ঢাকা ভার্সিটিতে সেদিন নামাজী মেয়েদেরকে নিয়ে কি ঘটেছিল ?
লিখেছেন লিখেছেন ডোসট ১৯ নভেম্বর, ২০১৪, ০৪:৫৭:০৭ বিকাল
গত ৩ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কি ঘটেছিল ? কিছু কিছু মিডিয়ায় প্রচার হয়েছিল সেদিন শামসুন্নাহার হলকর্তৃপক্ষ ও ছাত্রলীগ যৌথঅভিযান চালিয়ে নামাজি মেয়েদেরকে শিবির হিজবুত তাহরির ও জংগি সাজিয়ে বহিস্কার করেছিল। কিন্তু সেদিন শামসুন্নাহার হলের ভিতর নামাজী মেয়েদের উপর যে ভয়ংকর লোমহর্ষক নির্যাতন চালানো হয়েছিল তার তথ্য কেউ জানতে পারেনি ।কেবলমাত্র নামাজ পড়া রোযা রাখা সাথে কোরআন , হাদিস ও ইসলামী বই রাখার অপরাধে সেদিন দেশের সর্বচ্চো বিদ্যাপিঠে পড়ুয়া মেয়েদের উপর চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। নামাজি মেয়ে গুলিরে সেদিন শুধু লাঠি রড দিয়ে পিঠানো হয়নি সাথে তাদেরকে ধরে উল্লাস করেন ছাত্রলীগের নেতারা । উল্লাস করতে করতে তারা বলতে থাকেন এই নামাজি পর্দাদারি মেয়েদের কে নাকি শাহবাগের জাগরন মঞ্চে নিয়ে বিচার করলে শহিদ মুক্তিযুদ্ধাদের আত্ত্বা শান্তি পাবে । সেদিন আরো কত নারকীয় লজ্জাজনক কান্ড ঘঠেছিল তার পুরোপুরি জানার উপায় নেই । সেদিনের নির্মমতা থেকে দু,একজন মেয়ে কৌশলে জিন্সপ্যান্ট ও টি-শার্ট পরে মেইকাপ করে পালিয়ে গিয়েছিল । সেই পালিয়ে রক্ষা পাওয়া এক ভাগ্যহত শিক্ষার্থীর লেখা থেকে পাওয়া যায় কিছু ভয়ংকর তথ্য। এস নাজিফা নামক একটি ফেইসবুক আইডিতে একটি নোটের মাধমে তুলে ধরেছেন সেদিনের ভয়াবহতা। পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল সেই লেখার কিছু অংশ ।
হুবহু সেই ফেইসবুক নোট ঃ
ফেরাউনের সরাইখানা(শামসুন্নাহার হল,ঢাবি)থেকে ফিরে।
গত ৩ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে ছাত্রলীগ এবং কর্তৃপক্ষের যৌথঅভিযানের পর পালিয়ে আসা এবং কিছু কথা।
“ ২ তারিখ রাত থেকেই হলে ছাত্রলীগের activities ছিল চোখে পড়বার মত।পরদিন আশুরা উপলক্ষে রোজা রাখবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল অনেকেই।সেহরীর পর আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছিলাম।হঠাৎ ৮:৩০ এ কেউ একজন কল করে জানালেন ছাত্রলীগের মেয়েরা হলের নামাজরুম থেকে তিনজন মেয়েকে আটক করেছে এবং প্রতিটি রুমে তল্লাসী চালিয়ে কারও কাছে কুরআন শরীফ বা হাদীস বই আবার কাউকে শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে আটক করছে।মনে হল হাতুরি দিয়ে কলিজায় কেউ ঘা দিয়েছে।রুম থেকে বেরোতেই দেখি এলাহী কারবার।একাধিক group এ বিভক্ত হয়ে ছাত্রলীগ হাতে লাঠি-সোটা নিয়ে হলের বিভন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়েছে। যেভাবে পালাতে হল— কুরআন-হাদীস,ইসলামী বইপুস্তক রুমে রাখিনা।কিন্তু এটাও বুঝতে পারলাম অবস্থানগতভাবে ওদের ঘেরাও এর মাঝে রয়েছি এবং ল্যাপটপে থাকা সমস্ত ডকুমেন্ট মুছে ফেলবার আগেই ওরা আমায় ধরে ফেলবে।ধরা দেবার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাত্রি জাগরনের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লাম। একসময় কেউ একজন শুভাকাঙখী ধাক্কা দিয়ে আমায় ঘুম থেকে জাগিয়ে দিয়ে একসেট পোশাক হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল ,“দু’মিনিটে চেন্জ করে বেরিয়ে পর।সবগুলো ফ্লোরে ছাত্রলীগ লাঠি-সোটা আর ছুরি নিয়ে তোমাকেসহ কয়েকজনকে সকাল থেকে খুঁজছে”।সময় তখন দুপুর ৩:৪৫।খোঁজ নিয়ে জানলাম,আমাদের অধিকাংশ বোন-ই এতক্ষনে বেরিয়ে যেতে পেরেছেন,শুধুমাত্র আমিই ঘুমুচ্ছিলাম।প্রায় দশ মিনিট পর বাদ্ধবীর জিন্স-টিসার্ট পরে মেকাপ নিয়ে যখন লীগের ব্যাচমেট মেয়েদের সামনে দিয়েই আসছিলাম তখন দেখলাম ওদের বেপরোয়া মূর্তি, সবগুলো ফ্লোরে সিঁড়ির মাথায় সতর্ক পাহারা সেই সাথে হলের সবচেয়ে ভাল-ভদ্র,পর্দানশীল এবং সাধারন মেয়েগুলিকে আটক করে ওরা শিবির ধরবার উল্লাসে মেতে উঠেছে।
চোখবুজে কান্নাচেপে পালাবার সময় শুনলাম , ওরা বলছিল শাহবাগের মঞ্চে নিয়ে তাদের বিচা্র করবে।একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা নাকি তাতে শান্তি পাবে। শুনে আমার পা দুটো আর চলছিল না।একসময় ওদের থেকে নিরাপদ দুরত্বে এসে ওয়াশরুমে বোরখা পড়ে যখন হলগেটের কাছাকাছি পৌঁছলাম তখন দেখলাম গেটের ৫জন সিকুরিটি গার্ড একটা লিস্ট হাতে নিয়ে গেট দিয়ে বেরোবার সময় সবার আইডি কার্ড চেক করছে।বুঝতে পারছিলাম আইডি কার্ড চেক করার পর আমায় আটকে দেয়া হবে। ঘৃনায় মনটা বিষিয়ে উঠল। ওদের সামনে গিয়ে বললাম “দাদু,শিবিরের মেয়েরা নাকি এক্সটেনশন বিল্ডিং এ লীগের মেয়েদের হামলা করেছে(ছাত্রীসংস্থার মেয়েদের ওরা শিবির বলে)আপনারা কিছু জানেন না”?৫জন হাঁদাই আমার কথা বিশ্বাস করে মারামারি দেখবার জন্য হলের ভেতরের দিকে এগিয়ে গেলে আমি পেছন থেকে পালিয়ে আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে নিরাপদে বগুড়ায় ফিরলাম।এই দিনটির কথা সারা জীবনেও ভূলবার নয়।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন