একজন সালাহউদ্দিন কাদের ও বিএনপির বিস্ময় এবং মৃত্যুদন্ডের ভবিষ্যত
লিখেছেন লিখেছেন ডোসট ৩১ জুলাই, ২০১৫, ০২:৫৫:৪৫ রাত
শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ:বিএনপি হতাশ, বেদনাহত এবং বিস্মিত। কেন? উত্তর হলো তাদের একজন সর্বোচ্চ পরিষদ স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যকে হাসিনা ওয়াজেদের অবৈধ সরকারের ক্যারিশমায় বিচারিক হত্যার পর্ব চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাই বিএনপি বিস্মিত। কিন্তু তারা ক্ষুব্ধ নয়। কেন নয়? তারা নিজেরাও তা জানে না। জানে কি? ভেবে দেখুন। বিএনপির এই অথর্ব ও অক্ষম অবস্থান ভবিষ্যতে যে আরো বিএনপির জায়ান্ট ও বাঘা নেতাদের মৃত্যুদন্ড দেয়ার পথকে প্রশস্ত করবে না তার গ্যারান্টি কে দেবে? সামনে কি বিএনপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতাকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার মত মামলা হাসিনা গংদের হাতে নেই? তখন আল্লাহ না করুন এমন কিছু একই ভাবে হলে নেতা কর্মীরা কি একইভাবে জবাব দেবেন? ভোরের সূর্য দেখেই কিন্তু দিনের হালচাল বোঝা যায়। বিএনপির ভেতরে মেধাহীন চাটুকারদের কারণে বিএনপির সমালোচনাকে বিএনপির প্রতি শত্রুতা হিসেবে ধরা হচ্ছে। যে কারণে জাতীয়তাবাদের পক্ষের লেখক সাংবাদিকরা রয়েছেন নিশ্চুপ। আর এতে বিএনপি ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে তার নিজের ভুলগুলো। যে ভুলগুলোর উপর জমা হচ্ছে প্রতিনিয়ত ভুলের পাহাড়। তারপরেও লির্লজ্জভাবেই আজকের লেখাটি লিখলাম।
মৃত্যুদন্ড পাওয়া বিএনপির নেতা একসময়ের মন্ত্রী, তাকে বাংলাদেশের অন্যতম তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান বলা হয়; সেই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পিতা ছিলেন অখন্ড পাকিস্তানের পার্লামেন্টের স্পীকার এমনকি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিও। তার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর নাম শোনেন নাই বা জানেন না এমন ব্যক্তি অন্তত রাজনীতির লোক নয়। চট্টগ্রামের উন্নয়নে ফজলুল কাদের চৌধুরীর অবদান যারা অস্বীকার করে তারা কোন মানুষের পর্যায়ের প্রাণী নয়। মরহুম শেখ মুজিবর রহমানের উন্নয়ন ও পরিবার চালানোয় তাঁর অবধান অনেকেই জানেন না।
সেই ফজলুল কাদের চৌধুরীর সন্তান যিনি আপন যোগ্যতায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুসলমানদের জন্য গড়ে নিয়েছিলেন একটি নিজের একটি আসন, সেই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী আজ শুনলেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের নিকৃস্টতম রায় ”মৃত্যুদন্ড বহাল” আর বিস্মিত হয়ে বেদনায় আহত হয়ে হতাশা জানালো বিএনপি। কিন্তু বিএনপি কেন বিস্মিত হলো তা আমার বোধগম্য হলো না। একসময় নিজের নেতা কর্মীদের ধরে ধরে লাগাতার ক্রসফায়ারে হত্যা করা বিএনপি আজ হাসিনা গং কর্তৃক সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীদের মারার চূড়ান্ত আয়োজন করছে দেখে ক্ষুব্ধ না হওয়াই স্বাভাবিক বলে যদি কেউ কেউ মনে করেন সেটি কি অস্বাভাবিক হবে ? নাকি রাজনীতিতে কেউ যাতে স্বমহিমায় গড়ে উঠতে না পারে; হাসিনার মত তেমনি একই সামন্তরাল চিন্তাকে ধারণ শুরু করেছে বিএনপি নেতৃত্ব?
অনেকদিন লিখি না। ভেবেছিলাম দেশের অর্থনীতি ও হাসিনা গংদের দম্ভের উৎস নিয়ে লিখবো। কিন্তু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রতি তার দল বিএনপির আচরণ দেখে আমি নিজেই বিস্মিত হয়ে গেলাম; কিন্তু আশ্চর্য হই নাই ; যেমন আশ্চর্য হয় নাই লাখ লাখ বিএনপির নেতা কর্মীরা। এই একটি আচরনই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কেন বিএনপির জন্য আন্দোলনে নেতারা দুরে সরে ছিল? সবাই কি নিজেকে বাঁচাতে দুরে ছিল? নাকি আসলেই ভেতরে ভিন্ন কিছু রয়েছে? বিএনপির নেতা কর্মী হলে আপনিই বুকে হাত রেখে বলুন বিএনপির জন্য আপনি কি নিজের জীবন বাজি রাখবেন?
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে একসময় বিএনপির জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতো যে নেতা কর্মীরা তারা আজ জীবন বাজী রাখতে চায় না কেন? বিএনপি নেতৃত্ব কি কখনো তা অনুধাবনের চেষ্টা করেছেন? নাকি নেতৃত্বের চারপাশে পরগাছা, দাগ খতিয়ান বিহীন প্রানীদের চাটুকারিতায় বিমুগ্ধ হয়ে খোয়াবে মশগুল হয়ে আছেন? একবারও কি নেতারা হিসেব করেছেন জেনারেল জিয়াউর রহমানের বিএনপি আর আজকের বিএনপির পার্থক্য কোথায়? কেন আপনারা জিয়ার কাজগুলোকে এগিয়ে নেয়া তো দুরের কথা, ধরেও রাখতেই পারেন নি? কেন মেধাবী মানুষের পরিবর্তে চাটুকার আর মেধাহীন লোকজনে ভরে যাচ্ছে চারপাশ? হটিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের যাদের অবদানে গড়ে উঠেছিল জাতীয়তাবাদী প্ল্যাটফর্ম যারা ধরে রেখেছে এই পর্যন্ত জিয়ার আদর্শকে। তাহলে এরা করা যারা জিয়ার দলকে জিয়ার আদর্শ ও কর্মসূচির বাইরে নিয়ে যাচ্ছে?
বিএনপির ভবিষ্যত বিএনপিই নির্ধারণ করবে তাদের কর্মের ভেতর দিয়ে। প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এ থেকে কারুর নিস্তার নেই। তা আল্লাহকে বাদ দিয়ে দিল্লিকে প্রভু মানলেও নিস্তার পাওয়া যাবে না।
সাকা চৌধুরীর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর অর্থায়নে ও পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী জাতির পিতা শেখ মুজিবর রহমান গড়ে উঠেছিলেন। মুসলিম লীগের নেতাদের মধ্যে রেষারেষির ফাঁকে শেখ মুজিব ফজলুল কাদের চৌধুরীর সাইডে ভিড়ে যান সেদিন। শেখ মুজিবর রহমান সেদিন মুসলিম লীগই করতেন কংগ্রেস নয়। গোপালগঞ্জের বিখ্যাত নেতা পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী এবং আজকে যেটি বাংলাদেশ ব্যাংক সেটির সেই আমলের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ওয়াহিদুজ্জামান ঠান্ডা মিয়ার সাথে রাজনৈতিক ঠান্ডা লড়াইয়ে ঘি ঢালতেন শেখ মুজিবর রহমান। আর সেই ফাঁকে আনুকুল্য নিতেন ধনাঢ্য ফজলুল কাদের চৌধুরীর। রাজনীতি করার খরচ নেয়ার সাথে সাথে পরিবার চালানোর টাকা পয়সা এবং পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থানকালীন সময়ে ফজলুল যাদের চৌধুরীর বাসায়ই থাকতেন শেখ মুজিবর রহমান। এগুলো আজকেও যারা পুরনো রাজনীতিক বা সাংবাদিক জীবিত আছেন তাদের অজানা নয়। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও ফজলুল কাদের চৌধুরী শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে অর্থ সাহায্য অব্যাহত রেখেছিলেন। সেই সময়ে প্রতিমাসে ২৫ হাজার রুপি করে পুরো যুদ্ধের সময়ে এই সহযোগিতা দিতেন বলে জানা যায়। সেই ফজলুল কাদের চৌধুরীর অর্থানুকুল্যে যে মুজিব পরিবার বেড়ে উঠেছে সেই পরিবারের সরাসরি বেনিফিসিয়ারী সন্তান মিসেস হাসিনা ওয়াজেদ; তার হাতেই আজ ফজলুল কাদের চৌধুরীর সন্তান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী সংহার হচ্ছেন আর বিএনপি তা হতাশ হয়ে দেখছে। আফসোস।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানে দেখেছেন। এর চাক্ষুস স্বাক্ষী বর্তমানে হাইকোর্টের বিচারপতি শামিম হাসনাইন, যিনি স্বাক্ষী দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু হাসিনার বানানো আদালত আর প্রসিকিউশনের কারণে তা ব্যর্থ হয়। এরপর হিয়ারসে (শোনা কথা) এভিডেন্সের উপর ভিত্তি করে ভারতের নীল নকশা মোতাবেক সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে এই হত্যা প্রক্রিয়া হলো বাংলাদেশকে মুসলিম জাতিসত্বার অস্তিত্বকে ধংস করে দেয়ার অংশ; এটি ওপেন সিক্রেট। কিন্তু বিএনপির এই প্রতিক্রিয়ায় প্রশ্ন জাগে বর্তমান বিএনপিও কি ভারতের এই নীল্ নকশা বাস্তবায়নকে মৌন সম্মতি দিয়েছে? যদি না দেয় তবে তার প্রকাশ কোথায়? সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী যদি অপরাধীই হবেন তবে বিএনপির সংবিধান মোতাবেক একজন সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীকে যেভাবে বহিস্কার করার কথা তা করা হয়নি কেন?
এর পাশাপাশি প্রশ্ন জাগে জেনারেল জিয়াউর রহমান যাদের নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে জাতীয়তাবাদ এগিয়ে নিয়েছিলেন সেই অবস্থান কি ভুল ছিল? জিয়াউর রহমান সেই মানুষগুলোকে (যেমন শাহ আজিজুর রহমান, আব্দুর রহমান বিশ্বাসসহ অনেকেই) নিয়ে যে দল গড়েছিলেন তা কি তাঁর ভুল পদক্ষেপ ছিল? যদি ভুল হয় তবে সেই ব্যাখ্যাও বর্তমান বিএনপিকে দিতে হবে। আর পরিস্কার করতে হবে বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান। যেনতেন ভাবে বা ভারতের আনুকুল্য নিয়ে ক্ষমতায় গেলেই জেনারেল জিয়ার আদর্শ বা কর্মকে জিইয়ে রাখা যে যাবে না এটা হলফ করে যে কেউ বলে দিতে পারে। আর বাংলাদেশীদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা হাসিনা গংদের মতই সম্ভব হবে না।
বর্তমানের নেতা কর্মী ও আগামীর নেতা কর্মীরারা বিএনপিকে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশপ্রেমিক মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও জেনারেল জিয়াউর রহমানের নিরলস পরিশ্রমের ফসল হিসেবে একইভাবে জনগনের সমর্থনে এগিয়ে নিয়ে যাবে কিনা তা আজ প্রশ্নবোধক হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইলিয়াস আলীর বিষয়ে বিএনপির অবস্থানের ব্যাখ্যা পরিস্কার হওয়া এবং বিএনপির দেয়া নিজ নেতা কর্মীদের ক্রসফায়ারগুলোর জবাবের মধ্যেই এর উত্তর নিহিত।
সেই গল্পটি সংক্ষিপ্ত করে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি ”একে একে নাৎসীরা সবাইকে মারলো আমি কোন প্রতিবাদ করি নাই। কিন্তু যখন তারা আমাকে মারতে আসলো তখন প্রতিবাদ করার আর কেউ নেই।” বিএনপির নেতারা এটি অনুধাবন করলে তাদের লাভতো হবেই জাতিরও উপকার হবে অনেকখানি।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একে একে নাৎসীরা সবাইকে মারলো আমি কোন প্রতিবাদ করি নাই। কিন্তু যখন তারা আমাকে মারতে আসলো তখন প্রতিবাদ করার আর কেউ নেই।
কে আছে এ থেকে শিক্ষা নেয়ার?
অনেক ধন্যবাদ
তবে দুষ্ট লোকে বলে- যে আল্লা ইহকালে পেয়ারা বান্দার ফাঁসি রোধ করতে পারেন্না তিনি পরকালে মানকচু ছাড়া আর দিবেন।
তবে দুষ্ট লোকে বলে- যে আল্লা ইহকালে পেয়ারা বান্দার ফাঁসি রোধ করতে পারেন্না তিনি পরকালে মানকচু ছাড়া আর দিবেন।
অন্তত চট্টগ্রাম বি্এনপি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন