বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে শাহবাগ প্রজন্মকে, এক শিবির প্রজন্মের খোলা চিঠি !!! পর্ব -১
লিখেছেন লিখেছেন চারুকলাইনষ্টিটিউট ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৫:২৯:৪১ সকাল
শাহবাগ চত্ব্বরের বন্ধু ,(ভাই ও বোন)
ভালোবাসা দিবসে হৃদয় উজাড় করা সত্য শুভ্র একরাশ রজনীগন্ধার ঢালি নিয়ে আজ আমি তোমার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছি।
শুরুতেই যদি তুমি আমার পুরো পরিচয় জেনে যাও তাহলে হয়তোবা আমার এই রজনীগন্ধার স্টিক গুলোকে তোমার কাছে শত্রু পক্ষের ধনুকের তীরের মতই মনে হবে, আর এর সুঘ্রাণ হয়ত তোমার পাকস্থলীতে ভাগার গন্ধের প্রতিক্রিয়া তৈরী করবে।কিন্তু বাস্তব সত্য হলো রজনীগন্ধা ও এর সুঘ্রাণ এর কোনটাই কিন্তু মিথ্যে নয়। বরং প্রতিক্রিয়াটা ই কেবল আমরা নিজেদের জন্যে নিজেরাই বেছে নিই।
সে যাই হোক ,
আমি ২১ । ঠিক তোমার মতো এ দেশেরই এক মায়ের গর্ভে আমার ও জন্ম হয়েছে। তোমার মতোই এদেশের মাটি আলো বাতাশ ও গায়ে মেখে আমিও বেড়ে উঠেছি। একজন মানুষ হিসাবে এবং এ দেশেরই একটি সন্তান হিসাবে।
তুমি যেমন প্রজন্মের সন্তান আমিও ঠিক অনুরুপ।
কিন্তু আদর্শিক দীক্ষা আর চেতনার ভিন্নতায় দুজন আজ দুই বিপরীত মোহনায় দাড়িয়ে ---
দুজনেরই দাবী আমরা আন্দোলন করছি....
একজন বলছি- মুক্তি চাই , মুক্তি চাই।
অন্যজন বলছি বলছি- ফাঁসি চাই , ফাঁসি চাই।
নিয়তির কি নির্মম পরিহাস একই প্রজন্মের সন্তান অথচ কি সীমাহীন বৈপরিত্য !
আর আমাদের পারস্পরিক আন্দোলনের ধরণেরই বা কি বিচিত্র পার্থক্য দেখ----
তুমি স্লোগান মুখরিত করছ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা নিঃশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে পরিবেষ্টিত হয়ে ,
আর আমি সংগ্রাম করছি উত্তপ্ত পিচঢালা রাজপথে টিয়ার সেলের কলো ধোয়ায়।
তুমি সংগ্রাম করছ কুসুম কোমল গাধা ফুলের পাপড়ি হাতে
আর আমি সংগ্রাম করছি তিন কোন বিশিষ্ট ইটের টুকরো হাতে।
তোমাদের পায়ে পায়ে বাজছে নৃত্য-নূপুরের ঝংকা
আর আমাদের পায়ের জন্য ফাঁদ পেতে আছে ডান্ডা-বেরী ঢংকা
তোমার গলায় দুলছে গাধা ফুলের মালা
আর আমার সামনে ঝুলছে কারাবাসের হাত কড়া
তোমার অংগন আলোকিত হয় বিদ্যুত বিভাগের হাজার পাওয়ারের আলোর বাতি দিয়ে
আর আমার পথ নিমিষেই অন্ধকারে ছেয়েযায় ,টিয়ার শেলের নিকষ কালো আধারে
তোমার কর্ণকুহর প্রতি নিয়ত অনুরণিত হয় বাদ্যযন্ত্র আর সুর সংগীতের মূর্ছনায়
আর আমার কর্ণকুহর প্রতি মুহুর্তের কেঁপে উঠে , বুলেট-বোমা ফায়ারের মৃত্যুসম গগন বিদারী শব্দের স্তব্ধতায়
তোমাকে ফেমাস করতে তোমার দিকে সর্বদা তাক করা থাকে চিত্র মিডিয়ার বড়বড় ক্যামেরা
আর আমায় স্তব্দ করে দিতে আমার দিকে সর্বদা তাক করা আছে পিস্তল, শর্টগান ,এম -১৬ একে ৪৭ ,সহ ট্যাংক সাঁজোয়া ।
তুমি সংগ্রাম কর রংতুলি দিয়ে আল্পনা রাংগিয়ে
আর আমি সংগ্রাম করি রাংগাই আমার শুভ্র পোষাক , বুলেটের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত শরীরের লাল রক্ত দিয়ে।
সিটি কর্পোরেশন ,ওয়াসা সহ সকল বড়বড় সেবা প্রতিষ্ঠান গুলো যখন তোমার সেবায় দিন রাত নিয়োজিত
তখন রক্তে ভেজা আশংকাজনক আমার দেহ টির জন্যও জোটেনা এইটুকু স্বাস্থ্যসেবা,
ক্লিনিকের দ্বারটিও করে রেখেছে আজ অবরুদ্ধ
তুমি সংগ্রামে বেড়িয়ে পর উত্সব মুখর হয়ে বাসন্তি রংগের শাড়ি আর ফতোয়া পাঞ্জাবি পড়ে
আর আমি পা বাড়াই শাহাদাতের তামান্না নিয়ে হৃদয় কে সাদা কাফনের কাপড়ে আবৃত করে
তোমার নিরাপত্তায় রাষ্ট্রীয় বিশেষ বাহিনী রাখে তোমায় সর্বদা ঘিরে
আর আমার জীবন কেড়ে নিতে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে ফিরছে আমায়
বিশেষ প্রশিক্ষিত ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত রাষ্ট্রীয় নেকড়ে
তোমার জন্যে আরো আছে ডিবি, 'র' ডিজিআইএফ সহ দেশী বিদেশি নানান সংস্থার লোকবল।
আর আমার উপর হামলে পরতে অলিগলিতে উত্ পেতে আছে
দেশী অস্ত্র আর পিস্তল হাতে ক্ষমতাশীন রক্ত পিপাসু হায়েনার দল
তুমি শাহবাগের পানে পা বাড়াও মনোরঞ্জন আর উল্লাসের চেতনা ব্রত হয়ে
আর আমি শাহদাতের এই রাজপথে পা বাড়াই এই ভেবে,
আজই যেন প্রাণ সংহার করে রেখে দেবে ওরা আমায়, ফিরব না আর এই ঘরে
যাক পার্থক্য সে যাই থাক-
বলছিলাম তোমার বিশ্বাসের বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে তোমার দোয়ারে এসে দাঁড়িয়েছি। আজ আমার জন্যে তোমার অফুরন্ত ভালোবাসা থেকে এক ফুটা ভালোবাসা কি মিলবে বন্ধু!
যদি মিলে অন্তত সেটুকু ভালোবাসার বিনিময়ে হলেও কিছু সময়ের জন্যে নিজেদের বিবেকের সকল দরজা জানালা গুলো খুলে দিয়ে উদার চিত্তে আমরা কি পারি না এই বিভাজিত একই প্রজন্মের বিভাজ্য রেখাকে ছাপিয়ে
একটু মেলবন্ধনের যোগসূত্রকে তালাশ করতে?
তুমি বলছিলে ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই ।
ঠিক আছে আমি তোমার আবেগকে কোন ভাবেই অসম্মান করতে চাই না ।
কিন্তু তার আগে কি দয়া করে আমায় বলবে তোমার এই ফাঁসি চাওয়ার মধ্যদিয়ে -
তুমি, যেই মানুষটিকে খুন করে দুনিয়া থেকে একেবারে শেষ করে দেয়ার কথা বলছ বার বার সেই লোকটির উপর আনীত ৪০ বছর পূর্বের অভিযোগ গুলোর সত্যতার বিষয়ে তুমি ব্যাক্তিগতভাবে কতটুকু নিশ্চিত-
যদি তুমি ১০০% নিশ্চিত হও
তাহলে তুমি শাস্তি চাইতেই পার । আর শাস্তি চাওয়াটাই তখন মানবিকতার দাবী। আর সেজন্য আমি তোমাকে সেলুট জানাই। তখন শুধু তোমাকে অনুপ্রাণিতই করতে চাই না বরং তোমার মতো (নিশ্চয়তার ভিত্তিতে)- একজন মানুষ হিসাবে আমিও তোমার কাতারে দাড়িয়ে অন্যায়ের প্রতিকার চাই , অপরাধের শাস্তির দাবিতে স্বেচ্চার হতে চাই।
কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে যদি তুমি শতভাগ নিশ্চিত না হও -
তাহলে প্রমাণ অনিশ্চিত অভিযোগের ভিত্তিতে মানুষ হয়ে একজন মানুষের মত্যু তুমি চাইতে পারলে ?? এটা তুমি কামনা করতে পারলে?? ভিকটিম যখন বলছে আমি নির্দোষ, আর তুমি নিজেও যেখানে নিশ্চিত নও সেখানে তার দোষ প্রমাণ হওয়া পর্যন্ত কি তুমি অপেক্ষা করবে না? ??
প্লিজ তোমার বিবেক কি বলে ?! সিভিল নাগরিক হিসাবে ব্যক্তিগত ভাবে কারো অভিযোগ প্রমাণের ক্ষমতা হয় তো তোমার নেই। বা এটা তোমার দায়িত্ব ও নয়, তবে কি এটা তোমার দায়িত্ব যে অভিযুক্তের অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার তোয়াক্কা না করে শাস্তির দাবিতে চিত্কার চেচামেচি করা !!!
বন্ধু মনে রেখ , তোমার অদেখা আপরাধে অভিযু্ক্ত ব্যক্তির অপরাধের বিষয়ে তদন্ত করে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা বা অপরাধ বা নিরপরাধ সাব্যস্ত করার দাযিত্ব সিভিল ব্যাক্তি হিসাবে যেমন তোমার উপরে বর্তায় না অনুরুপ অনিশ্চিত অভিযোগে অভিযুক্তের বিষয়ে সিভিল নাগরিক হিসাবে তোমার তাকে অপরাধী মনে করার এবং শাস্তি কামনা করার ও কোন অধিকার থাকতে পারে না ।
তাহলে অভিযোগ সত্য মিত্যা প্রমাণ বা নির্ধারণ করার দায়িত্ব কার ? বিচারকের !। অভিযুক্ত তো অভিযোগ এবং তথ্য প্রমাণসহ বিচারকের মূখমোখি ই আজ দাড়িয়ে । সে তো প্রশাসনের হাতের মোঠই আছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে তো আর চলে যাচ্ছেনা।
আর সরকারও তার নিজের মতো নিজস্ব প্রসিকিউশন দিয়ে নিজস্ব ট্রাইবুনালে বিশেষ একটি আইনি প্রণালীতে বিচার করে বিচার প্রক্রিয়া একেবারে প্রায় শেষে প্রান্তে নিয়ে এসেছে
অপরদিকে অভিযুক্ত এবং তার অনুসারীরা ফেয়ার জাস্টিসের মখোমুখি হতেও কখনো কোন রকম অনিহা প্রকাশ করেনি।উপরন্তু তারা সরকারের নিজস্ব ইচ্ছার আদলে গঠিত ট্রাইবুনাল কে মেনে নিয়ে যথাসাধ্য আইনি লড়াই ও চালিয়েছে ।
এতকিছুর পরেও শেষ মূহুর্তে এসে বিচারকের রায়ঘোষণা করার ঠিক আগ মূহুর্তে তোমরা কেন বাইরে থেকে একটি সুনির্দিষ্ট রায় চাপিয়ে দেয়ার জন্যে এরকম উঠে পরে লেগেছ ।
যেখানে সরকার তোমাদের প্রসিকিউশন তোমাদের ট্রাইবুনাল তোমাদের বিচার প্রক্রিয়া ও তোমাদের
সেখানে বাইরে থেকে রায় নির্ধারণ করে দেয়ার কেন প্রয়োজন বোধ করছ ।
এভাবে কি কখনো বুঝার চেষ্টা করেছ ? নাকি না বুঝেই শুধু বলছ -
ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই ।
আর ফাঁসি চাই ই বা বলছ কিসের ভিত্তিতে ?একজন বিচারাধীন মানুষের আভিযোগ নিশ্চিতভাবে প্রমাণ হওয়া পূর্বেই কি করে নিশ্চিত হলে যে সে ফাঁসি যোগ্য অপরাধ করেছে। তার আভিযোগ প্রমাণিত হলেও সেটা ফাঁসি যোগ্য অপরাধ না ও তো হতে পারে।
তোমাদের বিবেক কি একেবারে অন্ধ হয়ে গেছে ?? মাথা কি কোন ভাবেই কাজ করছেনা ??
দিন রাত একাকার করে একজন মানূষের মৃত্য চাইছো, অথচ একবার ও কি বুঝার চেষ্টা করেছ তোমার এই চাওয়ার আবেগী আন্দোলনের নেপথ্যে মূল উত্স কোথায় ?? ,হাতড়িয়ে দেখার চেষ্টা করেছ কখনো???
নাকি তাও না করে সেই থেকে চিলের পেছনে ছুটেই চলছ --
- চলবে
==================================================
একজন বিবেকহীন মানবতা বিরোধী নরপশু বা মানবতার জঘন্যতম দুশমনই কেবল একজন বিচারাধীন মানুষের আভিযোগ নিশ্চিতভাবে প্রমাণ হওয়া না হওয়ার তোয়াক্কা না করে ফাঁসির আবদার তুলতে পারে..............
বিষয়: বিবিধ
৩২০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন