দোস্ত, ওজু ভংগের কারণ শিখলা, ঈমান ভংগের কারণ শিখলা না ???

লিখেছেন লিখেছেন বিভীষিকা ১৫ আগস্ট, ২০১৪, ১০:৩৯:৪৭ রাত

(সংগৃহিত বাই অপু আহমেদ)

(পুরোটা পড়ে আপনাদের মতামত দিতে ভুল করবেন না প্লিজ।)

পাশের দাস বাড়ির এক শিক্ষক মহোয়দ সহ সেলুনে বসে আছি চুল কাটাবো বলে। পাশের একটি মন্দিরের পুরোহিত মশাই চুল গোফ কাটাচ্ছেন দেখে আমরা সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করছি। কখনো এমন সব লোক পেলে আমিও একটু কৌতুহলী হয়ে উঠি আর ধর্ম বিষয়ক আলোচনা জুরে দেই। এবারও ব্যতিক্রম হলো না। ঠাকুর মশাইকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা ঠাকুর মশাই, আপনাদের হিন্দু ধর্মে প্রবেশ করার কোন তরিকা বা পদ্ধতি আছে কিনা ?

ঠাকুর মশাই আমার প্রশ্ন বুঝতে পারলেন না। যার ফলে একটু খোলাশা করে জানতে চাইলাম, যেমন ধরেন অন্য ধর্মের যে কেউ আমাদের ধর্মে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে কিছু নিয়ম কাণুন অনুসরন করতে হয়। পাক পবিত্র হয়ে কলেমা পাঠ করতে হয়। কোন মুসলমান যদি হিন্দু হতে চায় তাহলে তাকে কি করতে হবে ? ঠাকুর মশাই বললেন, আমি ঠিক জানি না আসলে কি করতে হয়। আমার পাশে থাকা হিন্দু শিক্ষক মশাই তো পুরা ফায়ার হয়ে গেছেন। ব্যাচারা এক প্রকার ক্ষিপ্ত হয়ে প্রশ্ন করলেন, কি বলেন ঠাকুর মশাই ? এটা আপনি জানেন না? তাহলে মন্দিরে কি শুধু ঘন্টা বাজাতে বসে থাকেন ? আপনারা আসলেই অজ্ঞ, খামাখা আপনাদের টাকা দিয়ে মন্দিরে বসিয়ে রাখি।

বললাম, আচ্ছা বাদ দেন। আমাকে বলেন, একজন হিন্দু কোন কোন কাজ করলে সে আর হিন্দু থাকে না, হিন্দু ধর্ম থেকে বের হয়ে যায় ? ঠাকুর মশাই বলেন, আরে ভাই, আপনার প্রশ্নগুলো আমি এই প্রথম শুনতেছি, এর আগে এমন করে ভাবিও নি, কি উত্তর দিবো। অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ না করে বের হওয়ার উপায় নেই। হিন্দুই থেকে যেতে হবে। আমি বললাম, শুধু আপনার না প্রত্যেকটি ধর্মেই এই বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট নির্দেশণা নেই। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধর্মগুরুর নির্দেশনা মতো কাজ করে। নিজেদের ধর্মের কিতাব পত্রে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। আন্দাজ অনুমানে কথা বলাই তাদের অন্যতম ধর্ম। খোজ করলে আমার কথার সততা পাবেন। ইসলাম এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশান দিয়ে রেখেছে। ঈমান হারা হবার মতো প্রতিটি বিষয়কে খুব স্পষ্ট করে বর্ণনা করে মুসলিমদেরকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

ঠাকুর মশাই জিঞ্জেস করলেন, আপনাদের ধর্মে তো প্রবেশ করার পথ আছে কিন্তু বের হওয়ার পথ কি একটু বলেন তো। আমি উত্তর দিলাম, ইসলামে প্রবেশের পরে কোন ব্যক্তির সামান্য একটি শব্দও তার ঈমান হারা হওয়ার কারণ হতে পারে। কোন কোন কাজ করলে বা কোন কোন বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করে তার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করলে একজন মুসলিম কুফরির গর্তে পড়ে ঈমান হারা হয়ে যান এগুলো কোরআন হাদিসে অত্যান্ত সহজ ও সুন্দর করে উদাহারণের ভিতর দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। অথচ এই প্রশ্নটি যদি একশত মুসলমানকে করেন, তাদের মধ্যে আশি জন উত্তর দিতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। এই কাতারে আমাদের বিশিষ্ট জনরাও আছেন। তবে আপনাদের পুরোহিতদের মতো নয়, আমাদের আলেমরা মাশায়াল্লাহ এই বিষয়ে ধারণা রাখেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে তারা সেটা বলতে পারনে না। বললে অনেকের ইমামতিতে দুর্গতি নেমে আসতে পারে। কারো চাকরি নট হয়ে যেতে পারে এই ভয়ে। কারো মাদ্রাসায় তালা ঝুলতে পারে।

এই কারণে আমাদের সমাজের নামধারী মুসলিমরাও ভালো করে জানে না যে ঈমান ভংগের সুস্পষ্ট বা মৌলিক কারণ গুলো কি কি ? অথচ আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মুসলিম ওজু ভংগের কারণগুলো ছোট বেলায় মক্তবে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে মুখস্ত করে নিয়েছে। কেউ কেউ শেষ বয়সে বিভিন্ন জামায়াতে গিয়ে গ্রুরুত্ব্য সহকারে ওজু ভংগের কারণ মুখস্ত করেছে কিন্তু ঈমান ভংগের কারণ সম্পর্কে আইয়্যামে জাহেলীয়াতের মতোই অজ্ঞ রয়ে গেছে। এই বিষয়ে সুস্পষ্ট জ্ঞান দেওয়ার মতো সাহস অনেকের হয় না। যারাই এই বিষয়ে কথা বলে, তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে দমণ করে রাখা হয়েছে বা হচ্ছে। ফলে একটি বিশাল জনগোষ্টির ভিতর ঈমান এবং তার রক্ষাবেক্ষনের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষনের যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

ফলে মুসলিমদের বিশাল অংশ কথা আর কাজের ভিতর দিয়ে প্রতিদিন কুফরিতে লিপ্ত হচ্ছে। এই কারণেই কেউ যদি এক মিনিটে ঈমানদার হচ্ছে তো পরের মিনিটে কুফরির গর্তে পা দিয়ে নিজের আমলগুলো বরবাদ করে দিচ্ছে। ফলে তাদের জীবনে নৈতিকতার বড় অভাব দেখা দিয়েছে। মুসলিমদের চারিত্রিক অবনতির একমাত্র কারণ ঈমানের প্রাথামিক স্তরেই তারা এখনো সম্পুর্ণরুপে অজ্ঞ। বাপদাদার দেওয়া কিছু মুসলিম নাম ছাড়া তাদের মধ্যে কিছুই নেই। আমাদের প্রিয় নবী স বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে এমন একটি সময় আসবে যখন মানুষ রাতে ঈমান নিয়ে ঘুমাবে কিন্তু সকালে কাফের হয়ে জাগবে। কেউ কাফের হয়ে ঘুমাবে, সকালে ঈমান নিয়ে জাগবে।

আমাদের আলেম ওলামাদের অধিকাংশ বই পুস্তক লিখিত হয়েছে তাজকিয়া, পারস্পরিক মুয়ামালাত, হাশর নশর, নবী রাসুলদের জীবনি, সাহাবায়ে কেরামের কারগুজারী নিয়ে। মুসলিমদের মাঝে চললাম কুফরির আকীদা বিশ্বাস, রাজনৈতিক ও সামজিক মতবাদের মোড়েকে প্রচারিত বিশ্বাসগুলোর বিরুদ্ধে শক্তিশালী যুক্তি প্রমাণ ভিত্তিক সাহিত্য খুব কম রচিত হয়েছে। যে কারণে রাজনৈতিক চিন্তা চেতণার ভিতর দিয়ে পুশ করা বিভিন্ন কুফরি আকীদা, বিশ্বাস আর মতবাদের ছোবলে পড়ে সাধারণ লোকগুলো প্রতিনিয়ত ঈমান হারা হচ্ছে। কেউ যদি এসব চিন্তা চেতণার বিরুদ্ধে কলম ধরার সাহস করেছেন, তখন তাকে সিমাহীন অপবাদ আর নির্যাতনের স্বিকার হতে হয়েছে। এই বিষয়ে উদাহারণ দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় ক্ষ্যান্ত দিলাম।

এসব সমস্যার অন্যতম সমাধাণ হচ্ছে নিজেকে যে কোন একটি গতিশীল, বৈজ্ঞানীক ভাবে পরিচালিত ইসলামী দলের মধ্যে শামিল করে নেওয়া। ইনশায়াল্লাহ, আকীদা বিশ্বাসের গলদ মুহুর্তের মধ্যে দুর হয়ে যাবে এবং আকীদা বিশ্বাসের সাথে সাথে নৈতিক দিক দিয়েও অভাবনীয় সাফল্য আসবে যা স্থায়ী থাকবে, কোন অবস্থায় ভংগুর হবে না। আল্লাহ পাক আমাদেরকে বুঝার তৌফিক দান করুন।

কিবোর্ড সমস্যায় কিছু বানানে প্রবলেম থেকে যেতে পারে বলে দুঃখিত।

বিষয়: বিবিধ

১৫১৭ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

254715
১৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৪৭
সুন্দরের আহবান লিখেছেন : বাস্তবতা এমনই- সূদীকারবার করে, সূদের দোকানে চাকরী করে দৈনিক কমপক্ষে ১০০ রাকায়াত নফল নামায আদায় করে মনে করে তার মতো আমলদার আর নাই (আমি যে মহল্লায় বসবাস করি সেখানে এমন তিনজন আছেন)
১৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:২৬
198466
বিভীষিকা লিখেছেন : সত্য বলেছেন।
১৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৪:৫১
198525
কাহাফ লিখেছেন : সহমত......।
254720
১৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:১৮
মাহফুজ আহমেদ লিখেছেন : ঈমানভঙ্গের কারন সমুহ কেউ শিখায় না কেউ শিখে ও না!!
১৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:২৫
198465
বিভীষিকা লিখেছেন : লেখকের দিকে না তাকিয়ে আপনি "ঈমানের হাকিকত" বইটি পড়ে ফেলুন। মনে হবে আপনি আজ আবার নতুন মুসলমান হয়েছেন।@ মাহফুজ আহমেদ
254721
১৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:২৪
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা লিখেছেন : আরে ভাই , ইমান থাকলেই না ভাংবো.. আমাগো ঈমান কয় তোলা আছে কয়বার পারবেন?!
১৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:৩৬
198467
বিভীষিকা লিখেছেন : সত্যি আমাদের ঈমান নেই।
১৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:৩৯
198469
বিভীষিকা লিখেছেন : সত্যি আমাদের ঈমান নেই। আছে শুধু আমাদের লম্বা লম্বা দাঁড়ি,টুপি আর পাঞ্জাবী।
১৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:৫৬
198480
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা লিখেছেন : আপনি হয়তো আমার এই পোষ্ট মিস করেছেন। পড়লেও আরেকবার পড়ুন। ভালো লাগবে।
ডঃ ইকবালের “শিকওয়া” এবং আমার “দুঃসাহসিক চাওয়া”
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/7205/preacherofislam/51152

প্রয়োজনে শেয়ার করার অনুমতি দেয়া হলো। ধন্যবাদ।
254737
১৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ১২:০০
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা লিখেছেন : আপনি হয়তো আমার এই পোষ্টটি মিস করেছেন।
পড়ে থাকলে আরেকবার পড়ুন ও শেয়ার করুন-
ডঃ ইকবালের “শিকওয়া” এবং আমার “দুঃসাহসিক চাওয়া”
Click this link
১৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ০১:৩৫
198501
বিভীষিকা লিখেছেন : ধন্যবাদ।
254751
১৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ০২:২০
সন্ধাতারা লিখেছেন : Wonderful post!! Jajakallahu khair.
১৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৩:৪৮
198521
বিভীষিকা লিখেছেন : ধন্যবাদ@সন্ধাতারা
254776
১৬ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৫:১১
তহুরা লিখেছেন :
254783
১৬ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৭:২৭
জাকির হোসাইন লিখেছেন : ধন্যবাদ! এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি দৃষ্টিগোচর করার জন্য!
১৬ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৭:৩৫
198533
বিভীষিকা লিখেছেন : ধন্যবাদ
254793
১৬ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:১৮
কাহাফ লিখেছেন : সুন্দর বিষয়ের অবতারণা করেছেন,অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।
254810
১৬ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১০:৩৬
মোঃমাছুম বিল্লাহ লিখেছেন : কি করলে কাফের হয়েযাবে একদল আলেম আছে যারা শিখাই কিন্তু তাদের মধ্যে একজন জাকির নায়েক
১০
254813
১৬ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:০২
মোঃমাছুম বিল্লাহ লিখেছেন : "কিন্তু" শব্দটা বাদ যাবে
১১
254826
১৬ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:৪৩
মাহফুজ আহমেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ।
১২
254853
১৬ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:২০
ইবনে হাসেম লিখেছেন : ভালো একটি পোস্ট। ঈমানের সুরক্ষা যারা করতে চান, তাদের পোস্টটি পড়া দরকার। লিখাটির মূল আকর্ষন হলো তার টাইটেলটি।
জাযাকাল্লাহ্

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File