ভারতের কেরালা অঙ্গরাজ্যে হিন্দুদের মধ্যে এক প্রকার ট্যাক্স প্রচলিত ছিলো। করটির নাম- ‘স্তনকর’ বা ‘breast tax’।
লিখেছেন লিখেছেন বিভীষিকা ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১০:৫৩:৩৪ সকাল
(নয়ন চ্যাটার্জি)
আজ থেকে কয়েকশ’ বছর আগে ভারতের কেরালা অঙ্গরাজ্যে হিন্দুদের মধ্যে এক প্রকার ট্যাক্স বা কর প্রচলিত ছিলো। করটির নাম- ‘স্তনকর’ বা ‘breast tax’। এর আরেকটি নাম মুলাককারাম (mulakkaram)।
স্তনকর বা ব্রেস্টট্যাক্স কি ?
ঐ সময় নিয়ম ছিলো শুধূ ব্রাহ্মণ ব্যতিত অন্য কোন হিন্দু নারী তার স্তনকে ঢেকে রাখতে পারবে না। শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ শ্রেণীর হিন্দু নারীরা তাদের স্তনকে একটুকরো সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে পারতো, বাকি হিন্দু শ্রেণীর নারীদেরকে প্রকাশ্যে স্তন উন্মুক্ত করে রাখতে হতো। তবে যদি কোন নারী তার স্তনকে কাপড় দ্বারা আবৃত করতে চাইতো, তবে তাকে স্তনের সাইজের উপর নির্ভর করে ট্যাক্স বা কর দিতে হতো। এই নির্মম করকেই বলা হয় স্তনকর বা ব্রেস্টট্যাক্স।
১৮০৩ সালে নাঙ্গেলী (Nangeli) নামক এক নারী তার স্তনকে আবৃত করে রাখে। যথন গ্রামের ট্যাক্স কালেকটর তার থেকে স্তনকর চাইতে আসে, তখন নালেঙ্গী তা দিতে অস্বীকার করে এবং নিজের দুটি স্তনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে পাতা দিয়ে মুড়ে ট্যাক্স কালেকটরকে দিয়ে দেয়। তখন কাটা স্তন দেখে ট্যাক্স কালেকটর অবাক হয়ে যায়। স্তন কেটে ফেলার কিছুক্ষন পরেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য নাঙ্গেলীর মৃত্যু হয়। স্ত্রীর মৃত্যু শোকে নালেঙ্গীর স্বামীও সাথে সাথে আত্মহত্যা করে। এই ঘটনার পর থেকেই স্তনকর রোহিত হয়।
(সূত্র: ক-https://en.wikipedia.org/wiki/Nangeli, খ-http://goo.gl/cASX7x, গ-http://goo.gl/G7cJcy)
তবে স্তনকর রোহিত হলেও দক্ষিণভারতে নারীদের স্তন আবৃত করার জন্য বহু সংগ্রাম করতে হয়েছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা পর্যন্ত করতে হয়েছে তাদের। ১৯ শতাব্দীর মাঝে এসে যখন কিছু হিন্দু নারী তাদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করার অধিকার দাবি করে, তখন হিন্দু পুরোহিতরা স্পষ্ট করে বলে দেয়, নিচু বর্ণের নারীদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করা ধর্ম বিরোধী। বিষয়টি নিয়ে ১৮৫৯ সালে দক্ষিণ ভারতে একটি দাঙ্গা সংগঠিত হয়। এই দাঙ্গার উদ্দেশ্য ছিলো হিন্দু নারীদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করার অধিকার আদায় করা। এই দাঙ্গায় ‘কাপড়ের’ দাঙ্গা হিসেবেও পরিচিত। (সূত্র:https://en.wikipedia.org/wiki/Channar_revolt)
মাঝখান দিয়ে একটু বাড়তি কথা ঢুকাচ্ছি। কিছুদিন আগে এক হিন্দুর স্ট্যাটাসে (https://goo.gl/lyRM3W) দেখছিলাম। সে বলছিলো ঐ সময় মহিশুর (দক্ষিণ ভারতের এলাকা) শাসনকর্তা টিপু সুলতান নাকি তরবারি ভয় দেখিয়ে অনেক হিন্দু নারীকে মুসলিম বানিয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা। ইতিহাস বলছে, ঐ সময় টিপু সুলতান হিন্দুদের এ জংলী কালচার মোটেও পছন্দ করেননি। তিনি চেয়েছেন এই নগ্নতা বন্ধ হোক। তিনি হিন্দু নারীদের আহবান করেছিলেন- “যদি তোমরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করো, তবে কাপড় পরার অধিকার পাবে।” এ কথা শুনে হাজার হাজার হিন্দু নারী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলো (http://goo.gl/r7noEm)। অথচ এই ইতিহাসটি এখন বিকৃত করে প্রচার করে হিন্দুরা।
উপরের ঘটনা দ্বারা এটাই প্রকাশ পায়ে যে, ঐ সময় হিন্দুরা ছিলো অ্যামাজন জঙ্গলের জংলীদের মত অসভ্য ও বর্বর। মুসলিম শাসকরা এসে হিন্দুদের সভ্যতা শিক্ষা দেওয়াতে তারা কিছু সভ্যতা শিখতে পেরেছে। এ সম্পর্কে হিন্দু ইতিহাসবিদ সুরজিত দাসগুপ্ত বলে- “ঐ সময় হিন্দু নিম্নবর্ণের লোকদের উর্ধাঙ্গ অনাবৃত রাখতে হত। সে সময় ভারতবর্ষের কেরালাতে অমুক হিন্দু নারী ইসলাম গ্রহণ করেছে এটা বলার প্রয়োজন ছিলো না, বলতে হতো শুধু ‘কুপপায়ামিডুক’ শব্দখানা। এ শব্দখানার অর্থ ‘গায়ে জামা চড়িয়েছে’। (সূত্র: বই-সুরজিত দাসগুপ্তের ‘ভারতবর্ষ ও ইসলাম’, পৃষ্ঠা: ১৩০-১৩১)
বিষয়: বিবিধ
২৭৬৪ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভারত বর্ষের হিন্দুরা ধর্মীয় নির্যাতনের কারণেই ইসলাম ধর্মে দিক্ষিত হয়েছে। টিপু সুলতান বা অন্য কোন মুসলিম শাষক তাদের উপর জবরদস্তি করে নাই। যদি জোর করে মুসলিম বানাতেন তবে এত দীর্ঘকাল মুসলিম শাষনের পর ভারতবর্ষে কোন হিন্দু পাওয়া যেত না।
জাযাকাল্লাহ খাইর
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
আমাজনের মানুষ অসভ্য নয়, বরং তারাই অসভ্য যারা তাদের উলঙ্গ ছবি প্রদর্শন করে খুব ত্তৃপ্তি পায় এবং ওদের অসহায়ত্বকে সবার সামনে নির্লজ্জতা হিসেবে উপস্থাপন করে।
যাই হোক, আপনার লেখাটা পড়ে খুবই গুরুত্বপূর্ন একটা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।
এই পেইজে পড়েছিলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে
বস্তুত ইসলামের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য্যে অভিভূত হয়ে নবী করিম ছ. এর সময় ও তৎপরবর্তী সময়ে এমনকি বর্তমান যুগেও দলে দলে দিক হারা মানব সন্তান ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে। ইসলাম বিরোধীরা বলে থাকেন এসলাম তরবারীর জোরে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এর ছেয়ে ডাহা মিথ্যা আর কি হতে পারে? কেন না আজকের ইউরোপ আমেরিকায় কোন রাজা বাদশাহ তরবারী দিয়ে ইসলাম প্রচার করছে যার ফলে হাজার হাজার আধুনিক মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে ? ৯/১১ এর পর কেবলমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ হাজার আধুনিক মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র, সে ইন্দোনেশিয়ায় কে বা কারা তরবারী নিয়ে যুদ্ধ করে কোটি কোটি মানুষকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছিল জানতে ইচ্ছে করে না ? সত্যি কথা বলতে কি সারা দুনিয়ায় মুসলমানদের অগ্রযাত্রা ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের কারণে সম্ভব হয়েছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। উল্লেখ্য, এত অপপ্রচারের পরও বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে সম্প্রসারণশীল তথা বর্ধিষ্ণু ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। এক সমীক্ষায় আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে ফ্রান্স,ইংল্যাণ্ড ও আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের অনেক দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে রূপান্তর হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। মি: বাইদান এখন কি বলবেন? কি করবেন?
কি সুন্দর রীতি হিন্দু ধর্মের
Good one brother.
মন্তব্য করতে লগইন করুন