এক শীষে দুটি ধানের উদ্ভাবন!-এবং কিছু প্রশ্ন
লিখেছেন লিখেছেন পিন পয়েন্ট ২১ মে, ২০১৩, ০১:৩৩:৫৯ রাত
আমরা গুজব প্রবন জাতি। বাস্তবতার চেয়ে আমরা গুজবেই কান দেই বেশী। কী শিক্ষিত কী মূর্খ সবার মাঝেই এ প্রবনতা কম বেশী আছে। তা না হলে আমরা ‘ঝাড়-ফুক’ দিয়ে ক্যান্সারের মত মরন ব্যাধি ভালো করতে পারি! ইহা কেবল বাঙ্গালীর পক্ষেই সম্ভব!
যাই হোক, গুজব দিয়ে বিজ্ঞান হয় না ‘কেচ্ছা কাহিনী’ হয়। বিজ্ঞান নিয়ে গুজব করলে আখেরে ধরা খেতে হয়। যার নজির পৃথিবীর বহু দেশে আছে।
“এক শীষে দুটি ধানের উদ্ভাবন!”-শীর্ষক খবরটি পড়েছেন তো? না পড়ে থাকলে নীচের লিংকে ক্লিক মারুন জায়গা মত পৌছে যাবেন। একটু ধৈর্য নিয়ে পড়ুন...Click this link
এবার মূল আলোচনায় আসা যাক, “এক শীষে দুটি ধানের উদ্ভাবন!” এই শিরোনাম নিয়েই প্রশ্ন আছে। সাধারনত আমরা জানি ধানের ক্ষেত্রে একটি শীষে কমপক্ষে ১০০~১৫০ ধান/চাল থাকে। এই সংখ্যা বিভিন্ন জাতের ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়ে থাকে। আমদের কৃষকগন যে ধানের চাষ করে থাকেন তাতে একটি শীষে সাধারনতঃ ১০০~১৫০ টি ধান/চাল হয়। যা দিয়েই আমাদের খাদ্য সমস্যা মেটানো যাচ্ছে না, সেখানে রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের এই তরুন বিজ্ঞানীগন “এক শীষে দুটি ধান...” দিয়ে আমাদের উৎপাদন কতটুকু বাড়াবেন তা মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন!
চলুন রিপোর্ট টি বিশ্লেষন করা যাক, পত্রিকায় বলা হয়েছে “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান (হাফিজ) গবেষণা চালিয়ে একটি ধান গাছের একটি শীষে যমজ ধান (এক ধানে দুই চাল) উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন”।
আচ্ছা বলুন তো ‘উদ্ভাবন’ কাকে বলে? হ্যাঁ, সোজা কথায় যা এখন পর্যন্ত অন্য কোথাও উদ্ভব হয় নাই তা। আপনিই প্রথম ব্যাক্তি যেটা আবিস্কার করেছেন তখনই কেবল তাকে ‘উদ্ভাবন’ বলা যাবে। যেমন ধরুন- আপনি দঃ কোরিয়া থেকে একটি স্যামসাং স্মার্ট ফোন ক্রয় করে বাংলাদেশে এসে বলতে পারেন না যে ‘এই স্মার্ট ফোন আমি উদ্ভাবন করেছি’ বড় জোর বলতে পারেন আমি ক্রয় করেছি। যদি এটাকে উদ্ভাবন বলে চালিয়ে দেন তাহলে লোকে আপনাকে পাগল ছাড়া আর কিছু বলবে?
এবার চলুন রিপোর্টে কী বলা হয়েছে “গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ড. আমিনুল হক জানান, বছরখানেক আগে পত্রিকার খবরের মাধ্যমে জানতে পারেন, দিনাজপুরের এক কৃষক তার জমিতে প্রথম যমজ ধানের দেখা পান। পরে তিনি স্থানীয় কৃষিবিদদের জানালেন, বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমের নজরে আসে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর পড়ে ড. আমিনুল হক ওই কৃষকের কাছ থেকে ১০০ গ্রাম যমজ ধান সংগ্রহ করে আনেন”।
কী বুঝলেন? ঐ কৃষকের নাম পর্যন্ত উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করলেন না এই বিজ্ঞানী। এটা নূন্যতম ভদ্রতার অংশ ছিল। এই ভদ্রতাকে সিন্টিফিক পেপারে Acknowledgement বলা হয়ে থাকে। এবার চলুন জেনে নেই ঐ কৃষকের আসল নাম কী? এবার এখানে ক্লিক মারুন.. .
[http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-02-03/news/221684]
কী পেয়েছেন তো? হ্যাঁ তাঁর নাম আছিমুদ্দিন। প্রথম আলো ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১২ তে বলা হয় যে, “দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা সদরের কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. অছিমুদ্দিনের হাত ধরে এলাকায় এ ধানের চাষ শুরু। এরপর কৃষকেরা আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকেন। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকায়”।
তাহলে প্রশ্ন, এই ধানের আসল ‘উদ্ভাবক’ কে? দিনাজপুরের আছিমুদ্দিন নাকি রাবির হাফিজুর রহমান? সুপ্রিয় পাঠক ভেবে দেখুন, পেয়ে যাবেন।
বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আরো কিছু প্রশ্ন আছে আমার, যেমন- এই জমজ চাল উৎপাদনের সাইন্টিফিক ব্যাখ্যা কী? এটা কী পয়েন্ট মিউটেশনের কারনে হয়েছে? যদি তাই হয় তাহলে কোন জিনের মিউটেশন হয়েছে? ঐ জিন মিউটেশনের ফলে এই চাল কী আমাদের স্বাস্থ্যে কোন খারাপ প্রভাব ফেলবে?
এসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই বলা যাবেনা ‘টুইন রাইস’ উদ্ভাবন করে ফেলেছি!
ধানের একটি জাত ঘোষনা দিতে হলে কমপক্ষে ১০~১২ বছর কঠোর গবেষনার প্রয়োজন হয়। তাছাড়া বিষয়টা ‘খেলো’ হয়ে যাবে। বিজ্ঞান এ 'খেলো' কর্ম কে কতটুকু সমর্থন করবে?
বিষয়: বিবিধ
১৫৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন