কোরবানি কি নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে !
লিখেছেন লিখেছেন বিভীষিকা ৩০ আগস্ট, ২০১৫, ০৯:১৬:৪১ রাত
ইনকিলাব রিপোর্ট (প্রকাশের সময় : ২০১৫-০৮-৩০) :
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহার সময় ঘরে ঘরে পাড়ায় মহল্লায় পশু কোরবানি করা যাবে না। রাজধানীতে পশু কোরবানির জন্য ৪৯৩টি স্থান নির্ধারণ করেছে দুই সিটি কর্পোরেশন। এসব স্থানেই পশু কোরবানি করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিষয়টি মনিটরিং করবেন। গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এলজিআরডি সচিব আবদুল মালেক। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে এ বিষয়ে প্রচার চালানো হবে। পশু জবাইয়ের স্থানের তালিকা ঈদের আগেই নগরবাসীকে জানিয়ে দেয়া হবে। নির্দিষ্ট স্থানে জবাই শেষে সেখানেই পশুর বর্জ্য রাখতে হবে, কর্পোরেশনের কর্মীরা সেখান থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাবেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতিবাদ ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোরবানির ঐতিহ্য খাটো না করার অনুরোধে যে প্রস্তাবটি মন্ত্রিপরিষদের সভায় ওঠেনি বা পাস হয়নি সেটি তড়িঘড়ি করে বাস্তবায়ন করার ঘোষণায় রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হামিদুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ধীরে ধীরে এসব নীতিনির্ধারক কি কোরবানি নিষিদ্ধ করে দিতে চাইছেন? হাজার বছরের ঐতিহ্য ঘরে ঘরে পাড়ায় মহল্লায় কোরবানির পশু কোরবানি কেন তারা নিষিদ্ধ করে দিলেন? রাজধানীর সব পশু কি মাত্র ৪৯৩টি স্থানে নিয়ে গিয়ে কোরবানি করা সম্ভব? যেখানে দিনে-দুপুরে ঘর থেকে মানুষ ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, নারীদের তুলে নিয়ে গ্যাং রেপ করা হয় সেখানে হাজার হাজার কোরবানির পশুর জবাই, চামড়া তোলা, গোশত কাটা, বণ্টন ইত্যাদি যে নিরাপদে করা যাবে, গোশত ও চামড়া লুট হবে না, এর নিশ্চয়তা তারা কী করে দেবেন? ঈদুল আজহার দিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও কর্পোরেশনের লোকজন কী ঘরে ঘরে পাড়ায় মহল্লায় বেআইনী ঘোষিত কোরবানি দেয়ার সময় লোকজনকে ধাওয়া করবে না কোরবানির নির্দিষ্ট স্থান পাহাড়া দেবে? কোরবানিদাতারা গোশত কেটে তা কীভাবে বাড়ি-ঘরে আনবেন? বন্ধু ও আত্মীয়-প্রতিবেশীদের অংশ তারা কী করে বিলাবেন? পরিচিত ও নিজস্ব দরিদ্রদের অংশ তারা কীভাবে পৌঁছাবেন? জবাইয়ের মাঠেই কি এসব করা সম্ভব? বাড়ির মহিলাদের পরামর্শ, কাজ ও সহায়তাটুকু কি মাঠে পাওয়া যাবে?গৃহিনী হেলেনা হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, কোরবানির দিন গরু নিয়ে কোথায় যেতে হবে, সেখানে উপযুক্ত পরিবেশ হবে কি না কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাদের পুরুষেরা বলছেন, তারা নিয়ম মেনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে মহল্লার আঙ্গিনা বা বাড়ির উঠানেই কোরবানি করবেন। বর্জ্য নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা হবে। যদি কোরবানি করতে গিয়ে তাদের পুলিশের মার খেতে হয়, জেল খাটতে হয়, তা হলে কি মানুষ কোরবানি দিবে? হেলেনা হোসেনের বড় ভাই ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান বলেন, কোরবানির পশু নিয়ে গুÐা-মাস্তান ও ক্যাডারদের তত্ত¡াবধানে যাবো না। বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেবো। যদি কেউ আমার কোরবানিতে বাধা দেয় বা ঘুষ চায় তা হলে মহল্লাবাসীকে নিয়ে প্রতিরোধ গতে তুলবো। আমি বলি কি, এসব তালবাহানা না করে সরাসরি কোরবানি নিষিদ্ধ করে দিলেই হয়। যদিও নাস্তিক-মুরতাদ লোকদের এতটা সাহস এখনো হয়নি তবে তারা ধাপে ধাপে অগ্রসর হচ্ছে। এবার কোরবানির জায়গায় বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি হলে মানুষ কোরবানি দেয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। ইসলামবিদ্বেষী চক্রটি এটাই চায়। তবে এসব ধর্মবিদ্বেষী নিয়মনীতি যারা চালু করার চেষ্টা করছেন, তারা এর পাল্টা ধাক্কাটা সামাল দিতে পারবেন কি না সেটাই ভাবছি।সিনিয়র ব্যাংক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, পত্রিকায় এ সংবাদ দেখে অনেকেই গ্রামে গিয়ে কেরবানি দেবেন বলে ভাবছেন। আমি যে ফ্ল্যাটে থাকি সেখানেই কোরবানি করবো। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা ক্যাডাররা বাধা দিলে তখন কী হবে তা সময়ই বলবে। ঈদের দিন এসব উপদ্রব মানুষ সহ্য করবে বলে মনে হয় না। ইবাদত করতে গিয়ে কোনো দলীয় ক্যাডার বা কর্পোরেশন কর্মকর্তাকে ঘুষ তো দেবই না, প্রয়োজনে পাড়ার লোকজন মিলে ওদের শায়েস্তা করবো। সরকার কেন এমন একটা আইন করলো আমার বুঝে আসে না। আমাদের দু’টি ফ্ল্যাট বাড়িতেই ১৫টি কোরবানি হয়। আশপাশে অন্ততঃ ২০০ কোরবানি হবে। সরকার নির্ধারিত স্থানে কী হাজার হাজার পশু নিয়ে গিয়ে জবাই করা সম্ভব? এ আইন বাস্তবায়ন করা কিছুতেই সম্ভব নয়। আশা করি সরকার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। নতুবা কোরবানি নিয়ে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও গণবিক্ষোভ দেখা দিতে পারে। মানুষ এ আইনকে কোরবানি নিষিদ্ধের পাঁয়তারা বলেই ভাবছে।
সূত্র:http://www.dailyinqilab.com/details/27950/%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A6
বিষয়: বিবিধ
১১২৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন