আপনি কি ভিআইপি?
লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ানা জেরিন ২৪ জুন, ২০১৪, ১১:১৫:৪৩ রাত
-আপনি কি ভি আই পি?
সচিবালয়ের রাস্তায় গতিরোধ করে পুলিশ ভাই যখন জিজ্ঞেস করলেন আমি ভি আই পি কিনা , তখন আসলে ভিআইপি হওয়ার ক্রাইটেরিয়া খুঁজতে শুরু করলাম।
গোলাপ শাহ মাজার হয়ে নগর ভবনের রাস্তা বন্ধ জনসাধারণের জন্য, যদিও রাস্তাটি অতি দরকারি ঢাকার দক্ষিণের সাথে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগের সাথে সংযোগের জন্য।
শাহবাগ বললাম কারন শাহবাগ যেতে পারলে অন্য সব যায়গায় যাওয়ার একটা না একটা উপায় পাওয়া যায়। কিন্তু, নগর ভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ভিআইপিদের জন্য বরাদ্দ।
যদিও আপাত দৃষ্টিতে ভিআইপির সংজ্ঞা জানিনা, তাও আমি নিজেকে আম জনতা ধরে নিয়েই আশে পাশে তাকালাম।
অনেক ভিআইপিরা সি এন জি, পিকাপ ভ্যান নিয়ে সচিবালয়ের রাস্তায় অনায়াসে ঢুকে যাচ্ছেন।
ও আচ্ছা! বুঝলাম। ভি আই পি মানে যারা সি এন জি তে চড়ে, গাড়িতে চড়ে, যারা পিকাপ ভ্যান চালায় , সবাই ভি আই পি।
আর আমি হতভাগা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দরিদ্র মেধাবী ছাত্র, সচিবালয়ের রাস্তায় রিকশা নিয়ে ৫ মিনিটের দূরত্ব কার্জন হল, মানে আমার ক্যাম্পাসের সূচনা স্থলে যাওয়ার কোন অধিকার আমার নেই!
আর সি এন জি চড়া যে কেউ একজন ভি আই পি হয়ে গেলো? তবে কি গুলিস্তান থেকে সিএনজি নিয়ে ভার্সিটিতে যেতে হবে? ভি আই পি হওয়ার জন্য!
আমার বান্ধুবি নর্থ সাউথে ভর্তি হওয়ার পর ওর বাপ নাকি গাড়ি কিনেছিল ওর যাতায়াতের জন্য। এখন ভিআইপি হিসেবে সচিবালয় থেকে ক্যাম্পাসে যেতে গাড়ি না হোক , নিদেন পক্ষে একটা সি এন জি মাস্ট!
রিকশাওয়ালা ভাই ও আশাহত! ঢাকা ভার্সিটির ছাত্র বহন করে অতিরিক্ত কষ্ট থেকে বেঁচে যাওয়ার খায়েশ ছিল, কিন্তু এই মেধাবী দরিদ্র ছাত্রের দৌড় ও যে এই পর্যন্তই।
সমাজটা কতো শ্রেণী বিভাজনে ভরে যাচ্ছে তাই না? পাশাপাশি ২ টা রাস্তা আটকে রাখা হচ্ছে এক শ্রেণীর ভিআইপিদের জন্য। সেখানে রিকশা ঢোকা নিষেধ। যেতে মনে চাইলে পল্টন প্রেসক্লাব, মৎস্যভবন, সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে যাও।
কিন্তু, একটা কথা অমানুষরা ভুলে যায়। সি এন জি , প্রাইভেট কার কোন মানুষ চালায় না , ইঞ্জিন চালায়। ওটা ঘুরে গেলে ওটার কোন কষ্ট হয়না, কিন্তু রিকশাওয়ালার কিন্তু ঘুরে যেতে কষ্ট হয়, তাও ভাড়া সমান! এটা এমন এক সমাজ , যেখানে মানুষের কষ্টের ঘামের চেয়ে ইঞ্জিনের তেলের মূল্য বেশী।
আরেক ভিআইপি আওয়ামীলীগের নেতারা! তারা জনগনের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে খুবই সচেতন। তাই তো রাষ্ট্রপতি যখন দেশে ফিরছেন সেই খবরে উত্তরা থেকে সারা ঢাকা শহর অচল করে মানুষকে হেটে হেটে বাসায় যাওয়ার সুযোগ করে দেন প্রায়ই।
সেদিন ও একই অবস্থা! উনি কোন এক দেশ থেকে মৌজ মাস্তি শেষে দেশে ফিরলেন। আর আমার ও কপাল খারাপ। সেদিনই মিরপুরে বান্ধুবির বাসায় যাওয়ার প্ল্যান। বাসে উঠলাম সন্ধ্যা ৬ টায়। ৭ টা ১২ থেকে ৯ টা পর্যন্ত এক যায়গায় স্থির আমাদের বাস, তাও মৎস্য ভবন। অনেকেই নেমে গেলেন পদব্রজে যাত্রার উদ্দেশ্যে।
কিন্তু, আমি নামলাম না।এই রাতে হাটা সেইফ না একটা কারন, আর মিরপুর হেটে যাওয়া সম্ভব না। বিশাল দূর।
ভাবছিলাম, আজকে যদি আমার কোন আত্মীয় সিরিয়াস অসুস্থ হতো, তাকে যদি ল্যাব এইডে নেওয়ার জন্য বের হতাম, তার জীবন থাকতো কিনা সন্দেহ আছে!
এমন অসুস্থ কি এই বিশাল জ্যামে কেউ নেই? কারো কি জীবন বিপন্ন হচ্ছে না এই কথিত রাষ্ট্রপতির জন্য? যিনি রাষ্ট্রের পতি, মানে রাষ্ট্রের সকলের ভালো খারাপের জিম্মা নিয়ে বসে আছেন, তার সামান্য যাওয়া আসার জন্য কোন মানুষ মরে যাচ্ছে, তার কোন বিকার নেই, এমন রাষ্ট্রপতিকে কথিত না বলে উপায় কি?
প্রায় ৪ ঘণ্টা জ্যামে থেকে মিরপুর গেলাম। পরের দিন আবার আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। পাবলিক লাইব্রেরীতে একখান মিটিং আছে। বের হলাম। অম্মা! এবার তো রাস্তাই বন্ধ। হেটে হেটে খামার বাড়ি থেকে কাওরান বাজার আসলাম। রাস্তায় ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা হচ্ছে মনে হোল। রাস্তার বাসগুলো জনশূন্য। লোকজনের মুখে চরম বিরক্তি। হেটে ক্লান্ত হয়ে কাওরান বাজারে একটা বাসে উঠলাম। ২ সহযাত্রী প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগের সমালোচনা করছে, যেটা একসময় খুবই ভয়ে ভয়ে মানুষ ফিসফিস করে করতো। পাছে কেউ শুনে ফেলে। আর কয়দিন পর হয়তো মোড়ে মোড়ে মাইক লাগিয়ে , রাস্তার চত্বরে দাড়িয়ে করবে এই সাধারণ মানুষরাই।
- বুঝলেন ভাই! এই দেশে আওয়ামীলীগ হোল আল্লাহর গজব!
- ভাই! একদম জীবন শেষ এই সরকারের আমলে
- জিনিষ পত্রের যেমন দাম, রাস্তা ঘাটে ও শান্তি নাই।
- আচ্ছা ভাই? মন্ত্রী সভায় কয়জন মন্ত্রী?
- ভাই, এসবে আমার আগ্রহ নাই। কেন?
- না! যদি ১৪ জন মন্ত্রী ও ১৪ বার দিনে বার হয়, তাহলে ১৪ বার এমন জ্যাম ডেইলি খেতে হবে ভি আইপি যাইব এই জন্য!
- বাংলাদেশে ভি আই পির কোন অভাব নাই ভাই।
- এসব ভিআইপিদের ধরে আচ্ছা মতো জুতানো দরকার। রাস্তা কি ওর বাপের সম্পদ?
আমার ধারনা হোল, এখন যারা জুতানো দরকার বলছে, ২ দিন পর তারাই দিনে ১৪ বার ভি আই পি সিগন্যালে বসে গাড়ি লক্ষ্য করে নিজ দায়িত্তে জুতা নিক্ষেপ করবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যা হয়।
প্রিয় পাঠক , শাসক নাকি জনগনের সেবক। সেবক কি কখনো যাকে সেবা করে তাকে মেরে ফেলতে পারে? এমন যাতনা দিতে পারে? টাকার বিনিময়ে সেবা দিয়ে নিজেকে দেবতার আসনে সমাসীন করা, ভিআইপি নাম দেওয়ারা আর যাই হোক শাসক হতে পারেনা, হতে পারে শোষক।
আমি তাদেরকে ১৪০০ বছর আগে ফিরে যেতে বলবো না। যেই যুগে খলিফা ওমর তার ভৃত্যের উটের রশি ধরে বিজিত অঞ্চল জেরুজালেমে প্রবেশ করেছিলেন, আমি বলবো না সেই যুগে ফিরে যেতে যেই যুগে খলিফা এক টুকরো কাপড় বেশী পেলে কেন পেলেন তার জবাব দিতে হতো। আপনারা সুশীলদের অনুসরণ করেন, দাদাদের পা চাটেন। তারা কিন্তু সত্য ধর্ম না মানলেও আচরনে কিছুটা মানে। অন্তত, তাদের দেখেও যদি কিছু শিখতেন, আজ আমাকে এই লেখাটা লিখতে হতো না।
বিষয়: বিবিধ
১৪২২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই দেশে আওয়ামীলীগ হলো আল্লাহর গজব!
মন্তব্য করতে লগইন করুন