মাওলানা নিজামীর ফাঁসির বহুদিন পর প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন ইসলামী দলের নেতারা !
লিখেছেন লিখেছেন বিভীষিকা ২৯ জুন, ২০১৬, ০৪:৩৪:২৭ রাত
জামাত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি হয়েছে এক মাসেরও বেশী হলো। তাঁর ফাঁসির পরপরেই দেশের বাইরে থেকে ইসলামী দল ও ব্যক্তিরা প্রতিবাদ জানালেও বাংলাদেশের ভেতর থাকা ইসলামমনা দলগুলো থেকে তেমন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি । অবশ্য অনেকেই বলেছেন, হেকমত বা কৌশলের কারনে ভেতরে ভেতরে নাখোশ হলেও সরাসরি প্রতিবাদ করতে চায়নি ইসলামী দলগুলো ।
সদ্য প্রকাশিত জামাতের এক প্রচার পত্রে দেখা যায়, অনেক ইসলামী দলের নেতাই নিজামীর ফাঁসিতে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। 'দেশের শীর্ষ ওলামা-মাশায়েখদের অভিমত' শীর্ষক এই প্রচার পত্রে দেশের প্রধান প্রধান ইসলামী দল ও আলেমদেরেই প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করার মতো ।
মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, আমীর, খেলাফত মজলিশ।
সাঁথিয়ার বোয়ালমারী দাখিল মাদ্রাসায় যখন পড়ে তখন থেকে আমি মাওলানা নিজামীকে চিনি।
শিবপুর ত্বহা ফাজিল মাদ্রাসায় ১৯৫৭ সালে আলিম ১ম বর্ষে ভর্তি হয়। ৫৭, ৫৮, ৫৯ এবং ১৯৬০ সাল পর্যন্ত এই মাদ্রাসায় আমার কাছে তিনি অধ্যয়ন করেন। তিনি আমার আস্থাভাজন ছাত্র ছিলেন।
১৯৭১ সালে পাবনা আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ ছিলাম। এই ৯ মাসে মাওলানা নিজামী সাহেবকে পাবনায় আসতে আমি দেখিনি।
মন্ত্রী হওয়ার পরের কথা, আমি একবার অসুস্থ হয়ে পরি, তা উনি জানতে পারলে, তার গাড়িটা আমার জন্য পাঠিয়ে দেয় এবং নিজে এসে হাসপাতালে আমাকে দেখে যায়।
৮৪ বছর বয়সে আমার ছাত্রের কাছে থেকে আমি একটি কথা শিখলাম, “আল্লাহ ছাড়া আমি কারো কাছে মাথা নত করবো না।”
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, স্থায়ী সদস্য, রাবেতা আলম আল ইসলাম, সভাপতি, সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ, সিনিয়র সহসভাপতি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, সম্পাদক, মাসিক মদীনা।
মাওলানা নিজামীর শাহাদাতের পর গোটা বিশ্ব প্রতিবাদ করছে, তখন হাসপাতালে তার শয্যা পাশে বিশ্বখ্যাত আলেম জাস্টিস ত্বকী ওসমানীর শহীদ নিজামীকে হত্যার নিন্দা জানিয়ে দেয়া টুইট বার্তা পড়া হচ্ছিল, তখন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান চোখের পানি ফেলে বললেন, আহ! উনার মতো একজন বিশ্ববরেণ্য আলেমকে খুন করে ফেললো!
হাফেজ মাওলানা আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী হুজুর, আমীরে শরিয়াত, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, নায়েবে আমীর, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
আমার আব্বার ইন্তেকালের পরে সর্বপ্রথম মাওলানা নিজামীকে দেখি (১৯৮৭ সালে)। তিনি জামেয়া সুফিয়া এ সময় আগমন করেন এবং “ইসলামী রাজনীতি” সম্পর্কে আলোচনা করেন। আমার আব্বা যে একজন ইসলামী রাজনীতির সিপাহসালার ছিলেন বাংলার জমিনে সে রাজনীতির বদ্ধদুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়ে যান মাওলানা নিজামী। এ জন্য আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।
তাঁর ফাঁসিতে আমরা গভীর শোক ও সমবেদনা জানাই এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শাহাদাতের মাকাম লাভ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, চেয়ারম্যান, ইসলামী ঐক্যজোট।
১৯৬২ সালে আলেম পরীক্ষার্থীদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়। তখন আমি নরসিংদী জেলার বুনিয়াদি দারুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র। আলিম পরীক্ষার্থী হিসেবে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় অবস্থানকালে হোসনি দালান এলাকায় এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৯৯ সালে বিএনপি, জাপা, জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোটের সমন্বয়ে চারদলীয় জোট গঠিত হলে একত্রে কাজ করার আরো সুযোগ ঘটে।
মাওলানা নিজামীর সাথে পরিচয়ের সুবাদে তাঁর সাথে উঠা-বসার সুযোগ ঘটে। কিন্তু কোনদিন মনোমালিন্য হয়নি। তিনি ছিলেন অমায়িক সদালাপী ও সজ্জন ব্যক্তিত্ব।
মাওলানা জয়নুল আবেদিন, অধ্যক্ষ, তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা, ঢাকা।
শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী একজন বিচক্ষণ আলেম দ্বীন, বিনয়ী, ন¤্র-ভদ্র, সদালাপী ও উদার মনের অধিকারী ছিলেন। সর্বশ্রেণীর আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখসহ সকল মহলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল অতুলনীয়। মন্ত্রী থাকা অবস্থায়ও দেশের শীর্ষ আলেমদেরকে তিনি নিজ হাতে আপ্যায়ন করিয়ে তৃপ্তি অনুভব করতেন। বিশ^বিখ্যাত বরেণ্য এ আলেমে দ্বীন ও সাবেক সফল এই মন্ত্রীকে যে আইনে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে তা সারা বিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি সারা জীবন ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। সমাজসেবায় ছিলেন সদা সোচ্চার। তাঁর মত নিষ্কলুষ, স্বচ্ছ ব্যক্তিত্বকে ফাঁসি দেয়া দুর্ভাগ্যজনক। ঈমানী অগ্নিপরীক্ষায় চূড়ান্ত সাফল্য অর্জনে তিনি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তা যুগ যুগ ধরে সর্বস্তরের ঈমানদারদের ঈমানী শক্তি জোগাবে। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে উচ্চমর্যাদা দান করুন।
মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মহাসচিব, সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহ, যুগ্ম মহাসচিব, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।
নির্ভীক কলমসৈনিক মাওলানা মহিউদ্দীন খান (দা.বা)-এর নেতৃত্বে সিরাত কমিটির আয়োজনে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের হল রুমে সিরাত সম্মেলনে ঘোষক আমার অজ্ঞাতসারেই আমার নাম ঘোষণা করলেন। কিন্তু আমি অপ্রস্তুত, আমার বক্তব্য রাখতে হবে-এটার ধারণাও ছিল না। যাক ঘোষণার প্রতি সম্মান রক্ষার্থে দাঁড়ালাম এবং মঞ্চে উপস্থিত মাওলানা নিজামী সাহেবকে দেখলাম। তাই আমি কথা বলার সুযোগ পেয়ে গেলাম। ব্যস মাওলানা সুলতান জওক সাহেবের বক্তৃতার সূত্র ধরে আমি আমার বক্তৃতার ঘোড়া চালালাম, মুসলিম ঐক্যের অন্তরায় জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করে মাওলানা নিজামী সাহেবের কড়া সমালোচনা করলাম। কিন্তু তিনি প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অস্ত্রের ভাষায় জবাব দিলেন না। অত্যন্ত মার্জিত ভাষায় নিজেকে ছাত্র এবং ওলামায়ে কেরামকে উস্তাদতূল্য ঘোষণা দিয়ে তাঁকে ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেবার জন্য অনুরোধ জানালেন।
এতে আমি অবাক হয়ে যাই, তিনি যে কত মহান, উদার, সভ্য, ভদ্র, বিনয়ী ও ধৈর্যশীল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁর কথার ওজন ও কুরআন-হাদিসের রেফারেন্স শুনে থ হয়ে যাই। বুঝলাম, যা ভাবি, তিনি তা নন।
আবু তাহের জ্বিহাদী, আমীর, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটি, মুহতামিম, জামেয়া ইমদাদিয়া, ঢাকা।
শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী অত্যন্ত জ্ঞানী, বিচক্ষণ ও ইসলামী আন্দোলনের বিশ্ববরেণ্য নেতা ছিলেন। তাঁর এই শাহাদাতে ইসলামী আন্দোলন স্তিমিত হবে বলে আমি মনে করি না। বরং ঈমানের অগ্নিপরীক্ষায় চূড়ান্ত সাফল্য অর্জনে তিনি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন তা যুগ-যুগ ধরে সর্বস্তরের ঈমানদারকে শক্তি জোগাবে।
মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, সভাপতি, বাংলাদেশ আইম্মাহ পরিষদ।
আবহমান কাল থেকেই প্রতি যুগে কিছু কিছু এমন ব্যক্তিত্বের আগমন ঘটেছে, যাদের দ্বারা কাপুরুষ জাতির হীনমনে প্রেরণার সৃষ্টি হয়েছে। তেমনি এক সাহসী রাজনৈতিক কান্ডারি ছিলেন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (রহ)। তিনি ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ। মজলুম ও নির্যাতিত-অত্যাচারিতদের পক্ষে জালেমের বিরুদ্ধে আপসহীন।
মাওলানা আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, ছোট পীর, শর্ষীনা দরবার শরীফ।
শহীদ মাওলানা নিজামী (রহ) ছিলেন বর্তমান প্রজন্মের মুসলিম মিল্লাতের আদর্শবান ত্যাগী নেতৃত্বের অধিকারী বিপ্লবী নেতা। একজন আদর্শ নেতার চরিত্রের মাঝে যে গুণাবলি বিরাজমান থাকা দরকার আমরা তা পেয়েছি হযরত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর প্রতিটি পর্যায়ে। আমরা তাঁর ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, রাজনীতিজীবনের প্রতিটি কর্মক্ষেত্র পেয়েছি রাসূলে পাকের আদর্শের নমুনা।
মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, পীর সাহেব, টেকেরহাট, মাদারীপুর।
শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে একজন নিবেদিতপ্রাণ অকুতোভয় সিপাহসালারের নাম। তিনি ছিলেন বর্তমান মুসলিম মিল্লাতের নেতৃত্ব প্রদানকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে তাকওয়া ও পরহেজগারির উৎকৃষ্ট নমুনা সংবলিত একজন অনুসরণযোগ্য বহু গুণে গুণান্বিত মানুষ। তাঁর শাহাদাতের মাধ্যমে মুসলিমবিশ্ব একজন কল্যাণকামী চিন্তাবিদকে হারালো আর সেই সাথে আমাদের আকাশ থেকে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন ঘটলো।
তথ্যসূত্রঃ http://www.bd-desh.net/newsdetail/detail/200/221008
বিষয়: বিবিধ
১১৬২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Click this link
মন্তব্য করতে লগইন করুন