যথার্থই বললেন আসাদুজ্জামান নূর, সিদ্ধান্ত এখন আমাদের...

লিখেছেন লিখেছেন শফিউর রহমান ২৬ জুন, ২০১৪, ০৬:০৫:৩৬ সন্ধ্যা

কৃষ্টি বা কালচারই একটি জাতির পরিচয় বহন করে। কালচারকেই সম্ভবত বাংলায় সাংস্কৃতি বলে। একটা জাতিকে ধ্বংস করতে হলে তার পরিচয় মুছে দেয়ার মতো বড় হাতিয়ার আর হতে পারে না।

সংস্কৃতি বলতে কিন্তু শুধুমাত্র কিছু গান-বাজনা, অভিনয় বা নর্তন-কুর্দনকে বুঝাই না। জাতীর পুরা কর্ম-কান্ডকেই সেই জাতির সংস্কৃতি বলে। এমনকি সেটা এলাকাভিত্তিক আলাদাও হতে পারে একটি দেশে। যদিও বিভিন্ন এলাকার মানুষ আলাদা আলাদ সংকৃতি ধারণ করলেও এক জাতি হিসাবে পরিচয়ে কোন বাধা নাই। এমনকি একই এলাকায় বসবাসকারী ভিন্ন ভিন্ন ধর্মবলম্বীদের কৃষ্টি বা সংস্কৃতি কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিল এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আলাদা হতে পারে।

মোটকথা, মানুষের সার্বিক জীবনধারাই হলো, সংস্কৃতি। আসাদুজ্জামান নূর সেই সংস্কৃতিই বদলে দেবার কথা বলেছেন। বাংলাদেশের মানুষ কি মুসলমান, কি হিন্দু সবাই ধার্মীক। ধর্মকে তারা তাদের জীবনের অংশ হিসাবেই জানে এবং মানে। আসাদুজ্জামান নূর তাদের জীবন থেকে তাদেরই জীবনের একটি অংশকে আলাদা করার কথা বলেছেন। তার কথার মর্ম হলো, ধর্মকে তাদের জীবন থেকে সরিয়ে দিতে হবে এবং সেখানে নিয়ে আসতে হবে তথাকথিত সংস্কৃতিক পরিবর্তন, যা নিয়ে আসাদুজ্জামানরা ছোট থেকে বড় হয়েছে এবং বার্ধক্যের দিকেও যাচ্ছেন।

মানুষ যা শেখে তাই বলে বা করে - সেটাই স্বাভাবিক। তার রাজনীতির মূলমন্ত্র ছিল, "ধর্মের ধ্বংসস্তুপের উপর সমাজতন্ত্র কায়েম করতে হবে"। অর্থাৎ তাদের রাজনীতির মূল শত্রুই হলো ধর্ম - তা সে যে ধর্মই হোক। এই মূলমন্ত্রের উপরে রাজনীতি করতে করতে যখন হতাশা এসে এদের মনে বাসা বাঁধে এবং জাগতিক সফলতার আহ্বান আসে তখন তারা তাদের মূলমন্ত্রকে আস্তিনের নীচে লুকিয়ে ধর্মভীরু মানুষের সাথে মিশে যাবার চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ নামের বর্ণচোরা দলের সাথে। জনগণের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা তাদের আস্তিনের নীচে লুকানো মূলমন্ত্র ভোলে না। তাদের উদ্দেশ্যই হলো, সেটার বাস্তবায়ন। আর সুযোগমতো সেটার প্রয়োগ শুর করে দেয় বা দেয়ার ঘোষণা দেয়। আসাদুজ্জামান নূরও সেটাই বললেন। তিনি বললেন, "[i]বিএনপি-জামায়াত জোট ধর্মান্ধতার খেলায় মত্ত। এই খেলা বন্ধ করে জনগণকে সচেতন করতে সাংস্কৃতিক বিপ্লব দরকার। যতবেশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে, ধর্মান্ধতা তত বেশি দূরে যাবে।[/i]"

জ্বি, তিনি যথার্থই বলেছেন। মানুষে মন থেকে যদি ধর্মীয় ভাবধারাগুলোকে মুছে দিয়ে সেখানে গান-বাজনার মতো শয়তানী কর্মকান্ডকে জায়গা করিয়ে দেয়া যায়। বলিউডের মতো নাটক-সিনেমা দিয়ে ধর্মীয় উদ্দীপনাকে তাড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে তারা তাদের উদ্দেশ্যের দিকে সহজেই এগিয়ে যেতে পারে।

এখন ভাবার বিষয় আমাদের, যারা তাদের জীবন ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতির সাথে পরিচালনা করতে চায়। দুইটার জায়গা যে এক সাথে হবে না সেটা মন্ত্রী মহোদয় কিন্তু বলেই দিয়েছেন। তাই সিদ্ধান্ত আমাদের - আমরা কোনটাকে গ্রহণ করবো এবং কোনটাকে বর্জন করবো। সিদ্ধান্ত আমাদের - আমরা আমাদেরকে আমাদের জায়গায় রাখবো, নাকি আসাদুজ্জামানদের উদ্দেশ্যকে বিজয়ী হতে দেবো আমাদের উপর। আমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা আমাদের দেশে রংধনুর মিসিলকে আরো বাড়তে দেবো, নাকি আমরা বা আমাদের সন্তানদেরকে তাদের সাথে বিলীন হয়ে যেতে দেবো।

বিষয়: রাজনীতি

১৫০৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

239157
২৬ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৭
মাজহার১৩ লিখেছেন : আমাদের সংবিধানের মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের পরিবর্তে ধর্মনিরপেক্ষতাকে স্থলাভিসিক্ত করা হয়েছে সেখানে ধর্মকে বিসর্জন রংধনু ওয়ালারা সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাবে এটাই স্বাভাবিক।
আসাদের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বিরুদ্ধে আপনার কোন বিপ্লব আছে কি?
২৬ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৪
185623
শফিউর রহমান লিখেছেন : ঠিক বলেছেন, যদি আমরা গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে চলি। আমরা যদি আমাদেরকে বাাঁচাতে চাই তবে প্রথমে ঘরে ঘরে বিপ্লব শুরু করতে হবে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে না বলতে হবে। আর এটাই হবে আমার আপনার বিপ্লবের প্রথম সোপান। এর পরেরটা? প্রথমটাই কতটুকু শক্ত হতে পারলাম তার উপর নির্ভর করবে।
ধন্যবাদ।
239170
২৬ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৮
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : সংস্কৃতি পারে একটি সমাজকে সুন্দর করে সাজাতে যে দেশের সংস্কৃতি ভালো সে দেশ ও ভালো। এখন আমাদের কে ও সুষ্ট সংস্কৃতিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসাদুজ্জামানদের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে হবে। ধন্যবাদ
২৬ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৭
185625
শফিউর রহমান লিখেছেন : জ্বি, সেটাই আমাদের চেষ্টা করা দরকার, যারা আমরা আমাদের সাংস্কৃতিকে ভালবাসি। তারা কিন্তু এর পিছনে যথেষ্ট কাজ করছে এবং দীর্ঘদিন থেকে, যখন আমরা অঘোরে ঘুমাচ্ছিলাম। আমাদেরকে ঘুম থেকে জেগে উঠতে হবে এবং তাদের চাইতেও বেশী কাজ করে যেতে হবে।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
239220
২৬ জুন ২০১৪ রাত ০৯:৫৭
মনসুর লিখেছেন : শিক্ষা এবং শিষ্টাচার বিষয়দুটি একে অন্যের উপর নির্ভরশীল, শিক্ষা শেখায় শিষ্টাচার কি ও কেন দরকার, আবার শিষ্টাচার ইতিবাচকভাবে উদ্বুদ্ধ করে সুশিক্ষার জন্য - ফলে সুন্দর-সুস্থ্য মানব জীবনের জন্য দুটিরই প্রয়োজন|
সুশিক্ষা ও নৈতিকতার চর্চা মানব সমাজের দুটি ইতিবাচক উপাদান, এর বিপরীতে কুশিক্ষা, অনৈতিকতা, দূর্নীতির অবাধ প্রসারে সাধারণ মানুষ ভুলে গেছে তাদের কল্যানমূখী প্রকৃত সংষ্কৃতি। ফলে কুজনেরা তৈরী করছে অকল্যানমূখী অবাস্তব অপসংষ্কৃতি। সুস্থ্য সংষ্কৃতির স্বাভাবিক চর্চা আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরেই অনুপস্থিত। আমরা বিজাতীয় সংষ্কৃতির অন্ধ-অনুকরণ বা কখোনো বিকৃত অনুকরণ করা শিখেছি আর আমাদের নিজস্ব সংষ্কৃতিকে ঘৃনা করেছি কখোনো অপ-ধর্মের নামে, কখোনো নষ্ট-রাজনীতির নামে কিন্তু আপন সংষ্কৃতির উন্নয়নে চেষ্টা করিনাই। চেষ্টা করবোই বা কিভাবে দূর্নীতি আর সৎ-উন্নয়ন কখনো এক সাথে হয় না।
২৭ জুন ২০১৪ রাত ০৯:১৩
185821
শফিউর রহমান লিখেছেন : ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। বরং বলা যায় যে কথাগুলো আমার লেখনীতে আসে নি সেগুলোই আপনি সুন্দর করে তুলে ধরলেন।
ভাবা উচিত আমাদের কি করণীয় এবং তা বাস্তবায়নে চেষ্টা অতীব জরুরী হয়ে গেছে।
269601
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১২
298087
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:১৩
শফিউর রহমান লিখেছেন : Thanks for this valuable site link.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File