সুফিয়া কামাল হলে হিজাবিদের লিস্টঃ মনুষ্যত্ব বনাম শিক্ষিত
লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ানা জেরিন ২৬ অক্টোবর, ২০১৪, ০৭:১০:৩৮ সন্ধ্যা
হাহ!
ঢাবির টিভি রুম গুলোতে যখন হিন্দি সিনেমা আর চ্যানেল সারাদিন চলে তখন আপনারা কই থাকেন?
একবার তো এসে কোনদিন বলতে শুনলাম না- দেশের মানুষের টাকায় , দেশের বিদ্যুতে তোমরা এইসব বিজাতীয় জিনিষ দেখো না!
-পলকহীন চোখে সিনিয়র জুনিয়র একসাথে বসে পর্ণগ্রাফি দেখো না!
- মেয়েরা তোমরা হিন্দি সিরিয়াল দেখে দেখে সংসার ভাঙ্গার মন্ত্র শিখে ফেলো না।
- তোমরা পাখি জামার জন্য পাগল হয়ে আত্মহত্যা করো না।
- তোমরা কথায় কথায় হিন্দি কথা বলো না। ছেলেমেয়েকে কি শিক্ষা দিবে! তোমরা না সর্বচ্চ বিদ্যালয়ের সবচেয়ে মেধাবী নারী!
জানি, বোরখা পড়া মেয়ে দেখলে আপনাদের ভীষণ খারাপ লাগে। খারাপ লাগাটা কখনো কখনো চেহারায় ভেসে ওঠে, কখনো বা ক্লাসের মধ্যে বিতর্কিত কথা বলে বিতর্ক সৃষ্টি করে তার প্রকাশ পায়, কখনো পরীক্ষার খাতায় সবচেয়ে ভালো ছাত্রীটাকে বি গ্রেড দিয়েও সেই খারাপ লাগার দুর্বলতাটা আপনারা জাহির করে ফেলেন মনের অজান্তেই।
কারো ব্যক্তিগত আদর্শ সম্পর্কে ততোক্ষণ পর্যন্ত আপনার মাথা ব্যাথা হওয়া উচিৎ নয় , যতক্ষণ না তা ব্যক্তি হিসেবে আপনাকে আক্রমণ করে। ক্লাসের যে মেয়েটা হিজাব পরে, যে বোরখা পরে তার ব্যক্তিগত কোন আচরণটা আপনার বাড়া ভাতে ছাই দেয় আমি বুঝিনা! তারা আপনার গাড়ির চাকা তো ফুটো করেনা কোনদিন, বা আপনারটা খায় ও না, পড়ে ও না! আপনার ফাঁসি চায় বা মুণ্ডপাত করে ডিপার্টমেন্টের দেয়ালে এই মেয়েদের কোনদিন আপনার কুৎসা রটাতেও দেখা যায় না!
এরপর এই আক্রোশগুলোই একদিন সেই বোরখা পড়া মেয়েটার ঢাকা শহরের একমাত্র ঠাই গোঁজার ছাত্রী হলেও চালান।
কুরআন শরীফ পড়া, আর নিজের নিরাপত্তার জন্য মাথায় কাপড় দিয়ে চলা কোন আইনে অপরাধ একটু বলতে পারবেন ? হ্যা! এটা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বৈ কি! কিন্তু এখানে পড়তে আসে ঐ ধর্ম ভীরু কৃষকের মেয়েটা, যে আজান দিলেই মসজিদে ছোটে, এখানে পড়তে আসে ঐ শিক্ষিকার মেয়েটি যে নিজের কন্যাকে শেখায়- যে শালীনতাই মধ্যবিত্ত ভদ্র সমাজের অহংকার।
এখানে ২/ ১ জন ছাত্রীর মতো সবাই স্বল্প বসনে এসে আপনাদের মনোরঞ্জন করবে না, এটাই স্বাভাবিক।
আমাদের ম্যাম বলে- এখানের করিডোর ধরে হাঁটলে ও যা জানা যায়, যা শেখা যায়, অনেক ভার্সিটিতে বইয়ে ডুবে থাকলে ও তা শেখা যায় না!
এখানে সবাই স্বাধীন, ততোক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না সেই স্বাধীনতা আরেকজনের ক্ষতি করছে।
একটা ছাত্রী সুফিয়া কামাল হলে বসে কুরআন তেলাওয়াত করলে আপনার কি সমস্যা? আপনার কানের সামনে তো আর করছে না? একজন মাথা ঢাকলে আপনার কি সমস্যা? আপনার মাথা তো ঢেকে দিচ্ছে না!
কিংবা আমরা ও তো কোনদিন কাউকে যেয়ে বলিনা যে আপু আপনার জামাটা মাত্রাতিরিক্ত ছোট, এভাবে চললে তো আমাদের স্বামীদের মাথা নষ্ট হয়ে যাবে, ভাইরা খারাপ হয়ে যাবে, চোখের পর্দা থাকবে না।
আমরা বিনা বাক্য ব্যয়ে ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা ভেবে নিজেদের ক্ষতি মেনে নিচ্ছি। অথচ, আপনারা সামান্য কুরআন পড়া সহ্য করতে পারেন না, মাথায় কাপড় দিলে কথায় কথায় লিস্টি বানান, হল থেকে বের করে দিবেন বলে হুমকি দিতে আসেন, আবার ছাত্রত্ব বাতিলের ধমক ও দেন!
সেদিনের কথা ভেবে এখনো খুব হাসি পায়। যেদিন বান্ধুবিরা মিলে নামাজ রুমে যেয়ে বিস্তর কাগজ পত্র ছড়িয়ে অ্যাসাইন্মেন্ত লিখছিলাম। সেই হলের খুঁতখুঁতে কেয়ার টেকার এসে ভেবেছিলো, নামাজ রুমে কুরআন হদিসের আলোচনা চলছে । প্রভোস্টের রুমে নিয়ে সে কি তামাশা! ভাগ্যিস সেদিন সাথে একজন নন হিজাবি ছিল! নাহয় ছাত্রত্ত বাতিল তো কোন বিষয়ই না এখানে!
আর কমন রুমেও ৩ জন হিজাবিকে এক সাথে দেখলে জরিনা বানু ( ছদ্ম নাম) কান পেতে থাকে! কুরআন হাদিসের কথা বলছে না তো মেয়েরা! স্যারকে জানাতে হবে তো!
কীভাবে বিশৃঙ্খলা করছে হতচ্ছাড়া হিজাবি মেয়ে গুলো। রবীন্দ্রনাথের মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথেই তো ঢাবি রওনা দিয়েছে!
তো! এতোই যখন ইসলাম ভীতি, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময়ই বেছে বেছে নাস্তিক ভর্তি করান না কেন!
বিশ্ববিদ্যালয় মানে তো বিশ্বকে জানার সুযোগ, জীবন ও জগতকে জানার এক উদার ক্ষেত্র। সেখানে যদি জীবন চলার গাইড লাইন জানতে চাওয়াই দোষের হয়, আমি বলি এরচেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়াই ভালো।
শিক্ষিত হতে বিশ্ববিদ্যালয় লাগে, কিন্তু প্রকৃত মানুষ হতে লাগে ধর্মের শাসন। এখন কি কথিত শিক্ষিত হওয়া জরুরী, নাকি প্রকৃত মানুষ হওয়া ? আজ নাহয় সেটাই ঠিক করে দিন আপনারাই
বিষয়: বিবিধ
২০৩২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিষয়টা আমি মেনে নিতে পারলাম না। আপনি কি মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে?? কখনোই না। বরং আরাে বাড়বে। আমাদের একমাত্র সামস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের মাত্র কয়েক % সেকুলার নাস্তিক পুরোজাতিকে নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছে তাদের মিড়িয়া বদৌলতে। আমরা কেন পারলাম না তাদের সাথে পাল্লাদিয়ে জনপ্রিয় মিড়িয়া সৃষ্টি করতে?? পারিনি আমাদের ছাড় দেওয়ার মনমানসিকতা কারণে। তবে এটা ঠিক যে কিছু কিছু অতি উগ্র মুসলিম কিছু বিতর্কিত কাজ করে মুসলিমদের ভাবমুর্তি নষ্ট করে দিচ্ছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন