কেমন ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ? সকলেরই পড়া উচিত।আশা করি অবাক হবেন।

লিখেছেন লিখেছেন বিভীষিকা ২৯ মার্চ, ২০১৬, ১১:১৮:৫৯ রাত

(নয়ন চ্যাটার্জি)



বেসিক্যলি তাজউদ্দিন সাহেব রুশপন্থী বাম ছিলেন। এই ব্যাপারে কমরেড তোয়াহা বলেন, তাজউদ্দীন পূর্বাপর কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। যদিও তাজউদ্দীন বাহ্যত: আওয়ামী লীগ করতেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের সাথেই জড়িত ছিলেন। পার্টির সিদ্ধান্তেই তাকে আওয়ামী লীগে রাখা হয়। (পাক্ষিক তারকালোক পত্রিকা, ১৫-৩০ ডিসেম্বর ’৮৭)

“একবার সম্ভবত: '৬২ সালের দিকে তিনি জেল থেকে বের হয়ে আমাদের বললেন 'আর ছদ্মনামে (অর্থাৎ আওয়ামী লীগে) কাজ করতে আমার ভালো লাগছে না। আমি নিজ পার্টিতেই কাজ করবো।' তখন কেউ কেউ মনে করলো, 'থাক না আমাদের একজন আওয়ামী লীগে আছে, সেখানেই কাজ করুক না।'

পরে অবশ্য পার্টিতে এ নিয়ে আলোচনাও হযেছিল কিন্তু তাজউদ্দীনকে প্রত্যক্ষভাবে পার্টিতে নেয়া হয়নি। আমার মতে সেটা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। তবে তাজউদ্দিন আওয়ামী লীগে থেকেও আমাদের জন্য কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগের সব তথ্য আমাদের সরবরাহ করেছেন। ইন্ডিয়াতে গিয়ে অসম-চুক্তি করার পরই তার মাঝে একটা বিক্ষিপ্ত ভাব এসে যায়। এরপর তিনি কিছুটা যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। তবে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যখন আমরা তাকে তাঁবেদার সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনে করতাম, তখনও তিনি আমাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। (বারান্দার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে) প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে একবার এ বারান্দায় বসে আমার সাথে আলাপ করে গেছেন। ভুল-শুদ্ধ যখন যা করেছেন সবই এসে আমাদের কাছে অকপটে বলেছেন। ”

(তথ্যসূত্রঃ ভাষা আন্দোলন : সাতচল্লিশ থেকে বায়ান্ন / মোস্তফা কামাল)

১৯৭১ সালে তাজউদ্দিন আহমেদের কাজ ছিল কেবল ইন্ডিয়ান এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। উপপ্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলামকে দিয়ে অসম ৭ দফা চুক্তি করে বাংলাদেশ বিক্রীর ব্যবস্থা করে ভারতে নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করেছেন। এই বিষয়ে ৯ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর আবদুল জলিল বলেছেন দেশের শান্তিপ্রিয় জনগনকে হিংস্র দানবের মুখে ঠেলে দিয়ে কোলকাতার বালিগঞ্জে একটি আবাসিক এলাকার দোতলা বাসায় প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রীসভা সহকারে নিরাপদে তাস খেলছিলেন দেখে আমি শুধুই বিস্মিত হইনি, মনে মনে বলেছিলাম ধরনী দ্বিধা হও।

(তথ্যসূত্রঃ অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা/ মেজর জলিল, পৃঃ ৪৪)

১৭ই এপ্রিল নতুন প্রবাসী সরকার গঠনের ঘোষনা দিয়ে দেশের মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে তিনি কিভাবে নিশ্চিন্ত ছিলেন তা আমরা বুঝতে পারবো যদি ভারত সরকারের সাথে তার চুক্তিগুলো একটু পড়ি।

১- মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যারা যুদ্ধ করেছে তারাই দেশ স্বাধীন হলে প্রশাসনে নিয়োগ পাবে। বাকীরা চাকরীচ্যুত হবে। যে শূন্যপদ সৃষ্টি হবে তা ভারতীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা দ্বারা পূরণ করা হবে।

২- বাংলাদেশ ও ভারতের সশস্ত্র বাহিনী মিলে যৌথ কমান্ড গঠন করে যুদ্ধ পরিচালনা করা হবে। ভারতের সেনাপ্রধান উক্ত যৌথ কমান্ডের প্রধান হবেন। তার কমান্ড অনুসারেই যুদ্ধে শামিল হওয়া বা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

৩- স্বাধীন বাংলাদেশের কোন নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী থাকবেনা।

৪- আভ্যন্তরীন আইন-শৃংখলা রক্ষার জন্য মুক্তিবাহিনীকে কেন্দ্র করে প্যারামিলিটারি বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হবে।

৫- দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। কিন্তু সময়ে সময়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বানিজ্য নীতি নির্ধারণ করা হবে।

৬- বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী অনির্ধারিত সময়ের জন্য বাংলাদেশে অবস্থান করা হবে।

৭- বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশ আলোচনা করে একই ধরণের পররাষ্ট্র নীতি ঠিক করবে।

(তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে "র" এবং "সি আই এ"/ মাসুদুল হক, পৃঃ ৮১)

তাজউদ্দিন আহমদ এ চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দিতে থাকেন সৈয়দ নজরুল ইসলামকে। নজরুল ইসলাম সাহেব নিরুপায় হয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

(তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশে 'র'/ আবু রুশদ; দুঃসময়ের কথাচিত্র সরাসরি/ ড. মাহবুবুল্লাহ ও আফতাব আহমেদ।)

৭১ এর পুরো বিষয়টা অনুধাবন করতে বঙ্গবন্ধুর সময় লাগেনি। দেশে এসে ক্ষমতা গ্রহন করেই উপরোক্ত চুক্তি ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন তাজউদ্দিনের প্রতি। যে কয়টা দিন বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় ছিলেন সে কয়টা বছর তাজউদ্দিন শেখ মুজিবের কাছে ঘেঁষতে পারেনি।

উল্লেখ্য ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু যখন মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সম্মেলন ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন, তখন তাদের বাধা প্রদান করেন তাজউদ্দিন আহমেদ। (তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে "র" এবং "সি আই এ"/ মাসুদুল হক, পৃঃ ১১৮)

১৯৭৪ সালের ২৬শে অক্টোবর বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দিন আহমেদকে মন্ত্রীসভা থেকে অপসারণ করেন ।

বিষয়: বিবিধ

২৪০৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

364110
২৯ মার্চ ২০১৬ রাত ১১:৩১
আবু জান্নাত লিখেছেন : সেই তাজের ছেলে হাসিনাকেও নাকানি চুবানি খাইয়ে বেইজ্জত করেছেন, তবুও হাসিনা বার বার এসব অপদার্থদের কাছে টানে। কারণ দাদাদের পক্ষে বলে কথা।

যে কাজ মুজিব করতে পারেনি তা হাসিনা করিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। বাপের মেয়ে বাপ থেকেও বাটপার।
364132
৩০ মার্চ ২০১৬ সকাল ০৫:২৯
শেখের পোলা লিখেছেন : যে ছেলেটা গাছে চড়ে মোতে ওটাই ভাল ছেলে কারণ দুষ্টামী কম করে৷
364166
৩০ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০২:৪৩
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
364179
৩০ মার্চ ২০১৬ বিকাল ০৫:০১
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : আপনিতো ফাঁস করে দিলেন তাজউদ্দীন শুধু ভারতের এজেন্ট ছিলেন না সোভিয়েত ইউনিয়নেরও দালাল ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে প্রবাসী সরকার তথা তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বের প্যারালাল ‘মুজিববাহিনী’ গঠন ও তাকে নিজের প্রভাব বলয় সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করেছিল ভারত।


ধন্যবাদ
364180
৩০ মার্চ ২০১৬ বিকাল ০৫:১২
আনিসুর রহমান লিখেছেন : আপাত দৃষ্টিতে মনে হছে, হাসিনাও আজকে বাংলাদেশ বিরোধী চক্রের জ্বালে আটকা পড়ে গেছে! এই চক্র এতটাই শক্তিশালী যে, তারা হাসিনাকে মিসগাইড করে তার মুখ দিয়ে প্রক্যাশে হিন্দুদের দেবী দুর্গার বন্দনা করে নিয়েছে। তারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সার্বত্র ভাবে ঘিরে রেখেছে এবং তাদের কাজ উদ্ধার হলে ছুরে ফেলে দিবে!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File