ভারতীয় গবেষকের তথ্য : শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগ একাত্তরে স্বাধীনতা চাননি চেয়েছিলেন শিথিল কনফেডারেশন, স্বাধীনতা যুদ্ধে ইসরাইলও জড়িয়ে পড়েছিল
লিখেছেন লিখেছেন ডোসট ০২ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৪:৩০:৫০ বিকাল
শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। তারা চেয়েছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে একটি শিথিল কনফেডারেশন গঠনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর। তারা আশা করেছিলেন, এর মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বায়ত্তশাসন আদায় করা সম্ভব হবে। লন্ডনের কিংস কলেজের রিসার্চ ফেলো এবং সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের সিনিয়র ফেলো ভারতীয় গবেষক শ্রীনাথ রাঘবন এসব তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলও জড়িয়ে পড়েছিল।
ভারতের বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে রাঘবন একথা বলেছেন।
৩০ ডিসেম্বর ‘ইভেন ইন ১৯৭১, আওয়ামী লীগ
ওয়াজ নট স্টেটিং ইট ওয়ান্টেড ইন্ডিপেনডেন্ট (এমনকি ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগ বলেনি যে তারা স্বাধীনতা চায়)’ শিরোনামে সাক্ষাত্কারটি প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশের সৃষ্টি বিষয়ে তিনি একটি বইও লিখেছেন। এর নাম ‘১৯৭১ : এ গ্লোবাল হিস্ট্রি অব দ্যা ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ’।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার পুরো সাক্ষাত্কারটি প্রকাশ করা হলো :
সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে সাধারণ নির্বাচন আসন্ন হওয়ায় বাংলাদেশের ভবিষ্যত্ অনিশ্চিত বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ বিগত দিনের সহিংসতার মধ্যে নিহিত। লন্ডনের সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের সিনিয়র ফেলো ও কিংস কলেজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শ্রীনাথ রাঘবনের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদক অশীষ ইয়েচুরি। ‘১৯৭১ : এ গ্লোবাল হিস্ট্রি অব দ্যা ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের লেখক শ্রীনাথ বাংলাদেশ সৃষ্টির বিষয়টিকে বৈশ্বিক ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে বৈশ্বিক প্রভাব ছিল এবং ইসরাইলের সম্পৃক্ততার কথাও তিনি তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তার সাক্ষাত্কারটি হুবহু প্রকাশ করা হলো :
আপনার বই ‘১৯৭১ : বাংলাদেশ সৃষ্টির বৈশ্বিক ইতিহাস’ কেন বৈশ্বিক?
রাঘবন : বেশ, সাধারণভাবে বাংলাদেশ সৃষ্টির বিষয়টিকে দেখা হয় উপমহাদেশীয় ব্যাপার হিসেবে। প্রচলিতভাবে এটাকে দেখা হয় দ্বিতীয় দেশভাগ হিসেবে। এটা আমার কাছে খুব সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি মনে হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি আন্তর্জাতিক সেইসব পরিপ্রেক্ষিতকে বিবেচনায় নেয় না, যে পরিপ্রেক্ষিতের ফলে এটা সম্ভব হয়েছিল এবং ফলাফলটা নির্ধারিত হয়েছিল। এটা ছিল বৈশ্বিক ঘটনা—পক্ষগুলো ভেবেছিল তাদের বৈশ্বিক সমর্থন আদায় করতে হবে। এক অর্থে মাঠের যুদ্ধের সঙ্গে বৈশ্বিক মতামতের যুদ্ধের সম্মিলন ঘটেছিল। এসব ঘটনা (একাত্তরের) অনুধাবনের ক্ষেত্রে এটাই কেন্দ্রীয় বিষয়।
আপনি মনে করেন বাংলাদেশ সৃষ্টি অনিবার্য ছিল না; বরং আপনি এমন কিছু বিষয়ের কথা বলেছেন যা ‘১৯৭১’ তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখে। এটা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
রাঘবন : বাংলাদেশ সম্পর্কে নির্ধারণমূলক যে পাঠ প্রথমেই আমাদের সামনে আসে তা হলো, ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের ধারণা টেকসই ছিল না। যুক্তিটি ভৌগোলিক ব্যাপার নিয়ে—একই দেশের দুই অংশ ভারত দ্বারা ভাগ হয়ে রয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক বৈষম্য, বাঙালি ও পশ্চিম পাকিস্তানিদের এলিটদের সাংস্কৃতিক ভিন্নতা এবং দুই অংশের ক্ষমতা বিভাজনে একপেশে অবস্থার যুক্তিও আছে।
কিন্তু আমার যুক্তি হলো, স্বায়ত্তশাসনের দাবি কীভাবে স্বাধীনতার দাবিতে পরিণত হলো, সেটা বোঝার জন্য আসলে এসব প্রেক্ষাপটের দিকে নজর দেয়ার দরকার নেই। বিষয়টিকে দেখতে হবে বৃহত্তর পরিসরে।
আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি এমন যে, পাকিস্তান যদি অত কঠোরভাবে জবাব না দিত, তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশ হতো না?
রাঘবন : সেক্ষেত্রে একটা শিথিল কনফেডারেশন হতো, যা ১৯৭১ সালের মার্চের শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন। মার্চ পর্যন্ত আওয়ামী বলত না যে, তারা সরাসরি স্বাধীনতা চায়। তারা পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার সংবলিত একটি শিথিল কনফেডারেশন চেয়ে আসছিলেন।
ওই সময় আশা করা হচ্ছিল, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শিথিল কনফেডারেশন করা হবে এবং বাঙালিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে তারা অধিকতর ক্ষমতা পাবে; ন্যায্য হিস্যা পাবে।
কেন এটাকে ‘১৯৬৮ সালের চেতনার’ সঙ্গে সম্পর্কিত করছেন?
রাঘবন : আমার কাছে মনে হয়, ১৯৬৮ সালের ছাত্র আন্দোলন ছিল পাকিস্তানের ইতিহাসের বাঁক ঘুরিয়ে দেয়ার ঘটনা। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্য ও সম্পদ কুক্ষিগত করা সত্ত্বেও পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে ভালো করছিল এবং আইয়ুব খান ১০ বছর ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিলেন। তবে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্র আন্দোলন পরিবর্তনের সূচনা করে।
ছাত্র আন্দোলন তখন ছিল একটা বৈশ্বিক ঘটনা এবং আমি সিআইএ’র একটি নথির উদ্ধৃতি দিয়েছি, যেখানে তারা বলেছিল এটা বৈশ্বিক আন্দোলন। পাকিস্তানে এই ছাত্ররা ছিল ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্মের। শেখ মুজিবুর রহমান নিজেও ১৯৪০-এর দশকের একজন ছাত্রনেতা ছিলেন। ভিন্ন আশা নিয়ে তিনি পাকিস্তানের জন্য আন্দোলন করেছিলেন। এই উগ্রপন্থী ছাত্র আন্দোলন আওয়ামী লীগকে দরকষাকষিতে তাদের অবস্থান তুলনামূলক কঠোর রাখতে বাধ্য করেছিল।
এই সময়ের মধ্যে ইসরাইল জড়িয়ে পড়ছে বলে আপনি মন্তব্য করেছেন—একটু বিস্তারিত বলবেন?
রাঘবন : ভারতকে অস্ত্র সরবরাহের ইতিহাস ইসরাইলের আছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ১৯৬২ ও ১৯৬৫ সালে তারা কিছু অস্ত্র পাঠিয়েছিল। সুতরাং ইসরাইলের সঙ্গে ভারতের একটি গোপন সম্পর্ক ছিল। ১৯৭১ সালে অস্ত্র দেয়ার ব্যাপারে আমেরিকানরা জানে—এমন কোনো প্রমাণ নেই।
যেহেতু ওই সময় তারা নিজেদের মারাত্মক বিচ্ছিন্ন বোধ করছিল, সেহেতু ভারতের কাছে পূর্ণ কূটনৈতিক স্বীকৃতি পাওয়া ইসরাইলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা মনে করত, এটা তাদের জন্য সহায়ক
বিষয়: বিবিধ
১৭৬৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাথা সামান্য খাটালেই বুঝা যায় । গবেষক হওয়া লাগে না ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন