একদিন স্বপ্নের দিন

লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ানা জেরিন ১৫ জুন, ২০১৪, ১১:৩৪:০৩ রাত



কাল হাসানদের বিয়ের এক বছর হবে। কিন্তু এই মাসে হাতে খুব টানাটানি, তার উপর মাসের শেষ কয়টা দিন যেন কেয়ামত নেমে আসে ওর উপর। সুম্বুলার হয়তো মনেও নেই যে দেখতে দেখতে ওদের বিয়ের একবছর হয়ে গেছে। কি জানি! আবার মনে থাকতেও পারে। যদিও সে খুব পরহেজগার, কোন দিবস টিবস পালন করেনা। তবুও, হাসানের ইচ্ছে হচ্ছে সুম্বুলাকে কিছু দিতে, এমন একটা দিনকে শুধু ২ জনের মাঝে স্মরণীয় করে রাখতে।

কিন্তু পকেটে টাকা নেই মোটে। বাসে যাওয়া আসা করার খরচ টা বাঁচিয়ে রেখেছে।আরও মাসের শেষ দিক , কি করবে মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

কিন্তু উপহার দিলে ভালোবাসা বাড়ে। আর সুম্বুলা খুব বাচ্চা স্বভাবের মেয়ে। ওকে খুশি করতে খুব বেশী কিছু লাগেনা।

কিন্তু কি করা যায় ভাবতে ভাবতে হাসানের মাথা গরম। এর মধ্যেই ফোন বেজে ওঠে।

সুম্বুলা ফোন করেছে। টুকটাক প্রয়োজনীয় কথা শেষ করে কি যেন বলতে যেয়ে থেমে যায়। হাসান ও বিবাহ বার্ষিকী জন্মদিন এসব পালন করেনা। তবুও, বিয়ের পর প্রথম বছর , এতো দিন সুম্বুলাকে ভালবাসা ছাড়া তেমন কিছুই দিতে পারেনি। দিতে খুব ইচ্ছা করে, কিন্তু প্রতি মাসেই শেষের দিকে টানাটানি পড়ে।

ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া করে ২ জন মানুষ থাকাও যেন হাতির খরচ। তাছাড়া গ্রামে প্যারালাইজড বাবা, স্কুল শিক্ষিকা মা, আর ৭ ভাই বোনের বিশাল পরিবারটা ওর টাকা ছাড়া প্রায় অচল ই বলতে গেলে। কিন্তু, মেয়েটা পেয়েছে হাসান মনের মতো। সুম্বুলা বড় ঘরের মেয়ে হলেও উচ্চাভিলাষী নয়, তবে নামাজ রোজা নিয়ে একটু বেশী সচেতন । প্রথম প্রথম হাসান একটু বিরক্ত হতো। কিন্তু সুম্বুলা এতো আন্তরিকতা আর নিষ্ঠা নিয়ে বুঝিয়েছে ওকে যে এখন সে নিজে থেকেই নামাজ টা সময় মতো পড়ে নেয়। বিয়ের আগেও পড়তো তবে এতো গুরুত্ব দিতো না।

অফিস থেকে বাসায় ফিরেই ছাঁদে যায় হাসান। ছাঁদটা বাড়িওয়ালার হলেও , ও এখানে অনেক ফুল গাছ লাগিয়েছে। ছাঁদের ঠিক নিচের ফ্লোরে ওদের বাসা হওয়ায় সুবিধাই হয়েছে। ফুল গাছগুলোয় পানি দেয়, আর আনমনে ভাবতে থাকে কি করা যায় ! কি করা যায় !

পরের দিন শুক্রবার সকাল বেলা, অনেকক্ষণ ছাঁদে থাকবে সে । হাসানের মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। একটা জিনিষ বানাবে সে সুম্বুলার জন্য। লোকমানের দোকান থেকে পাইপ নিয়ে এসেছে, আর সুম্বুলার ফেব্রিক্সের রঙ গুলা সব চুপিচুপি নিয়ে এসেছে।

ওদিকে ফ্ল্যাটে একা একা কাজ করতে করতে সুম্বুলা খুব মন খারাপ করে । ও ভাবছে হাসান মনেহয় ভুলেই গেছে এই দিনটির কথা! তার উপর ছুটির দিন ঘুম ভেঙ্গেই ছাঁদে আসায় আরও আশাহত হয়েছে সুম্বুলা! মনে মনে ভাবছে- ইশ! আমার জামাইটা কেমন স্বার্থপর!

হাসান ঘুম থেকে উঠেই সুম্বুলার রাগ রাগ চেহারা দেখে এসেছে। সুম্বুলার চোখ যেন বলছিল- তুমি আমাকে কিছু না দাও, আমি কিছু চাই ও না! কিন্তু তাই বলে বেমালুম ভুলে যাবে নাকি? যাও! তোমার সাথে আড়ি !

হাসান ছাঁদে এসেই প্রথমে ছোট দইয়ের সরাটা পরিষ্কার করলো, ধুয়ে মুছে ঠিক করলো। এরপর সুন্দর করে রঙ করলো বউয়ের থেকে চুপিচুপি আনা ফেব্রিক্স কালার দিয়ে।

যেমন পারে একটা ডিজাইন করে শুকাতে দিল।

ছাঁদে ফুটেছে মাইক ফুল , বেলি আর গোলাপ । লোকমানের দোকান থেকে আনা পাইপ গুলোতে তার দিয়ে সটীক বানালো । ফুল ছিঁড়ে পাইপের আগায় গাঁথলো । বাহ! বেশ সুন্দর লাগছে সটীক গুলো। এবার দইয়ের রঙ করা পাতিলে গোল করে ককশিট কেটে বসিয়ে দিল। আর ওটাও রঙ করে দিলো। একটা একটা করে সটীক গেথে দিলো ককশিট এ।

একটা চমৎকার ফুলের তোড়া হয়েছে। দেখেই হাসানের মন ভরে গেলো। কিন্তু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হাসান চমকে গেলো। একি! একটা তো প্রায় বেজে গেছে!

সুম্বুলার চেহারা মনে করে হাসান চিন্তিত হয়ে গেলো। ইশ! না জানি কি বকাটা খেতে হয়! ফুলের তোড়াটা হাতের পিছনে নিয়ে হাসান বাসায় গেলো। বেইল বাজিয়েই যাচ্ছে, বাজিয়েই যাচ্ছে, কোন সারা শব্দ নেই। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর সুম্বুলার গলা- কে?

- আমি। কই গো দরজা খুলো না কেন?

- আজ দরজা খোলা হবেনা, তুমি ছাঁদেই থাকো না ভাই!

- আরে আমি কাজ করছিলাম তো, খুলো না প্লিয?

- না ! তুমি ছাঁদেই থাকো! আজ আর তোমার ঘরে ঢুকে কাজ নেই। পারলে ছাঁদে আরেকটা বিয়ে করে বউ নিয়ে থাকো, আমার কোন সমস্যা নেই।

- ছি ছি! তুমি এসব কি বলছ! তুমি ই তো আমার বউ।

ওপাশ থেকে সুম্বুলার কান্না জড়িত কণ্ঠ- হ্যা! বউ হলে কি তুমি আমাদের বিয়ের দিন ভুলে যেতে? সারা সকাল ছাঁদে যেয়ে বসে থাকতে?

- আহারে! আমি দেখি একদম ভুলে গেছি গো প্লিয! মাফ করে দাও।

সুম্বুলা আর কিছু বলেনা। চিন্তা করে গেট খুলেই দিবে। অপরাধ করলেও হাসানের আকুতি শুনে আর রাগ করে থাকতে পারেনা।

কিন্তু দরজা খুলেই সে অবাক! মাটির ফুলদানীর উপরে খুব সুন্দর কাঁচা ফুলের সটীক! সুম্বুলা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আর নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়। আসলে সে এখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষদের একজন।

বিষয়: বিবিধ

৪৫৫৫ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

235264
১৫ জুন ২০১৪ রাত ১১:৫৮
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : বোরখা পড়লেই কি প্রেম হালাল নাকি আপু Love Struck Love Struck Love Struck
১৬ জুন ২০১৪ রাত ১২:০৮
181841
সাফওয়ানা জেরিন লিখেছেন : এটা কই লেখা আছে?Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone
১৬ জুন ২০১৪ রাত ০২:২৫
181864
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ধরে ফেলেছি আপু, সাফু থেকে সুম্বুলাRolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Winking) Winking)
235265
১৬ জুন ২০১৪ রাত ১২:০০
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অসাধারন দারুন নাইস গল্প Happy
১৬ জুন ২০১৪ রাত ১২:০৮
181842
সাফওয়ানা জেরিন লিখেছেন : Happy Happy Happy Happy
235266
১৬ জুন ২০১৪ রাত ১২:০১
মারইয়াম উম্মে মাবরুরা লিখেছেন : অসাধারনHappy
১৬ জুন ২০১৪ সকাল ০৯:১২
181908
সাফওয়ানা জেরিন লিখেছেন : Happy Winking ;Winking
235270
১৬ জুন ২০১৪ রাত ১২:১১
তরিকুল হাসান লিখেছেন : তুমি ছাঁদেই
থাকো না ভাই!
ভাই ?!?

ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
১৬ জুন ২০১৪ সকাল ০৯:১২
181907
সাফওয়ানা জেরিন লিখেছেন : মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই Tongue Tongue Tongue
235288
১৬ জুন ২০১৪ রাত ০২:২৫
রাকিব হাসান লিখেছেন : চমৎকার, খুব হয়েছে, দারুণ গুছিয়ে লিখেছেন জাযাকুমুললাহু খইরান ্‌্‌্‌
১৬ জুন ২০১৪ সকাল ০৯:১২
181906
সাফওয়ানা জেরিন লিখেছেন : Happy Happy Happy
235303
১৬ জুন ২০১৪ সকাল ০৬:০৫
হতভাগা লিখেছেন : ০ '' লোকমানের দোকান থেকে পাইপ নিয়ে এসেছে, আর সুম্বুলার ফেব্রিক্সের রঙ গুলা সব চুপিচুপি নিয়ে এসেছে।''

০ '' লোকমানের দোকান থেকে আনা পাইপ গুলোতে তার দিয়ে সটীক বানালো ''


* লোকমানের দোকানের পাইপ - শক্ত ও মজবুত , টেকেও বেশী দিন ।

একমাত্র প্রস্তুতকারক লোকমান এন্ড কোং , পরিবেশক - সাফওয়ানা জেরিন , চক মোগলটুলী , ঢাকা ।
235339
১৬ জুন ২০১৪ সকাল ১১:২৯
মাহমুদ১২১৩ লিখেছেন : গল্প আর কমেন্ট দুটোই পড়ে অনেক মজা পেলাম।
২১ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:২৫
183726
সাফওয়ানা জেরিন লিখেছেন : Happy Happy ধন্যবাদ
235483
১৬ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৮
জীবন রাহমান লিখেছেন : আমার সাথে অনেকটাই মিলে যায...... ভালো লাগলো
২১ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:২৪
183725
সাফওয়ানা জেরিন লিখেছেন : মিলে গেলে আপনি লাকি

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File