনতা মুলক পোস্ট!! অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগলো.. ধন্যবাদ..
মন্তব্য করতে লগইন করুন