পৃথিবীর ১০ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক চেহারা।
লিখেছেন লিখেছেন বিভীষিকা ১৫ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:১৮:২৪ দুপুর
(নয়ন চ্যাটার্জি)
পৃথিবীতে অনেক রাষ্ট্র আছে, যারা নিজেদেরকে অসাম্প্রদায়িক হিসেবে দাবি করে থাকে। এদের সংবিধান নাকি ধর্মনিরপেক্ষ (https://goo.gl/9ArO6t)।
এরা নিজেদের অসাম্প্রদায়িক হিসেবে দাবি করলেও এদের কার্যকলাপগুলো কিন্তু অসাম্প্রদায়িক নয়, বরং কঠোর সাম্প্রদায়িক। আসুন এ ধরনের ১০টি রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক চেহারা সম্পর্কে জেনে নেই--
১) অস্ট্রিয়া:
ইউরোপের অন্যতম ধর্মনিরপেক্ষ ও নাস্তিকদের স্বর্গরাজ্য। গত কয়েকদিন আগে দেশটির সরকার অস্ট্রিয়ায় বসবাসকারী মুসলিমদের জন্য নতুন আইন জারি করেছে। নতুন আইন অনুসারে, অস্ট্রিয়ায় বসবাসরত মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরআন আরবী ভাষায় পড়তে পারবে না। এছাড়াও সেদেশে কোনো মুসলিম স্থাপত্য নির্মাণ ও ইমামের বেতনের জন্য বিদেশী অনুদান নেওয়া যাবে না। উল্লেখ্য, সরকারি হিসেবে অস্ট্রিয়ার মোট জনসংখ্যার ছয় শতাংশ মুসলিম। অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছে, ‘আমরা চাই মুসলিমরা থাকুন, তবে তাদের থাকতে হবে অস্ট্রীয় সংস্কৃতি মেনে (ইসলামী সংস্কৃতি মেনে নয়)।’ (সূত্র:http://goo.gl/5yhzd5, http://goo.gl/nPfssU )
২) এঙ্গোলা :
আফ্রিকান রাষ্ট্র এঙ্গোলা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে দাবি করে, অথচ এঙ্গোলা প্রশাসন সে দেশে ইসলাম ধর্মকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং মসজিদগুলো ধ্বংস করার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সেখানকার ধর্ম মন্ত্রণালয় খবরটি স্বীকার না করে বলে যে, ১৯৪টি ‘অবৈধ’ ধর্ম বিশ্বাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে শুধু ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। উল্লেখ্য ইসলাম ধর্ম সরকারিভাবে বৈধতা না পাওয়ায় সরকার ‘অস্থায়ীভাবে’ মসজিদগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
(সূত্র: http://goo.gl/7gClHn, http://goo.gl/dwYXJV)
৩) রাশিয়া:
রাশিয়ায় সরকারি হিসেবেই মুসলিম জনসংখ্যা ১৪%, দেশটি নিজেকে কঠোর অসাম্প্রদায়িক বলে দাবি করে থাকে। অথচ
-দেশটিতে মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের অনুবাদ ব্যান করা হয়েছে,
-খ্রিস্টানদের বাধার মুখে ২০১৩ সালে মস্কোতে মসজিদ নির্মাণ বন্ধ করে দিয়েছিলো মেয়র।
- দেশটিতে অমুসলিমরা প্রায় মসজিদে প্রবেশ করে দেয়ালে মুসলিম বিরোধী বক্তব্য ও ছবি লিখে আসে। (সূত্র: http://goo.gl/8C7kuY, http://goo.gl/p6UoJ2, http://goo.gl/ISdHVU)
৪) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র:
দেশটি সর্বদা নিজেকে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করতে চাইলেও তার কার্যক্রমগুলো কঠোর সাম্প্রদায়িক ও মুসলিম বিরোধী। ৯/১১ পর থেকে দেশটিতে নানা উপায়ে মুসলিমদের হেনস্থা করা হয়। গোয়েন্দা বাহিনী সব সময় মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর নজরদারি চালায় (http://goo.gl/2qKQWm)। অমুসলিমরা নিজেদের মধ্যে গুলোগুলি করে দিনে ১০০ জন করে মারা যায়, কিন্তু এতে তাদের জঙ্গী খেতাব পেতে হয় না (http://goo.gl/eu4myu), কিন্তু মুসলিম ছাত্র ঘড়ি বানাতে গেলেই তাকে বোমা তৈরীকারী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে সারা যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদগুলো প্রচন্ড বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছে। মিসিসিপি থেকে উইসকনসিন পর্যন্ত কমপে ১৮টি মসজিদ প্রকল্পের বিরুদ্ধে শত্রু জুটে গেছে। (http://goo.gl/315Pp4) এদিকে, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অন্যতম রিপাবলিকান প্রার্থী বেন কার্সন সম্প্রতি বলেছে, ইসলাম ধর্ম মার্কিন সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। মুসলমানরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার উপযুক্ত নয়। কারণ তাদের বিশ্বাস এই দেশের বিশ্বাসের সঙ্গে খাপ খায় না। (http://goo.gl/BLbBoH)
৫) ফ্রান্স :
ফ্রান্সের জনগোষ্ঠীর একটি অংশ মুসলিম (১০% দাবি করা হয়)। অথচ দেশটিতে মুসলিম মহিলাদের হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ, এমনকি হিজাব পড়লে জরিমানা হওয়ার আইন করা হয়েছে (http://goo.gl/vgXCRZ)। ফ্রান্সে মুসলমানদের মসজিদের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম, এর মধ্যে মসজিদগুলো প্রায়শঃই হামলা করে অমুসলিম সন্ত্রাসীরা,হত্যা করে মুসলমানদের। (http://goo.gl/POBVWq, http://goo.gl/thkvYH) উল্লেখ্য কিছুদিন আগে এক ফারসী মেয়র ঘোষনা দিয়েছে, আগামী ১২ বছরের মধ্যে ফ্রান্স থেকে ইসলাম নিষিদ্ধ করা হবে (http://goo.gl/s0DGyp)।
৬) ভারত :
ভারতকে বলা হয় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অসম্প্রদায়িক তথা গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। অথচ দেশটির বর্তমান ক্ষমতায় আছে একটি কট্টর সাম্প্রদায়িক দল। দেশটিতে হিন্দুত্ববাদী আইন ফলো করে গরুর জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাইকোর্ট থেকে রায় দিয়ে মুসলমানদের মসজিদগুলোর হিন্দুদের জমি বলে অ্যাখ্যায়িত করা হয়। দেশটতে মুসলিমরা চতুর্থ শ্রেনীর নাগরিক হিসেব অবস্থান করে, যাদেরকে অর্থনৈতিক, চাকুরীক্ষেত্র, ও শিক্ষাক্ষেত্রে মারাত্মক পিছিয়ে রাখা হয়েছে। স্বাধীনতার পর ৬৮ বছরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সংখ্যা ১ লক্ষের উপর। (https://goo.gl/TEB9fW, https://goo.gl/WD353z, https://goo.gl/nzR0p0, http://goo.gl/5xeYPg, http://goo.gl/19RVwP, http://goo.gl/BX7RlT, http://goo.gl/JmoqEY)
৭) নেদারল্যান্ড : নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করলেও দেশটি কঠিন ইসলাম বিরোধী। ২০০৮ সালে দেশটির এক এমপি মুসলিম ধর্মগ্রন্থ কোরআন বিরোধী একটি সিনেমা নির্মাণ করে, নাম দেয় ফিতনা । কিছুদিন আগে দেশটির আরেক এমপি প্রকাশ্যে টেলিভিশনে মুসলমানদের নবীকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করে (https://goo.gl/YE3sjL)
৮) হাঙ্গেরী :
সম্প্রতিক সময়ে, যখন অভিবাসীরা প্রবেশ করতে যায় তখন হাঙ্গেরীর প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের বক্তব্য শুনলে বোঝা যায় তাদের কথিত অসম্প্রদায়িকতার আসল স্বরূপটি আসলে কি। এক বক্তব্য ভিক্টর ওরবান বলে-
“ইউরোপে শরণার্থী ও অভিবাসীদের ঢল এবং ইউরোপীয় জোটের ব্যর্থ অভিবাসন নীতি এই মহাদেশের খ্রিস্টীয় পরিচিতি বা শেকড়গুলোকে ক্ষুণ্ণ করার হুমকি সৃষ্টি করেছে। আপনার স্থান যখন দখল হয়ে যাচ্ছে তখন আপনি অভিবাসীদের গ্রহণ করতে পারেন না এবং অভিবাসীদের বেশিরভাগই মুসলমান, খ্রিস্টান নয়। অথচ ইউরোপ এবং ইউরোপীয়দের রয়েছে খ্রিস্টীয় নানা শেকড়। ইউরোপের খ্রিস্টীয় সংস্কৃতি তার খ্রিস্টীয় মূল্যবোধগুলোকে সমুন্নত রাখতে যে হিমশিম খাচ্ছে তা কী এরইমধ্যে আশঙ্কাজনক নয়?” (সূত্র: http://goo.gl/qyl1x5)
৯) স্লোভাকিয়া :
এ দেশটিও নিজেদের অসাম্প্রদায়িক বলে দাবি করে, কিন্তু কথার মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতার ছিটেফোট নেই, বরং রয়েছে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা। কিছুদিন পূর্বে দেশটিতে সিরিয় যুদ্ধাক্রান্ত অভিবাসীরা প্রবেশ করতে গেলে স্লোভাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালের মুখাপত্র ইভান মেটিক বলে -
“অভিবাসী হিসাবে মুসলিমদের গ্রহণ করা হবে না। কারণ তারা স্লোভাকিয়াকে নিজের বাড়ি মনে করে না। আমরা ৮শ’ মুসলিমকে নিতে পারি। কিন্তু তাদের জন্য কোনো মসজিদ দিতে পারবো না। আর এটা তো তারা (মুসলিম) পছন্দ করবে না। তাহলে তারা এখানে থাকবে কি করে?’ (http://goo.gl/p6J29J)
১০) স্পেন :
সম্প্রতি দেশটিতে মুসলিম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নতুন আইন পাশ করেছে সরকার (http://goo.gl/Hk5fRP)। দেশটিতে অনেক আগেই মুসলিম নারীদের হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এদিকে মুসলিম সম্প্রদায় ইউনিয়ন কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্পেনের স্কুলে যে সকল মুসলিম ছাত্র-ছাত্রী নাম লিখিয়েছে তাদের ৯০ শতাংশই ইসলামী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। (http://goo.gl/VK9WB3, http://goo.gl/zj6ovh)
মন্তব্য: দেখেছেন, অসাম্প্রদায়িকতার দাবিদার হয়েও উপরের বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো কিভাবে মুসলিম নির্যাতন করছে, সাম্প্রদায়িক আক্রমণ করছে। অথচ বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের দিকে তাকান, বাংলাদেশে তারা কত সুখে আছে, যেন স্বর্গসুখে বসবাস। যখন যা চাইছে তাই পাইছে, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুসলিমদের থেকেও বেশি পাচ্ছে। কিন্তু তারপরও সুখে থাকলে ভুতে কিলিয়ে যাচ্ছে তাদের। তাই সারা দিন বলে যাচ্ছে- তারা নাকি নির্যাতিত হচ্ছে, নিপীড়িত হচ্ছে।
অথচ যারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে বলে চিৎকার করছে, সাম্প্রদায়িক আচরণ করা হচ্ছে বলে চিৎকার করছে, তাদের দেখা উচিত তাদের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ অসাম্প্রদায়িক দেশগুলো তাদের সংখ্যালঘুদের সাথে কেমন আচরণ করছে, তাদের কতটুকু অধিকার দিচ্ছে। ঐ দিকে তাকালে তাদের আর কোন সমস্যা থাকবে না বলেই মনে হয়।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন