অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো কঠিন সুন্নাত !!!

লিখেছেন লিখেছেন বিভীষিকা ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৬:২৯:৫৪ সন্ধ্যা

(অপু আহমেদ)

ইবনে হিশাম বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স) একদিন কাবার হাতেমে বিশ্রাম নিচ্ছেলেন। এ সময় একজন লোক এসে মক্কার সরদারদের কাছে আবুল হাকেম (আবু জাহেল) সম্পর্কে অভিযোগ পেশ করলো যে, তার উটের দাম সে পরিশোধ করছে না। সরদারগন মশকরা করে লোকটিকে বললো, আমরা তোমার কোন্ ‍উপকার করতে পারবো না, ঐ যে দেখছো লোকটি বসে আছে। তার কাছে যাও তাকে গিয়ে বলো। সে তোমার টাকা উসূল করে দিতে পারবে।

.

মক্কার সরদারগন বললো, এবার খেলা জমবে। আবুল হাকামের কাছে টাকা চাওয়ার সাহস মুহাম্মদের (স) হবে না। আর চাইলেও খবর আছে। লোকটি মুহাম্মদ (স) কাছে গিয়ে বললেন, আবুল হাকেম আমার একশত উটের দাম পরিশোধ করছে না, রবং হুমকি দিচ্ছে টাকা দিবে না। আপনি একটু সাহায্য করেন।

.

হুজুর স বললেন, চলূন। তিনি লোকটিকে সাথে নিয়ে আবু জাহেলের ঘরের দরজায় কড়া নাড়লেন। আবু জাহেল বললো, কে ? হুজুর স বললেন, আমি মুহাম্মদ (স)। আবু জাহেল দরজা খুলে বললো, কি চাই ? রাসুলুল্লাহ (স) বললেন, এই লোকটির পাওয়া টাকা দিয়ে দিন।

.

আবু জাহেল কোন প্রকার দ্বিরুক্তি না করে সোজা ঘরের ভিতর থেকে টাকা এনে লোকটিকে দিয়ে দিলো। এ দিকে মক্কার সরদাররা একজন লোককে পিছু পিছু পাঠিয়েছিলো ঘটনা কি ঘটে সেটা দেখার জন্য। লোকটি সব ঘটনা দেখার পরে ফিরে গিয়ে মক্কার সরদারগণকে বললো, আল্লাহর কসম ! ‍মুহাম্মদ (স) যখন টাকা চাইলো আবুল হাকেমের মুখ ভয়ে লাল হয়ে গেলো। মনে হচ্ছিলো তার দেহে কোন রক্ত নেই।

.

এ হচ্ছে নবী মুহাম্মদ (স) এর আসল সুন্নাহ। যখন তার হাতে শক্তি ছিলো না, ছিলো না সাহাবায়ে কেরামের (রা) মতো বিশাল বাহিনী, তখন তিনি কোন প্রকার অন্যায় দেখলে, কারো ওপর জুলুম হতে দেখলে মাথা উচু করে দাড়াতেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ যেন তার ফিতরাতগত সুন্নাহ ছিলো। কিন্তু আমাদের অবস্থা হচ্ছে তার সম্পুর্ণ উল্টো।

.

আমরা শক্তি সামর্থ, সুযোগ সুবিধা থাকার পরে চোখের সামনে ঘটতে দেখা হাজারো অন্যায়, অত্যাচার জুলুমের বিরুদ্ধে মাথা উচু করে দাড়ানো দুরে থাকা প্রতিবাদটুকো করতে পারি না। অন্তর দিয়ে ঘৃনা করার থার্ডক্লাস ঈমানের বৈশিষ্টও আমাদের মধ্যে অনেকের ভিতর খুজে পাওয়া যায় না।

.

খানা খাওয়ার সময় দস্তরখান না পেলে, কাউকে মসওয়াক করতে না দেখলে, কারো দাড়ি চুলে সামান্য ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তাকে উম্মাহ থেকে খারিজ করে দিতে এক সেকেন্ড দেরি করি না। কিন্তু আসল সুন্নাতের সময় আসলে আমি কচ্ছপের মতো মাথাগুটিয়ে নেই। ভাবখানা এমন যেন, এসব দুনিয়াবী ফেতনার মোকাবেলা কোন কালেই সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত ছিলো ন !

.

শুধু কি তাই ? অন্যের ওপর জুলুম হতে দেখে মুখে প্রতিবাদ তো দুরে থাক, বেশির ভাগ সময় তারা নিশ্চুপ থেকে এর সহযোগীর ভূমিকায় নেমেছে শুধুমাত্র মতবিরোধের মতো সামান্য বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে। আমাদের সামনে কোন মুসলিম অত্যাচারিত হলে, কারো ওপর সীমাহিন জুলুম হলে আমরা প্রথমে খেয়াল করি এরা আমার দলভুক্ত কিনা। এরপরে স্বিদ্ধান্ত নেই প্রতিবাদের ধরণ কি হবে ।

.

অথচ আল্লাহ পাক বলেন, কোন দলের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে ইনসাফ থেকে দুরে সরিয়ে না দেয়। অন্যত্র বলেন, মুমিনদের মধ্যে দুটি দল যদি বিবাধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে মিমাংসা করে দাও। যদি এতে তারা নিবৃত না হয় তাহলে জালেমের বিরুদ্ধে হস্ত উত্তোলন করো। কিন্তু আমরা হচ্ছি ভিন্ন প্রজাতীর মুসলিম। আমাদের দলিল কোরআন এবং সুন্নাহ নয়। নিজেদের খায়েম প্রসূত হেকমত !!

বিষয়: বিবিধ

১৩৩০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

343142
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০২:২৯
শেখের পোলা লিখেছেন : সহমত৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File