জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ হচ্ছে আগামী ২০১৪ সালের সাধারন নির্বাচনের পূর্বেই এবং বাকি থাকে যেটুকু!!
লিখেছেন লিখেছেন ক্ষেপনাস্ত্র ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১১:৪২:৫১ রাত
শুরুতেই বলে নিচ্ছি পর্যায়ক্রমে কি ঘটতে যাচ্ছে বা ঘটতে পারেঃ
১) উষ্কানিমূলক খবর প্রকাশের দায়ে ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হতে পারে জামায়াতপন্থী গণমাধ্যমগুলোকে।
২) জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হতে পারে আগামী ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের ঠিক পূর্বমূহুর্তে।
৩) রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হতে পারে বেগম খালেদা জিয়াকে অথবা তার চাইতেও ভয়ানক ঘটনাও ঘটানো হতে পারে।
৪) সরকারের বিশেষ সংস্থার মাধ্যমে অর্থ দিয়ে, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে বিএনপি কে কয়েকটি অংশে বিভক্ত করা হবে ও সেই বিভক্ত অংশগুলোকে পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহনে বাধ্য করা হবে।
৫) অবশিষ্ট ডানপন্থী গণমাধ্যম গুলোকে রাষ্ট্রদ্রোহীতামূলক কার্যকলাপের অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হতে পারে।
৬) রাজনৈতিক সহিংসতায় সরকার বিরোধী বেশকিছু প্রতিবাদী মানুষকে হত্যা ও গুম করা হতে পারে এবং বাকিদের গ্রেফতার করে রাখা হতে পারে।
৭) লোক দেখানো একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং আওয়ামীলীগ সেই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরীষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়ে পূনরায় ক্ষমতায় বসতে পারে।
৮) এরশাদের জাতীয় পার্টিকে প্রধান বিরোধীদলের ভূমিকায় অবতীর্ন করা হতে পারে।
৯) জামায়াতের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হতে পারে।
১০) দূর্নীতির মামলার ভয় দিখিয়ে জিয়া পরিবারকে বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা হতে পারে।
১১) পুনরায় অবশিষ্ট প্রতিবাদী মানুষগুলোকে খুঁজে খুঁজে হত্যা ও গুম করে ফেলা হতে পারে।
১২) দেশে স্থায়ীভাবে একদলীয় শাসন কায়েম করা হতে পারে অথবা ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ।
এবার আসুন জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ প্রসঙ্গেঃ
বৃটেন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি বাংলা বিভাগের হেড অফ সার্ভিস জনাব সাবির মোস্তাফার কিছু কার্যকলাপ পর্যালোচনা করছি।
ঘটনা ১) ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পর ১৯৯৯ সালের দিকে "বিবিসি" বাংলাবিভাগ একটি জরিপ পরিচালনা করে "হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী কে"? দেশ মাতিয়ে, দীর্ঘদিন ধরে এই জরিপ পরিচালনা করে বিবিসি বাংলাবিভাগ। যা বিবিসি'র রেডিও অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়। কিভাবে জরিপ পরিচালনা করা হলো তা আদৌ আমার বোধগম্য নয়। সর্বশেষ ফলাফল কি? শেখ মুজিবুর রহমান-কেই নির্বাচিত করা হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী। যার ফসল গিয়ে ওঠে আওয়ামীলীগ এর ঘরে।
ঘটনা ২) ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত "বিবিসি" বাংলা বিভাগ ১৫৩ পর্বের একটি সংলাপ অনুষ্ঠান পরিচালনা করে যার নাম "বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপ"। যা চ্যানেল আই'তে প্রচারিত হতো। সেই সংলাপ অনুষ্ঠানের মূল বিষয় ছিল স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার। আমি নিজে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছি কয়েকবার প্রশ্ন করার জন্য। কিন্তু দেখলাম ওই অনুষ্ঠানে যাদেরকে দোষারূপ করা হচ্ছে তাদের পক্ষে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করতে দেওয়া হয়নি, এমনকি তাদের পক্ষের কোন প্রতিনিধিকেও বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপ অনুষ্ঠানে কখোনো অতিথি হিসেবে উপস্থিত করা হয়নি।
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পূর্বেই সকলের কাছ থেকে নির্ধারিত ফরমে প্রশ্ন লিখে নেওয়া হতো, তারপর সেখান থেকে কর্তৃপক্ষের পছন্দ মোতাবেক প্রশ্ন বাছাই করে নেওয়া হতো, তারপর তাদের নাম ধরে ডেকে নেওয়া হতো রুদ্ধদার একটি কক্ষে, সেখানে তাদেরকে ৩০ মিনিটের একটি ট্রেনিং দেওয়া হতো। এরপর বাছাইকৃতদের বিভিন্ন স্থানে বসতে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হতো। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর দেখতাম যাদেরকে বাছাই করা হয়েছিল ও নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল, শুধু তাদেরকেই প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হলো। অন্যরা বোকার মতো বসে বসে শুধু তত্বের কচকচানি শুনতে থাকল।
দীর্ঘদিন এই অনুষ্ঠান পরিচালনা শেষে দেখা যায় বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী তৈরী হয়ে গেছে (যা পূর্বে ছিল না) এবং এর একটি বিচার করার প্রয়োজনীয়তা তারা তুলে ধরে। ফলাফল? বর্তমানে আওয়ামীলীগ সেই যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী, রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করে টিকে আছে।
ঘটনা ৩) ২০১২ সালের নভেম্বর মাস হতে পুনরায় "বিবিসি" বাংলাবিভাগ "বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপ" নামে একটি সংলাপ অনুষ্ঠান পরিচালনা করছে, যা চলবে আগামী সাধারণ নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত (সুত্র)। যা গতবারের মতো এবারও চ্যানেল আই'তে প্রচারিত হচ্ছে। যার মূল বিষয়বস্তু জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ প্রসঙ্গ।
এখানেও আমি উপস্থিত হয়েছি প্রশ্ন করার জন্য, কিন্তু এখানেও সেই পূর্বের মতো অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পূর্বেই সকলের কাছ থেকে নির্ধারিত ফরমে প্রশ্ন লিখে নেওয়া হয়েছে, তারপর সেখান থেকে কর্তৃপক্ষের পছন্দ মোতাবেক প্রশ্ন বাছাই করে নেওয়া, তাদের নাম ধরে ডেকে নেওয়া, রুদ্ধদার কক্ষে ৩০ মিনিটের ট্রেনিং। এরপর বাছাইকৃতদের নির্দিষ্ট স্থানে বসানো, তাদেরকেই প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া এবং অন্যদের বোকার মতো বসে বসে তত্বের কচকচানি শুনা।
এতে আমরা এটাই নিশ্চিত হতে পারি "বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপ" একটি নাটকের মঞ্চ। বাম ও আওয়ামীলীগ রাজনীতিবিদরা বেশকিছুদিন থেকে জিকির তুলেছেন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে হবে। এদিকে "বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপ"ও শুরু হয়েছে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে।
প্রথমবারের সংলাপ অনুষ্ঠানের মূল বিষয় ছিল স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার এবং ফলাফলে দেখা যায় বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী তৈরী হয়ে গেছে (যা পূর্বে ছিল না) এবং এর একটি বিচার করতেই হবে। এবারের মূল বিষয়বস্তু জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে অন্যদিকে বাম ও আওয়ামীলীগের জিকির জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে হবে।
এবার বিবিসি, বাম ও আওয়ামীলীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মিল আপনারাই বুঝে নিন।
গত কিছুদিন থেকে অনেকেই প্রশ্ন করছেন "বিবিসি" বাংলা বিভাগ হঠাৎ করে আওয়ামীলীগ এর পক্ষে কথা বলছে কেন? কিন্তু আমি বলি আপনারা হঠাৎ করে দেখলেন কিভাবে? এটাতো গতানুগতিক ভাবেই করে যাচ্ছে "বিবিসি" বাংলা বিভাগ।
এবার আসুন জেনে নিই কিছু ভিতরের কথাঃ
বিবিসি বাংলা বিভাগের হেড অফ সার্ভিস জনাব সাবির মোস্তাফা তিনি ফেব্রুয়ারী ১৯৯১ থেকে জানুয়ারী ১৯৯৩ পর্যন্ত ডেইলি স্টার এর সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। ডেইলি স্টার পত্রিকাটি যে বাম ও আওয়ামীলীগ এর দালালী করে এটা আমরা কম-বেশী সকলেই জানি এবং সাবির মোস্তাফা'ও সেই বাম ঘেষা মানুষ। মাঝে ৫ বছর অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে পুনরায় ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯৯ সালের মার্চ পর্যন্ত ডেইলি স্টার এর সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। এরপরপরই ১৯৯৯ সালের মার্চ মাস থেকেই বিবিসি বাংলাবিভাগের হেড অফ বাংলা সার্ভিস হিসেবে যোগদান করেন। পদন্নোতির ধারায় বর্তমানে তিনি বিবিসির হেড অফ সার্ভিস হিসেবে কর্মরত আছেন এবং সফলভাবে বাংলাদেশের বাম ও আওয়ামীলীগকে মিডিয়া'র মাধ্যমে সাহায্য সহযোগীতা করে চলেছেন। সাবির মোস্তাফা যে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর পক্ষে কাজ করছেন তার একটা নমুনা দেখুনঃ তিনি ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ তার টুইটারে লিখেছেন "Police in #Bangladesh detain Rajshahi city #Jamaat chief with firearms."
তিনি কি টুইটারে খবর প্রচার করেছেন নাকি তার মতামত প্রকাশ করেছেন। খবর প্রচারের জন্য তার বিবিসি রয়েছে, টুইটার নয়। তাছাড়া তিনি যে বিষয়টি টুইটারে লিখেছেন (জামায়াত নেতা আতাউর রহমান অস্ত্র সহ ধরা পড়েছেন), সেই বিষয়টিও সম্পূর্ন মিথ্যা একটি সংবাদ। সাবির মোস্তাফা সম্পর্কে এই বিশ্লেষন কি প্রমান করে না তিনি কোন উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছেন?
এখন বর্তমান পরিস্থিতি দেখুনঃ
১) তথ্যমন্ত্রী প্রতিদিনই বলছেন উষ্কানিমূলক খবর প্রকাশ করলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন গণমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে।
২) বাম ও আওয়ামীলীগ নেতারা প্রতিদিনই বলছেন জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। সেই সাথে সাবির মোস্তফার বিবিসিও জনমত তৈরীর জন্য সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।
হতে পারে আমার বিশ্লেষণ ভুল, তবে ঠিক এখনই যদি জামায়াত, বিএনপি ও অনান্য বিরোধী দল ঘটনা বুঝতে না পারে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তবে খুব সম্ভবত ঘটনা এমনই ঘটতে পারে। বাকি ঘটনাগুলো তো ভবিষ্যত। আপনারাই ভেবে দেখুন কি ঘটতে যাচ্ছে।
বিষয়: রাজনীতি
১৫০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন