গণহত্যা বন্ধ না হলে বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হবে

লিখেছেন লিখেছেন ডোসট ০৭ মার্চ, ২০১৩, ০৪:৩৩:৩১ রাত

অ্যাসোসিয়েশন অব ইসলামিক টিচার্স ইউকে’র উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ টুওয়ার্ড এ সিভিল ওয়ার : আওয়ার রেসপনসিবিলিটি’ শীর্ষক এক সেমিনার গত ৫ মার্চ পূর্ব লন্ডনের ওয়াটার লিলি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিকে অত্যন্ত ভয়াবহ উল্লেখ করে বলেন, ব্লগিংয়ের নামে একশ্রেণীর যুবকের আল্লাহ এবং রাসুল (সা.)-কে চরম অসম্মান প্রদর্শন, ইসলাম এবং আলেম-ওলামার প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো বিশ্বের ইসলামপ্রিয় মানুষকে চরম আহত করেছে। বক্তারা ইসলামবিদ্বেষী ওইসব কার্যক্রমে প্রকাশ্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, সরকার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রে আল্লাহ এবং রাসুল (সা.)-কে অবমাননাকারীদের যেভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছে সেটা তাদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামাকে হয়রানি করা হচ্ছে উল্লেখ করে সেমিনারে বক্তারা বলেন, পৃথিবীর যে কোনো রাষ্ট্রেই যুদ্ধাপরাধের বিচার হওয়া জরুরি। আর ওই বিচার সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য জাতিসংঘের অধীনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। কিন্তু আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ নাম দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা হচ্ছে আর সেখানে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামাদের অপরাধী সাব্যস্ত করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। বক্তারা আল্লামা সাঈদীর ফাঁসির রায় প্রসঙ্গে বলেন, আল্লামা সাঈদী বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী থেকে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পবিত্র কোরআনের তাফসির করার মাধ্যমে দ্বীন ইসলামের প্রচারে নিবেদিতভাবে কাজ করছেন। এত দীর্ঘ সময়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন কোনো অপরাধের সঙ্গে মাওলানা সাঈদী জড়িত ছিলেন সে অভিযোগ কেউ করল না, অথচ সরকার সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করে জনপ্রিয় এই আলেমেদ্বীনকে ফাঁসি দিতে চায়। বক্তারা ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে অমানবিক, জুলুম উল্লেখ করে বলেন, আল্লামা সাঈদীর মামলা এবং বিচারের যাবতীয় কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যুদ্ধাপরাধ দূরে থাক, সাঈদী মুক্তিযুদ্ধকালে ন্যূনতম অপরাধ করেননি। বরং সরকার তার জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়ে তাকে এ মামলায় জড়িয়ে প্রাণনাশের অপচেষ্টা করছে।

অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শিক্ষাবিদ মাওলানা হেলাল উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হাই’র পরিচালনায় সেমিনারে শিক্ষাবিদ, ইসলামী চিন্তাবিদ, আইনজীবী, মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সেমিনারে বক্তাদের আলোচনা শুনতে প্রায় দুই হাজার সাধারণ দর্শকের সমাগম ঘটে।

সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন জমিয়তে উলামা ইউরোপের চেয়ারম্যান আল্লামা মুফতি শাহ ছদর উদ্দিন, ইউরোপিয়ান শরিয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, ইসলামী চিন্তাবিদ ও ভাষ্যকার ড. শায়খ সুয়েব হাসান, ইসলামী চিন্তাবিদ ড. হাইতাম আল হাদ্দাদ, এমসিবি’র সেক্রেটারি ফারুক মুরাদ, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মাওলানা আবদুল কাদির সালেহ, বিশিষ্ট ইসলামী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিবিদ আজমল মছরুর, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজির আহমদ, ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম, বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন মাওলানা মওদুদ হাসান, বিশিষ্ট সাংবাদিক কেএম আবু তাহের, বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা আবদুল্লাহ ফালিক, বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন মাওলানা শামছুদ্দোহা মোহাম্মদ, এআইটি’র ট্রেজারার মাওলানা আবুল হাছানাত চৌধুরী, প্রেস সেক্রেটারি মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ, এআইটি’র অন্যতম নেতা মাওলানা শাহ মিজানুল হক প্রমুখ।

ব্রিটেনসহ ইউরোপের খ্যাতিমান আলোচকরা তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অবস্থা, ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার চক্রের তত্পরতা, সরকারের অবস্থান, গণহত্যা, আল্লামা সাঈদীসহ অন্য ইসলামী নেতাদের ওপর যুদ্ধাপরাধের মামলা দিয়ে নিপীড়নের বিষয়ে মুক্ত আলোচনা করেন। বক্তারা আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ফাঁসির আদেশকে চরম মিথ্যা উল্লেখ করে বলেন, যে মামলায় তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে ওই খুনের অভিযোগে ’৭২ সালে দায়েরকৃত মামলা এবং তদন্ত প্রতিবেদনে তার নাম-নিশানা পর্যন্ত ছিল না। অথচ ওই খুনের মামলায় তাকে জড়িয়ে ফাঁসির আদেশই প্রমাণ করেছে, সরকারের উদ্দেশ্য সাঈদীকে হত্যা করা। বক্তারা যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে ‘স্কাইপ’ কেলেঙ্কারির বর্ণনা দিয়ে বলেন, ওই ঘটনার পরও কীভাবে ট্রাইব্যুনালকে সরকার বাতিল না করে বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে সেটা বোধগম্য নয়। চলমান বিচার কার্যক্রমকে বক্তারা ‘গায়ের জোর’ চালানো হচ্ছে বলে এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মুফতি শাহ ছদর উদ্দিন বাংলাদেশের চলমান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বর গণহত্যার কবলে এখন বাংলাদেশ। সরকার মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে আল্লামা সাঈদীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে আর এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষের বুকে গুলি করছে নির্বিচারে। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, এ গণহত্যার বিচারের জন্য আপনারা প্রস্তুত থাকুন। এর বিচার হবেই। মুফতি শাহ ছদর উদ্দিন আমার দেশ পত্রিকা ও এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের প্রশংসা করে বলেন, তিনি আমাদের হৃদয়কে জাগিয়েছেন। আল্লাহ ও রাসুল (সা.) এবং ইসলামের শত্রুদের চিহ্নিত করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিশ্বের মুসলমানরা যতদিন থাকবে ততদিন মাহমুদুর রহমানের সততা, সত্যবাদিতা, সাহসিকতা এবং ইসলামের প্রতি তার ভালোবাসার কথা মনে রাখবে। মাহমুদুর রহমান এখন শুধুই এক ব্যক্তি নন, তিনি এ যুগের সত্যিকারের মুজাহিদ এবং একুশ শতকের শেরে বাংলা।

ইউরোপিয়ান শরিয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ ড. সোয়েব হাসান বলেন, বাংলাদেশে ইসলাম, আল্লাহ এবং রাসুল (সা.)-কে নিয়ে নাস্তিক পরিচয়ধারীরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যে কার্যক্রম চালাচ্ছে সেটা চরম ঘৃণিত। তিনি বলেন, অবস্থা সেখানে এমন পর্যায়ে যে, শুধু ইসলামী সংগঠনের নেতা এবং যারাই ইসলামের সৌন্দর্যের পক্ষে কথা বলেন তাদের অপরাধী বানানো যেন একশ্রেণীর মানুষের কর্মে পরিণত হয়েছে। ড. সোয়েব হাসান যুদ্ধাপরাধের নিচার প্রসঙ্গে বলেন, ওই ট্রাইব্যুনাল আল্লামা সাঈদীসহ ইসলামী সংগঠনের নেতাদের হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা এ বিচারকে চরম অস্বচ্ছ এবং মিথ্যাচার মনে করি। তিনি বলেন, জুলুম করে ইসলাম ও মুসলমানদের ঠেকানো সম্ভব হয়নি আর ইতিহাস সেটাই বলে।

ড. হাইতাম আল হাদ্দাদ বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যে জঘন্য মিথ্যাচার করা হচ্ছে সেটা কল্পনার বাইরে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পৃথিবীর কোনো দেশে রাসুলের বিরুদ্ধে, আল্লাহর বিরুদ্ধে, ধর্মের বিরুদ্ধে কেউ কাজ করতে পারে সেটা এশিয়ার ওই দেশটি প্রমাণ করল। তিনি বলেন, যারা ইসলামের পক্ষে যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছেন, বাংলাদেশে তাদের অপরাধী বানানোর ঘৃণ্য পাঁয়তারা করা হচ্ছে। ড. হাদ্দাদ আল্লামা সাঈদীর মুক্তি দাবি করে বলেন, সাঈদীর মতো আলেমকে সরকার হয়রানি করে নিজেদের ভাগ্যটাকে খারাপ করে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বে তারা মূলত অপরাধী।

বিষয়: বিবিধ

১০৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File