চাং চুংদের আমি চিনতে পারিনি ( পর্ব- ১)
লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ানা জেরিন ০৪ জুলাই, ২০১৪, ০৯:১৭:৩৫ রাত
চাং চুংদের দেখলে আর বিশেষ করে দেশী ড্রেসে দেখলে মাঝে মাঝে চাকমা মনে হয়, যদিও কিছুটা পার্থক্য থাকেই। এমনই ২ চায়না মেয়ের সাথে কাটল আজকের দিনের অনেক খানি অংশ!
আমি আর চেতনা কলা ভবনের পিছন দিক দিয়ে হাঁটছিলাম, ২ চাইনিজকে দেখলাম সুন্দর থ্রি পিস পড়ে ঘুরছে, ভালো কথা! বিদেশী দেখলে আমরা একটু তাকাই এটা বাঙ্গালীর নতুন কোন অভ্যাস নয়।
তাকিয়ে পিছন ঘুরছি সবে, তখনই এসে ইংলিশে বলল- তারা বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছে, মাত্র ৩ দিন হয়! আমাদের যদি ক্লাস না থাকে একটু ওদের সাথে গল্প করি। আমাদের অবশ্য ক্লাস নেই, ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম prsentation এর কাজ করতে। বললাম- ঠিক আছে ! আমাদের সাথে চলো কলা ভবনে!
ওরা ২ বান্ধুবি, একজনের নাম এলিস , আরেকজনের নাম জেনি। অনেক অল্প সময়েই আমরা বন্ধু হয়ে গেলাম। জেনির সাথেই বেশী কথা হোল। আমাদের কালচার, ধর্ম এসব সম্পর্কে ব্যাপক কৌতূহল!
কলা ভবনের কমন রুমে মেয়েদের নামাজের ঘরটা দেখালাম। ওদের ঢুকতে বললাম। ওরা খুব ইতস্ত করছিলো! কোন ধর্মের ঘরে ঢুকলে যদি পবিত্রতা নষ্ট হয়। কিন্তু ইসলাম দুয়ার তো সবার জন্য খোলা। আমি বললাম- কোন সমস্যা নেই, এসো!
ওদের জন্য ২ টা জুস নিয়ে এলাম ক্যান্টিন থেকে। ওরা নামায ঘরের বাকি আপুদের দিকে তাকিয়ে বলল- I think , they ar fasting..we should have this in the canteen.
বলেই বের হয়ে এলো। ওদের ভদ্রতা বোধ দেখে একটু অবাক হলাম। আমাদের দেশের মানুষই তো রোজাদারের সামনে খাবার খায় বিনা দ্বিধায়, ওরা এটা মানবে ভাবিনি।
দেশের মেয়েদের ওয়েস্টার্ন হবার সে কি প্রবল বাসনা! আর এই চাং চুংরা বেড়াতে আসলেও এই দেশের পোশাক কিনেছে পাবলিক প্লেসে ঘোরার জন্য। আসলে, ওদের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে
জেনি মেয়েটা ও চীনের এক সন্তান নীতির ব্যতিক্রম নয়। অর্থাৎ, ও একা, কোন ভাই বোন নেই।ও অনেক কথাই বলল। একা একা ওর শৈশব কতোটা একাকী কেটেছে। ওদের দেশের বেশীরভাগ মানুষেরই নাকি কোন ধর্ম নেই। চীনা সমাজে সেই রোল মডেল - যার চেহারা সুন্দর, যার পকেটে কাড়ি কাড়ি টাকা আছে, সুন্দর একটা বাড়ি আছে! জেনি বলছিল- ওর নাকি কোনটাই নাই!
যদিও মেয়েটাকে আমার যথেষ্ট ভালো লেগেছে। আমি ওকে বললাম- সুন্দর বলতে তুমি কি বুঝো! আমি সুন্দর বলতে বুঝি ইনার বিউটি! যেটার কোন মেকাপ লাগে না!
ও খুবই খুশী! বলল- জেরিন! তুমি দেখি আমার মতোই ভাবুক!
জেনি আমাকে ওর অনেক না জানা কথা বলল। ওর বাবা মা ২ জনের মধ্যেই নাকি বিশ্বাসের চরম টানা পোড়েন চলছিল। সারাক্ষণ বাবা মা ঝগড়া করতো। জেনির খুব কষ্ট হতো। এরপর ওর মা একদিন খৃস্টান ধর্ম গ্রহণ করলো। এরপর জেনির জীবন বদলে গেলো। জেনি ও খৃস্টান হোল। আমাকে বলল- সব মানুষই সিনার! তবে তার মধ্যে এই অনুভূতি থাকতে হবে যে এই সিনের জন্য কারো কাছে জবাব দিতে হবে!
এরপর আমাকে নিজের হাতে বানানো একটা ব্রেসলেট দিলো। ৫ রঙ্গের পুথির তাৎপর্যপূর্ণ একটা বন্ধনি, হলুদ- বেহেশত, কালো- দোযখ, সাদা- পবিত্রতা, লাল- রক্ত, সবুজ- পরমাত্মার সাথে তার দাসের সম্পর্ক!
এক কথায় অদ্ভুত। এক সময় এই মেয়েটা নাকি নাস্তিক ছিল! কিন্তু জেনি বলল- সেই সময় ওর কাছে জীবনটা অর্থহীন মনে হতো!
এখন জেনি বেঁচে থাকার অর্থ জানে, জীবনের পরিণতি জানে, পাপের শাস্তি জানে। হুম, সেটা ভুল হলেও ওর আত্মার শূন্যতা কিছুটা হলেও ভরাট হয়েছে।
জেনি আমাকে বলল, ও ইসলাম সম্পর্কেও জানতে চায়, কিন্তু ওর কাছে কুরআন নেই। যদিও কুরআন কিছুটা পড়েছে। কথা হোল চীনের মুসলিমদের নিয়ে। ওরা আবার ইফতার পার্টি ও করতে চায়। এই জেনি ল" তে পড়ে। খুবই যুক্তিবাদী মেয়ে।
আমার ইচ্ছা আছে, সময় পেলে জেনিকে অবশ্যই ইসলাম সম্পর্কে কিছু আইডিয়া দিবো। আলোর পিপাসু মনকে রাস্তা দেখিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট। যেমন মক্কার পথের লেখক লুইস পোল্ড থেকে মুহাম্মদ আসাদ হয়েছিলেন। প্রতিদিনই তো কেউ না কেউ এভাবেই আলোর সন্ধান পাচ্ছে। চেষ্টা করতে ক্ষতি কি!
পৃথিবীর পথে প্রান্তরে এভাবেই অনেক মানুষ নিজের মনের নাই নাই ভাবটা ঘুচানোর জন্য, নিজের জীবনের সুস্থিরতার জন্য, মহাকালের স্রস্টার সন্ধান পাওয়ার জন্য ঘুরে ফিরে মরছে।
আমরা যারা সেই আলোর সন্ধান না চেয়েও পেয়ে গেছি, complete code of life পেয়ে গেছি তারা সত্যিই অনেক ভাগ্যবান ভাগ্যবতী! যদি আমরা এই ভাগ্যের প্রকৃত মূল্যায়ন করতে পারতাম। বিকেলে সূরা মায়েদার ৩ নং আয়াত পড়তে পড়তে সে কথা আবার নতুন করে উপলব্ধি করলাম-
"আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।"
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর হুট করে ঘুরতে চলে আসলো কোন কলেজ/ভার্সিটিতে ?
''ওরা নামায ঘরের বাকি আপুদের দিকে তাকিয়ে বলল- I think , they ar fasting..we should have this in the canteen.
''
মাসজিদে রোজাদার আপুরা বসে আছে বিধায় তারা সেখানে গিয়ে জুস পান করতে ইতস্তত বোধ করলো ? মাত্র ৩ দিন হল বাংলাদেশে আসা ভিনদেশী ভিনধর্মীরা এতটা দ্রুত বাংলাদেশের ধর্মীয় রীতিনীতি আয়ত্ব করে ফেলেছে ?
তাদের দেখলে বিদেশীই মনে হয় , তবে ''মাত্র ৩ দিন হল বাংলাদেশে এসেছে'' - এমন না । অনেক বছর ধরেই আছে বাংলাদেশে এবং ঐ কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়েই হয়তো পড়াশোনা করছে -এটাই মনে হয় ।
অসম্ভব ভালভাবে আপনি লিখেছেন। লেখার স্টাইল পছন্দ হল। সাবলীল সুন্দর। আপনি এখানে লিখেন দেখেছি কিন্তু কথনও আপনার লেখা পড়ে দেখিনি। আগেই পড়া উচিত ছিল
মন্তব্য করতে লগইন করুন