***একটি অপেক্ষার রাত***
লিখেছেন লিখেছেন egypt12 ২৪ নভেম্বর, ২০১৪, ০৯:০২:৫১ সকাল
শায়লা সেজে চলেছে সেই সন্ধ্যা হতে; টানা দেড় ঘণ্টা সাজার পর তার ব্যস্ততা থামলো। সালেকিন আজ অবশ্যই রাত সাড়ে আটটার মধ্যে আসবে বলেছে। তারপর দুজন রাতের শহর দেখবে, রিক্সায় ঘুরে বেড়াবে- ঠিক স্বাধীন জোড়া কবুতরের মত আর ডিনার করবে জি-ইসির মেরিডিয়ানে। বিয়ের পর থেকে শায়লা শ্বশুর-শাশুড়িসহ বসবাস করে আসছে। হানিমুনের পর গত দেড় বছরে কপোত-কপোতি হিসেবে এই বাসায় আজকেই তাদের প্রথম দিন; কারণ শ্বশুর-শাশুড়ি এক সপ্তাহের জন্য বাড়ি গেছে। সে যদিও শ্বশুর-শাশুড়ির প্রিয় বউ তবুও আজ তাদের ছাড়াই দিনটা তার কাছে কেমন যেন স্পেশাল মনে হচ্ছে।
রাত নয়টা বেজে গেছে ওর আসার নাম নেই; শায়লা মোবাইল হাতে নেয় কল করবে বলে... নাহ ওর কি কমন সেন্স নেই!? নাকি ওর কাছে আমার আবেগ ও ইচ্ছের কোন মূল্যই নেই!? না না নো কল, জাস্ট ওয়েট এন্ড অবজার্ব।
রাত পৌনে এগারটা...
শায়লার মনে শঙ্কা জেগে উঠল; মানুষটার কি হলো! থাক একটা কল দিয়ে দেখি দোকানে হয়ত কাস্টমারের ভিড় বা অন্য কোন ব্যবসায়িক সমস্যা?
কল পড়ছে মনে হয়... “আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এই মুহুর্তে বন্ধ আছে অনুগ্রহ পুর্বক আবার চেষ্টা করুন ধন্যবাদ।” চেষ্টার পর চেষ্টা চলে তবু মোবাইল অন হয় না, শোনা হয়ে উঠে না বহু প্রতীক্ষার হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম- জানপাখি কেমন আছ?
গত এক সপ্তাহ আগের একটি ঘটনা মনে পড়তেই শায়লার কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো- এম-ই-এস কলেজের সন্ত্রাসী ছাত্ররা নেতাদের নির্দেশে জিইসির সব শো রুমে মৌখিক ভাবে হুমকি দিয়ে গেছে ঈদের আগে দোকান প্রতি পঁচিশ হাজার টাকা পার্টি ফান্ডে দিতে হবে, নয়ত ব্যবসা বন্ধ, আর বাড়াবাড়ি করলে অনেক বড় মুল্য দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
রাত সাড়ে বারোটা...
শঙ্কায় কাজল গুলো মুছে ফেলেছে শায়লা। স্বামীর দেরীতে তার মনে আর কোন রাগ অবশিষ্ট নেই। এখন শুধু নিরাপদে তাকে পাবার অপেক্ষা।
কিছুক্ষন আগে থেকেই নিজেকে কেমন যেন বিধবা বিধবা মনে হচ্ছে তার আর গর্ভের নয় সপ্তাহের সন্তানের অনাগত ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তার শরীর হিম হয়ে আসছে। শায়লা এশার নামাজ অনেক আগে পড়লেও এখন জায়নামাজ বিছিয়ে কেবলা মুখী সেজদায় অবনত... হে আল্লাহ এমন করোনা, তোমার এই দাসীর অন্তর ভেঙ্গে দিওনা , তোমার আমার মাঝে এমন তো কথা ছিলোনা! তবে কেন এমন হয়ে যাচ্ছে? আমার সন্তানের কি হবে? দেশ জুড়ে যে হারে গুম-খুন বেড়েছে আমিও কি এর শিকার হতে যাচ্ছি? অতপর সিজদায় অঝোর কান্নার নীরবতা...
বিশ মিনিট পর...
বাসার সামনে একটি জীপ থেমেছে; শায়লা সিজদা হতে উঠে জানালা ধরে দাড়ালো; ওমা এটা যে র্যাাবের গাড়ি! ড্রাইভার ও একজন র্যা বের পোশাক পড়া ব্যক্তি লম্বা একটি কফিন বক্সের মত বক্স বের করলো। আতঙ্কে সোনা বধুর বুক চিড়ে যায় যায় অবস্থা, আর তো সহ্য হয়না! সে এই ঘোরের মধ্যেই গিয়ে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকে। দুজন লোক সিড়ি বেয়ে কফিন নিয়ে এগিয়ে আসে আর শায়লা পাথর হতে থাকে... দোস্ত উনিই কি ভাবী? হুম- সালেকিনের উত্তর। শায়লার ঘোর ভাঙে। সে কোন প্রশ্ন করেনি শুধু স্বামীর হাতটি শক্ত করে চেপে ধরে বেডরুমের দিকে ছুটে যায়...
সালেকিন ভয়ে ভয়ে কথা বলতে থাকে “এখন যে এসেছে সে আমার বন্ধু মনির রাজশাহী থেকের্যা ব সেভেনে পোস্টিং হয়ে এসেছে” স্ত্রীর ভয়ে আরও কৌফিয়ত দিতে যাবে তখনই শায়লা হাত দিয়ে তার ঠোঁট দুটো চেপে ধরে আর হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পাওয়া স্বৈরাচারী নারী শাসকের মত করে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে সেকি অঝোর কান্না! এদিকে সালেকিন ভয়ে এক নিঃশ্বাসে বলে যায় “বউ রোজার আর বেশীদিন বাকি নেই ঢাকা থেকে বড় মালের একটা চালান এসেছে সেটা আনলোড করতেই দেরি হয়ে গেল আর সন্ধ্যার দিকে মোবাইল হারিয়ে ফেলেছি-তারপর কাজে কাজে এই...”
না এসব কৌফিয়ত শোনার পাত্রী নয় শায়লা; সে শুধু পরম পাওয়ায় জড়িয়ে রাখে নাগিনীর মত তার নাগকে, লতার মত তার বৃক্ষকে, আকাশের মত তার পৃথিবীকে।
.
২৩.১১.১৪
বিষয়: সাহিত্য
১২০৯ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বর্ণনার নান্দনিকতায় আপনিও পাঠক কে ভয়ের হীমশিতল স্রোতে পাথর বানিয়ে ছেড়েছেন!
সিড়ি বেয়ে কফিন নিয়ে আসার দৃশ্য মুক-বধির করে দিয়েছিল অনুভূতি কে!
মুন্সিয়ানা সালাম ও অনেক ধন্যবাদ! ^^
তবে আমি হলে শেষটা ভিন্ন রকম হইত!!!
কিন্তু অফিস টাইমে গল্প লিথতেছেন কেমনে????
ধন্যবাদ ভালো লাগা রেখে গেলাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন