মাহমুদুর রহমানের ট্রাম্প কার্ড এবং দুটি কথা
লিখেছেন লিখেছেন শফিউর রহমান ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:০৩:২৭ দুপুর
জনাব মাহমুদুর রহমানের সাহসী ভূমিকা সুস্পষ্ট লেখনী বর্তমান সরকার এবং তাদের দোসরদের অগণতান্ত্রিক আচরণের বিপরীতে এক বলিষ্ঠ ভুমিকা হিসাবে সাধারণ জনগণের কাছে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। যারই ফলে সরকার এবং তাদের দোসররা তার বিরুদ্ধে সব সময়ই সজাগ। আমরা যারা সহজ সরল জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখি, সত্যকে পক্ষপাতমুক্তভাবে সমর্থন করি তাদের জন্য অনেকটা আবেগের স্থান হিসাবে প্রতিভাত হয়েছেন তিনি।
আমার দেশের আজরেক সংখ্যায় ট্রাম্প কার্ড শিরোনামে একটা বিশ্লেষণধর্মী লেখা এসেছে, যার প্রচার হচ্ছিল কাল থেকে। লেখাটা পড়লাম এবং বরাবরের মতোই বেশ ভাল লাগলো তার সত্য কথনের সাবলিল ভঙ্গিমায় ঘটনার গভীরতাকে সামনে নিয়ে এসেছেন। ধন্যবাদ তাকে তার বিশ্লেষণী চিন্তা এবং লেখার জন্য।
তার চিন্তা এবং জ্ঞানের গভীরতা সিঞ্চিত লেখার ব্যাপারে আমার মতো নগন্য একজনের কোন রকমের কিছু বলার থাকতে পারে তা বলতে এবং শুনতে নিতান্তই বেমানান লাগে তা বুঝার পরেও দুইটা ব্যাপারে যে আমার খটকা লেগেছে সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করবো তার প্রতি সম্মান রেখেই। আসলে খটকা দুইটা হলেও এখানে আমি একটার ব্যাপারেই সামান্য কিছু কথা বলব। দ্বিতীয় বিষয়টা অত্যান্ত ব্যাপক এবং ইতিহাসভিত্তিক বিধায় সেদিকে আলোকপাত করা থেকে বিরত থাকবো।
তিনি তার লেখনির একপর্যায়ে লিখেছেন, "রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর ঘোষিত সমাবেশের পূর্ব রাতে ডিএমপি কমিশনার বিএনপির যুগ্ম সেক্রেটারি জেনারেল রিজভী আহমেদের কাছে জামায়াতে ইসলামীর নেতা হামিদুর রহমান আযাদ এমপির টেলিফোন নম্বর জানতে চান। বিস্ময়ে হতবাক রিজভী সেদিন ঢাকার পুলিশ কর্তাকে শুধু তার অজ্ঞতার কথাই জানাতে পেরেছিলেন। বিএনপির সাহসী তরুণ নেতাটি তখনই সরকারের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগের বিষয়টি আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। আবদুল কাদের মোল্লার রায়ের ঠিক আগে সরকারের আচরণের এই অভাবনীয় পরিবর্তন কেবল হৃদয় পরিবর্তনের কারণে হয়েছে এমনটি ভেবে নেয়ার মতো নির্বোধ এ দেশে খুব বেশি নেই। রিজভী আহমেদ তার অফিস বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে আমার কুশল জানতে আমার দেশ অফিসে এলে গল্পটি তার কাছ থেকে সরাসরি শুনেছি। দুয়ে দুয়ে চার মিলালে কাদের মোল্লার দণ্ডাদেশ সরকার প্রধানের অগোচরে হয়েছে এই ধারণা একমাত্র অযৌক্তিক আওয়ামী দালাল ছাড়া কারও পক্ষে পোষণ করা অসম্ভব।"
তার এই অংশটা দেখে মনে হলো, মানুষ যতই জ্ঞানি হোক সে মানুষই, তার জ্ঞানের বা চিন্তার সীমাবদ্ধতা কোথাও না কোথাও প্রকাশ হয়েই যায়। আর সেই কারণেই মানুষ সৃষ্টি করে তাদেরকে পৃথিবীতে প্রেরণের পূর্বেই তার চলার পথপ্রদর্শক পাঠিয়েছিলেন পৃথিবীতে। অর্থাৎ মানুষ আসার আগেই এসেছে তার পথ- আল্লাহর পক্ষ থেকে। কারণ তিনি জানেন মানুষ তার সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে নিজে নিজে তার পথ খুঁজে নিতে গেলে সেটা হবে ভুলে ভরা এবং তা দিয়ে বিপর্যয় আসবে, শান্তি নয়।
মাহমুদুর রহমান সাহেব আলীগের রাজনীতিক চাল ধরতে কিভাবে ব্যার্থ হলেন তা ভেবে অবাক লাগছে। আবার অবাক এই জন্য লাগছে না যে, তিনিওতো মানুষই- অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়েই যাদের চলাচল।
রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর ঘোষিত সমাবেশের পূর্ব রাতে ডিএমপি কমিশনার বিএনপির যুগ্ম সেক্রেটারি জেনারেল রিজভী আহমেদের কাছে জামায়াতে ইসলামীর নেতা হামিদুর রহমান আযাদ এমপির টেলিফোন নম্বর জানতে চাওয়ায় রিজভী আহমেদ সাহেব অবাক হলেন, কিন্তু মাহমুদুর রহমান সাহেব যখন রিজভী আহমেদ সাহেবের কাছ থেকে সেটা শুনলেন তখন তিনি কেন অবাক হলেন না এই ভেবে যে, ডিএমপি কমিশনার রিজভী আহমেদের কাছে কেন হামিদুর রহমান আযাদের টেলিফোন নম্বর চাইতে গেলেন। সরকারের পুলিশ বিভাগ এবং গোয়েন্দা সংস্থা কি এতই দূর্বল যে, বর্তমান সময়ে জামায়াতের মূখপাত্র হিসাবে যিনি সামনে আসছেন, যিনি জামায়াতের ইসলামীর মাত্র দুইজন সংসদ সদস্যের একজন, যিনি আজকের সকল বড় বড় নেতৃবৃন্দকে কারাগারে বন্দি করার পরে তিনি মিসিল মিটিং ইত্যাদিতে নেতৃত্বে রয়েছেন তার টেলিফোন নম্বরটা পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার কাছে নাই? আর সেটা সংগ্রহের জন্য যেতে হবে ১৮ দলের নেতৃত্ব দানকারী দল বিএনপির যুগ্ম সেক্রেটারির কাছে। ঢাকা শহরে আর কাউকে পাওয়া গেল না, যার কাছ থেকে এটা সংগ্রহ করা যেতে পারে? যে দলটিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে আলাদা করার জন্য হেন কৌশল নাই যা সরকার গ্রহণ করেনি কিন্তু সফল হতে পারে নি সে দলের নেতৃত্ব পর্যায়ের একজনের টেলিফোন নম্বর অফিস বন্দী জোট প্রধান দলের সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে চাইতে গেলেই তিনি দিয়ে দেবেন এটা ভেবেই কি কমিশনার সাহেব তার কাছে গিয়েছিলেন বলে ধারণা করছেন সম্মানিত মাহমুদুর রহমান সাহেব এবং জনাব রিজভী আহমেদ সাহেব? কি আশ্চর্য! আমরা এতদিনেও কি বুঝতে পারি নি যে, প্রশাসন থেকে নিয়ে পুলিশ পর্যন্ত সমস্ত জায়গায়ই আলীগের প্রতিনিধিত্ব চলছে- ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়?
যে জিনিসটি আমাদের অফিসের টিবয় ধরে ফেলেছিল, আলীগ তেমন একটা সহজ পদ্ধতী প্রয়োগ করলো মাত্র। আর রিজভী আহমেদ, তথা বিএনপি এবং শেষ পর্যন্ত তার কথায় মাহমুদুর রহমানের মতো একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তিও বিভ্রান্ত হলেন!
আমাদের অফিসের চা সরবরাহকারী ছেলেটা এজন বাংলাদেশী। সামান্য বেতনের চাকরী। কানে সমস্যা থাকার ফলে কথা জোরে না বললে শুনতে পায় না। এতে আমাদের কিছুটা সমস্যায় পড়তে হলেও অফিসের বস তাকে (আমার ধারণমতে) দয়াপরবশ হয়ে এই দ্বায়িত্বে রেখে দিয়েছে। আমাদের অফিসে অল্প কিছু মানুষের পাশাপাশি অফিসটা যে ফ্যাক্টরীকেন্দ্রীক সেখানে প্রায় ২০০ এর মতো ওয়ার্কার কাজ করে। আমাদের বস তার প্রতি দয়ার আধিক্যে কিচেনের ফ্রিজ থেকে শুরু করে স্টোর রূমের একটা অংশও তাকে ব্যাবহারের অনুমতি সহকারে অফিসের স্টাফ এবং ফ্যাক্টরীর ওয়ার্কারদের কাছে প্যাকেট বিস্কিট এবং সফ্ট ড্রিংক বিক্রীর সুযোগ করে দিয়েছে। তো টিবয়ের কাছ থেকে আমাদের বসও মাঝে মাঝে বিস্কিট নিয়েই দুপুরের লান্সের কাজটা সেরে ফেলেন- যদিও আমাদের দুপুরে ভাত বা রুটি না খেলে হয় না, কিন্তু তার চলে যায় বিস্কিটেই। বাক-দুষ্টুরা বলে থাকে, যারা যত বেশী দ্বায়িতশীল এবং পয়সাওয়ালা হয় তারা তত কম লাঞ্চ করে।
যাই হোক, আমাদের ঐ টিবয় নামাজের আযানের সময় নিয়মিত আযানও দেয় মসজিদে- এটাও বসের অনেকটা নির্দেমের মতোই। তো কিছুদিন আগে একদিন সে এসে আমাকে বলছে, দেখেতো বসের কাণ্ডটা! আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি করলো বস? সে বলল, আজ দুপুরে বস আমার কাছ থেকে ১ রিয়াল দামের একটা বিস্কিটের প্যাকেট নিয়ে চায়ের সাথে দুপুরে লাঞ্চের কাজ সেরেছেন। টাকা তখন দেন নি। পরে বিকালে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে একামত দেয়ার আগে তিনি আমাকে একশ রিয়ালের একটা নোট আমার হাতে। সবাই দেখলো যে তিনি আমাকে ১০০ রিয়ালের একটা নোট আমাকে দিল। আমিতো জানি কি জন্য তিনি আমাকে সেটা দিলেন। কি ভাবল সবাই? সবার কথা হলো, বস আমাকে আযান দেয়ার কারণে রিয়াল দিল এবং সব সময়ই এরকম দেয়। কিন্তু আমি তা তাদের কাছ থেকে লুকাই। সবাইকে আমি কিভাবে বুঝাই? আমিতো ঠিকই নামাজের পরে অফিসে এসে তাকে ৯৯ রিয়াল ফেরত দিলাম- সেটাতো কেউ দেখল না আমি আর বস ছাড়া। সে বলল, বসের এই রাজনীতিটা করার কি দরকার ছিল?
আমার কথা হলো, বসের হয়তো রাজনীতি করার দরকার ছিল না। বা বস আদৌতে রাজনীতি করার জন্য করেই নাই। টাকার কথা মনে পড়েছে, তাকেও সামনে পেয়েছে তাকে টাকাটা পরিশোধ করে দিয়েছে। কিন্তু রাজনীতিতো চলে আসলো ঠিকই সেখানে।
ডি এমপি কমিশনার কিন্তু না বুঝে রিজভী আহমেদের কাছে হামিদুর রহমান আযাদ সাহেবের ফোন নম্বর চাইতে যায় নি। এবং এটাও বলা যায় যে, তিনি তার নিজেস্ব সিদ্ধান্তেও যান নি। গিয়েছেন আলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে। এবং তারা সফল। রিজভী আহমেদসহ পুরা বিএনপিকে বোকা বানাতে পারল এক টেলিফোন নম্বর চেয়ে। এমনটি আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় প্রাজ্ঞ মাহমুদুর রহমানকেও বিভ্রান্ত করতে পারল।
রায় ঘোষণার পূর্বে পুলিশ জামায়াতের মিসিলে আগের মতো হামলা না করা, আব্দুল কাদের মোল্লার রায়ে ফাঁসির আদেশ না দিয়ে যাবজ্জীবন দেয়া, রিজভী আহমেদের কাছে হামিদুর রহমান আযাদের টেলিফোন নম্বর চাইতে যাওয়া, শাহবাগে নাস্তিমঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা সবটাই পরিকল্পিত- কোনটাই কাকতালীয় নয় এটুকুন বঝতো আমাদের জ্ঞান ক্ষুদ্র হলেও বুঝতে পারা উচিত। পাশাপাশি স্কাইপ কথপোকথন যদি স্মরণ থাকে সেটাকেও সামনে রাখলে বুঝতে আরো সহজ হয়ে যায়। সেখানে স্পষ্ট করে বলা ছিল কি তাদের টার্গেট। কাদের মোল্লা যে তাদের আসল টার্গেট নয় সেটা সেখানে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ রয়েছে। এটাকে একটা না্টক হিসাবে নেয়া হবে সেটাও সেখানে উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকে নি। এত কিছুর পরেও আমাদের ব্রেন আমাদেরকে কিভাবে ধোকা দিল?
আসলে এই ধোকা দেয়ার কাজটা করেছে অবিশ্বাষ। কেউ যদি তার বউকে অবিশ্বাষ করে তবে তার মোবাইলে মোবাইল কোম্পানীর কোন সর্ট ম্যাসেজ আসলেও সেটা দেখার আগেই কত কিছু ধারণা করতে শুরু করে। বিএনপি জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধভাবে ভোট ঠিকই করেছে তাদের নিজেদের প্রয়োজনে। তাদের যদি এই সন্দেহ না থাকতো যে, জামায়াতের ভোটগুলো যদি তাদের থেকে ভাগাভাগি হয়ে গেলে তারা ক্ষমতায় আসার মতো সীটে জয়ী হতে পারবে না সংসদ ইলেকশনে তাহলে হলফ করে বলা যায় তারা কোন দিনই জামায়াতের সাথে জোট করতো না। আলীগ জামায়াতকে ভয় করে, তাদেরকে পরাভূত করার চেষ্টা করে, তাদেরকে শেষ করে দিতে চাই তাদের ক্ষমতার টানাপোড়নের আসংকায়, কিন্তু অবিশ্বাষ করে না। কারণ তারা জানে এরা যা বলে তাই করে- বেঈমানী করে না। আর বিএনপি তাই মনে করে যা আলীগ মনে করে, শুধু একটা ছাড়া। সেটা হলো, এরা যে কোন মূহুর্তে বেঈমানী করতে পারে- এদের থেকে রাজনৈতিক ফায়দা যতটা পার হাসিল করো, কিন্তু বিশ্বাষ কোরো না। বন্ধু এবং সত্রু উভয় অবস্থায়ই বিএনপির উপর নির্ভর করা বোকামী। কারণ তারা নিজেরাই নিজেদেরকে বিশ্বাষ করে না।
বিষয়: বিবিধ
২১৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন