বিদেশী লেখকদের লেখা চুরির পর এবার দেশীয় লেখকদের লেখা চুরি শুরু করেছে চেতনাজীবিরা।
লিখেছেন লিখেছেন বিভীষিকা ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:১৬:০৮ রাত
বরেণ্য সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী’র লেখা “বেঁচে থাকো সর্দিকাশি” গল্পের মূল অংশের কাহিনী নকল করে গল্প লিখে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন প্রথম আলো’র সহযোগী সম্পাদক কথিত জনপ্রিয় সাহিত্যিক আনিসুল হক। বিদেশী লেখকদের লেখা চুরির পর এবার দেশীয় লেখকদের লেখা চুরি শুরু করেছে চেতনাজীবিরা।
বিস্তারিত নিচে দেখুনঃ
----------------------
সৈয়দ মুজতবা আলী’র লেখা “বেঁচে থাকো সর্দিকাশি” গল্পে যা আছে -
“ঠিক পিছনে পিছনে গিয়ে খানা-কামরায় ঢুকলুম। ওয়েটারটা ভাবলে স্বামী-স্ত্রী। না হলে তরুণ-তরুণী মুখ গুমসো করে খানা-কামরায় ঢুকবে কেন? বসালো নিয়ে একই টেবিলে–মুখোমুখি। হে মা-মেরি, নত্র দাম্ গির্জেয় তোমার জন্য আমি একশ’টা মোমবাতি মানত করলুম। দয়া করো, মা, একটা কিছু ফিকির বাৎলাও আলাপ করবার।
বুদ্ধিমান, বুদ্ধিমান, কোনো সন্দেহ নেই আমি বুদ্ধিমান। কোনো ফিকিরই জুটলও না, অথচ মেয়েটা বসে আছে আমার থেকে দু’হাত দূরে এবং মুখোমুখি। দু’হাত না হয়ে দুলক্ষ যোজনও হতে পারত–কোনো ফারাক হ’ত না।
‘জানালা দিয়ে এক ঝটকা কয়লার গুঁড়া এসে টেবিলের উপর পড়ল। মেয়েটি ভুরু কুঁচকে সেদিকে তাকাতেই আমি ঝটিতি জানালা বন্ধ করতে গিয়ে করে ফেললুম আরেক কাণ্ড। ঠাস করে জানালাটা বুড়ো আঙুলের উপর এসে পড়ে সেটাকে দিল থেৎলে। ফিনকি দিয়ে রক্ত।
‘মা-মেরির অসীম দয়া যে কাণ্ডটা ঘটলো। মেয়েটি তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে বলল, ‘দাঁড়ান আমি ব্যাণ্ডেজ নিয়ে আসছি।’
‘আমি নিজে ডাক্তার, বিবেচনা করুন অবস্থাটা। রুমাল দিয়ে চেপে ধরলুম আঙুলটাকে। মেয়েটি ছুটে নিয়ে এল কামরা থেকে ফার্স্ট এডের ব্যাণ্ডেজ। তারপর আঙুলটার তদারকি করল শাস্ত্র-সম্মত ডাক্তারি পদ্ধতিতে। বুঝলুম মেডিকেল কলেজে পড়ে। ঝানু ডাক্তার ফার্স্ট এডের ব্যাণ্ডেজ বয়ে নিয়ে বেড়ায় না আর আনাড়ি লোক এরকম ব্যাণ্ডেজ বাঁধতে পারে না।’
‘আমি তো ‘না, না’, ‘আপনি কেন মিছে মিছে’, ‘ধন্যবাদ, ধন্যবাদ’, ‘উঃ, বড্ড লাগছে’, ‘এতেই হবে’, ‘ব্যস্ ব্যস্’ করেই যাচ্ছি আর সেই লিলির মত সাদা হাতের পরশ পাচ্ছি। সে কি রকম মখমলের হাত জানেন? বলছি: আপনি কখনো রাইনল্যাণ্ড গিয়েছেন? না? থাক, ভুলেই গিয়েছিলুম প্রতিজ্ঞা করেছি, আপনাকে কোনো বর্ণনা দেব না।’
‘প্রথম পরশে সর্বাঙ্গে বিদ্যুৎ খেলে যায়, বলে না? বড় খাঁটি কথা। আমি ডাক্তার মানুষ, আমার হাতে কোনো প্রকারের স্পর্শকাতরতা থাকার কথা নয় তবু আমার যে কী অবস্থাটা হয়েছিল আপনাকে সেটা বোঝাই কি করে? মেয়েটি বোধ হয় টের পেয়েছিল, কারণ একবার চকিতের তরে ব্যাণ্ডেজ বাঁধা বন্ধ করে আমার দিকে মাথা তুলে তাকিয়েছিল।’
‘তাতে ছিল বিস্ময়, প্রশ্ন এবং হয়ত বা একটুখানি, অতি সামান্য খুশীর ঝিলিমিলি। তবে কি আমার হাতের স্পর্শ–? কোন্ সাহসে এ বিশ্বাস মনের কোণে ঠাঁই দিই বলুন।’
আমি গুন্ গুন্ করে বললুম,
‘জয় করে তবু ভয় কেন তোর যায় না,
হায় ভীরু প্রেম হায় রে’
ডাক্তার বললেন, ‘খাসা মেলডি তো। মানেটাও বলুন।’
বললুম, ‘আফ্টার্ ইউ। আপনি গল্পটা শেষ করুন।’
বললেন, ‘গল্প নয়, স্যার; জীবনমরণের কথা হচ্ছে!’
আমি শুধালুম, ‘কেন, সেপ্টিকের ভয় ছিল নাকি?’
রাগের ভাব করে বললেন, ‘ইয়োরোপে এসে আপনার কি সব রসকষ শুকিয়ে গিয়েছে? আমাকে হেনেছে প্রেমের বাণ আর আপনি বলছেন অ্যান্টি-সেপ্টিক্ আন্।’
(পুরো গল্প: http://goo.gl/tfyNUC)
আনিসুল হকের “পৃথিবীর সবচেয়ে রূপবতী নারী, আপনার জন্য” গল্পে যা আছে -
শুধু ওই দূরে দুজন মুরব্বি গোছের মানুষ বসে আছেন। আমরা দুজন এইখানে মুখোমুখি আসনে। ট্রেন আবার চলতে শুরু করেছে। কমলাপুর পৌঁছাতে লাগবে আরও এক ঘণ্টা। একটা ঘণ্টা তো আমি তার সামনে বেশি থাকতে পারব। এইবার বোধ হয় আমার কথা বলা উচিত। আমি বললাম, ‘আপনি কোথায় নামবেন?’
তিনি জবাব দিলেন না।
মুখটা বিস্বাদে ভরে গেল। জবাব দিল না কেন মেয়েটা। খুবই নিরীহ প্রশ্ন। জবাব দিলে কী হতো? আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি এভাবে অপমানিত হলাম! এর কি কোনো শোধ নেই?
ফ্যানটা তার দিকে ঘোরানো। তিনি উঠে ফ্যানটা ঘোরানোর চেষ্টা করলেন। পারলেন না। আমি ভাবলাম, এবার আমার চেষ্টা করা উচিত। না হয় সে খারাপ ব্যবহার করেইছে। তুমি অধম তাই বলে আমি উত্তম হইব না কেন।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে ফ্যানটা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য হাত বাড়ালাম।
ভুলক্রমেই, আপনাদের এ কথা আমি বেশ জোরের সঙ্গেই বলতে পারব, ইচ্ছা করে কাজটা আমি করিনি, আমার তর্জনী ঢুকে গেল ফ্যানের খাঁচার ভেতরে, আর ঘুরন্ত পাখা লেগে বেশ খানিকটা গেল কেটে। আমি দ্রুতই হাতটা সরিয়ে নিলাম, একটা অব্যয়ধ্বনি বেরিয়ে এল, আহা...
টপ টপ করে রক্ত ঝরছে। এবার দেবীর দয়া হলো। তিনি আমার আঙুল চেপে ধরলেন তার চাপাকলির মতো আঙুল দিয়ে। তারপর নিজের সুটকেসটা খুললেন। ফার্স্ট এইড বক্সটা বের করলেন। তাতে ডেটল ছিল। একটা তুলায় ডেটল মেখে, আহা, তিনি আমার আঙুলের রক্ত মুছে দিলেন। তারপর আরেকটু তুলা চেপে ধরে আমার আঙুলের ডগায় একটা ব্যান্ড এইড বেঁধে দিলেন।
আমার জীবন চিরদিনের জন্য ধন্য হয়ে গেল। তারপর এসে গেল কমলাপুর।
আমি বললাম, ‘আসি।’
তিনি হাসলেন। কোনো কথাই বললেন না।
আমি বললাম, ‘আপনার সুটকেসটা আমি নামিয়ে দেব?’
তিনি হাসলেন। কথা বললেন না। কমলাপুর এসে গেল।
(পুরো গল্প: http://goo.gl/OsHL06)বরেণ্য সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী’র লেখা “বেঁচে থাকো সর্দিকাশি” গল্পের মূল অংশের কাহিনী নকল করে গল্প লিখে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন প্রথম আলো’র সহযোগী সম্পাদক কথিত জনপ্রিয় সাহিত্যিক আনিসুল হক। বিদেশী লেখকদের লেখা চুরির পর এবার দেশীয় লেখকদের লেখা চুরি শুরু করেছে চেতনাজীবিরা।
বিস্তারিত নিচে দেখুনঃ
----------------------
সৈয়দ মুজতবা আলী’র লেখা “বেঁচে থাকো সর্দিকাশি” গল্পে যা আছে -
“ঠিক পিছনে পিছনে গিয়ে খানা-কামরায় ঢুকলুম। ওয়েটারটা ভাবলে স্বামী-স্ত্রী। না হলে তরুণ-তরুণী মুখ গুমসো করে খানা-কামরায় ঢুকবে কেন? বসালো নিয়ে একই টেবিলে–মুখোমুখি। হে মা-মেরি, নত্র দাম্ গির্জেয় তোমার জন্য আমি একশ’টা মোমবাতি মানত করলুম। দয়া করো, মা, একটা কিছু ফিকির বাৎলাও আলাপ করবার।
বুদ্ধিমান, বুদ্ধিমান, কোনো সন্দেহ নেই আমি বুদ্ধিমান। কোনো ফিকিরই জুটলও না, অথচ মেয়েটা বসে আছে আমার থেকে দু’হাত দূরে এবং মুখোমুখি। দু’হাত না হয়ে দুলক্ষ যোজনও হতে পারত–কোনো ফারাক হ’ত না।
‘জানালা দিয়ে এক ঝটকা কয়লার গুঁড়া এসে টেবিলের উপর পড়ল। মেয়েটি ভুরু কুঁচকে সেদিকে তাকাতেই আমি ঝটিতি জানালা বন্ধ করতে গিয়ে করে ফেললুম আরেক কাণ্ড। ঠাস করে জানালাটা বুড়ো আঙুলের উপর এসে পড়ে সেটাকে দিল থেৎলে। ফিনকি দিয়ে রক্ত।
‘মা-মেরির অসীম দয়া যে কাণ্ডটা ঘটলো। মেয়েটি তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে বলল, ‘দাঁড়ান আমি ব্যাণ্ডেজ নিয়ে আসছি।’
‘আমি নিজে ডাক্তার, বিবেচনা করুন অবস্থাটা। রুমাল দিয়ে চেপে ধরলুম আঙুলটাকে। মেয়েটি ছুটে নিয়ে এল কামরা থেকে ফার্স্ট এডের ব্যাণ্ডেজ। তারপর আঙুলটার তদারকি করল শাস্ত্র-সম্মত ডাক্তারি পদ্ধতিতে। বুঝলুম মেডিকেল কলেজে পড়ে। ঝানু ডাক্তার ফার্স্ট এডের ব্যাণ্ডেজ বয়ে নিয়ে বেড়ায় না আর আনাড়ি লোক এরকম ব্যাণ্ডেজ বাঁধতে পারে না।’
‘আমি তো ‘না, না’, ‘আপনি কেন মিছে মিছে’, ‘ধন্যবাদ, ধন্যবাদ’, ‘উঃ, বড্ড লাগছে’, ‘এতেই হবে’, ‘ব্যস্ ব্যস্’ করেই যাচ্ছি আর সেই লিলির মত সাদা হাতের পরশ পাচ্ছি। সে কি রকম মখমলের হাত জানেন? বলছি: আপনি কখনো রাইনল্যাণ্ড গিয়েছেন? না? থাক, ভুলেই গিয়েছিলুম প্রতিজ্ঞা করেছি, আপনাকে কোনো বর্ণনা দেব না।’
‘প্রথম পরশে সর্বাঙ্গে বিদ্যুৎ খেলে যায়, বলে না? বড় খাঁটি কথা। আমি ডাক্তার মানুষ, আমার হাতে কোনো প্রকারের স্পর্শকাতরতা থাকার কথা নয় তবু আমার যে কী অবস্থাটা হয়েছিল আপনাকে সেটা বোঝাই কি করে? মেয়েটি বোধ হয় টের পেয়েছিল, কারণ একবার চকিতের তরে ব্যাণ্ডেজ বাঁধা বন্ধ করে আমার দিকে মাথা তুলে তাকিয়েছিল।’
‘তাতে ছিল বিস্ময়, প্রশ্ন এবং হয়ত বা একটুখানি, অতি সামান্য খুশীর ঝিলিমিলি। তবে কি আমার হাতের স্পর্শ–? কোন্ সাহসে এ বিশ্বাস মনের কোণে ঠাঁই দিই বলুন।’
আমি গুন্ গুন্ করে বললুম,
‘জয় করে তবু ভয় কেন তোর যায় না,
হায় ভীরু প্রেম হায় রে’
ডাক্তার বললেন, ‘খাসা মেলডি তো। মানেটাও বলুন।’
বললুম, ‘আফ্টার্ ইউ। আপনি গল্পটা শেষ করুন।’
বললেন, ‘গল্প নয়, স্যার; জীবনমরণের কথা হচ্ছে!’
আমি শুধালুম, ‘কেন, সেপ্টিকের ভয় ছিল নাকি?’
রাগের ভাব করে বললেন, ‘ইয়োরোপে এসে আপনার কি সব রসকষ শুকিয়ে গিয়েছে? আমাকে হেনেছে প্রেমের বাণ আর আপনি বলছেন অ্যান্টি-সেপ্টিক্ আন্।’
(পুরো গল্প: http://goo.gl/tfyNUC)
আনিসুল হকের “পৃথিবীর সবচেয়ে রূপবতী নারী, আপনার জন্য” গল্পে যা আছে -
শুধু ওই দূরে দুজন মুরব্বি গোছের মানুষ বসে আছেন। আমরা দুজন এইখানে মুখোমুখি আসনে। ট্রেন আবার চলতে শুরু করেছে। কমলাপুর পৌঁছাতে লাগবে আরও এক ঘণ্টা। একটা ঘণ্টা তো আমি তার সামনে বেশি থাকতে পারব। এইবার বোধ হয় আমার কথা বলা উচিত। আমি বললাম, ‘আপনি কোথায় নামবেন?’
তিনি জবাব দিলেন না।
মুখটা বিস্বাদে ভরে গেল। জবাব দিল না কেন মেয়েটা। খুবই নিরীহ প্রশ্ন। জবাব দিলে কী হতো? আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি এভাবে অপমানিত হলাম! এর কি কোনো শোধ নেই?
ফ্যানটা তার দিকে ঘোরানো। তিনি উঠে ফ্যানটা ঘোরানোর চেষ্টা করলেন। পারলেন না। আমি ভাবলাম, এবার আমার চেষ্টা করা উচিত। না হয় সে খারাপ ব্যবহার করেইছে। তুমি অধম তাই বলে আমি উত্তম হইব না কেন।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে ফ্যানটা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য হাত বাড়ালাম।
ভুলক্রমেই, আপনাদের এ কথা আমি বেশ জোরের সঙ্গেই বলতে পারব, ইচ্ছা করে কাজটা আমি করিনি, আমার তর্জনী ঢুকে গেল ফ্যানের খাঁচার ভেতরে, আর ঘুরন্ত পাখা লেগে বেশ খানিকটা গেল কেটে। আমি দ্রুতই হাতটা সরিয়ে নিলাম, একটা অব্যয়ধ্বনি বেরিয়ে এল, আহা...
টপ টপ করে রক্ত ঝরছে। এবার দেবীর দয়া হলো। তিনি আমার আঙুল চেপে ধরলেন তার চাপাকলির মতো আঙুল দিয়ে। তারপর নিজের সুটকেসটা খুললেন। ফার্স্ট এইড বক্সটা বের করলেন। তাতে ডেটল ছিল। একটা তুলায় ডেটল মেখে, আহা, তিনি আমার আঙুলের রক্ত মুছে দিলেন। তারপর আরেকটু তুলা চেপে ধরে আমার আঙুলের ডগায় একটা ব্যান্ড এইড বেঁধে দিলেন।
আমার জীবন চিরদিনের জন্য ধন্য হয়ে গেল। তারপর এসে গেল কমলাপুর।
আমি বললাম, ‘আসি।’
তিনি হাসলেন। কোনো কথাই বললেন না।
আমি বললাম, ‘আপনার সুটকেসটা আমি নামিয়ে দেব?’
তিনি হাসলেন। কথা বললেন না। কমলাপুর এসে গেল।
(পুরো গল্প: http://goo.gl/OsHL06)
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৬ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উনি মনে করছিলেন যে এখন এত জনপ্রিয় উনি যে সৈয়দ মুজতাবা আলি কেউ পড়েনা!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন