কাবীরা ও ছাগীরা গুনাহ সম্বন্ধে ইমাম বায়হাকীর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য।
লিখেছেন লিখেছেন বিভীষিকা ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০২:১৯:১৯ দুপুর
ডক্টর মাহফুজুর রহমান।
+++++++++++++++++
কাবীরা গুনাহ সম্পর্কে আল্লামা বায়হাকী তার শা’বুল ঈমান’ নামক গ্রন্থে অত্যন্ত তাৎপর্য পুর্ণ কিছু কথা বলেছেন। আমরা এখানে পাঠকদের সামনে তা উপস্থাপন করছিঃ-
তিনি বলেন,‘আমরা বলতে চাই কোন মানুষকে বিনা অধিকারে হত্যা করা একটি কাবীরা গুনাহ। হত্যাকৃত ব্যক্তিটি যদি হত্যাকারীর বাবা বা সন্তান বা কোন রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় হয়, অথবা কোন অনাত্মীয়কে হোরাম শরীফের এলাকার মধ্যে এহারামরত অবস্থায় হারাম মাসগুলোর মধ্যে হত্যা করা হয়, তাহলে তা হয় অত্যন্ত ঘৃণিত কাবীরা গুনাহ। আর কাউকে ঘুষি মারা, বা লাঠি দ্বারা একবার কিংবা দুইবার আঘাত করা ছাগীরা গুনাহ হিসিবে পরিগণিত হয়।
যেনা ব্যভিচার কাবীরা গুনাহ, যদি তা প্রতিবেশির স্ত্রীর সাথে করা হয় বা কোন মুহরিম নারীর সাথে করা হয়; অথবা এতদুভয়ের কারো সাথে না হয়; তবে তা রামযান মাসে কিংবা হেরম এলাকার অভ্যন্তরে করা হয়; তাহলে তা হয় আরো ঘৃনিত কাবীরা গুনাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
{ وَمَنْ يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ } [الحج: ২৫[
‘আর যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করে সেখানে (হেরামে) পাপকাজ করতে চায়, তাকে আমি যন্ত্রণাদায়ক আযাব আস্বাদন করাব’। [সূরা আল হজ্জ:২৫]
আর যদি ইসলামের শাস্তি বিধান আরোপিত হয় এমন যেনা না হয়ে যৌন উৎপীড়ন হয়, তাহলে তা ছাগীরা গুনাহ বলে পরিগণিত হয়। আর যদি তা বাবার সাথে করা হয়, বা ছেলের বউ এর সাথে করা হয়, কিংবা পরস্ত্রীকে জোর করে ধর্ষণ করা হয়; তাহলে তা কাবীরা গুনাহ হিসেবে পরিগণিত হয়।
কোন সতী নারীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া কাবীরা গুনাহ। আর যদি তা নিজের মায়ের বিরুদ্ধে বা বোনের বিরুদ্ধে দেয়া হয়, তাহলে তা হয় আরো ঘৃণিত কাবীরা গুনাহ। আর কোন ছোট মেয়ের বিরুদ্ধে বা কোন দাসীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া ছাগীরা গুনাহ।
তেমনিভাবে কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার, আত্মসাৎ করার, চুরি করার অভিযোগ করাও ছাগীরা গুনাহ।
জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করা কাবীরা গুনাহ। আর যদি পলায়নটি হয় একজন বা দুজন দুর্বল লোকের ভয়ে; আর পালায়নকারী হয় তাদের চেয়ে শক্তিশালী, অথবা অস্ত্রহীন দুজন যোদ্ধার আক্রমণের কারণে, আর সে থাকে সশস্ত্র; তাহলে তার পলায়ন হয় আরো বেশি ঘৃণিত কাবীরা গুনাহ।
মা বাবার নাফরমানী করা কাবীরা গুনাহ। যদি নাফরমানীর সাথে তাদেরকে গালাগাল করা হয়, বা মারদেয়া হয়, তাহলে তা হয় আরো বেশি ঘৃণিত কাবীরা গুনাহ। আর যদি মা-বাবার নাফরমানীটা তাদের আদেশ নিষেধ পালনে অসন্তুষ্টি বা তাদের মুখের সামনে ভ্রুকুঞ্চিত করে কিংবা নীরব থেকে তাদের প্রতি অবজ্ঞা করে করা হয়, তা হলে তা ছাগীরা গুনাহ বলে পরিগণিত হয়। আর যদি তাদের আদেশ নিষেধ এমন অসন্তুষ্টির সাথে পালন করা হয় যে, তাদের বুঝিয়ে দেয়া হয় যে, তারা যেন তাকে আর আদেশ-নিষেধ না করে; আর যদি আদেশ নিষেধ করে তাহলে তাদের ক্ষতি হবে, তাহলে তাও হয় কাবীরা গুনাহ।
চুরি করা কাবীরা গুনাহ; আর ডাকাতি করে কারো মাল নিয়ে নেয়া আরো বড় কাবীরা গুনাহ। একারণেই চোরের হাত (ইসলামী বিচার ব্যবস্থায়) কেটে দেয়া হয়, আর ডাকাতের হাত-পা ওলট-পালট করে কেটে দেয়া হয়। আর ডকাতি করতে গিয়ে মানুষ হত্যা করা আরো বড় কবীরা গুনাহ। একারনেই তাওবা করার আগে তাকে গ্রেফতার করা হলে সে ক্ষেত্রে তাকে রাষ্ট্রনায়ক ক্ষমা করলেও সে ক্ষমা র্কাযকর করা যায় না।
তুচ্ছ জিনিস চুরি করা ছাগীরা গুনাহ। এ রূপ তুচ্ছ জিনিস যদি এমন দরিদ্র্র ব্যক্তির কাছ থেকে চুরি করা হয় যার তা খুব প্রয়োজন; তাহলে তা হয় কাবীরা গুনাহ, যদিও এধরনের জিনিস চুরির কারণে চোরের উপর ইসলামী শাস্তিবিধান আরোপিত হয় না।
বিনা অধিকারে কারো সম্পদ আত্মসাৎ করা কাবীরা গুনাহ। আর যার সম্পদ আত্মসাৎ করা হয়েছে সে যদি দরিদ্র হয়; বা আত্মসাৎকারীর মা বাবা হয়, কিংবা জোর করে ছিনতাই করা হয়, তাহলে তা আরো ঘৃণিত কাবীরা গুনাহ।
তেমনি ভাবে জুয়া খেলার মাধ্যমে কারো সম্পদ আত্মসাৎ করা কাবীরা গুনাহ; আর যদি তুচ্ছ জিনিস আত্মসাৎ করা হয়, কিংবা যার কাছ থেকে আত্মসাৎ করা হয়েছে সে যদি এমন ধনী হয় যে, আত্মসাতের ফলে তার উপর এর কোন কুপ্রভাব পড়বে না; তা হলে তা ছাগীরা গুনাহ বলে পরিগণিত হয়।
মদ্যপান কাবীরা গুনাহ। আর যদি মদ্যপানকারী এ পরিমাণে পান করে যে, মাতাল হয়ে পড়ে, অথবা তা প্রকাশ্য পান করে; তাহলে তা আরো বড় কাবীরা গুনাহ। আর যদি মাদক দ্রব্যের সাথে পানি মিশিয়ে এমন করে পান করে যে, তার মাদকতা নষ্ট হয়ে মাতাল না হয়, তাহলে তা পানকরা ছাগীরা গুনাহ।
সালাত তরক করা কাবীরা গুনাহ। আর যদি সালাত তরকে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে তা হয় অরও বড় ঘৃনিত কাবীরা গুনাহ। আর যদি সালাত আদায় করে; কিন্ত খুশু-খুযুর সাথে আদায় না করে; তার যথাযথ হক আদায় না করে, বরং এ দিক সেদিক সালাতে তাকায়; কিংবা আঙ্গুলের মট ভাঙে, অথবা মানুষের কথা শুনে, অথবা সিজদার স্থানের পাথর সমান করে, কিংবা বিনা কারণে বেশি বেশি পাথর স্পর্শ করে, তাহলে তা কাবীরা গুনাহ। আর যদি তা অভ্যাসে পরিণত হয়; তাহলে তা আরো ঘৃনিত কাবীরা গুনাহ।
যদি বিনা ওযরে জামাত তরক করে; তবে তা হয় ছাগীরা গুনাহ। আর যদি তা অভ্যাসে পরিণত হয় এবং তা (ইসলামী) জমাত থেকে আলাদা ও পৃথক থাকার জন্য হয়, তাহলে তা হয় কাবীরা গুনাহ। আর যদি জামাত তরক করার জন্য গ্রামবাসী বা এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়; তাহলে তা হয় আরো বড় ঘৃনিত কাবীরা গুনাহ।
যাকাত না দেয়া কাবীরা গুনাহ, আর ভিক্ষুককে ফিরিয়ে দেয়া হলো ছাগীরা গুনাহ। আর যদি ফিরিয়ে দেয়ার সাথে বকাবকি করা হয়, বা ধমক দেয়া হয়, তাহলে তা কাবীরা গুনাহে পরিণত হয়।
তেমনি ভাবে যদি কোন গরিব ক্ষুধার্থ লোক কোন ধনী খাবারওয়ালার কাছে খাবার খাওয়ার সময় আসে আর তাকে খেতে দেখে তার খাওয়ার আগ্রহ তীব্রতর হয় আর তার কাছে খাবার চায় এমতাবস্থায় যদি তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়; তাহলে তা হয় কাবীরা গুনাহ।
এ ক্ষেত্রে শরীয়তের মূল নীতি হলো, প্রত্যেক হারাম কাজ এমনিতেই নিষিদ্ধ, তা করা কবীরা গুনাহ। আর যদি তার সাথে অন্য আরো একটি বা একাধিক নিষিদ্ধ কাজ জড়িয়ে করা হয়; তাহলে তা হয় অত্যন্ত ঘৃণিত কাবীরা গুনাহ। আর যদি সে নিষিদ্ধ কাজটি যেভাবে করলে কুরআন হাদীসে শাস্তি বিধান আরোপিত হবে বলে জানানো হয়েছে তার চেয়ে কম করে করা হয়, তাহলে তা হয় ছাগীরা গুনাহ।
তথ্যসূত্রঃ- [বায়হাকী, শা’বুল ঈমান,খ-১,পৃ-৪৫০-৪৫২]
বিষয়: বিবিধ
১৭৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন