***উপলব্ধি*** ছোট গল্প (পর্ব ১)
লিখেছেন লিখেছেন egypt12 ১৭ মে, ২০১৪, ০৮:৫২:৪৬ সকাল
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানীর নাম; প্রতিবছর ঢাকায় ভাগ্য অন্বেষণকারীদের যে চাপ, চট্টগ্রামেও তার কম চাপ পড়েনা। এখানেও কম-বেশ দেশের প্রায় অঞ্চলের মানুষের বসতি আছে। অনেকের মতই রাজ্জাক তালুকদারও এক ভাগ্য অন্বেষণকারী। তার বাবা নায়ক রাজ রাজ্জাকের ভক্ত ছিল তাই তার নাম রাজ্জাক রেখেছে কিন্তু তাদের চৌদ্দ পুরুষের মাঝে কে তালুকদার ছিল! এটা কেউ জানেনা এমন কি সে ছাড়া আর কারো নামের সাথে তালুকদার ছিল না বা এখনো নেই। যা হোক এই তালুকদার বিতর্ক কিন্তু মানুষ ঠাট্টা করে তোলে তার অবস্থা আর আচরন দেখে, আসলে সে চট্টগ্রাম শহরের হাজারো রিক্সা চালকদের একজন; থাকে দামপাড়ার বস্তিতে।
.
শহরের বস্তি গুলোও কেমন জানি! চারিদিকে প্রাচুর্যের অনন্ত ঝলকানির মাঝে বস্তিগুলো যেন গরিব ও ধনী দুজনের সাথেই প্রহসন করে। ব্যাপারটি হল; এই বস্তি গুলো ধনীদের গরিবের প্রতিবেশী করেছে ঠিক কিন্তু কেউ কাউকে প্রতিবেশী পরিচয় দিতে পারে না বা দেয় না। এক দিকে চলে প্রাচুর্যের বাড়াবাড়ি অন্যদিকে থাকে দারিদ্র্যের নিত্য আনাগোনা এই হল আমাদের শহুরে সভ্যতা।
.
যাই হোক এবার মূল কথায় আসা যাক, এদেশেরই কোন মফস্বল শহরের এক স্বপ্ন বিলাসী যুবকের নাম রাজ্জাক। তার পরিবার মোটামুটি সচ্ছল পরিবার হিসেবে নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত। যেহেতু সে পাঁচ ভাই দু বোনের মাঝে সবচেয়ে বড় ছিল; তার বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল তাকে নিয়ে, তার বাবা ছেলেকে পড়াশুনা করিয়ে বড় আসনে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যই খারাপ, রাজ্জাক ছিল স্বপ্ন বিলাসী। সে তার জীবনে হটাৎ ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখত কিন্তু সেই স্বপ্ন পুরনে কিছুই করত না, ‘এস.এস.সি.’তে তিনবার ফেল করার পর তার আর পড়াশুনা করা হয়নি। এর চার বছর পর বাবা ছেলেকে পাঠায় সৌদি আরবে পাঠায় যদি শুধরায় এই আসায়, নাহ সেই আশার গুড়েও বালি পড়ল যখন দুই বছর পর সে খালি হাতে ফিরে এল। তবুও বাবা বলে কথা, ছেলেকে ফেলে দেয়নি। এর ভেতরে ঘটে যায় অন্য এক ঘটনা যা মূলত বেকার ও ভবগুরেদের কমন কাজ; তা হল রাজ্জাক বাঁধা পড়ে যায় তাদের চেয়ে বংশ মর্যাদায় বড় এমন পরিবারের এক মেয়ের প্রেমে। এই প্রেমের কারনে এলাকায় সংঘাত সৃষ্টির উপক্রম হলে রাজ্জাক মেয়েটিকে নিয়ে চট্টগ্রাম পালিয়ে আসে। এখানে বিয়ে করে দামপাড়া বস্তিতে শুরু হয় রাজ্জাক তালুকদার ও জেবুন্নেসা ওরফে জেবুর সংসার। সংসার ও পেটের চাহিদার দায়ে রাজ্জাক শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠে রিক্সা চালক। প্রতিদিন সকাল ৬টায় মহাজন থেকে রিক্সা নিয়ে বের হয় আর সন্ধ্যা ছয়টায় জমা দেয় এজন্য তাকে দিনে ৮০ টাকা করে দিতে হয় মহাজনকে।
.
রাজ্জাকের জানা হয়ে গেছে তার আর বাড়ি ফেরা হবে না, তার বাবা ও পরিবার বিয়েটি মেনে নিলেও মেনে নেয়নি জেবুর পরিবার। জেবুর ভাইয়েরা দুজকেই পেলে জনমের শাস্তি দেবে বলে প্রতিজ্ঞা করে রেখেছে। জেবুদের পরিবার রাজ্জাকদের মতই অর্থ-বিত্ত ও সচ্ছলতার মানদণ্ডে, কিন্তু জেবুদের পূর্বপুরুষ ছিল জমিদার আর রাজ্জাকদের পূর্বপুরুষ ছিল জেবুদের পরিবারের শ্রমিক ও কামলা এবং এখনো এলাকায় জেবুদের পরিবারের অনেক প্রভাব; তাই জেবুদের পরিবার এই বিয়ে মেনে নেবার স্বপ্নও দেখেনা। রাজ্জাক এই বাস্তবতা বোঝে বলেই চট্টগ্রাম শহরে রিক্সা চালানোটাই নিজের নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছে। জেবুরও এতে আপত্তি নেই সে শুধু রাজ্জাককে চায়।
.
ভালোই চলছে রাজ্জাক-জেবুর সংসার। এখনো তেমন চাপ নেই, শুধুই টোনা-টুনির সংসার। তারা শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজেদের জন্য সুন্দর সময় কাটানোর জন্য সময় বের করে নেয়, সপ্তাহে এক-দুই দিন ঘুরতে বের হয়। রক্ত সম্পর্কীয় একান্ত আপনজনদের থেকে দূরে থেকেও তারা জীবনকে উপভোগের চেষ্টা করে। এরই ধারাবাহিকতায় বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাদের কোলে এল এক ফুটফুটে সন্তান। তাদের প্রথম সন্তান ছেলেই হল; রাজ্জাক ছেলের নাম রাখল রিয়াদ তালুকদার। সদ্য জন্ম নেয়া সন্তান নিয়ে তাদের ভালোই যাচ্ছে, দুজনই খুশি কারন এই সন্তান তাদের দুজনের ছোট পরিসরের জীবনে আলো ও খুশির উপলক্ষ নিয়ে এসেছে। রাজ্জাক দৈনিক নিজের বাইরের ব্যস্ততা শেষে এবং জেবু ঘরের ব্যস্ততা শেষে সন্ধ্যায় ছেলে রিয়াদকে নিয়ে আনন্দ করে কাটায়। রিয়াদের মুখ তাদের দুজনের মনে জমাট বাঁধা অনেক দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছে।
.
রাজ্জাকের স্বপ্ন ও সাধ নিজের কেনা রিক্সা চালানো এবং পরে রিক্সার মহাজন হওয়া। তাই শুরু থেকেই সে কিছু কিছু টাকা জমিয়ে রাখে জেবুর কাছে; কিন্তু যখন মটর চালিত রিক্সা এলো তখন সে ওটাই কেনার সংকল্প করল। এভাবেই বিয়ের সাড়ে তিন বছরের মাথায় সে তার সপ্নের মটর চালিত রিক্সা কেনার জন্য ৩৫০০০ হাজার টাকার মত জমিয়ে তোলে। তবুও রাজ্জাক মটর চালিত রিক্সায় অভ্যস্ত হবার জন্য মটর চালিত রিক্সা ভাড়ায় নিয়ে চালানো শুরু করে। আসলেই এটা চালাতে পরিশ্রম কম আর আয়-রোজগার পায়ে চালিত রিক্সা থেকে ভালো।
.
নগর জুড়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছে, রাজ্জাক এখন বারেক বিল্ডিং মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে এমন সময় এক বিদেশীকে রিক্সা ঠিক করে দেবার জন্য এক যুবক আসলো, বিদেশীটা যাবে আসকার দীঘির পাড়। ভাড়া ঠিক হল ৭০ টাকা পরক্ষনেই রাজ্জাক বিদেশীকে নিয়ে আসকার দীঘির পাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রিক্সা চলতে চলতে যখন আইস ফ্যাক্টরি রোডে ঢুকল তখনি আবছা অন্ধকারে আকস্মিক ভাবেই কিছু আততায়ী তাদের রিক্সা থামালো, রাজ্জাক কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে চড়-থাপ্পড় ও লাথি দিয়ে চলে যেতে বাধ্য করল আততায়ীরা।
.
চলবে...
বিঃদ্রঃ- ছবির ব্যক্তির সাথে গল্পের কোন প্রকার মিল নেই; এটি নিছক মজা করার উদ্দেশ্যে সংযোজন করা হলো
***উপলব্ধি*** ছোট গল্প (পর্ব ২)
বিষয়: সাহিত্য
১৪১১ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মজা নিলে ফ্যামিলিসহ মজা নেন ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন