সম্ভাব্য হলিউড থ্রিলার প্লট: ডঃ আফিয়া সিদ্দিকি
লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ানা জেরিন ২০ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:৪৯:৪৩ রাত
পাকিস্তানি মেয়েরা সাধারণত সুন্দরী হয়। আর যারা প্রাকৃতিকভাবে, এবং জাতিস্বত্বার দিক দিয়েও লাবণ্যের অধিকারী, তারা বৃদ্ধ হলেও সাধারণত সেই সৌন্দর্য বোঝা যায়।
কিন্তু, ৩ সন্তানের জননী, টগবগে তরুণী পাকিস্তানী নারীর অত্যাচারে পিষ্ট মুখ দেখে তা বোঝার বিন্দু মাত্র কোন উপায় নেই।
বলছিলাম ডক্টর আফিয়া সিদ্দিকির কথা।
“একটি জমজমাট হলিউডি থিলারের প্লট” একটা লেখার শেষে বাক্যটা পড়ে চমৎকৃত হলাম বটে।
একজন কুরআনে হাফেজ, নিউরো সাইন্টিস্ট সুন্দরী পাকিস্তানী নারীর আলোচিত জীবন আর পশ্চিমাদের দেওয়া সন্ত্রাসী সিল মোহর নিয়ে নিঃসন্দেহে একটা জমজমাট হলিউড মুভি হবে, শুধু বিশ্ব জানবেনা সে একজন সন্ত্রাসী ছিল না, এক মুভিতেই বাজিমাত হয়ে যাবে। সারা দুনিয়া জানবে, আফিয়া সিদ্দিকি একজন সন্ত্রাসী ছিলেন।
আজ হোম পেইজে তার মৃত্যুর বিষয় সম্পর্কে জেনে আরও একটু বিস্তারিত জানার চেষ্টা করলাম। একটা সুশীল ব্লগে তাকে আল কায়েদার মাতাহারি বলে সম্বোধন করা হয়েছে।
আর বাংলা বিভিন্ন পত্র পত্রিকা এবং স্টোরি গুলো পড়লেও আপনার মনে অবশ্যই সন্দেহ নাড়া দিবেই যে তিনি হয়তো আসলেই আল কায়েদার সদস্য ছিলেন।
এরপর ইসলামিক লেখকদের লেখায় ও তেমন যুক্তিপূর্ণ কোন তথ্য প্রমাণ পাইনি । আবেগে ভরা , আর বিবরণ লোমহর্ষক নির্যাতনের। এবার আসুন, একটু প্রকৃত সত্য জানি!
ডক্টর আফিয়া সিদ্দিকি আমেরিকার এম আই টি, এবং ব্রাণ্ডিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়া পি এইচ ডি ডিগ্রীধারী একজন স্নায়ু বিজ্ঞানী। এবং ডিগ্রীটা যথেষ্ট ভারি ও বলা যায়।
যে সময়টা তিনি আমেরিকায় ছিলেন সেই সময়টা তিনি বিভিন্ন ইসলামিক সাহায্য সংস্থা বিশেষ করে বসনিয়া , ফিলিস্তিন,
১৯৯০ তে তিনি আমেরিকায় আসেন। প্রথমে এম আই টি এবং পরবর্তীতে ব্র্যান্ডিস ইউনিভার্সিটি থেকে কগনিটিভ নিউরোসায়েন্সে স্নাতক হন।
১৯৯৫ সালে বিয়ে করেন করাচীর এক ডাক্তারকে, যাঁর নাম আমজাদ খান। বস্টনে থাকাকালীনই আফিয়া ছিলেন পরিচিত মুসলিম অ্যাকটিভিস্ট। আফগানিস্তান, বসনিয়া ও চেচনিয়ার জন্যে প্রচার এবং ফান্ড জোগাড় করায় তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
বুঝাই যাচ্ছে, আমেরিকায় আফিয়া বেশ পরিচিত মুসলিম অ্যাক্তিভিস্ট ছিলেন। হয়তো তখন থেকেই কড়া নজরদারিতে তিনি।
এরপর ২০০১ এর ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর, সেখানকার শিশুদের সাথে তার সন্তানদের চলাফেরা, এবং মুসলিম বিদ্বেষী পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারছিলেন না। তাই , ৩য় সন্তানকে গর্ভে নিয়েই ২০০২ এ পাকিস্তান ফিরে আসেন।
এরপর প্রথম স্বামীর সাথে তালাক হয়ে যায়, আদর্শগত দ্বন্দ্বের কারনে। আফিয়ার ধর্ম নিবেদিত প্রাণ তিনি খুব ভালো চোখে দেখতেন না।
এরপর ২০০২ এর ডিসেম্বরে আবার ইউ এস এ যান।
ডিভোর্সের ৬ মাসের মাথায় অফিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এই ভদ্রলোকের নাম আম্মার আল-বালুচি, যিনি ৯/১১-এর এক অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী খালিদ শেখ মহম্মদ এর ভাইপো।
আমেরিকার লিগাল আইনে এমন কোথাও লেখা নেই যে- সন্ত্রাসীর ভাইয়ের ছেলের বউকেও সন্ত্রাসী ভাবতে হবে। যার যার জীবন তো তার তারই!
ওদিকে খালেদ শেখ মোহাম্মদকে ও অকথ্য নির্যাতন করা হয়। এবং এক পর্যায়ে জোর পূর্বক বয়ান নেওয়া হয় আফিয়া সিদ্দিকির বিরুদ্ধে। অত্যাচারের মুখে খালেদ ও এমন স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হন। আম্মারকেও ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত গুয়ান্তানামোবেতে আটকে রাখা হয়।
এবং সেই সাথে ৩ সন্তানের জননী আফিয়া ও হটাত হারিয়ে যান। অদ্ভুত তাইনা! স্বামীকে গুয়ান্তামো বে তে নিয়ে গেলো, আর স্ত্রীকে নেওয়ার জন্য খুঁজেই পেলো না ! আমেরিকার আর্মি এতোই বোকা! কবির ভাষায় বলতে হয়- হাসালে মোরে।
আমাদের দেশটা অনেক ছোট। ছোট ছোট স্বার্থের জন্য এখানে কথায় কথায় মানুষ গুম করা হয়। আর আমেরিকার মতো ঘাগু দেশ কি করে?
জী পাঠক। ঠিক ধরেছেন। ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আফিয়ার কোন হদীস ছিল না। কারন, তাকে বিভিন্ন কারাগারে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে লোক চক্ষুর আড়ালে। আর তার বিরুদ্ধে আগেই GLOBAL ALERT জারি করে আমেরিকা বিশ্বকে বুঝিয়েছে- আফিয়া সিদ্দিকি গ্রেফতারের ভয়ে আত্মগোপন করেছেন। আর ওদিকে তলে তলে হাজার বার ধর্ষণ, কুরআনের পাতা ছিড়ে তার উপর হেটে যেতে বাধ্য করা, অত্যাচারে অত্যাচারে সুন্দরী পাকিস্তানী ডক্টরের মুখের কি করুন পরিণতি তা আমরা দেখেছি।
এরপর, ২০০৮ সালে হটাত আফিয়ার অবস্থান প্রকাশ হয়ে যায়।
আফগানিস্তানের গজনি থানা। ৪ জন আমেরিকান সৈন্য আফিয়াকে সেই থানার একটি রুমে আবিষ্কার করে। আফিয়া তখন ঘুমাচ্ছিলেন। সৈন্যরা তখন রুমে ঢুকে আফিয়াকে দেখে গুলি নিচে রাখে( এতো নিস্পাপ আমেরিকার সৈন্যরা!!!!!)
এরপর আফিয়া জেগে যান। এবং নীচে রাখা সেই গুলি নিয়ে সৈন্যদের দিকে গুলি ছুড়তে থাকেন। যদিও তিনি ৫ ফুট তিন ইঞ্চি, তিন সন্তানের মাতা! তাও তিনি নাকি এই দুঃসাহসিক কাজ করেছেন । যাই হোক! তা গুলি ছুড়লেন, কিন্তু রুমের একটা জানালায় ও গুলি লাগলো না, লাগলো না ছাদে এমনকি লাগলো না একজন সৈন্যের গায়েও! আফিয়ার ফিঙ্গার প্রিন্ট পর্যন্ত লাগলো না গুলিতে। এরপর বেচারা সৈন্যরা আত্মরক্ষা করতে আফিয়ার পেটে ২ টি গুলি করে।
কতোটা বানোয়াট গল্প বলতে পারে আমেরিকান আর্মি! আর এই যায়গায়ই যদি আই এস এর হাতে আটক হওয়া বেটি ব্রাউন হতেন ! তিনি যদি আই এস গেরিলাদের গুলি ছুড়তেন। তিনি পৃথিবীর চোখে নিঃসন্দেহে এক মহীয়সী সাহসী নারী হিসেবেই পরিচিত হতেন।
এরপর এই মিথ্যা অভিযোগে প্রকাশ্য গ্রেফতারের ২ বছর পরে আফিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকায় মামলা হয়, একজন আমেরিকানকে শুট করার মিথ্যা অপবাদে।
এই কেইসের বিচারক ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে আফিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন- এখন কোথায় তোমার আল্লাহ?
এইখানে অবশ্য বাংলা সেই ভাব সম্প্রসারণের কোন যায়গা নেই- দণ্ডিতের সাথে দণ্ড দাতা যদি কাঁদে, তবে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।
এই বিচার তো প্রহসন, ঘৃণ্য রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের। তাইতো আফিয়া আর আপিল করার নেন নি।
কিন্তু এই ঘটনার প্রকৃত সত্য বোঝা খুব দুরূহ। খবরের কাগজের বিষদ বর্ণনা আপনাকে ভাবাবে, সন্দেহ তৈরি করবে, আফিয়ার সন্ত্রাসী হওয়া নিয়ে।
পাঠক, পুরা পৃথিবীর সংবাদ আর মিডিয়া জগত পশ্চিমাদের ছড়ানো জ্বাল। এখানে সত্য অসত্য চেনার কোন উপায় নেই। তাই একটু নিজ দায়িত্তে সত্য জানুন। আমরা আমাদের বোন আফিয়ার জন্য কিছুই করতে পারিনি, অন্তত ঘরে বসে প্রকৃত সত্য তো জানতে চেষ্টা করতে পারি। এরপর হাশরের দিন জাতির একজন হিসেবে যখন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, অন্তত বিধাতার কাছে বলা তো যাবে- আমরা জানতাম! আমাদের বোন নির্দোষ ছিল। আমরা কিছুই করতে পারিনি।
আফিয়া সিদ্দিকি ও মুসলিম উম্মাহের প্রতি নিরাশ ছিলেন শেষ চিঠিতে তাই তো উম্মতকে ঘুমন্ত জাতি আখ্যা দিয়েছেন। মুহাম্মাদ বিন কাসিমের পথ চাইতে চাইতে শাহাদাতের পথেই হয়তো পাড়ি দিয়েছেন এই মহীয়সী।
বিষয়: বিবিধ
১৯৭০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ডঃ আফিয়া সিদ্দিকী যদি ইসলাম প্রসারে- ইসালামী সমাজ গড়ার স্বপ্ন না দেখতেন তাহলে এতো মিথ্যা অভিযোগে নির্মম নির্যাতনের শিকার হতেন না।
আল্লাহ মহিয়সী ইসলামী এই বোন কে বেহেস্তের মেহমান করে নিন, আমিন।
(লেখা টা ২বার হয়েছে,এডিট করে দিলে ভাল হয়।)
আফিয়ার উপর বর্ণনা শোনে আবেগে আপ্লুত হয়েছি। আর সবার কাছে আফিয়া সিদ্দিকি একজন সন্ত্রাসী হতে পারেন, তাতে তার কোন দুঃখ খারাপ লাগার কথা নয়, কারণ স্বয়ং আল্লাহ যে তাকে ভালবেসে কাছে টেনে নিবেন, জান্নাতের সর্বোচ্ছ পুরুষ্কারে ভূষিত করবেন।
জী ইন শাল্লাহ কিয়ামতের দিন আমরাই হব তার সন্ত্রাস্মুক্ত জীবন যাপনের সাক্ষী।
ধন্যোবাদ ভাইয়া, খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন