কেন আমি বিজয় দিবস উদযাপনের বিরোধী ?
লিখেছেন লিখেছেন বিভীষিকা ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:৪২:৪৪ দুপুর
(Zakir Zxj)
জ্বী, আমি বিজয় দিবস উদযাপনের বিরোধী, ঘোর বিরোধী। এখন আপনি চাইলে আমাকে যা খুশি তাই গালিগালাজ করতে পারেন। চাইলে আমাকে আনফ্রেন্ড কিংবা ব্লকও মারতে পারেন। তবে এটা সত্য যে আমি জামাআত-শিবিরেরের দালালী করার জন্য এই আর্টিকেল লিখি নি। বরং 'আল হুব্বু ফিল্লাহি ওয়াল বুগদু ফিল্লাহি' তথা 'আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, আল্লাহর জন্য শত্রুতা'-এর আলোকে একটা নিরপেক্ষ নির্মোহ বিশ্লেষণ করাই আমার লক্ষ্য। বিজয় দিবস উদযাপন নিয়ে আমার আপত্তিগুলোকে তিনভাগে ভাগ করা যায়ঃ
১. প্রচলিত পন্থায় বিজয় দিবস উদযাপনঃ
এটা ইসলামের তাহযীব ও তামাদ্দুনের সাথে সাংঘর্ষিক, অশ্লীলতার সয়লাব, অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও তাদের বৈশিষ্ট্য সূচক সংস্কৃতির অনুকরণ, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে শিরক। কাজেই এগুলো কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়, যেমন স্তৃতিসৌধ, শহীদ মিনারে পুষ্প অর্পণ, এগুলোর সামনে দাড়িয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন, খালি পায়ে হাঁটা, নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের কবরে পুষ্প অর্পণ, শিখা অনির্বাণ, নাচ, গান বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার, নারী পুরুষ একত্রিত হয়ে বেহায়াপনা।
আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেন-
"মান তাশাব্বাহা বি কওমিন ফাহুয়া মিনহুম" অর্থাৎ "যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরন করে সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত।"
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন-
"যারা মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতের মর্মন্তুদ শাস্তি"
[সূরা নূর ১৯]
২. কথিত ইসলামী পন্থায় বিজয় দিবস উদযাপনঃ
কেউ কেউ ইসলামী পন্থায় বিজয় দিবস উদযাপনের দাবী করে। এ দিনে তারা রোযা রাখে, ৮ রাকাআত নফল নামায পড়ে...। তারা যুক্তি দেখায় যে, আল্লাহর রাসূল (সঃ) মক্কা বিজয়ের পর নফল নামায আদায় করেছিলেন। সাহাবারাও বিভিন্ন অঞ্চল বিজয়ের পর নফল নামায আদায় করতেন। আপাতদৃষ্টিতে যুক্তিটি ভালো, শিরক বিদআতকে সুন্নত দ্বারা রিপ্লেসমেন্ট করার চেষ্টা। কিন্তু চূড়ান্ত বিশ্লেষণে যুক্তিটি Invalid.
রাসূল (সঃ) মক্কা বিজয়ের পর শুধু ১ বারই নফল সালাত আদায় করেছেন। এই কাজ তিনি প্রতি বছর মক্কা বিজয়ের তারিখে করেন নি। বদর, উহূদ, খন্দক যুদ্ধে বিজয়ের দিনটাকে সাহাবারা উদযাপন করেন নি। প্রকৃতপক্ষে এইসব দিবস কেন্দ্রীক আনুষ্ঠানিকতা ইসলাম বিরোধী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যদি কেউ নফল ইবাদত করতো, তবে সেটাকে সুন্নত বলে হয়তো কিছুটা দাবী করা যেত। কাজেই এখন ইসলামিক পন্থায় প্রতি বছর ১৬ই ডিসেম্বর উদযাপনের দাবী রীতিমত হাস্যকর এবং অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত। প্রকৃতপক্ষে এটা একধরনের বিদআত। আর আল্লাহর রাসূল সঃ বলেছেন-
"ওয়া কুল্লু বিদআতিন দ্বলালাহ, ওয়া কুল্লু দ্বলালাতিন ফিন নার" অর্থাৎ "প্রত্যেক বিদআত হল পথভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক পথভ্রষ্টতার জন্যে আছে আগুন।"
৩. জাতীয়তাবাদ, ইসলামী ভাতৃত্ব এবং খিলাফত ইস্যুঃ (চূড়ান্ত আপত্তি)
ইসলাম কখনই জাতীয়তাবাদকে স্বীকৃতি দেয় না। স্থান ভিত্তিক, দেশ ভিত্তিক কিংবা ভাষা, বর্ণ, জীবিকা ভিত্তিক কোন জাতীয়তারই ইসলামে বিন্দুমাত্র ভ্যালু নেই। বরং তা ইসলামের মূল চেতনার সাথেই পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। ইসলামের দৃষ্টিতে সমগ্র মুসলিম এক উম্মাহ। পাকিস্তান বাঙালিদের উপর অত্যাচার করেছে। তাই বলে তারা কাফির হয়ে যায় নি। আল কুরআনের আলোকে হত্যাকারীর সাথেও নিহত ব্যক্তির দ্বীনি ভাতৃত্ব ছিন্ন হয় না। কোন ভাই অত্যাচারী হলে তার বিচার হওয়া উচিত। আর সেটার পর অবশ্যই মিটমাট হয়ে যাওয়া কাম্য। কিন্তু তাই বলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কোন মুসলিম ভাইদের বিরুদ্ধে ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়ানো কোনভাবেই বৈধ নয়। কতিপয় শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের কারনে Whole Nation কে দায়ী করা এমনকি তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকেও গালিগালাজ করা, হেয় দৃষ্টিতে দেখা এটা সাধারণ যুক্তিরও বিরোধী।
বিভিন্ন সময় মুসলিমদের নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এমনকি ইসলামের স্বর্ণযুগেও। এসব সংঘটিত হয়েছে কখনও নিছক ভুল বোঝাবোঝির কারনে আবার কখনও এক পক্ষের বাড়াবাড়ির কারনে। কিন্তু যুদ্ধের পর তারা চির ঘৃণা, চির শত্রুতা ধরে রাখেন নি। সেই বিজয়কে কেন্দ্র করে যুগের পর যুগ উল্লাস করেন নি। এসব পুরোনো ইস্যুকে যারা বারবার জনগণের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে, আলেমগণ তাদেরকে ভালো চোখে দেখেন নি। তাঁরা তাদেরকে মুসলিমদের ঐক্যে ফাটল সৃষ্টির ষড়যন্তকারী হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন।
যেখানে আল্লাহর রাসূল (সঃ) ও সাহাবারা কাফেরদের বিরুদ্ধে বিজয়কেই বছরের পর বছর উদযাপন করেন নি সেক্ষেত্রে আমরা কেন মুসলিমদের বিরুদ্ধ জয়কে ফি বছর পালন করবো?? আর ধরেই নিলাম আমাদের বিজয় দিবসের অনেক মর্যাদা রয়েছে। কিন্তু কতটুকু?? উহুদ, খন্দক এমনকি বদর যুদ্ধের চেয়েও বেশি কি??
ইসলাম স্থান, দেশ, ভাষার উর্দ্ধে। ক্ষুদ্র বাউন্ডারীর মাঝে সীমিত থাকাটা ইসলামের শিক্ষা নয়। সমগ্র মুসলিম বিশ্ব এক পতাকার তলে এক খলিফার অধীনে থাকবে এটাই ইসলামের বিধান। কিন্তু কুফফাররা কখনও মুসলিমদের ঐক্য চায় না তারা বিভিন্নভাবে আমাদের মাঝে ভেদাভেদ অনৈক্য জিইয়ে রাখতে চায়। এ সমস্ত জাতীয়তাবাদী চিন্তার ধারক বাহকদের সম্পর্কে রাসূল (সঃ) বলেছেন-
"যে ব্যক্তি আসবিয়্যাহ বা জাতীয়তাবাদের দিকে মানুষকে আহ্বান করে, জাতীয়তাবাদের জন্য যুদ্ধ করে কিংবা নিহত হয়, সে আমাদের কেউ নয়।"
[মুসলিম, আবূ দাউদ]
তিনি (সঃ) আরো বলেন-
"যদি তুমি শুনতে পাও কেউ জাহেলী যুগের আসবিয়্যাহ বা জাতীয়তাবাদের দিকে আহ্বান করছে তাকে বলো, সে যেন তার পিতার জননাঙ্গ কামড়ে ধরে আছে।"
[মুসনাদে আহমাদ]
আসবিয়্যাহ সম্পর্কে তিনি আরো বলেছেন-
"এগুলো ত্যাগ করো, এগুলো তো পচে গেছে।"
[বুখারী, মুসলিম]
আমি আমার জনৈক বন্ধুকে এসব কথা বললে সে চোখ কপালে তুলল। বলল, বুঝেছি তোমরা খিলাফত আর ঐক্যের ধোঁয়া তুলে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের অধীন
করতে চাচ্ছ??
আমি হেসে জবাব দিলাম, না বন্ধু, তোমার দুশ্চিন্তার কারন নেই। আমরা বরং উল্টোটাই চাচ্ছি। আমরা চাচ্ছি পাকিস্তানসহ সমগ্র মুসলিম দেশ আমাদের অধীন হোক। অবশ্য সেটা হওয়ার জন্য আমাদেরকেই কিন্তু খিলাফত প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তবেই শুধু সম্ভব ... ...
বিষয়: বিবিধ
১৭৪৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
১৯৭১ সালের যুদ্ধটা হযেছিল পক্ষ দুইটা। একটা পক্ষ ছিল জালিম আর আরেকটা পক্ষ ছিল মজলুম। এই বিবেচনায় দেখা প্রয়োজন।
বিদআত- কুফরী ইত্যাদি শব্দ প্রয়োগ বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন