মা ও মেয়ের গল্প
লিখেছেন লিখেছেন ওসমান সজীব ২০ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:২৯:১৩ রাত
কিছুক্ষণ পর রিমা ও তার বান্ধবিদের গল্প বলার আসর শুরু হবে। আজকের বিষয় মা। কয়েক বছর আগের প্রএিকায় প্রকাশিত একটি মহিলার ঘটনা তিনা বলা শুরু করেছে।মহিলার নাম কুসম বেগম।অসম্ভব রূপবতী । তার স্বামী রিপন মিয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি।তার বন্ধু হাবিবের বাসায় ভাড়া থাকে। কুসম বেগমের বিয়ের ছয় মাস পর রিপন মিয়া বিদেশে পাড়ি জমায়।কুসম বেগম একা হয়ে যায়।হাবিব ও রিপন মিয়া ছোট বেলার বন্ধু। ভাই এর মত সম্পর্ক। খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে নষ্ট হয়ে যায়। বাপের পৈত্রিক সম্পত্তি ভোগ করে। নেশাখোর পাগল বলা যায়।
কুসম বেগমের দিন ভালো ভাবে কাটছিল । হাবিব এক রাতে কুসম বেগমের ঘর টোকা দিচ্ছে জোরে ।কুসম বেগম বলল কে? ভাবি আমি হাবিব ।কি চাই? একটা ম্যাচ হবে?কিছুক্ষণ পর কুসম বেগম দরজা একটু ফাঁক করে ম্যাচ দিতে না দিতে ঘরে ঢুকে যায়। কিছু না বুঝার আগে ধর্ষণের শিকার হয়।আত্মা হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।কিন্তু পারে না । তার গর্ভে নতুন অস্তিত্বের সঞ্চার ঘটে।হাবিব আরও অনেক বার তার দেহ টা কে চিবিয়ে খেয়েছে । কিছু বলেনি গর্ভের শিশু কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। ফুটফুটে একটি মেয়ে শিশু পৃথিবীর আলো দেখে। আত্ম হত্যার ভুত মাথা থেকে নেমে যায়। কয়েক বছর পর হাবিব আবার উৎপাত শুরু করে। টিকতে না পেরে শিশুটি কে রিপন মিয়ার এক মামা কাছে রেখে কুসম বেগম হারিয়ে যায়। গল্প শেষ না করতে রিমা বলল যদি হারিয়ে যায় তাহলে সত্য ঘটনা কি করে হল? তিনা বলল এক সাংবাদিক পতিতাদের সুখ দুঃখ নিয়ে লিখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছে।পরে কুসম বেগমের ঘটনাটি সবার চেয়ে করুন মনে হয়েছে তাই প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করেছে। রিমার ও তার বান্ধুবিরা খুব আফসোস করে কুসম বেগমের জন্য।
বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান রিমা। কলেজ পড়ুয়া জেদী মেয়ে। যা জেদ ধরে তাই করবে। এই বয়েসটা আবেগ খুব বেশি কাজ করে। কিছুটা রাগ বা অভিমানে জীবনের অনেক বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। তাই আত্মহত্যার প্রবণতাটা বেশি। হয়তো এর জন্য রিমার সব জেদ মেনে নেয় তার বাবা মা । কিছু দিন ধরে একটা মহিলা (আসমা বেগম)তাদের বাসায় আসা যাওয়া করে। রিমাকে দেখলেই কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। মহিলাটা কে জিজ্ঞাস করলে প্রতিবার রিমার মা বাবা বিব্রত বোধ করত। রিমার প্রচন্ড জেদের এক পর্যায় জানতে পারে মহিলাটি তার প্রথম মা।
সুখের সংসারটা নিথর হয়ে যায়। আচমকা এক ঝড় সুখ তছনছ করে দিয়ে গেল। সত্যটা না জানাই ভাল ছিল রিমা নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করে। মানুষ কিছু দিন না খেয়ে থাকলে ক্ষুদ্রার্ত চেহারাটা যেমন করুণ দেখায় ঠিক তেমনি তিন জনের চেহারায় করুণ চিত্র ভেসে উঠেছে। কেন তার বাবা প্রথম মাকে ছেড়ে দিলো? কেন মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত করল? সত্য জানার জন্য রিমা আরো উওোজিত হয়ে যায়। পাগলের মত ব্যবহার শুরু করতে থাকে। বিবেকের কাঠগড়ায় তার বাবা। অতীত এভাবে বর্তমানে এসে ধরা দিবে রিমার বাবা বুঝতে পারেনি।
চিপাচাপা গলি দিয়ে রিমা ও তার বাবা হেঁটে যাচ্ছে। রিমা জিজ্ঞাস করে বাবা মা কোথায়।?। গলির মাথার শেষে একটা বড় গেট ছিল। অনেক মহিলা পুরুষ সেখানে কথা বলছে। রিমা এবার বুঝতে পেড়েছে সে কোথায় এসেছে। তার মা যে একজন পতিতা তার বুঝতে দেরি হল না। সে অনড় যত বড় সত্যি হোক না কেন তার মোকাবেলা করবে। একটু ঘুরে তাকাতেই রিমা স্তব্ধ হয়ে যায়। তার মা অসভ্য ভাষা এক ছেলের সাথে কথা বলছে। টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। রিমা তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। পৃথীবির নির্মমতা কতটা ভয়ংকর হতে পাড়ে তাকে নিজ চোখে দেখতে হল। রিমাকে তার মা দেখতে পায়। দৌড়ে এসে মা ও মেয়ে গলা জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। এ কান্না শেষ হবার নয়।
রিমা ঠিক করেছে আসমা বেগম তার রুমে থাকবে ।রিমার বাবা মা তা মেনে নেয়। আসমা বেগম প্রায় সময় রিমা কে কলেজে দিয়ে আসে।
একদিন কলেজে রিমা তার বান্ধুবিদের সাথে আসমা বেগম কে পরিচয় করিয়ে দেয়। আনিকা বলে আপনাকে কোথায় দেখেছি মনে হচ্ছে?রিমা বলল না কোথায় দেখবি।রিমা ও আসমা বেগম বাড়ি ফিরে আসে।
রিমা ক্লাসে সব সময় প্রথম হয়।তারপর আবার রূপবতী অহঙ্কারের সীমা নাই। সবাই কে কম বেশি অপমানের শিকার হতে হয়। রিমা কখনও বুঝতে চায়নি কাজটা সহপাঠিদের সাথে বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।পরের দিন কলেজে যেতেই তাকে নিয়ে কানাকানি হচ্ছে।কেউ কেউ কথা বলছে না ।নানান রকম হাসি তামাশা চলছে। কি যেন একটা রটে গেছে শুধু রিমা বুঝতে পারে না। তার প্রিয় বান্ধবি তমা বলে তিনা সে দিন ক্যান্টিনে যেই মহিলার কথা বলছে সেটা তোর মা। তোর মা আর সাথে আনিকা পরিচয়ে সময় চেনা চেনা লেগেছিল ।
সে প্রএিকা খুঁজে বের করে কলেজে রটিয়ে দিয়েছে।রিমা বাড়ি ফিরে তার দরজা বন্ধ করে কাঁদতে থাকে।এত দিন যাদের নিয়ে হাসি তামাশা করেছিল আজ সবাই অপমানের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। এই হিংস মানুষদের কাছ থেকে রক্ষা নেই। ঘণ্টা খানিক পর তার বাবা ঘটনা খুলে বলে। সে আর এই শহরে থাকবে না।তাকে অন্য কোথায় নিয়ে যেতে বলে। রিমার বাবা ১০ দিনের মধ্যে তার বিয়ে ঠিক করে।ছেলের নাম অনিক পেশায় এক জন সাংবাদিক । বিয়ের পর রিমা কে নিয়ে বিদেশে চলে যাবে। রিমা নিজে কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিয়ে তে রাজি হয়। এই শহরের মানুষগুলো তার কাছে হিংস জানোয়ারের মত। হাতের কাছে পেলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রক্তাক্ত করে দিবে। বিয়ের সাজে রিমা ও অনিক পাশাপাশি বসে আছে। আসমা বেগম মুখ ঘুরিয়ে নিতে না
নিতে আনিক দেখে ফেলে। অনিক সবাই কে অবাক করে দিয়ে বিয়ের আসর থেকে চলে যায়। রিমার দু চোখ দিয়ে দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। রিমা আসমা বেগম ডেকে বলে মা কোন সাংবাদিক কি তোমার কখনও ইন্টারভিউ নিয়েছিল?আসমা বেগম কিছু না বলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায় ।রিমা এক দৌড় দিয়ে বাথরুমে চলে যায়।ঘণ্টা খানিক পর বাথরুম থেকে বের হয়। তখন বাইরে খুব জোরে বৃষ্টি হচ্ছে।বাবা কে বলে আমার অনেক দিনের শখ বৃষ্টিতে
রিক্সায় ঘুরে বেড়াব। রিমা কে নিয়ে তার বাবা ঘুরতে বের হয় এই ভারি বৃষ্টির মধ্যে ।রাতে ভিজা কাপড়ে বাড়ি ফিরে দুজনে। চার জনে রাতের খাবার এক সাথে খায়। রিমা আসমা বেগম কে বলল মা তোমাকে কিছু রান্না করে খাওতে পারিনি আজ এই এক গ্লাস দুধ এনেছি তুমি খাবে।শুধু তুমি না আমি এক গ্লাস তুমি এক গ্লাস। যে আগে খেয়ে শেষ করতে পারবে সে পৃথিবীর সব চেয়ে দুঃখী মানুষ । রিমা ও আসমা বেগম কে পৃথিবীর সব চেয়ে দুঃখী মানুষ তা জানা যায়নি। সব মানুষ বেঁচে থাকতে চায় তার একান্ত কষ্ট নিয়ে। কিন্তু সমাজের মানুষগুলো তাদের বাঁচিয়ে রাখতে চায় না। সমাজের হাজারও দুঃখী মানুষ আছে যাদের একটু আনন্দের খোরাক রিমার মত শত শত ঘটনা।রিমার শখ আবারও পূরণ হল।
কি অপূর্ব দৃশ্য! বৃষ্টির মধ্যে লাশের খাট ছুটে চলছে।আশেপাশের কৌতূহলী চোখ নিয়ে তাকাচ্ছে।কেউ আবার ছবির শুটিং ভেবে মজা পাচ্ছে। কেউ বিষয়টা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছে। ভেবে পায়না ৪/৫ ছয় জন মেয়ে মানুষ ভিজে লাশের সাথে যাচ্ছে কেন। লাশ বহনকারী মানুষগুলোর বার বার মুখে উচ্চারিত হচ্ছে কালেমায় শাহাদাত ।
বিষয়: Contest_mother
৪১৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন