লাশ: রক্তাক্ত ২৮ ( পর্ব- ১)
লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ানা জেরিন ২৭ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:৩৩:৫৩ সকাল
খুব শখ করে বাহির থেকে এসেছিল ইয়াহিয়া, এতো দিনের নিস্তব্ধ জীবনে একটা সঙ্গী জুটানোর আশায়।বাবা মা দেখে শুনে একটা ধার্মিক মেয়ে পছন্দ করলেন জীবন সঙ্গী হিসেবে। নার্গিস! একটা ফুলের নাম!
সেই ফুল সুরভিত করলো ইয়াহিয়ার জীবন কে। ছোট খাটো একটা সংসার হোল ওদের ২ জনের। বাবা মা গ্রামে থাকেন, কিন্তু নার্গিসের ফাইনাল ইয়ারের এখনো কিছুদিন বাকি। ঢাকায় ই থাকতে হবে তাকে। তাই ইয়াহিয়া সাত পাঁচ ভেবে বাসা ভাড়া নিল।
কিন্তু এই সুখ যে বেশীদিনের না সে কি তা জানতো না? মাত্র মাস ৬ এক এর ছুটি নিয়ে এবার দেশে এসেছে। তার মধ্যে ২ মাস চলে গেলো বিয়ে শাদী আর জীবন সামলে নেওয়ার ধাক্কায়।
আচ্ছা!সুখের দিন গুলো কি খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়? ইয়াহিয়ার মনে পড়ে ঐ গল্পটা! এক এরাবিয়ান বন্ধু বলেছিল- একবার এক জাহাজ সমুদ্রের প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যে পড়ে। ঝড়ের তোলপাড়ে সবাই মরে যায় জাহাজের, বেঁচে থাকে একজন নাবিক। বাকি রাত টুকু তার কাছে খুব দীর্ঘ মনে হয়।
কারন সেটা দুঃখের সময় ছিল।
২ জনের সংসারে নার্গিসের খুব বেশী কাজ নেই। বড় ভাইয়ের বাসা পাশাপাশি হওয়াতে প্রায় ই রান্না না করলেও চলে। ইয়াহিয়া ও বিদেশ ফেরত তার ও তেমন কোন কাজ নেই। মোটামুটি ঝারা হাত পা ২ জনের ই।
আজ সকালে নার্গিস একটু ব্যস্ত। কারন আজ তাকে কলেজে যেতে হবে। জরুরি একটা ক্লাস পরে গেছে। কিন্তু মহাশয় সেই যে ফজর পড়ে কুরআন তেলাওয়াত করে আর টুকটাক সাহিত্যে চোখ বুলিয়ে লেপের নিচে ডুব দিয়েছেন উঠার কোন খবর নেই।এমনকি বইটা ও মুখের উপর থেকে সরাতে পারেননি ঘুমের জ্বালায়। নাস্তা বানিয়ে ফেলল নার্গিস। বাথরুমে যেয়ে তার চক্ষু ছানাবারা! একি! ১২ টা শার্ট একসাথে রেখে দিয়েছে ধোয়ার জন্য! কতবার সে স্বামীকে বলেছে একসাথে এতো কাপড় দিও না, বাসায় শুকাবার যায়গা নেই, কিন্তু ঐ যে! বিদেশি অভ্যাস! ওয়াশিং মেশিন এ কাপড় এক গাদা দিলেও তো সমস্যা হয়না! তার উপর ছোট্ট একটা ২ রুমের বাসা। নেই কোন বারান্দা! এক চিলতে আকাশ দেখা যায় তাই বা মন্দ কি!
কাপড় ভিজাতে ভিজাতে নার্গিস ভাবে আজ সব কাপড় ইয়াহিয়াকে দিয়ে ধোয়াবে। তাহলেই মজাটা বুঝবে। কলেজের জন্য রেডি হচ্ছে, এতো আওয়াজ করে করে জিনিষ নিচ্ছে তাও বান্দা বেহুশের মতো। মুখে কোন মতে কিছু দিয়ে কয়েকবার ডাক দিলো ইয়াহিয়া কে। সে ঘুমের ঘোরে কয়েকবার কি কি করে চেচাল !
নার্গিস বলল- উঠে দরজা লাগাও ! আমি কলেজে যাচ্ছি! আর নাস্তা করে নিও, কাপড় ভিজিয়ে গিয়েছি কাপড় ধুয়ে ফেলো।
ইয়াহিয়ার মেজাজ খুব গরম হয়ে গেলো এতো ভাষণ শুনে।
সে বলল- আমি কিছুই পারবো না করতে ! আমি আজ সারাদিন ঘুমবো।
নার্গিসের মন একটু খারাপ হোল। বিদেশে থাকা ছেলেরা দেশে এসে বড্ড অলস হয়ে যায় কেন জানি। মন খারাপ নিয়েই কলেজে চলে গেলো নার্গিস।
২ টায় ক্লাস শেষ হলে কলেজ থেকে বের হোল সে। টুকটাক কেনাকাটা করছিল, তেতুল দেখে খুব লোভ হোল তার। কিন্তু এতোটুকু তেতুল ২০ টাকা চায় বলে তেতুলওয়ালার সাথে হালকা উস্মা সহকারে কথা বলছিল।
তখন সামনে চোখ পড়তেই দেখল ইয়াহিয়া দাড়িয়ে আছে হাতে গোলাপ নিয়ে। একটু অবাক হোল নার্গিস! এই অলস টা তবে বিছানা ছেড়ে উঠলো!
নার্গিস কিছুই বলেনা। শুধু আড়চোখে তাকায়। ইয়াহিয়া খুব লজ্জিত। সকালে ঘুমের ঘোরে কি না কি বাজে বকেছে কে জানে। ইশ! বউ নিশ্চয়ই খুব ই মাইন্ড করেছে! গোলাপ কিনতে কিনতে ইয়াহিয়া এটা ভেবেই নিয়েছিল নার্গিসকে পটানোর এর চেয়ে ভালো সিস্টেম আর নেই। একটা রিক্সা নিল রিক্সা জার্নি করার জন্য। ফিরার সময় পাবলিক লাইব্রেরিতে বইয়ের মেলায় ঢুকল। ডেল কার্নেগীর একটা বই গিফট করলো নার্গিস কে। ২ জন ই মান অভিমান ভুলে গেলো। ছোট বড় নানা কথায় মেতে উঠলো। বিয়ের ২ মাস হলেও এখনো স্বভাব কাজ কর্ম বুঝে উঠতে অনেক দেরি আছে। একটা মানুষকে বুঝা নিশ্চয়ই এতো সহজ নয়
( চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৯৯৭ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কাজ আর কাজ! প্রবাস জীবনে কাজই যেন শ্বাস। তাই তো দেশে আসার পর স্বাভাবিক ভাবেই একটু আলসেমী ঘিরে ধরে।
অসাধারণ ভাল লাগায় এগিয়ে যাচ্ছি লেখনীর সাথে।
অনেক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন