রাজাকারের ফাঁসির দাবী নিয়ে ইসলামকে বলি দেয়া হচ্ছে কী?
লিখেছেন লিখেছেন আল আমিন ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০১:৩৮:৩২ দুপুর
শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে আমি কখনোই কিছু বলিনি। নিজের অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে "সকল রাজাকারের ফাঁসি চাই" এই দাবী নিয়ে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে আমার যাওয়া হয়নি। কিন্তু মৌন একটা সম্মতি আমার সব সময়ই ছিলো। দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে এও আমার প্রাণের দাবী ছিলো। কিন্তু সেই সাথে বুকের মাঝে একটা প্রশ্নও ছিলো!
সেই প্রশ্নটা হলো "রাজাকারদের সাথে শুধুমাত্র জামাতদেরই কী সংশ্লিষ্টতা? শুধুমাত্র জামাতেই কী যুদ্ধাপরাধীর বসবাস?" আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে এর উত্তর ছিলো "না"!
আমি চেয়েছি শুধুমাত্র জামাতের রাজাকার নয়... দল-মত নির্বিশেষে সকল রাজাকারের যেন ফাঁসি কার্যকর করা হোক! এবং এই আন্দোলনটা তো রাজাকারের ফাঁসির দাবি নিয়ে আন্দোলনই ছিলো নাকি???
শুধু এই একটা দাবীতে আমরা ঐক্যবদ্ধ!
কিন্তু আন্দোলনের আয়ু বাড়তেই আমার মাঝে কিছু প্রশ্নের জন্ম দেয়। এই আন্দোলন একটা পুর্বপরিকল্পনার নীল নকশা করা আন্দোলন মনে হতে থাকে।
প্রথমেই বলে রাখছি আমি জামায়াতে ইসলামী করি না। (এখন তো কোন কিছু বলা মানেই হল জামায়াত ইসলামী করি... ছাগু) পক্ষপাতহীনভাবে (অন্তত আমার দৃষ্টিতে আমি নিজেকে পক্ষপাতহীন দাবী করছি) আমি যদি একটু পিছনের দিকে তাকাই... তাহলেই কিছু দিক স্পষ্ট হতে পারে। এই আন্দোলন শুরু হয়েছিলো রাজাকারের ফাঁসি চাই নিয়ে কিন্তু এগুচ্ছে জামায়াত ইসলামী নিষিদ্ধসহ ইসলামী অর্থনীতিকেও নিষিদ্ধ করার স্লোগান নিয়ে!
কয়েকবছর আগ থেকেই এইরকম গুঞ্জন আমরা শুনে আসছিলাম। মনে আছে কী আপনাদের? সরকার পরিবর্তনের পর পরই বলা হচ্ছিলো ধর্ম নিরেপক্ষ সরকার চাই। সংবিধান থেকে "আল্লাহ সকল ক্ষমতার অধিকারী এবং বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম" উঠিয়ে দেয়া নিয়েও তুলকালাম হয়েছিলো। কারণ রাষ্ট্রকে ধর্ম নিরেপক্ষ হতে হবে। রাষ্ট্রের কোন ধর্ম নেই... কিন্তু যুক্তি কী বলে?
আমেরিকা- ইংল্যান্ডের দিকে একটু তাকাই। ধর্মনিরেপক্ষ রাষ্ট্র। কিন্তু কখনো কি রাষ্ট্রপ্রধানের ভাষণ শোনা হয়েছে আপনাদের? সেখানে কি খেয়াল করেছেন যে, বারাক ওবামাসহ যারাই ভাষণ দেন তারাই "গড ব্লেস আমেরিকা" বলে তাদের ভাষণ শেষ করেন? সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ্য খ্রিস্টান এবং খ্রিস্টান ধর্মকেই প্রাধান্য দেয়া হয় সব ক্ষেত্রেই! ইন্ডিয়ার দিকে তাকালেও আমরা একই জিনিস দেখতে পাই। বরং কিছু কিছু জায়গায় তো পোপই হয় রাষ্ট্র প্রধান!
রাষ্ট্রের ধর্ম নির্ধারিত হয় সংখ্যা গরিষ্ঠতা দিয়ে... এবং সংখ্যা গরিষ্ঠতার কারণেই আমাদের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম! এটা আমাদের জন্য লজ্জার নয় বরং অহংকারের। আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে ধর্মীয় ক্লেষ অনেক কম। আমরা এমন এক জাতি সকল ধর্ম নির্বিশেষে সুখী জাতি!
কিন্তু সুখে থাকলে ভুতে কিলায় আমাদের। তাই আমাদের হতে হবে ধর্ম নিরেপক্ষ। আচ্ছা ধর্ম নিরেপক্ষতা কী? এমন প্রশ্ন কি কারো মাথায় এসেছে... ধর্ম নিরেপক্ষতা কী ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বাদ দিলেই চলে আসবে? জামায়াত ইসলামের রাজনীতি বন্ধ করলেই চলে আসবে? এই প্রশ্নটা আমার মাথার ভেতর সবসময়ই ঘুরপাক খাচ্ছে। এবং এর কোন কুল-কিনারা আমি পাই না।
সে যাইহোক... প্রসঙ্গে ফিরে আসি। প্রসঙ্গ প্রজন্ম চত্বরের তরুণদের আন্দোলন নিয়ে। আন্দোলনের শুরুটা রাজাকারের ফাঁসি চাই দিয়ে শুরু হলেও এখন ইসলামের বিরুদ্ধে চলে গেলো। ইসলামী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করতে হবে! কী সেলুকাস... রাজাকার কী শুধুমাত্র ইসলামী দলেই!!!
আর সবচে' কষ্টকর বিষয় হচ্ছে "রাজাকারের সিম্বল বানানো হচ্ছে দাঁড়ি-টুপি-পাঞ্জাবী পরিহিত হুজুর এবং আলেমদের পোষাক"...
এইটা আমার কাছে দুঃখজনক বিষয় জেনে আমার খুব কাছের একজন মানুষ বললো- তোর ঈমান এত দুর্বল!
আমি তাকে বলেছিলাম... "আমার ঈমান দুর্বল নয়, কিন্তু এটা তো সত্য যে ইসলামী পোশাককে সিম্বল বানানোর পিছনে লম্বা পরিকল্পনা রয়েছে। শিশুর হাতে দড়ি দিয়ে প্রতীকী রাজাকারের ফাঁসির দাবী করা হয় যার মাথায় টুপি,গালে দাঁড়ি এবং পরনে পাঞ্জাবী। আমার কথা সেখানেই। ইসলামধর্ম গরিষ্ঠ এইদেশে আলেম সমাজ রাসুল (স) সুন্নাত হিসাবে দাঁড়ি-টুপি-এবং পাঞ্জাবী পরে থাকে। আমার বাবার দাড়ি আছে, তিনি নামাজে পাঞ্জাবী এবং টুপি পরে যান। এবং তিনি রাজাকার নন... কিন্তু রাজাকারের সিম্বল তিনি পরিধান করছেন... এখন যদি আমার সন্তান আমার বাবাকে রাজাকার বলে আখ্যায়িত করে তখন আমি তাকে কী বলবো? সেই শিশু কী কখনোই আলেম-হুজুরদের সম্মান করতে শিখবে? "
রাজাকারের ফাঁসি হোক দাবী যদি এই হয় তবে কেন ইসলামকে টানা হচ্ছে এখানে? পঙ্গপালের মত কিছু তরুণ অন্ধের মত কোন আগুনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে... যে আগুন তাদের নিজেদেরকেই ধ্বংস করে দিবে?
একজন ব্লগার খুন হয়েছেন। যিনি এই আন্দোলন আয়োজকদের অন্যতম একজন। আয়োজক যদি নাস্তিক হন, নাস্তিক্যবাদ জঘন্যরূপে ছড়িয়ে দেয়া যার লেখনীর অন্যতম প্রধান উপজীব্য, তার আয়োজনের আন্দোলন কোনদিকে মোড় নিতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। তার এমন নৃশংসভাবে খুন হওয়াটা কোনভাবেই কাম্য নয়... ঠিক তেমনই কাম্য নয় শিবিরের চারটি ছেলের খুন হওয়া।
জেনে রাখুন, মানুষ খুন হচ্ছে। মানবতা খুন হচ্ছে। অথচ একদল উল্লাস করছি শিবিরের ছাগু মরেছে বেশ হয়েছে... আরেকদল উল্লাস করছি নাস্তিক মরছে একটা ভালো হইছে..."
এই খুন বাড়তেই থাকবে। এই বিদ্বেষ ক্রমাগতই ছড়িয়ে পড়বে।
বাঙ্গালী বড়ই আবেগপ্রবন বোকা জাতি। কোন একটা কিছু হইলেই হইলো আগ-পিছ না ভেবে ধুমায়া সেইদিকে চলে। আবেগকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বিবেককে জলাঞ্জলী দেয়। আর এই আবেগটা যেমণ হুট করেই আসে তখন সবকিছু ভেঙ্গে চুড়ে ফেলে আবার ঠিক তেমনই হুট করেই মরে যায় এবং নির্লিপ্ত হয়ে যায়! সেইরকম আবেগপ্রবন একজন আমাকে ফেইসবুক থেকে আনফ্রেন্ড করেছেন আমি ইসলামকে নিয়ে এইরকম কথাবার্তা বলেছি বলে। তার সমস্ত আবেগ এখন রাজাকারের ফাঁসি নিয়ে। তার সমস্ত চেতনা এখন ইসলামীদলের রাজনৈতিক পদচারনা বন্ধ করা নিয়ে। তিনি আমাকে "শু*রের বাচ্চা" বলে গালি দিতেও দ্বিধাবোধ করেননি। তার প্রতি আমার রাগ হয়নি। করুণা হয়েছে... হায়রে অভাগা আবেগপ্রবন জাতি আমার...
একটু চোখ খুলুন, একটু জানুন, নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন...
আমার শিশু বড় হবে হুজুরদের ঘৃণা করে... তাকে আমি কখনো হুজুর দিয়ে কুরআন পড়ানো শিখাতে পারবো না... তাকে আমি কখনো হুজুরদের পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়াতে পারবো না... কারণ সে বড় হবে একটা পোশাকের প্রতি তীব্র ঘৃণা নিয়ে! একটা জাতির প্রতি তীব্র বিদ্বেষ নিয়ে। আমার হৃদয় শংকিত হয়ে যাচ্ছে।
রাজাকারের ফাঁসির দাবী নিয়ে ইসলামকে বলি দেয়া হচ্ছে কী?
ভেবে দেখবেন কি আপনারা?
সংগৃহীত,কিন্তু আমি এর সাথে সম্পুর্ন একমত
বিষয়: বিবিধ
১৩১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন