‎ইহুদী‬ পণ্য বর্জনঃ একটি সুলক সন্ধান( পণ্য ৩- লরিয়েল প্যারিস)

লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ানা জেরিন ১০ আগস্ট, ২০১৪, ০২:৪৫:০১ দুপুর





ইহুদী রাক্ষুসিদের সুন্দর চেহারা ধুলা মলিন হয়ে যাবে যুদ্ধ করতে করতে!!! এটা সহ্য করতে পারলো না গারনিয়ার!

আল জাজিরার ওয়েব পোর্টালে দেখলাম গারনিয়ার ইসরাইলি নারী যোদ্ধাদের যুদ্ধের সময়ও সতেজ রাখার জন্য স্নো ফেইসওয়াশ উপহার দিচ্ছে ।

নীচে একজন বিধর্মীর কমেন্ট আপনাদের বলছি, যাতে বুঝতে পারেন বয়কটে কি আসলেই কোন লাভ হয় কিনা ?

Magdalena Szofer নামে একজন লিখছেন- If Garnier supports IDF, they will not see a single penny from me every again for as long as i live. I will not forget. They just lost a customer loyal to them fire the past 25+ years.

বুঝতেই পারছেন। কতোটা ঘৃণা থাকলে ২৫ বছর ব্যবহার করা পণ্য কেউ ছেড়ে দিতে পারে।

Israeli Union of Industrialists এর সমীক্ষা মোতাবেক গাযায় চলমান সহিংসতার ফলে প্রতি ৫ জন ইসরাইলী রপ্তানিকারকের মধ্যে একজন জিনিষ বিক্রি করতে প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন।

association's foreign-trade committee এর প্রধান Yair Rotloie বলেছেন- শতকরা ২১ ভাগ রপ্তানিকারক এই প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন, বিশেষ করে ইউকে আর স্ক্যান্দেনিভিয়ান রাষ্ট্রগুলোতে।

The Israel Export Institute এর ফেব্রুয়ারি ২০০৯ এর রিপোর্টে দেখা যায় যে, ইসরাইলের রপ্তানিকারকদের কাছে অর্ডার ক্যান্সেলেশন আসছিলো , এই বয়কটের ফলে। যার ফলে ৬৬ ভাগ ইহুদী এক্সপোর্টারকে জিনিষের দাম অনেক কমিয়ে দিতে হয়েছিলো।তারা ইসরাইল সরকারের কাছে আকুল আবেদন ও জানিয়েছিল তাদেরকে এই বয়কটের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।

শুধু তাই নয়, বয়কটের ফলে ক্রেতাদের কে ধোঁকা দিয়ে পণ্য কেনানোর চেষ্টা ও ইসরাইলের ব্যবসায়ীরা করেছে, এখনো করছে।

সাইপ্রাস মেইল পত্রিকায় ১৯ মার্চ ২০০৯ এর একটি রিপোর্টে বলা হয়- জার্মান সুপার মার্কেটে ইসরাইলের আঙ্গুর মেইডইন সাইপ্রাস নামে বিক্রি করে ক্রেতাদের ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে।

সে সময় প্রচুর ইসরাইলী ফল ইউরোপের বিভিন্ন যায়গায় পচে নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ, মানুষ কিনেনি। আর ২০১৪ সালের এই গণহত্যায় পুরা বিশ্ব ইজরাইলের পণ্য বয়কট করছে। ইসরাইলের মালিকানাধীন বিখ্যাত কফি কোম্পানি স্টারবাকস ইসরাইলের সাথে তাদের সম্পর্ক অস্বীকার করেছে, গারনিয়ার ক্ষমা চেয়েছে আই ডি এফ নারী সৈন্যদের গিফট দেওয়ায়। তারপরেও বলবেন- বয়কট কাজ করে না?

চলুন বয়কট লিস্টের তিন নাম্বার পণ্যের দিকে। আমাদের দেশের নারী জাতির অতি আহ্লাদের জিনিষ লরিয়েল প্যারিস নিয়ে আজকের এই লেখা।

পণ্য- ৩- লরিয়েল প্যারিস

the Palestinian Boycott, Divestment and Sanctions National Committee (BNC) থেকে সর্বপ্রথম লরিয়েল বর্জনের জন্য ডাক দেওয়া হয়, ইসরাইলের সাথে এর গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারনে।



ইসরাইলে লরিয়েল ব্যবসা শুরু করে ১৯৯০ সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উৎসাহিত হয়ে। লরিয়েল ফিলিস্তিনের নিচু অঞ্চল গ্যালিলির মিগডাল হেইমারক অঞ্চলে একটি ফ্যাক্টরি স্থাপন করেছে। হেইমারক ফিলিস্তিনিদের থেকে কেড়ে নেওয়া একটি অঞ্চল, যা ইসরাইল ১৯৫২ সালে কেড়ে নেয় । এর পূর্ব নাম মুজায়দিল। এই মুজায়দিলের প্রকৃত বাসিন্দারা এখনো তাদের বাস্তুভিটায় ফিরে যাওয়া থেকে বঞ্চিত



বাদবাকি অধিকৃত অঞ্চলগুলোর মতোই মিগডাল হেইমারক অঞ্চলেও ফিলিস্তিনিরা যে কোন জমি বা বসতি কেনা, থাকা, কিংবা ভাড়া নেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত, কেননা তারা ইহুদী নয়।

লরিয়েল প্রস্তুত করে এমন অনেকগুলো পণ্য, যার খনিজ নেওয়া হয় ন্যাচারাল সিবিউটি নামক কোম্পানির থেকে।



এই কোম্পানি আবার মৃত সাগরের থেকে খনিজ উত্তোলন করে, যা পশ্চিম তীরে অবস্থিত। আর পশ্চিম তীরের সমস্ত সম্পদ ফিলিস্তিনের অধিবাসীদের সম্পদ, যা ইসরাইল জোর করে দখল করে রেখেছে। ইসরাইল এই অঞ্চলের পর্যটন খাত, খনিজ সম্পদ সহ সকল সম্পদ শোষণ করছে।



লরিয়েলের ইসরাইলের কার্যক্রম শুধু ইসরাইলেই সীমাবদ্ধ নয়। যখন ফিলিস্তিনের জনগন নুন্ন্যতম শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত তখন ২০০৮ সালে লরিয়েল ইসরাইলের ওয়াইসম্যান ইন্সটিটিউটকে ১ লাখ ডলার পুরষ্কার দিয়েছিলো, যেই ইন্সটিটিউট ইসরাইলী মিলিটারি দ্বারা পরিচালিত আর এখানেই নিউক্লিয়ার উইপন আর বিভিন্ন অস্ত্র বানানোর ব্যাপারে গবেষণা করা হয়ে থাকে।

academic boycott by the Palestinian Campaign for the Academic and Cultural Boycott of Israel (PACBI) এর মতে এই ইন্সটিটিউট সহ আরও বেশ কয়েকটি ইন্সটিটিউট ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মদদদাতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দ্বায়ে বিভিন্নভাবে দোষী ও সহযোগী।

ভেবে দেখুন! একটি প্রসাধন কোম্পানি কেন এমন একটি ইন্সটিটিউট কে পুরষ্কার দিবে যা মানবতা বিরোধী অপরাধে সরকারকে সাহায্যের জন্য অভিযুক্ত? পুরষ্কার না বলে সোজা ভাষায় ১ লাখ ডলারকে অর্থ সহায়তাই বলা যায়। পুরষ্কার একটা অজুহাত মাত্র



Present in Israel since in 1983 via the Migdal Ha Emek plant, which is the Group's very first plant in the Middle-East, L'Oréal reinforces

লরিয়েল ইসরাইলের চেয়ারম্যান গ্যাড প্রপার, যে ইসরাইল-ইউরোপীয় ইউনিয়ন চেম্বার অফ কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, খুবই পরিচিত অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের সাথে ইসরাইলের বাণিজ্য প্রসারে অবদান রাখার জন্য ।

ফ্রান্স লরিয়েলের বিশ্বব্যাপী সাফল্যের পিছনে প্রপারের অবদানের জন্য তাকে France’s highest civilian হিসেবে সম্মানিত করেছে।.

জেরুজালেম পোস্টের রিপোর্ট মতে-

“The award was in recognition of Propper’s contribution to the global success story” ofL’Oreal.

১৯৯৪ সালে, লরিয়েল গ্র্যাড প্রপারের কোম্পানি ইন্টারবিউটি থেকে ৩০ ভাগ শেয়ার কিনে নেয়।

এই ইন্টারবিউটি থেকেই আস্তে আস্তে লরিয়েল ইসরাইলের যাত্রা শুরু হয়, যা এখন মধ্যপ্রাচ্যের প্রসাধনীর বাজারে দাপটের সাথে চলছে, আর আরব মুসলিমরা গাজার মুসলিমদের সাহায্য করতে না পারলেও এভাবেই লরিয়েলের পণ্য কিনে ফিলিস্তিনিদের ভ্রাতৃত্বের ঋণ শোধ করছে।

এবার যারা লরিয়েল প্যারিস দেখেই প্যারিসের প্রসাধনী মাখার সুখে বিভর হয়ে যান, তারা একটু চক্ষু খুলে দেখুন সব জিনিষের নামেই তার আসল পরিচয় থাকেনা।

তথ্য- inminds.com

The Palestinian BDS National Committee (BNC)

Palestinian Campaign for the Academic and Cultural Boycott of Israel (PACBI)

Palestinian Economic Monitor.

বিষয়: বিবিধ

২১৭১ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

252874
১০ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:৪৬
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
252882
১০ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:১৭
হতভাগা লিখেছেন : এসব ব্যবহার না করলে মেয়েদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে । তাদেরকে কেউ বিয়ে করতে আসবে না বা দাম দেবে না ।

মেয়েরা হল সাজগোজ প্রিয় । এজন্য পারসোনারা টিকে আছে এবং গারনিয়ের ও ল'রিয়েলরা পারসোনাদের যোগানদাতা ।

252884
১০ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:২৫
বাজলবী লিখেছেন : অনেক কিছু জানলাম ধন্যবাদ।
252895
১০ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৪:০১
বুড়া মিয়া লিখেছেন : বয়কটে কাজ হলো কি হলো না সেটার জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা করে জানতে হবে; ইতিমধ্যেই বিরূপ পরিবেশে তারা পণ্যের দাম কমিয়ে ডাম্পিং চালাচ্ছে বলে আপনার পোষ্টে জানলাম – এ ডাম্পিং এর ফলেও যদি এসব পণ্যের মার্কেট শেয়ার তারা ধরে রাখতে পারে, তবে এখনও ওদের ক্ষতি হয় নি! আর যদি মার্কেট-শেয়ার হারায় তবে আরও ডাম্পিং করবে এবং শর্ট-রানে ক্রেতারা আবেগে অধিক-মূল্যে অন্য পণ্য ক্রয়ে প্ররোচিত হলেও লং-রানে ক্রেতারা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে স্বল্প-মূল্যের কুয়ালিটি পণ্য ক্রয়ে ফিরে আসবে জাত-পাত বিচার ব্যাতিরেকেই! এটাই মার্কেট-রুল।

আর বিভিন্ন খবরে সাবসিডাইজেশন এর কথা উঠে এসেছে, এতে করে বোঝাই যাচ্ছে – এক জায়গার আর্থিক-ক্ষতি আরেক জায়গার লাভ দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। প্রসাধনী ছাড়াও – কমোডিটি, টেকনোলোজী, ফিনান্সিয়াল ইত্যাদী মার্কেটেও তাদের একচেটিয়া আধিপত্য সারা বিশ্বে এবং এ-সবের লাভ দিয়ে তারা সেসব সেক্টরে যুগ-যুগ সাবসিডাইজেশন চালিয়ে যেতে পারবে নিশ্চিন্তেই!

আপনার তথ্য-সমৃদ্ধ্ব লেখার মাধ্যমে অনেক অজানা বিষয় উঠে আসছে, এ ধরণের প্রচেষ্টা অবশ্যই ইতিবাচক এবং আমিও আশা করি এতে আজ কাজ না হলেও একটা ধারণা গড়ে উঠবে এসব থেকে এবং সেটা-ই কাজে আসবে ভবিষ্যতে।

ধন্যবাদ আপনাকে।
252912
১০ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:৫০
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদভালো লাগলো
252928
১০ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৬
কাজি সাকিব লিখেছেন : গুরুত্বপুর্ণ রচনা! অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো
252951
১০ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ইস রাইল এর একমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ মরুসাগর বা ডেডসি তে প্রাপ্ত লবন। আর সব ক্ষেত্রেই তারা এই ধরনের ম্যানুফ্যাকচারড গুডস এর উপর নির্ভরশিল। একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে এর বেশিরভাগই প্রয়োজনিয় পন্যের অন্তর্ভুক্ত নয়।
255674
১৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:২৬
আবু জান্নাত লিখেছেন : তত্ব ভিত্তিক আলোচনা, ভালো লাগলো, অনেক ধন্যবাদ
259087
২৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:১৭
চির উন্নত মম শির লিখেছেন : সচেতনমূলক পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।তবে সৌদি সরকার ইসরায়েল কে ৯০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা শুনছিলাম। তা যদি হয়, ইসরায়েলের এতে কিছুইঝবে না।
তবে আমাদেরকে BDS campaign চালিয়ে যেতে হবে। ছোট ছোট বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল ...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File