বাড়ির পাশে তেতুল গাছ
লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ানা জেরিন ১২ জুন, ২০১৪, ০৪:৩৯:১০ বিকাল
মেয়ে মানুষ নাকি তেতুলের মতো টক । হুজুরের এই সরস উক্তি খানা নিয়ে সারা দেশে হয়েছে বিতর্ক আর কিছু মানুষ করছে এটার থেকে রস আস্বাদন । আমি ও তো একজন নারী। আমার শৈশব কৈশোর তারুন্ন্যের অভিজ্ঞতা একজন নারী হিসেবে কেমন কেটেছে তা নিশ্চয়ই একজন পুরুষের চেয়ে আমি আমারটা ভালো বুঝতে পারবো এবং বলতে পারবো।
আপাত দৃষ্টিতে নারীকে তেতুলের সাথে তুলনা করাটা রুচি বিবর্জিত কিংবা অশ্লীল শুনালেও উদাহরণ টার কিছু যৌক্তিকতা আছে বৈ কি!আগেই বলে নেই, যৌক্তিকতা দেখালাম মানেই এই না যে আমি হুজুরের নারী রিলেটেড সব কথা কেই সমর্থন করছি।
তেতুল জিনিষটা খুব টক , সাধারনত খুব একটা কেউ খায়না। ছোট বেলায় তেতুল খেতে দেখলে আব্বু বকা দিতো । বলতো - স্মৃতি শক্তি কমে যাবে। কিন্তু একটু বড় হয়ে দেখলাম হাই প্রেসার এর রোগীদের তেতুল খাওয়ালেই ঠিক। এছাড়াও তেতুলের পানি দিয়ে মাথা ধুলে খুশকি চলে যায়। অনেকেই ভাবছেন এই মেয়ের হোল টা কি! হঠাৎ তেতুলের এতো গুনগান কেন?
আর ও একটা কথা তেতুল গাছের পাতা ও কিন্তু গুনে শেষ করা যায়না। ঠিক তেমনি , একজন নারীর অবদান কষ্ট , ত্যাগ কোনোদিন বর্ণনা করে শেষ করা যায়না। রক্ত চাপ কমাতে যেমন তেতুলের দরকার হয়, একটা মানুষের জীবনে বা সমাজে মমতাময়ী ছোঁয়া জাগাতে নারীর কি কোন বিকল্প হয়?
কিন্তু আমাদের এই নষ্ট বস্তাপচা সমাজে কখন নারীকে দেখলেই তেতুলের মতো জিভে জল আশে? যখন ইন্টারনেট আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম গুলোতে অবাধে চলে ব্লু ফিল্মগুলো। যখন ক্লাস এইট এর বাচ্চার মোবাইলে পর্ণ গ্রাফি দিয়ে ভরা থাকে, আর তাই নিয়ে কষ্টের হেচকি তুলে মিডিয়া গুলো, অথচ কারণ খুঁজে পায়না, বের করতে পারেনা সমাধান ।
স্কুলের বইয়ের তলে পড়তে থাকে কোন হলুদ ম্যাগাজিন, আর রাস্তায় বের হয়ে যখন দেখে সুন্দর সুন্দর ললনারা হেঁটে বেড়ায় নিত্য নতুন আবিষ্কৃত সুড়সুড়ি দেওয়া পোশাক পড়ে। যখন সেই সমাজে প্রতিটি গান, ছবিতে , শুধুই ভালোবাসা আর যৌনতার অদৃশ্য হাতছানি দিয়ে যায় কিছু নারী নামক বাণিজ্যিক মহিলারা । তখন সেই সমাজে নারী তেতুলের মতো বললেও ভুল হয়তো বলা হয়না।
এক্ষেত্রে শুধু বেপর্দা মেয়েরাই ক্ষতিগ্রস্থ হয় তা নয়। ক্ষতি গ্রস্থ হয় আপামর নারী সমাজ। কারণ সমাজে নারীকে যেভাবে ভোগের পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তাতে পুরুষরা আর এটা ভাবার দরকার বোধ করেনা যে উনি পর্দা করে ওনাকে একটু ছাড় দিয়ে চলি। যতই পর্দা করুক , যারা নারীকে লালসার চোখে দেখে তারা সব নারীকেই দেখে। সেখানে বাদ যায়না ১৭ মাসের কন্যা শিশু থেকে শুরু করে আবাল বৃদ্ধারাও । তবুও পর্দা একটা শক্ত বলয় সৃষ্টি করেছে নারীর নিরাপত্তায়। পর্দা করে নারী নারীর নৈতিক দায়িত্ব পালন করে, আর বাকিটা পালনের দায় বর্তায় পুরুষের ঘাড়ে। পর্দা মানার , রক্ষা করার অনুকুল পরিবেশ তৈরি করা পুরুষের দায়িত্ব। সেই সাথে দায়িত্ব নিজেদের দৃষ্টি সংযত করার।
বাস্তবতা খুব ভয়ঙ্কর। কখনো রাস্তায় দেখি কোন ছেলে হয়তো খুব কুরুচি পূর্ণ দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়ে তাকিয়ে আছে, ভাবতেও খারাপ লাগে এদের আচরন গুলো কতো নিকৃষ্ট । কিন্তু, এই যে তেতুল দেখে জিভে জল আসার প্রবৃত্তি বা মানসিকতা এটা সৃষ্টির জন্য দায়ী কারা? দায়ী সেইসব সুশীলরা যারা সমাজে নারীর অবাধ চলাচলের বৈধতা দান করে সমাজটাকে ডুবাতে বসেছেন, যার কারনে আজ দেশের শ্রেষ্ঠ আলেমকে মহিলাদের তেতুলের সাথে তুলনা করতে হয়, ওনার কি ই বা করার! বাস্তবতাই এরকম যে একটা সরস উদাহরণ দিয়ে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিতে হোল আজকের নারীর অবস্থান!
সেদিন সুপ্রিম কোর্টের ইফতার মাহফিলে যাচ্ছি, শিকড়ে করে। সারা বাস ই খালি। এক লোক পুরা বাস টা খালি দেখেও দাঁড়ালেন ঠিক আমাদের সিটের সামনে এসে। আমার বোনের গায়ের সাথে তার গা ঘেঁসে । স্বাভাবিক ভাবেই ও আন ইজি ফিল করছিল। শেষে বদমাইশির চূড়ান্ত অবস্থা দেখে ও বলল- ভাই সারা বাস তো খালি , আপনি তো পারলে আমার কোলেই বসে যান মনে হয়! লোকটা এই সমাজের ই একজন পুরুষ সে বলল- এটা কি প্রাইভেট কার পাইছেন?
আমার মনে চাইছে আমি দাঁড়াবো যেখানে মনে চায়। ও কতো বার বলল সরে যেতে কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। হঠাৎ পিছন থেকে পুরুষ শাসিত সমাজের প্রতিনিধিরা হই চই শুরু করলো । কেউ বলল- ভিড়ের সময় ঠিক ই ঠেলাঠেলি করে দাড়িয়ে থাকতে তো ঠিক ই পারেন এখন উনি একটু দাঁড়িয়েছে আর কতো ঢং! কেউ বলল- মেয়ে মানুষ মানেই হোল বেয়াদব। আরও কতো কি! প্রথম প্রথম ২/১ টা কথার উত্তর দিলেও পরে নীরব হয়ে গেলাম। এদের বলে কি লাভ!
এই সমাজের বেশির ভাগ পুরুষ ই এমন তেতুল লোভী । এই জন্য শুধু মেয়েদের দোষ না দিয়ে তাদের ও দৃষ্টি সংযত রাখা উচিৎ। নারীর বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ করাটাই হতে পারে এর সমাধান। তাই বলছি, বাড়ির পাশে তেতুল গাছ থাকতেই পারে, তাই বলেই অন্যের গাছে ঢিল ছুড়তে হবে এমন কোন কথা নেই। একটা মেয়েকে ঘরে বাইরে নানা প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করতে হয়। আমার নিজের ও এমন অভিজ্ঞতা কম নয়।
সমাজে মেয়েরা খুব কি নিরাপদ? আমরা কি তেমন সমাজ গড়তে পেরেছি? কিন্তু এর দ্বায় ভার কার? শুধুই নারীর? নাহ! নারী পুরুষ উভয়ের ই। তাই এই তেতুল থিওরি নিয়ে কানাঘুষা বন্ধ করুণ, আর আরেকবার পিছন ফিরে দেখুন আগামীর জন্য কেমন সমাজ রেখে যাচ্ছেন!
বিষয়: বিবিধ
২২৬৬ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উপরে যে ছবি দিছেন তাতে কি ব্লগের সবার চোখ ঠিক থাকবে...??
নিজেরাই নিজেদেরকে কেন তেতুল বলছেন আসলেই অবোধগম্য??? !!!!!!!
এই টার্মটা বাদ দেয়াই শ্রেয়।
সেজন্য বলছিলাম। কে কি বলে জানি না আমি কখনই এই টার্ম ব্যাবহার করি না।
তবে আপনি এরখম ছবি দিতে পারতেন..
অথবা এরখম ছবি...
অথবা এরখম ছবি...
এটা একটা সাজেশন। আপনি আপনার মতো চলতে পারেন কেননা আপনার সে স্বাধীনতা আছে। তবে আল্লাহকে ভয় করাই সব থেকে বড় বিষয় আমার কছে।
যার যেমন ইচ্ছা সে ভাবতেই পারে তাতে আর কি আসে যায়। লেখাতো হিট হয়েছে।
ধন্যবাদ। না পড়ে কমেন্ট করিনাই।
ইউনিভাার্সটি অফ শিকাগো এর উপর গবেষনায় লালা ঝরা তত্ব ১০০% সঠিক। আমেরিকায় এখন সামার , এ অবস্হায়
অধিকাংশ মহিলা/মেয়েরা ব্রেরা পরে চলাফেরা
করে। ওদের জ্ঞায়াতী ভাইরা যে কমেন্ট করে।
এখানে বলতে পারচ্ছি না। সেই সাথে যখন
দেখতে পাই, কনভার্টেট হিজাবী সিসটার তখন বকাটেরা বাস/সাবওয়ের সিট ছেড়ে দেয়। এই যে রিসফেক্ট বোধ, জাহেলী মহিলার ক্ষেত্রে দেখা যায় না। পৃথিবীর কোন ধর্মেই Extreme ড্রেস পছন্দ করে না।
এখানে অনেক ছেলে মেয়েই জানেনা, ওদের পিতা-মাতা কে। যদিও এখানের সমাজ এ ব্যবস্থা মেনে নিয়েছি।
হে নবী ! মুমিন পুরুষদের বল ;তারা যেন নিজেদের চোখকে বাঁচিয়ে চলে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহের হেফাজত করে । ইহা তাদের পক্ষে পবিত্রতম নীতি। তারা যা করে, আল্লাহ সে বিষয়ে পুরোপুরি অবহিত।
২। (মুমিনদের অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে ) তারা তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। ( সূরা মু'মিনুন ঃ৫)
জাজাকাল্লাহুল খাইর @ সাফওয়ানা জেরিন ।
I'm in a hurry.
পরে পড়ে অবশ্যই কমেন্ট করবো ইনশাআল্লাহ!
মন্তব্য করতে লগইন করুন