বাংলাদেশে যারাই বাল্যাবিয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বা কাজ করছে তারা প্রত্যেকেই বিদেশী এনজিও বা বিদেশী গোষ্ঠীর কানেকশনযুক্ত।
লিখেছেন লিখেছেন বিভীষিকা ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৯:২৬:৫৬ রাত
(নয়ন চ্যাটার্জি)
গতকালকে ওলামালীগের মানববন্ধনের একটা প্ল্যাকার্ড নিয়ে অনেকে আলোচনা-সমালোচনা করছে । প্ল্যাকর্ডটিতে লেখা ছিলো “বঙ্গবন্ধু নিজেই বাল্যবিবাহ করেছেন”।
(সূত্র: https://goo.gl/4aPvUz)
বিষয়টি ঘাটাঘাটি করতে বেশকিছূ তথ্য পেলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিয়ের সময় বয়স ছিলো ১৮ এবং তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসার বয়স ছিলো মাত্র ৮ বছর । (সূত্র: উইকি- https://goo.gl/MFAuT2, https://goo.gl/SdMeDW)
উল্লেখ্য বাংলাদেশে যে আইনি জোরে বাল্যাবিবাহ বন্ধ করা হচ্ছে তার মাতৃআইন হচ্ছে- ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-১৯২৯’। এ আ্ইনটি ব্রিটিশরা তৈরী করেছিলো। ১৯৩৮ সালে যখন বঙ্গবন্ধু ও ফজিলাতুন্নেসার যখন বিয়ে হয় তখন সেই আইন অনুসারে বঙ্গবন্ধু ও তার স্ত্রী দু’জনই অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
যাই হোক, আমার দৃষ্টিকোন থেকে আমি বাল্যবিবাহকে সাপোর্ট করি, কেননা-
১) আইন অনুসারে ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১, এবং মেয়েদের বিয়ের বষয় ১৮। অথচ এর ৫-৭ বছর আগেই তাদের বিয়ে করার চাহিদা শুরু হয়ে যায়। বিয়ে করা অবশ্যই একটা মানুষের মৌলিক চাহিদা। কেউ যদি বৈধভাবে বিয়ে করতে পারে, তবে সমস্যা কোথায় ? একটি ছেলে মেয়েকে আইন করে কষ্ট দেওয়ার মানেটা কি ?
২) অনেকে বলে, কম ২১/১৮ বছরের আগে ছেলে-মেয়েরা দায়িত্বশীল/পরিপক্ক হয় না। আমি এ যু্ক্তি মানতে রাজি নই। কেননা গ্রা গঞ্চে অনেক ১০ বছরের ময়ে যতটুকু দায়িত্বশীল, শহরে ২৫ বছরের মেয়েরাও এত দায়িত্বশীল হতে পারে না। তাই দায়িত্বশীল বা পরিপক্কতার বিষয়টি আসলে আপেক্ষিক। অপরদিকে অনের নারী-পূরুষ বহু বয়স পর্যন্ত দায়িত্বহীন থাকে। কিন্তু বিয়ে দিলে সে ঠিকই সমাজ ও পরিবারের মধ্যে দায়িত্বশীল হিসেবে প্রকাশ পায়।
৩) অনেক ছেলেমেয়েই কম বয়সে প্রেম করে, অনেকে অবৈধভাবে শারীরিক সম্পর্ক
করে ফেলে। যে ব্রিটেনের আইনের ফলো করে বাংলাদেশ বাল্যবিবাহ নিরোধ জারি করেছে, তাদের দেশেও ১০-১১ বছরে কুমারী মেয়েরা মা হচ্ছে। বিয়ে করে বৈধ মা হলে সমস্যা, কিন্তু অবৈধ কুমারী মা হলে সমস্যা নেই ? এটা কেমন !
৪) অনেককে বলতে শুনেছি, বাল্যবিয়ে করলে নাকি অপরিপক্ক বসয়ে সন্তান জন্মধারণ করতে হয়। অথচ একটি মেয়ে কখনই অপরিপক্ক অবস্থায় সন্তান ধারণ করতে পারে না, ঠিক যতক্ষন তার বয়ঃপ্রাপ্তি না হয়। এর আগে হাজার চেষ্টা করলেও তার সন্তান ধারণ সম্ভব নয়। তাই ‘অপরিপক্ক বয়সে সন্তান ধারণ’ নামক কথার বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই।
৫) অনেকে বলে বাল্যবিয়ে কম হওয়ায় মাতৃমৃত্যু কমেছে। এটাও ভুল কথা। আগে চিকিৎসা ব্যবস্থা এত উন্নত ছিলো না। জটিলতায় মাতৃমৃত্যু ঘটতো। কিন্তু এখন চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় মাতৃমৃত্য কমেছে।
৬) বর্তমান সময়ে মায়েদের জন্য এক কঠিন বিষয় হচ্ছে- সিজার অপরেশন। সিজার অপরেশন করলে তার কষ্ট সারা জীবন বহন করতে হয়। শূধু তাই নয় বৈবাহিক জীবনেও অনেক বাধ্যবাধকতা চলে আছে। অথচ একটা মেয়ে যখন অল্প বয়সে গর্ভধারণ করে তখন সিজার অপরেশনের সম্ভবতা কমে যায়, খুব সহজেই ভূমিষ্ট হয় শিশু। অপরদিকে যত অধিক বয়সে সন্তান ধারণ করা হয় সিজার অপরেশনের সম্ভবতা তত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। আমাদের অনেকের নানী-দাদীরা ১২-১৫টা করে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে, কিন্তু এখন দুইটা বাচ্চা নিতে দুইবার পেট কাটতে হয়। এটাই সত্য। কিন্তু অবাক করার মত বিষয়, বর্তমান মিডিয়া সম্পূর্ণ এর বিপরীত বিষয় প্রচার করে থাকে।
৭) আমি অনেক এনজিও কর্মীকে দেখেছি, তারা বলে বাল্যবিয়ে হলে মায়েরা ফিস্টুলা, জরায়ুর মুখে ক্যান্সার কিংবা সন্তানজন্মদানের সময় অধিক রক্তক্ষরণ ইত্যাদি সমস্যায় পড়তে হয়। অথচ এটা পুরো ভুল কথা। ফিস্টুলা, জরায়ুর মুখে ক্যান্সার কিংবা সন্তান জন্মদানের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষণের মত বিষয়গুলোর সাথে বয়সের কোন সম্পর্ক নেই। এই রোগের ফ্যাক্টরগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাল্যবিয়ের সাথে তা যোগ করা সম্পূর্ণ গোজামিল দেওয়া ছাড়া কিছু নয়।
৮) অনেকেই বাল্যাবিবাহকে অবমানবিক বলে অ্যাখ্যায়িত করে থাকে। অথচ বাল্যবিবাহ বন্ধ হলে সমাজে গর্ভপাতের পরিমাণ মারাত্বক বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন বাংলাদেশের ম্যাটারনিটি ক্লিনিকগুলোতে খবর নিলে দেখবেন, হাজার হাজার নারী প্রতিদিন গর্ভপাত করাচ্ছে। মায়ের গর্ভ থেকে শিশুভ্রুনকে কেটে টুকরো টুকরো বের করে আনছে। এটার থেকে বড় অমানবিক আর কি হতে পারে ? এছাড়া বর্তমান সময়ে সন্তানহীনতার মূল কারণ হচ্ছে পূর্বে কখন গর্ভপাত করা।
৯) বাংলাদেশ যে বা যারাই বাল্যাবিয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বা কাজ করছে তারা প্রত্যেকেই বিদেশী এনজিও বা বিদেশী গোষ্ঠীর কানেকশনযুক্ত। আমার কথা হচ্ছে, ঐ বিদেশীদের কি এমন ঠেকা পড়েছে বাংলাদেশের বাল্যবিয়ে ঠেকানোর ? তাদের উদ্দেশ্যটা কি ? যারা ইরাক-আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠিয়ে মুসলমান মারে, তারা কেন বাংলাদেশের বাল্যবিয়ে ঠেকাতে এত হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে ? আসলে তার কারণ-
ক) মুসলমানদের জনসংখ্যা হ্রাস করা। কেননা সারা বিশ্বে অমুসলিমদের জনংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে, কিন্তু মুসলিমদের জনসখ্যা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। তারা চিন্তা করে, যদি মুসলমানদের জনসংখ্যা বিনাবাধায় বৃদ্ধি পায়, তখন তো তারা এমনি এমনি দেশ দখল করে নিবে। এই ভয়ে তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে বলে। আর জন্মনিয়ন্ত্রনের অন্যতম সিস্টেম হচ্ছে বাল্যাবিবাহ হ্রাস। বাল্যবিয়ে হলে একটি মেয়ে সন্তান জন্মদানের জন্য লম্বা সময় পায়, ফলে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ে।
খ) বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করলে ছেলে-মেয়েরা অনৈতিকতার দিকে ঝুকবে, ফলে ধ্বংস হবে সমাজ।
তাই আমার মনে হয়, যার যখন সুযোগ হবে তখনই সুবিধামত বিয়ে করা উচিত । যেটা ১০ বছরেও হতে পারে, ৩০ বছরেও ধরে পারে। এটা নিয়ে বাধ্যবাধকতা করা কখনই ঠিক হবে না। একই সাথে সম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের আইন আস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলেই মনে করি।
বিষয়: বিবিধ
১১৯২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যথার্থ বলেছেন, এবং
খুবই সুন্দরভাবে বলেছেন
জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন