নিজেকে বড় মনে করবেন না।(স্ট্যাটাসটা গুরুত্বপূর্ণ)
লিখেছেন লিখেছেন বিভীষিকা ১৮ মে, ২০১৪, ০৬:১৫:০৬ সকাল
(M. Rezaul Karim Bhuyan)
মনে করুন, আপনি খুব ভাল ভার্সিটিতে পড়ছেন। টপ ২-৩ টা সাবজেক্টের কোন একটাতে। এবং আপনি একজন ইসলামিস্ট।অনেক ট্যালেন্টেড স্টুডেন্ট আপনি। আপনি যেকোন ব্যাপার অন্যদের থেকে বেশ ভালভাবেই এনালাইসিস করতে পারেন (এর কারণ আপনার দুনিয়াবী যোগ্যতা)। ইসলামের নতুন বিষয়গুলো আপনি এমনভাবে এনালাইসিস করে দেন যেটা জাতিকে মুগ্ধ করে দেয়। এ কারণে আপনার ফেইসবুকে হাজার হাজার ফলোয়ার।
কিন্তু এই অবস্থায় শয়তান আপনাকে এমন একটা বিপদে ফেলবে যা আনপ্রিসিডেন্টেড, এবং হয়ত আপনার কল্পনার বাইরে। তা হল 'ইলমের অহংকার'। আপনার সাবকনশাস মাইন্ড আপনার মনের অজান্তেই আপনাকে অনেক জ্ঞানী হিসেবে জাজ করবে। অন্য কথায় , আপনি আপনার আশপাশের ইসলামিস্টদের 'এরা কিচ্ছু জানেনা, এদের অনেক পড়াশোনা করা দরকার অথবা 'এরা দালাল, এরা মুনাফিক' এরকম মনে হবে।
খুব ভাল ম্যাথ এনালাইসিস করার যোগ্যতাই ইসলামে 'সবকিছু' নয়। ইসলাম সম্বন্ধেও পর্যাপ্ত ইনফরমেশন মাথার মধ্যে গ্যাদারড অবস্থায় থাকা জরুরী। অতীতের স্কলারদের মত সম্বন্ধেও জানা জরুরী। ইসলামী সভ্যতার ১৫০০ বছরে মুসলিমরা কি কি ভুল করেছে - তার ইতিহাস জানাও জরুরী। শ'খানেক তাফসীর, একমিলিয়ন এর বেশী হাদীস, হাদীসের চেইন,এর উসূল :: এই সবকিছুকে স্কিপ করে শুধু কিছু ইউটিউব ভিডিও দেখে আর গুগল সার্চ করেই নিজেকে বহুত জ্ঞানী মনে করা এবং অন্যদের মূর্খ মনে করে অবশ্যই অহংবোধ ( আল্ল-হু আলম )। 'পর্যাপ্ত ইনফরমেশন' এর ঘাটতি নিয়ে শুধু এনালাইটিক এবিলিটি দিয়ে জ্ঞানী হওয়া যায়না। বরং এটা বেশী ক্ষতিকর, কারণ আপনার এনালাইটিক এবিলিটি আপনাকে ভুল রেজাল্ট পাবলিশ করাবে এবং মানুষকে সেটা গিলাবেও।
দু:খজনক হলেও অধিকাংশ ফেইসবুক ইসলামী সেলিব্রেটি এই সমস্যায় আক্রান্ত। ঠুস-ঠাস একে ওকে বলতেছে: " আপনার জ্ঞানে ঘাটতি আছে " , " আপনার আরও স্টাডি করা দরকার ( মানে আরও স্টাডি করে আসেন, তার পর আমার সাথে বসার যোগ্যতা অর্জন করবেন, আপনার সাথে কথা বলার সময় 'শাইখ আমি'র নাই " , আমি বহুত ব্যস্ত লোক ), বা '' আরও স্টাডি করার পর আপনি এটা বুঝবেন "( মানি এখনও আপনি আমার স্ট্যাটাসে আসতে পারেননাই, আমি বুঝে গেছি, আপনি বুঝেন নাই )।
সেক্যুলার ইউনিভার্সিটিতে পড়ে মাত্র ২০-২৫ বছরের যুবকরা কিভাবে ইসলামী জ্ঞানে সর্বেসর্বা হয়ে অন্যের (অনেক সময় দ্বীনের স্কলারদের) জ্ঞানের দৈন্যতা কনফিডেন্টলি ধরতে পারে তা আমার জানা নেই। এত অল্প বয়সে তো দ্বীনের 'অ' 'আ' 'ক' 'খ' শিখাও সম্ভব না। কারণ সেক্যুলাই ইউনিভার্সিটির পড়ার চাপ সামলিয়ে দ্বীনের পিছনে খুব বেশী সময় দেয়া তো মহামানব না হলে সম্ভব না।আমার এই স্ট্যাটাসের উদ্দেশ্য এই না যে, সবাইকে বলা : 'আগে স্কলার হও , তারপর ফেইসবুকে আসো' । উদ্দেশ্য এই যে , সব ইসলামিস্টরা যেন নিজের জ্ঞানের দৈন্যতা মাথায় রেখে বিনয়ের সাথে কথা বলেন। নিজের অহংবোধ ঝেড়ে ফেলেন। নিজের মতের বিপরীতে কথা আসলে জবাব দেয়ার সময় 'স্পেস' রেখে কথা বলেন, কাউকে তাচ্ছিল্য না করেন। কারণ , কারও উপর ওয়াহী নাযিল হয়না, যে অমুক ব্যক্তি আমার থেকে অনুত্তম অথবা অমুক ব্যক্তি থেকে আমি উত্তম। তাহলে মত বিনিময় সহজ হবে, এবং ইসলামিস্টরা একমতে পৌঁছুনোর সম্ভাবনা বাড়বে:: আর না হলে মতামত বিনিময় হবে না, প্রত্যেক গ্রুপ নিজেরা নিজেরা একটা কাল্ট তৈরী করবে, এবং একটি কাল্ট আর একটি কাল্ট এর সাথে কনটিনিউয়াস যুদ্ধ করতে থাকবে এবং ডিভাইডেশন বাড়তেই থাকবে। যেটা এখন রিয়ালিটি। পুনশ্চ : ইসলামী জ্ঞান অর্জন এর সহজতম উপায় হল মাদ্রাসায় বা ইসলামী প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া। নিজে নিজে জ্ঞান অর্জন করলে কখনোই 'আদাব' শিখা হবে না, ইলমের টোটাল পিকচার পাওয়া যাবেনা ।এজন্যই মাদ্রাসা আপনাকে ইলম অর্জনের আগে 'আদাব' শিখাবে। এরপর অর্গানাইজড ওয়েতে উস্তাদরা আপনাকে দ্বীন শিখাবেন। নিজে নিজে শিখতে গেলে ইতস্তত: বিক্ষিপ্তভাবে শিখবেন এবং অনেক ল্যাকিংস থেকে যাবে, আর 'বেআদব' হয়ে যাবার ব্যাপক সম্ভাবনা। কারণ 'আদাব' বইয়ে পড়ে শিখা খুব কঠিন।
বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে অজস্র প্রতিষ্ঠান আছে। নিজে নিজে ইলম অর্জন করে মানুষকে ঝাড়ি মারার থেকে উস্তাদের কাছে গিয়ে আদাব শিখে আসা বেশী জরুরী মনে হয় আমার কাছে। কারণ ওই বয়সে আমার নিজের মধ্যেই আদাব এর ব্যাপক ঘাটতি ছিল, এখনও প্রতিনিয়ত নিজের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছি । যার ফলস্বরুপ এই স্ট্যাটাসটা দিলাম।
বিষয়: বিবিধ
১৬৫৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ এ নিয়ে লিখার জন্য। আল্লাহ আমাদের মধ্যে আদব শেখার ও বোঝার তৌফিক দিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন